হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি পর্ব-০১

0
3123

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#সুচনা_পর্ব
#মায়াবিনী_জান্নাত_বিথী

জানালার ধারে বসে একাধারে কান্না করেই যাচ্ছি আমি।একটু আগেই আমার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। তাতে আমার তেমন কোনো আপসোস নেই।আমার কান্নার আওয়াজে আমার পাশে বসা ছেলেটা মানে যার জন্য আমার বিয়ে ভেঙ্গে গেলো সে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলেন।..

” এই মেয়ে একদম কান্না করবে না। উফফ মাথা টা ব্যাথা করে দিলো।”

“কেনো এমন করলেন আপনি।কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার। যার জন্য এমন করলেন।..??? (চিৎকার দিয়ে)

“ওরে বাবা। একটা বিয়েই তো ভেঙ্গেছে তাতে এতো কান্না করার আর চিৎকার করার কি দরকার। আজিব।”

“বিয়ে ভেঙ্গে যাক তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। শুধুমাত্র আপনার জন্য আজ আমার পরিবার আমাকে অবিশ্বাস করছে। আর আপনি আমার কোন জনমের স্বামী লাগেন হুমম।..???”

আমার কথা শুনে উনি মুচকি হাসেন। আর ড্রাইভ করায় মনোযোগ দেয়।কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না। আমার বুঝা হয়ে গেছে যে উনি আমাকে উত্তর দিবে নাকি দিবে না। তাই আমি আবার জানালা দিয়ে মুখ বের করে একটু আগেই আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা মনে করছি।

আমি দিয়া রহমান। এবার অনার্স ২ য় বর্ষের ছাত্রী। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। আমি একটু দুষ্টু হলেও ৯৯% ভালো। আমার বাবা বিজনেস করে। আর আজ আমার বিয়ে ছিলো। যদিও আমি বাবাকে বলেছিলাম বিয়ে করবো না। আগে পড়া লেখা কমপ্লিট করবো তারপর বিয়ে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।বাবার একটাই কথা বিয়ের পর ও পড়ালেখা করা যাবে। আর ছেলে নাকি অনেক ভালো। আরও কতো কি।শেষে উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে যাই। যার সাথে আমার বিয়ে তাকে আমি একটি বারের জন্যও দেখি নাই।মানে দেখার চেষ্টা করি নাই। বাবার উপর রাগ করে। যাই হোক এখন আমাকে এটাই মেনে নিতে হবে। আমাকে রেডি করে নিচে নামিয়ে আনা হয়। লাল লেহেঙ্গা হাত ভর্তি চুড়ি সারা শরীর গহনা দিয়ে মোড়া। চুল খোপা করে বেলি ফুল দিয়ে বাধা। আর মুখে হালকা মেকাপ। যাই হোক আমাকে এনে একপাশে বসানো হয়। আমার বিপরীত পাশে আদি (বর) বসে আছে।মাঝখানে পাতলা একটা পর্দা দেওয়া।কবুল বলতে যাবো ঠিক তখনই একটা ছেলে এসে আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে দাড় করায়। আর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে।..

“বেবি আমি না হয় একটু ভুল করছি তার জন্য তুমি এভাবে আমাকে রেখে আরেক জন কে বিয়ে করে নিবে।..???”

হঠাৎ এমন টা হওয়ায় আমি অনেক টা ঘাবড়ে যাই। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি হচ্ছে এসব। আর বিয়ে বাড়ির সবাই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বাবা মা অনেক টা অবাক হয়ে যায়।

“এই ছেলে কে তুমি।আর এসব কি বলছো তুমি। “(বাবা)

“দেখেন না বাবা আপনার মেয়ে কতো জেদি। ওর সাথে আমার সামান্য একটু ঝগড়া হইছে তাতেই ও নিজের স্বামি কে ছেড়ে অন্য একজন কে বিয়ে করতে যাচ্ছে।কেনো এমন করছো দিয়ু পাখি।..???

উনার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাই। ভালো করে পর্যবেক্ষক করে দেখে নেই। কিন্তু না আমি উনাকে কখনোই দেখি নাই। কথাও বলি নাই। আর বিয়ে তো অনেক দূরের কথা। উনার কথা শুনে বাবা আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে।..

“দিয়া মা এই ছেলেটা যা বলছে সব কি সত্যি..???”

আমি বাবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই অয়ন বলে উঠে।..

“বাবা দিয়ুপাখি এখন আমার উপর রেগে আছে। তাই এখন আপনি জিজ্ঞেস করলেও মিথ্যাই বলবে।তার চাইতেও ভালো আপনি আমাদের বিয়ের কাবিন নামা দেখেন। “(অয়ন)

কথাটা বলেই বাবার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয়। বাবা আমার সামনে এসে বলে..

“দিয়া কি হচ্ছে কি এসব। তুই বিয়ে করলি। তাও আবার এক বছর আগে।কেনো আমাদের বললে কি হতো। এই কারনেই বুঝি তুই সেদিন ঘুরতে যাওয়ার নাম করে কক্সবাজার বিয়ে করার জন্য গেছো।..???”

বাবার কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়ি। আমার চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

“বাবা বিশ্বাস করো আমি এসব কিছুই করি নাই। আর না আমি বিয়ে করেছি। এই লোকটাকে আমি চিনিও না।(কান্না করে)

আমার কথা শুনে বাবার আমাকে মারার জন্য হাত তুলতেই অয়ন ধরে ফেলে।..

“আমার বউয়ের গায়ে হাত দিতে আপাত আপনারা পারবেন না।Because she is my wife.

বলেই অয়ন আমাকে টেনে নিয়ে যেতে নেয়। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বলি।..

“বাবা………”

“খবরদার তুই আমাকে বাবা বলে ডাকবি না।আজ থেকে আমার কোনো মেয়ে নেই। যেই মেয়ে তার বাবার সম্মানের দিকে একটি বারও তাকায় নাই তাকে আমি কি করে মেয়ে বলে মেনে নিতে পারবো।”

কথাটা বলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মা আচল দিয়ে মুখ ঢেকে ফুফিয়ে কেদে উঠে। আদি এখনো শকড। কি হচ্ছে সব যেনো সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। অলরেডি প্রতিবেশি দের কানা ঘোসা শুরু হয়ে গেছে।অয়ন আমাকে কোলে তুলে নেয়। আর এসে গাড়িয়ে বসিয়ে দেয়।

বর্তমানে…..

গাড়ি এসে একটা বড় বাড়ির সামনে থামে। অয়ন গাড়ি থেকে নেমে আমাকেও নামিয়ে নেয়। দরজার সামনে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা আর একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে উনারা আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। অয়ন আমার হাত ধরে এগিয়ে যায়। উনাদের সামনে দাড়িয়ে বলে..

“সিমি ওকে ভেতরে নিয়ে যা। আর মা আমি একটু আসছি। ”

বলেই অয়ন সেখান থেকে চলে যায়। মধ্য বয়স্ক মহিলাটি মানে অয়নের মা আমার দুই গালে হাত রেখে বলেন..

“মাশাআল্লাহ।কি মিষ্টি তুমি মা। নাম কি তোমার।..???

আমি হালকা হেসে বলি..

“দিয়া রহমান।..”

উনারা আমাকে ভেতরে নিয়ে যায়। তারপর অয়নের বোনের সাথে আমাকে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়। রুমে যাওয়ার পর সিমি আমার হাতে একটা ড্রেস ধরিয়ে দিয়ে বলে..

“আপু ফ্রেস হয়ে নাও।”

আমি কিছু না বলে ড্রেস টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি অয়নের মা ও রুমে বসে আছে। আমাকে বের হতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলেন..

“সব ঠিক হয়ে যাবে মা। তুমি এসব কিছু ভুলে যাও। কিছুদিনের মধ্যেই তোমার জীবন আবার আগের মতো হয়ে যাবে।..

আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেই। আর বলি..

“কি ঠিক হবে আন্টি।ঠিক হওয়ার মতো আর কিছুই নেই। আমার সাথেই কেনো এমন হয়।আমি তো উনাকে চিনিও না। তাহলে কেনো উনি আমার সাথে এমন করলেন। উনি অনেক খারাপ।”

উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন..

“আমি জানি অয়ন যা করছে ঠিক করে নাই।আর সেটা ও তোমার কাছে পরিষ্কার হবে দেখিও।

চলবে কি………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে