হ্যাকেরের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১৩

0
1132

হ্যাকেরের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-১৩
.
রুহী চলে গেলে দরজা লক করে সোজা চলে গেলো ষ্টোররুম দিয়ে বেজমেন্টে, অসম্পূর্ণ পিকাচুকে সম্পূর্ণ করতে হবে, নিজেকে নির্দোষ করা বাকী।
কিন্তু ঘুমে মাথা ঘুরতে থাকে রাফির। চেয়ারে বসে কীবোর্ডে হাত দেয় কিন্তু এই অবস্থায় কাজ করতে পারবে না বুঝতে পেরে যায় রাফি। গা হাত পা অসাড় হয়ে আসে আর চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়ে রাফি।

হঠাৎ ই ঘুম ভেংগে যায় রাফির। বেসমেন্টে থাকার কারনে হুট করে বুঝতে পারে না যে রাত পার হলো নাকি মাঝরাতেই ঘুম ভাংলো। সামনে পিসিতে চোখ বোলাতে বোলাতে চেক করে, রাত ৩ টা ৩৮ বাজে। খুব ভালো একটা ঘুম হলেও চেয়ারে ঘুমানোর কারনে ঘাড়ে ব্যথা হতে লাগলো রাফির। খিদেও লেগেছে হালকাপাতলা। রাফি ঘাড়ে হাত বোলাতে বোলাতে আর ঘাড় ঘোরাতে ঘোরাতে বেজমেন্ট ছেড়ে ডায়নিং রুমে আসে। ফ্রীজ ভর্তি খাবার থাকায় মাঝরাতের চুটকি খিদে মিটিয়ে নিতে বেগ পেতে হয় না রাফির। একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে সারা ঘর ঘুরে দেখতে লাগলো এতক্ষনে পুরো ঘরটাই ঠিকমত দেখেনি রাফি, ঘরের বাইরের দেয়াল ইট পাথরের হলেও ভেতরের পুরোটা কাঠের তৈরি। বাইরের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আর ফায়ারপ্লেসের তাপের অপচয় কমাতে এই ব্যবস্থা, এইদেশের কমবেশি সব ঘরই এমনাভাবে তৈরি। নীচতলায় দরজা খুলে বামদিকে ড্রয়িংরুম আর নাক বরাবর রান্নাঘর এবং ড্রয়িংরুম, রান্নাঘর ডায়নিং একসাথেই, ডান পাশে উপরে ওঠার শিড়ি, আর শিড়ির নীচে ষ্টোররুম। বাড়িটা বেশ পুরাতন হলেও ভেতরের ডেকোরেশন একদমই আলাদা। এমন মফস্বল শহরে এমন ধাঁচের ইন্টোরিয়র দেখা যায় না। কেউ একজন খুব সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে যে কারনে কিছু কিছু জিনিস রাফির খটকা লাগছে। প্রতিটা দেশেরই কিছু ইউনিক কালচার থাকে, স্ট্রাকচার ও। রাফির কাছে মনে হতে লাগলো রাফির আশপাশকে কেমন যেন জোর করে এভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রাফি ইতিহাস কিংবা প্রাচীন আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা না করলেও কেমন যেন একটা ফিলিংস কাজ করতে থাকে রাফির যে সে আসলে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশে নেই, হয়তোবা একই রকম দেখতে অন্য কোন রাষ্ট্রে রয়েছে। সন্দেহ যেন কিছুতেই দমাতে পারছে না রাফি। ঘরের ভেতর খোঁজাখুঁজি করা শুরু করলো রাফি, এমন কোন ক্লু খুঁজতে থাকে যাতে এটা প্রমান হয় যে রাফি যা মনে মনে ভাবছে তা সঠিক নয়। রাফির হঠাৎ করে কেন এমন মনে হচ্ছে তা রাফি নিজেও বলতে পারবে না হয়তো কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই শান্তি দিচ্ছে না রাফি কে। স্যাটেলাইটের রিয়েল টাইম ইমেজিং ও টেম্পারিং করেছে মাফিয়া গার্ল, জিপিএস কোয়ার্ডিন্যান্স ও। যার পক্ষে এসব করা সম্ভব তার পক্ষে যে কাউকে নতুন করে ভূগোল বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



এ যেন নিউইয়র্ক সিটিতে দাঁড়িয়ে জিপিএস লোকেশনে নিজেকে আফ্রিকার আমাজন জঙ্গলে দেখতে পাওয়ার মত অবস্থা। ইন্টারনেটে কানেকশন দিয়ে যে কিছু করবে তার ও উপায় নেই, এই বাড়ির পুরো নেটওয়ার্ক সিস্টেম মাফিয়া গার্লের সাজানো, ফোনটাও ট্যাপ করা। কারো কাছে জিজ্ঞাসা করবে তার ও কোন উপায় নেই, এমন দুর্বোধ্য ভাষা সাবটাইটেল ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। রাফি যখন রুহীর সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলো তখন এমন কোন বিশেষ কিছু ও চোখে বাধে নি যেটাতে রাফির এটা মনে হতে পারে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশের কোন একটা মফস্বল শহর। শপিং করতে যেতে চাইলেও ৬০ কিলো দূরে যেতে হবে যেখান থেকে রুহী লিফট চেয়ে এতদূর পর্যন্ত এসেছিলো। উল্টো লিফট নিয়ে আসার সময় এমন একটা ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্টের বিশাল বড় বিলবোর্ড চোখে বেঁধেছিলো যে কোম্পানীর সাথে এই বৃহত্তম দেশের ব্যবসা থাকার কথা না। কূটনৈতিক জটিলতার কারনে পন্যটির উৎপাদক দেশটির সাথে সকল ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে। বিলবোর্ডটি লোকাল ভাষায় লেখা হলেও পন্যের মোড়োক আর লোগো তো আর পরিবর্তন সম্ভব না। এই ঘটনা বেশ কয়েক বছরের পুরাতন কিন্তু বিলবোর্ডটির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫-৬ মাস আগে বিজ্ঞাপনটি বিলবোর্ডে লাগানো হয়েছে, এত বছর আগে ব্যান হওয়া পন্যের বিজ্ঞাপন এখনো বিলবোর্ডে ঝোলানো থাকাটা অস্বাভাবিক। হয়তোবা সন্দেহের শুরুটা সেখান থেকেই হয়েছে।
রাফি মোবাইলটা বের করে কাছাকাছি কোন গ্রোসারি শপ আছে কি না তাই সার্চ দিলো। সার্চ রেজাল্ট আসতে আসতেই মাফিয়া গার্লের ফোন, মনে মনে ঠিক যেমনটি রাফি চেয়েছিলো,
– Didn’t you miss me?
রাফি – মিস না করে উপায় আছে? এই রাত বিরাতে নুডুলস খাওয়ার সময় যদি দেখি সস নেই তাহলে তো ম্যাডামকে মিস করতেই হবে।
– এই রাতে নুডুলস?
রাফি – রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে কি আর করবো। সময় কাটানোর জন্য আরকি। আচ্ছা আসেপাশে কি কোথাও গ্রোসারি শপ আছে যেখান থেকে এখন সস নিয়ে আসতে পারি?
– ভোর হতে এখনো বেশ দেরী, আপাতত সস ছাড়া নুডুলস খেয়ে নাও। কাল আমার দুইজন লোক যাবে তোমার কাছে। তোমার যা কিছু দরকার সবই তারা তোমাকে জোগাড় করে দেবে। আমি তাদের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম বেজমেন্ট সার্ভারে। চেক করো নি?
রাফি – সার্ভার অফলাইনে আছে। একটু কষ্ট করে আমার ফোনে সেন্ড করে দাও না? এই রাতে আর বেজমেন্টে যাবো না, আমি ফোন থেকে চেক করে নিবোনি. কেমন?
– ( কিছুক্ষণ নীরব থেকে) ঠিক আছে, তোমার ফোনেই আমি ডিটেলস পাঠিয়ে দিচ্ছি। চেক করে নিয়ো। আর হ্যাঁ সার্ভার অনলাইন না করলে বাড়ির সার্ভেইল্যান্স আর সিকিউরিটি আনপ্রোটেক্টেড থেকে যাবে, তাই যথাসম্ভব সার্ভার অনলাইন রাখার চেষ্টা করো
রাফি – চেষ্টা করবো। আর হ্যাঁ, কাল অবশ্যই অবশ্যই সস নিয়ে আসতে বলবে তোমার লোকদের। সস ছাড়া নুডুলসের স্বাদই মাটি।
– ঠিক আছে, ওদেরকে বলে দিবো।
রাফি ফোনটা কেটে দিলো। মাফিয়া গার্লের উপর সন্দেহ হতে লাগে রাফির, কিন যেন মনে হতে লাগে মাফিয়া গার্ল রাফিকে কারাগারে আটকাতে চাইছে। সামান্য গ্রোসারি শপের লোকেশন ও দেখতে দিতে চায় না সে। কিন্তু এই মাফিয়া গার্ল ই তো রাফিকে সব বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। যেখানেই সমস্যা হয়েছে সেখানেই পৌছে গেছে মাফিয়া গার্লের সাহায্য।
কিন্তু রাফির ল্যাগেজ এই বাড়িতে আগে থেকেই কিভাবে এনে রাখলো মাফিয়া গার্ল? এটা কি মাফিয়া গার্লের দ্রুত কাজ শেষ করার ক্ষমতা নাকি পূর্ব পরিকল্পিত কোন জাল।
অন্যান্য জায়গাগুলোতে রাফির ট্রান্সপোর্ট কিংবা যে কোন কাজ করতে কোন এসিস্ট্যান্সের দরকার পড়ে নি, অথচো পিড়ামিডের দেশ থেকে এই দেশে আসতে কেন রুহীকে দরকার পড়লো? কেন একটা গাড়িতে লিফট নিয়ে এই মফস্বল শহরে আসতে হলো যেখানে মাফিয়া গার্লের কাছে এতগুলো সেফ হাউজ রয়েছে, একটা গাড়ি তো কোন ব্যপার ছিলো না। রুহী লোকাল ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্ট তাই এখানকার নেটিভ লোকজনদের সাথে কথা বলতে ওর কোন সমস্যা হয় নি। রাফি হলে হয়তো নেটিভ ভাষায় বোঝাতে পারতো না কিন্তু অন্য কোন উপায়ে হলেও এই পর্যন্ত পৌছাতে পারতো।
ধরে নিলাম এই ঘরের চাবি বা ডিজিটাল লক খুলতে রুহীকে প্রয়োজন ছিলো কিন্তু তার জন্য রুহীকে পিরামিডের শহরে যাওয়ার দরকার ছিলো না।
রাফি সোফায় বসে পড়লো। এতগুলো প্রশ্ন মাথার ভেতর একসাথে এসে ঢুকে পড়লো। এতদিন পেছনে গুন্ডাপান্ডা লেগে ছিলো বলেই রাফি হয়তো ঠান্ডা মাথায় কিছুই ভাবতে পারে নি। কিন্তু কিছুটা রিল্যাক্স হয়ে রাফির মনে এখন রাজ্যের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
মাফিয়া গার্ল চাইছে যে রাফি যেন বেজমেন্ট থেকেই বের না হয়, তাই দুইজন বডিগার্ড(!) পাঠাচ্ছে যারা রাফির হয়ে সব কাজ করবে! এতো কেন রেষ্ট্রিকশন হচ্ছে, কি চাচ্ছে মাফিয়া গার্ল। নাহ কিছু একটা তো খুঁজে পেতেই হবে যাতে প্রমান হয় রাফি যা ভাবছে তার সবই ভুল। ড্রয়িং রুম থেকে উঠে ফ্রীজ খুললো রাফি। প্যাকেট ফুডগুলোতে তো ম্যানুফ্যাকচারারের নাম থাকার কথা, অরিজিন ও থাকবে, চেক করে দেখতে দোষ কি।
ফ্রীজের ভেতর প্যাকেট ফুডের সবকিছুই ইম্পোর্টেড কোম্পানির, লোকাল বা এদেশীয় কোন প্রডাক্ট নাই। উইয়ার্ড, মফস্বল একটা শহরের সুপারশপ হোক আর গ্রোসারি শপ হোক তাতে কোন দেশী পন্য থাকবে না এটা মানা যায় না। ফ্রীজ বন্ধ করে ঘরের স্টোরেজে যায় রাফি। স্টোরেজের ফ্রীজের প্রতিটা পন্য, ওয়াশিং পাউডার থেকে শুরু করে গ্রোসারিজ প্রতিটা আইটেম আমদানীকৃত কোম্পানির, ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ডের। ইম্পোর্টারের স্টিকার লাগানো কিন্তু ভাষা বোঝার সাধ্য রাফির নেই। দেশের নাম লেখাও যদি থাকে তাও বোঝা সম্ভব হবে না রাফির। এগুলো কো-ইনসিডেন্স হতেই পারে কিন্তু সন্দেহটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারে না রাফি। দুই বডিগার্ড চলে আসার আগেই পুরো ঘর একবার চেক করে ফেলা দরকার। সন্দেহ যখন হয়েছে তখন সত্যটা খুঁজে বের করতেই হবে। স্টোরেজ থেকে বের হয়ে শিড়ি দিয়ে ওঠার সময় ড্রয়িংরুমের টেবিলের পাশে থাকা মোড়ানো ম্যাপগুলো চোখে পড়ে রাফির। রুহী যাওয়ার আগে রাফিকে ম্যাপগুলো দেখিয়ে দিয়ে গেছে। এখানেও খটকা লাগে রাফির, মাফিয়া গার্লকে এক কথায় বলা যায় সাইবার জগতের ক্রাউনলেস কুইন, সে রাফিকে একটা জিপিএস দিয়েছে যাতে সবকিছুই রয়েছে, তাহলে রুহী কেন ফিজিক্যাল ম্যাপ দেখালো রাফিকে? জিপিএস সাথে থাকলে তো কাগজের ম্যাপের প্রয়োজন নেই। মাফিয়া গার্ল জিপিএস দিয়ে অথবা ফোনে কথা বলতে বলতে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল বা শহরের যে কোন অলিগলি অথবা যে কোন সেফ হাউজে রাফিকে পৌছানোর ক্ষমতা রাখে। তাহলে কেন এই কাগজের ম্যাপের প্রয়োজন পড়লো! রুহী কি বোঝাতে চাইলো, মাফিয়া গার্ল যদি রাফিকে আটকে রাখার প্লান করে থাকে তাহলে রুহী কেন এক্সিট প্লান দিলো রাফিকে, তাও কাগজের ম্যাপে? রাফি ম্যাপগুলো তুলে নেয়। রহস্য বাড়ছে ছাড়া কমছে না। হতে পারে রাফির ধারনা সম্পূর্ন ভুল তবে যে প্রশ্নগুলো রাফির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা সলিড ইভিডেন্স ছাড়া দূর হবে না।
রাফি ঘরের রুমগুলো চেক করতে চাইলো, এই মাঝরাতে উঠে উল্টাপাল্টা কাজ করতে কারোরই ভালো লাগার কথা নয় তবে রাফির কৌতুহলী মন আর ডিটেকটিভ মস্তিস্ক ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। ঘরের অন্যান্য রুমগুলো খুঁজে দেখা দরকার ঘরের কয়েকটা রুম লক করা, হয়তোবা পার্সোনাল রুম তাই লক থাকা স্বাভাবিক, রুম চেক করতে করতে রাফি রুহীর রুমের সামনে দাঁড়ায়, দরজা লকই করা কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় যে চাবিটা লকের ভেতরেই ঢোকানো রয়েছে। দরজা লক অথচ চাবি ঝোলানো, রাফি ভাবলো রুহী হয়তো ভুল করে চাবি ফেলে রেখে গেছে। অনেক বেশীই কো-ইনসিডেন্স ঘটছে রাফির সাথে হঠাৎ করেই।
রাফি চাবি দিয়ে লকটা খুলে ফেলে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে লাইট জ্বালানোর জন্য সুইচ খুজতে লাগলো। সুইচ পেল না কিন্তু আলো নিজে থেকেই জ্বলে উঠলো। রাফি চমকে উঠলো, ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলে চমকে ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। রাফি আৎকে উঠে দুই কদম পিছিয়ে যায়, বোঝার চেষ্টা করলো যে ঘটলো টা কি? কিছুক্ষণের ভেতর আলোটা নিভে গেলো, রাফি আবার ভেতরে প্রবেশ করলে আলো আবারো নিজে নিজে জ্বলে উঠলো। রাফি বুঝতে পারলো হয়তো ঘরে মোশান সেন্সর লাগানো আছে, ঘরে কেউ ঢুকছে এটা মোশান সেন্সরে ধরা পড়ায় সেন্সর রুমের আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর যখন ঘর থেকে কেউ বেরিয়ে যাচ্ছে তখন আলো নিভিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ দিনে দিনে কতটা অলস হতে পারে তার একটা জলজ্যান্ত প্রমান।
রাফি ঘরে ঢুকে চারিদিকটে দেখে নিলো। বেশ ভালো আকারের একটা লিভিং রুম, ২০-২১ বছরের চঞ্চল মেয়েদের ঘর যেমন থাকে তার থেকে ব্যতিক্রম না, বেশ ছড়ানো ছিটানো রয়েছে জিনিসপত্র, ৪ দরজার বিশাল আলমারি থাকার পরও বিছানায়, চেয়ারে, জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি। সারা ঘর ঘুরে তেমন কিছুই পায় না রাফি, কাপড়চোপড়ের ট্যাগ দেখেই বোঝা যায় মেয়ে স্বদেশী জিনিসে দূর্বল।
সবকিছু ঘেটেঘুটে যখন কিছুই পায় না রাফি তখন আলমারি খোলার চেষ্টা করে, চার দরজার তিনটাই লক করা থাকলেও একটা খোলা পেল রাফি। দরজা খুলে বেশ অবাক হলো, এই দরজার পেছনে কোন কাপড়চোপড় রাখা নেই, মনে হয় রুমে ছড়ানো কাপড়চোপড় সব এই ক্যাবিনেটেই ছিল। ক্যাবিনেটের মাঝের দিকে একটা চারকোনা কিছু দেখতে পেলো, হাতে তুলে নেয় রাফি। হাতে তুলে দেখতেই চিনতে পারে, একটা raspberry pi3 মিনি কম্পিউটার, অনেক পাওয়ারফুল পোর্টেবল কম্পিউটার, একটা ছোট্ট চিরকুট দেখতে পায় কম্পিউটারের উপর,
“Use it, Only complete Pikachu can save you now.”
রাফির সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। রুহী কি জানতো যে রাফি রুহীর রুমে এসে তল্লাশি নেবে! রুহী তো মাফিয়া গার্লের ই এসিস্টেন্ট, তাহলে রুহী কেন রাফিকে এসব ক্লু ছেড়ে যাচ্ছে। রাফি চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে থাকে। এসব কি হচ্ছে, এতদিন যাকে গার্ডিয়ান এঞ্জেল হিসেবে জেনে আসছে এখন তাকেই সন্দেহের উপক্রম! ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখমুখি এসে পড়ে রাফি। মিনি কম্পিউটারটা আর ম্যাপগুলো নিয়ে রাফি নিজের ঘরে গেলো। বিছানায় শুয়ে পড়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো, রাফি এখন পর্যন্ত এসবব সাহায্যের পেছনে মাফিয়া গার্লের আসল উদ্দেশ্য জানে না। যদিও মাফিয়া গার্ল একবার বিনিময়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও রাফি তা সংগত কারনেই প্রত্যাখ্যান করে। তারপরও ভালো এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো এবং এখনো আছে আর এখন পর্যন্ত এমন কোন ঘটনা ঘটে নি যার দ্বারা এটা প্রমানিত হবে যে মাফিয়া গার্ল রাফিকে নিয়ে কোন কূটচাল চালছে। একজন দেশপ্রেমিক অন্য আরএকজন দেশপ্রেমিককে সাহায্য করতেই পারে। নাহ, মাফিয়া গার্ল নেগেটিভ কিছু হতে পারে না, রাফিকে সদা বিপদের হাত থেকে বাঁচানো মেয়েটাকে সন্দেহ করা রাফির সাজে না।
রাফি কম্পিউটারের উপরে রাখা চিরকুটটি আবারো খুলে দেখে, এই মেসেজ রুহী কার জন্য রেখে গেছে, নিজের ঘরে তো নিশ্চই অন্য কারো জন্য চিরকুট রাখে না কেউ? তাহলে কি রুহী ইচ্ছা করেই ঘরের দরজার চাবি রেখে গিয়েছে! দুই দিনের পরিচিত মেয়ে রুহীর দেয়া ক্লু দেখে এতদিনের অদৃশ্য বন্ধু মাফিয়া গার্লের উপর সন্দেহ করাটা কোন যুক্তিতেই সমীচীন লাগছে না রাফির।
তারপরও সতর্ক হয়ে যাওয়া ভালো, রুহী মাফিয়া গার্ল সব কিছু থেকেই। হঠাৎ ই রাফির মনে পড়ে রাফির বাবা মা এবং তোহা এখন মাফিয়া গার্লের হাতে, যদিও ইনফর্মেশনগুলো যাষ্টিফাই করার সুযোগ পায় নি রাফি, এটলিষ্ট যতক্ষণ ঠিকভাবে বাড়িতে কথা বলতে না পারছে ততক্ষণ এটাই ধরে নেয়া উচিৎ যে মাফিয়া গার্ল ই ঠিক যে সে রাফির পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। কালই পরিবারের সাথে কথা বলানোর জন্য মাফিয়া গার্লকে চাপ দিতে হবে। রুহীর দেয়া চিরকুটটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে রাফি। raspberry pi3 মিনি কম্পিউটারটা অন করে, একদম ব্রান্ড নিউ। রাফি সবকিছু চেক করে দেখলো, এই মিনি কম্পিউটার সম্পর্কে জানতো রাফি কিন্তু কখনো ব্যবহার করে নি। প্রয়োজনে কাজে দেবে ভেবে কম্পিউটারটি সরিয়ে রাখে। রাফি ম্যাপগুলো নিয়ে বসলো।
শহর আর এই গোলকধাঁধা ঘরবাড়ির রাস্তার মারপ্যাচ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল অনেক সোজা, বেজমেন্টের পেছনে যেখানে সার্ভারগুলো রাখা তার পেছনেই আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের দরজা। রাফির কপালে আবার ভাঁজ পড়ে, যতদূর খেয়াল করেছে রাফি ততদূর এটাই মনে পড়ে যে পুরো বেসমেন্টটি সলিড কংক্রিটের দেয়ালে ঘেরা, পেছনে কোন দরজা থাকা অসম্ভব। আজিব, রুহী যখন বোঝাচ্ছিলো তখনও খেয়াল করে নি রাফি কারন তখন রাফির চোখ ছিলো ট্যানেলের এক্সিটের দিকে, এই বাড়ির এক্সিটের দিকে নয়। তার মানে মাফিয়া গার্ল এই ম্যাপ রাফিকে বোঝানোর জন্য না ও দিতে পারে রুহীকে। রাফি তারপরও কনফিউশন কাটাতে ম্যাপটা নিয়ে সোজা বেজমেন্টে চলে যায়। বেজমেন্টের সব আলো জ্বালিয়ে দিয়ে টেবিলের উপর রাখা জিপিএসটা সহ একদম পেছনে চলে যায় বেসমেন্টের যেখানে পয়েন্ট করা আছে ম্যাপটিতে। রাফি এখন এমন জায়গায় দাড়িয়ে আছে তার সামনেই আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলে পৌছানোর দরজা থাকার কথা। কিন্তু সেখানে সলিড দেয়াল তোলা। পরিক্ষা করার জন্য রাফি কিল দিয়ে দেখতে থাকে দেয়ালে। নাহ সলিড দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে দরজা বরাবর। যদি কোন পথই না থাকবে তাহলে রাফিকে কেন এই ম্যাপটা দিয়ে যাবে রুহী! রাফি ম্যাপ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের একটা কোড নিয়ে জিপিএস এ ইনপুট দেয়, কিন্তু জিপিএস “কোড আনএভেইলেবল” শো করে। রাফির মনে খটকা লাগে, আরো দুই চারটা কোড ইনপুট দেয় রাফি পরিক্ষামূলক কিন্তু সবগুলোর রেজাল্ট আনএভেইলেবল শো করে জিপিএস, মানে জিপিএস এ আন্ডডারগ্রাউন্ডের কোন ম্যাপ বা কোড ইনপুট করা নেই! রাফি এবার মোটামুটি কনফার্ম হয়ে যায় যে রুহীর দেখানো পথ আর মাফিয়া গার্লের করা প্লানের মধ্যে কিছু গড়মিল তো আছেই।
রাফি আরো জোর লাগিয়ে খুঁজতে থাকে সবজায়গায়। কিছু তো একটা মিস করতেছে রাফি। খুঁজতে খুঁজতে একটা সার্ভার র‍্যাকের নীচে চোখ যায় রাফির। খুব ভালোভাবে খেয়াল করে রাফি র‍্যাকটির নীচে ম্যানহোলের ঢাকনার মত কিছু একটা দেখতে পায়। রাফি একটু জোর খাটিয়ে র‍্যাকটি খানিকটা সরিয়ে ফেলে, ঠিকই ধরেছে রাফি, একটা ম্যানহোলের ঢাকনা। যে কেউ দেখলে হয়তো ভাববে বেজমেন্টে যদি কোন কারনে পানি আটকে যায় তাহলে এই ম্যানহোল দিয়ে সেটা নিষ্কাশন করা হবে কিন্তু রাফি ভাবছে হয়তো সে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেলের দরজা খুঁজে পেয়েছে। রাফি ম্যানহোলের উপর থেকে র‍্যাকটা পুরোপুরি সরিয়ে ডাকনাটি খুলে ভেতরে মাথা দিলো, হাড়কাপানো ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেলো রাফিকে। রাফি বুঝতে পারলো এটাই ট্যানেলে পৌছানোর পথ, তাই ম্যানহোলটাকে আগের মত সার্ভারের তাঁকে দিয়ে ঢেকে দিয়ে কম্পিউটারের সামনে এসে বসলো রাফি। বাড়ির সিকিউরিটি আর সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমটা একবার চেক করার দরকার, অনলাইন হলে কতটা মাফিয়া গার্লের নজরের ভেতর আসে সেটা দেখে রাখা উচিৎ।
রাফি কম্পিউটার দিয়ে সার্ভেইল্যান্স স্ট্যাটাস চেক করতে থাকে। মোটামুটি শকড হলো রাফি, ঘরের প্রতিটা ইঞ্চি সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্সের আন্ডারে, অডিও ভিডিও দুটোই। এছাড়াও এই গোলকধাঁধা বিল্ডিংগুলোর পুরো এরিয়া আর এন্ট্রি পয়েন্টগুলোও সিসিটিভি কভারেজের আন্ডারে, মফস্বল শহর অনুপাতে একটু বেশীই সতর্কতা পালন করছে এই মাফিয়া গার্ল। রাফি বেজমেন্টে আসার কিছুক্ষণের ভেতরেই ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো আর এখনো সেভাবেই আছে। যদি প্রয়োজনে কখনো সার্ভার অন করতে হয় সেজন্য পুরাতন সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ মুছে দেয় রাফি। যেন রাফির এই ঘরময় তল্লাসি মাফিয়া গার্লের নজরে না আসে। যখন থেকে সন্দেহ শুরু হয়েছে তখন থেকে গুছিয়ে চলাই ভালো। আর সন্দেহ যদি সত্যি হয় তো রাফি এবং তার পরিবারের সবার জীবনই বিপদের মুখে।
ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৯ টা। হয়তো মাফিয়া গার্লের পাঠানো লোকগুলো চলে আসার সময় হয়েছে। রাফি মোবাইলটা হাতে তুলে নেয় টেবিল থেকে। কয়েকটা মেইল এসেছে আর সাথে মেসেজও। মাফিয়া গার্ল থেকে পাওয়া মেইল আগে চেক করে রাফি। হ্যাঁ দুইজনের ছবি আর কিছু ডিটেলস দিয়েছে মাফিয়া গার্ল তবে তাদের জাতীয়তা ভিন্ন। কিছুটা ডিটেলস পড়তে পড়তে একটা মেসেজ পায় রাফি, মাফিয়া গার্ল থেকে,
“Two of my friends are waiting at your door, its more like 1 hour. Open the door and make the server online.”
রাফি দ্রুত ম্যাপগুলো একটা ডিজেবল সার্ভারের ফাঁকে লুকিয়ে ফেলে আর বেজমেন্ট থেকে বের হয়ে সদর দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যায়। এতদিন বাইরের মানুষকে ভয় লাগলেখ এখন আপন ভাবা সাইবার কুইনকেই ভয় লাগতে শুরু করেছে রাফির।
.
বি. দ্র. কমেন্টে আপনাদের মন্তব্য আমার গল্প লেখার উৎসাহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য সবসময় কামনা করি, ধন্যবাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে