হৃদমাঝারে পর্ব-১৪+১৫

0
995

#হৃদমাঝারে – [১৪+১৫]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা

নিজের প্রিয়জনদের কথা ভাবতেই মেহরিমার বুকটা হা হা করে উঠলো। একদিকে এতগুলা মানুষের জিবন আর অপর দিকে নিজের প্রিয়জনদের জিবন। কোন ছেড়ে কোনটা বেছে নিবে মেহরিমা তা ঠাউর করতে পারছে না সে। ফ্লোরে বসে দু-হাতে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে মেহরিমা। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে ফারাহানের মুখটা।

– আর কত সময় নিবে মুন। ভিডিওটা দিয়ে দাও।

মুখ থেকে হাত সড়িয়ে সামনে তাকায় মেহরিমা। ডক্টর ইমরান খানের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বলে,

– আপনি কি করে পারেন এতগুলা মানুষের জিবন নিয়ে খেলতে।

মেহরিমার কথার কোন জবাব না দিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক হসি হাসে সে। তারপর বলে,

– তুমি ভিডিওটা দিবে নাকি এখনি ওদের কল করবো। শুধু একটা কলের অপেক্ষা। আমি একটা কে করবো আর সাথে সাথে তিনটা লাশ পরে যাবে।

– না। চিৎকার করে মেহরিমা। তারপর নিজের মোবাইলটা তার বাবার হাতে তুলে দিয়ে বলে, এই নিন এটাতে আছে আর অপকর্ম। ডক্টর ইমরান তড়িৎগতিতে মোবাইলটা হাতে নেয়। যেন ওনি ওনার প্রান ফিরে পেল। ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে তার দুজন সহচারীকে ডেকে বলল, এই মেয়েকে তোরা আমার সামনে থেকে নিয়ে যা। আর হ্যাঁ এর সাথেও তোরা যা খুশি করতে পারিস। ডক্টর ইমরান খানের কথা শুনে লোক দিকে ললাসু দৃষ্টিতে মেহরিমার দিকে তাকাতেই মেহরিমা কেপে উঠে। তার চোখে বিরাজ করছে ভয় আতঙ্ক। অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ডক্টর ইমরান খানের দিকে কিন্তু সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। সে তো এখন মেহরিমার মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত। ডক্টর ইমরান খান রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই লোকদুটো হাতের তালু ঘসে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে মেহরিমার দিকে এগিয়ে আসে। ভয়ে মেহরিমার কুকড়িয়ে উঠে। না, না আমার কাছে আসবে না বলছি। কাছে আসবে না। না হলে আমি তোমাদের মেরে দিবো। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলে মেহরিমা। যদি ও হাতের কাছে কিছু পেয়ে যায়। যে করেই হোক ওকে তো বাচতে হবে। কিন্তু লোকদুটো ওর দুকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। মেহরিমা এবার চোখ গেলে টেবিলের উপর থাকা ছুড়িটার দিকে। দ্রুত উঠে গিয়ে ছুড়িটা হাতে তুলে নেয়। আর তাদের দিকে তাকা করে বলে, আমার কাছে আসবে না বললাম। মেরে দিবো। তোমাদের দুজনকেই মেরে দিবো। কিন্তু কে শুনে কার কথা। একটা লোক পিছন থেকে মেহরিমার হাত ধরলো অপর জন ওর হাত থেকে ছুড়িটা নিয়ে নিলো তারপর ওকে নিয়ে চলল বাড়ির বাহিরে। নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ছটফট করতে থাকে মেহরিমার। ততক্ষণে লোকদুটো ওকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। মুখের উপর শীতল কিছু পড়তেই চোখ বন্ধকরে নেয় মেহরিমার। তবে কি শেষ হয়ে যাবে ও।

চোখ খুলে নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে মেহরিমা। ধপ করে উঠে চারিদিকে চোখ বুলায়। বুঝতে বাকি রইলো না এটা ওদের-ই খামার বাড়ি। তখনি দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেলো। মেহরিমার বুঝতে বাকি রইলো না কেউ ভিতরে আসছে। মেহরিমা আবার আগের ন্যায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। একটা লোক ভিতরে এসে দেখলো মেহরিমা এখনো অঞ্জান হয়ে আছে সে বলে উঠলো,

– এই মেয়েটার কখন যে ঞ্জান ফিরবে। আমার তো আর অপেক্ষা ভালো লাগছে না। এই শরীরের উপর আমার নেশা লেগে গেছে। উহ্ মেয়েটার ঞ্জান কেন ফিরছে না।

লোকটার কথাগুলো জড়ানো ছিলো। মেহরিমার বুঝতে অসুবিধা হলো না লোকটা নেশাক্ত। নেশার ঘোরে বলছে কথগুলো। মেহরিমা যতটা সম্ভব নিজেকে শক্ত করে নিলো। যে করেই হোক এই বিপদ থেকে তাকে বের হতেই হবে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন দেখলো মেহরিমা সাড়া দিচ্ছে না তখন লোকটা ফিরে যায়। আর যাওয়ার আগে নেশালো কন্ঠে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে গেলো।

লোকটা চলে যেতেই মেহরিমা উঠে বসে। নিঃশব্দ চরণে সামনে পা ফেলে এগোতে থাকে। বাড়ির পিছনে এগোতেই দেখলো কয়েকজন লোক মিলে গরুর ঘর পরিষ্কার করছে। মেহরিমা ঘরের পিছনের দিক দিয়ে নিঃশব্দে চলে আসে খামার বাড়ির বাহিরে। সরু চিকন রাস্তা ধরে সামনে দিকে দৌড়ে আসছে মেহরিমা। মাথাটা ভিষন ব্যাথা করছে তার। মাঝে মাঝে দু-হাতে মাথা চেপে ধরে দৌড়াচ্ছে। কিছুসময় পর মেইন রাস্তায় এসে পৌছায় সে। মেইন রাস্তায় এসে এদিক ওদিকে তাকাতেই পিছনে হট্টগোলের শব্দ শুনতে পেলো। পিছনের দিকে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল কয়েকজন লোক দৌড়ে ওর দিকেই আসছে। মেহরিমার আর বুঝতে বাকি রইলো না লোকগুলো কারা? কোন কিছু না ভেবে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলো। এদিকে মাথা ব্যাথাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছ যে মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। হঠাৎ দেখতে পেলো সামনের দিকে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে ওর দিকে। একবার মাথা ঘুড়িয়ে পিছনের দিকে তাকালো মেহরিমা। পিছনে লোকগুলো এখনো আসছে। মেহরিমার একবার মনে হলো এই লোকগুলোর হাতে পরার চেয়ে গাড়ির নিচে চাপা পরাটা ওর জন্যে ভালো হবে। তাই আর কোন কিছু চিন্তা না করে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আর তখনি গাড়িটা দ্রুত ব্রেক করলো। ঘটনাক্রমে গাড়ির ভিতরের সবাই সামনের দিলে ঝুকে পরে। আর মেহরিমা এখনো চোখ বন্ধ করে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির ভিতর থেকে দুজন লোক এসে মেহরিমার সামনে এসে দাঁড়াতেই তারা অবাক চোখে মেহরিমাকে দেখে বলে,

– মুন। এই মুন কি হয়েছে তোর?

চোখ খুলে সামনে তাকায় মেহরিমা। চোখের সামনে আকাশ ও তার বাবাকে দেখে মেহরিমার মুখে হাসির ঝলক দেখা যায়। মুখে হাসি ফুটলেও চোখে তার আতঙ্ক। তড়িৎগতিতে আকাশের বুকে ঝাপিয়ে পরে মেহরিমা। আর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আকাশ মেহরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আকাশের বাবা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওদের দুজনের দিকে।

সুফার চুপচাপ বসে আছে মেহরিমা। মেহরিমার পাশে বসে ওর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে আকাশের মা। ওর সামনে বসে আছে আকাশ ও তার বাবা। মেহরিমা মাথা নিচু বসে আছে। আকাশে বাবা ওকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলে উঠলো,

– কি হয়েছে মুন? এভাবে হই রোডে দৌড়াচ্ছিলে কেন?

মেহরিমা মাথা তুলে আকাশের বাবার দিকে তাকায়। মেহরিমার চোখ-মুখে আতঙ্ক। এটা দেখে আকাশের বাবা আবারও বলে উঠলো,

– কিসের এত ভয় পাচ্ছো মুন। ভুলে যেওনা আমি একজন সিনিয়র কমিশনড অফিসার। আমাকে তুমি সবটা বলতে পারো।

মেহরিমা বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে। মনে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে বলতে শুরু করলো। ওর বাবা ও তার করা কাজের ব্যাপার এমনকি সেই ভিডিওটার ব্যপারে সবটা বলল। সব শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। আকাশ ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

– হ্যাঁ বাবা মুন ঠিক বলেছে। শিশু পাচার ওরগান বিক্রি স্মগলিং এমনি ড্রাগস সহ আরো অনেক অপকর্মের সাথে যুক্ত ইমরান আংকেল। আমি আর মুন মিলে থানায় একটা ডাইরি করে এসেছি।

– কিন্তু ওই পুলিশ ও বাবার টাকার কেনা গোলাম। মুন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

আকাশের বাবা মুনের মাথায় হাত রেখে বলল, আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি মা। আমি দেখছি ব্যাপারটা। আমার একটা বন্ধু আছে। সে সিনিয়র পুলিশ কমিশনার। ওর সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করবো আর যত দ্রুত সম্ভব ইমরানকে ওর করা পাপের শাস্তি দিবো। তবে মুন আকাশ আমি চাইনা তোমরা এই বিষয়ে বাহিরে আলোচনা করো। তাতে তোমাদের বিপদ-ই বাড়বে বৈ কমবে না। নিজের খেয়াল রেখো মুন।

আকাশের বাবার কথা শুনে মুন এক টুকরো আশার আলো খুজে পেলো। এত চিন্তার মাঝেও তার ঠোঁটে ফুটে উঠলো হাসি। অতঃপর বলল,

– আমরা কাউকে কিছু বলবো না আংকেল। তুমি তোমার বন্ধুর সাথে এই বিষয়ে কথা বল। আর যত দ্রুত সম্ভব ইমরান খানকে শাস্তুি দাও।

১১,
আজ দুদিন হলো মেহরিমার সাথে কোন যোগাযোগ নেই ফারহানের। মেহরিমা কলেজে আসছে না। কল করলে ফোন সুইচ অফ বলছে। ফারাহান মেহরিমার বাড়ির ঠিকানাটাও জানে না আর না আছে ওর বাড়ির কারো নাম্বার। মেহরিমাকে দেখতে না পেয়ে প্রায় পাগল হয়ে গেছে সে। সারাক্ষণ মেহরিমার চিন্তায় মগ্ন সে। পার্কিং লটে গাড়ির উপর চিৎ হয়ে শুয়ে মুখের উপর ক্যাপ দিয়ে রেখেছে ফারহান। মেহরিমার কথাই ভাবছে সে এখন। কি হয়েছে মেহরিমার? ওর নাম্বারটা বন্ধ কেন? আচ্ছা মেহরিমা ঠিক আছে তো! এরকম আকাশ পাতাল চিন্তা করছে সে। তখন ওর এক বন্ধ সুজন বলে উঠলো, ওই তো মেহরিমা আসছে।

#হৃদমাঝারে – [১৫]

দূর থেকে মেহরিমাকে এক নজর দেখে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায় ফারহান। মনের মাঝে জমেছে একরাশ অভিমান। মেহরিমা কেন তার সাথে কোন যোগাযোগ রাখে নি। ও কি জানেনা ওর সাথে একদিন কথা বলতে না পরলে ফারহানের রাতে ঘুম হয়না। মেহরিমার মুখখানা না দেখলে ফারাহানের বুকে অশান্তির ঝড় বয়ে যায় তাহলে কেন মেহরিমা তার সাথে এই দুদিন কোন যোগাযোগ রাখে নি। অভিমানে অন্যদিকে ঘুরে তাকায় ফারহান। মেহরিমা ধীর পায়ে ফারাহানের কাছে আসলে সুজন সেখান থেকে চলে যায়। ফারহান এখনো অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে বসে আছে। মেহরিমা বড় কর শ্বাস ত্যাগ করে বলে,

– রেগে আছো আমার উপর?

ফারহান এবার ও কোন জবাব দেয় না। মেহরিমা বুঝতে পারলো ফারহানের অভিমানটা গাঢ় হয়ে আছে।স্মিত হাসলো মেহরিমা তারপর আবার বলল,

– এই দেখো ফারহান আমি কান ধরছি। এবার তো আমার দিকে তাকাও। কানে হাত রাখে মেহরিমা। কি হলো ফারহান তাকাও আমার দিকে। প্লিজ ফারহান। ফারহান এবার গাড়ি থেকে নেমে আসে। আর মেহরিমার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহরিমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ তারপর মেহরিমার কান থেকে হাত ছাড়িয়ে নিজের হাতে মুষ্ঠিতে আবদ্ধ করে মেহরিমার হাত। অতঃপর বলে,

– কোথায় ছিলে তুমি। তোমার ফোন সুইচ অফ কেন? তুমি জানো তোমার চিন্তায় পাগল হয়ে গেছি আমি। ফারহান মেহরিমার গালে হাত রেখে ওর কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়। ভালোবাসার পরশে নিজের চোখদুটি বন্ধকরে নেয় মেহরিমা। ফারহান মেহরিমার দুইগালে চুমু খায়। মেহরিমা দু-হাতে ফারাহানের শার্ট খামচে ধরে। তারপর ফারহান নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মেহরিমার অধোরে স্লাইড করতে থাকে। মেহরিমা বারবার কেপে উঠছে আর ঘনঘন শ্বাস ত্যাগ করছে। ফারহান একমনে তাকিয়ে থাকে মেহরিমা গোলাপি কাপা ঠোটের দিকে। নেশায় মাতোয়ারা সে। কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে মেহরিমাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায় সে। দাঁত দিয়ে অধোর চেপে ধরে বড় বড় করে শ্বাস নিতে থাকে। এটা কি করতে যাচ্ছিলো সে। এটা অন্যায়। অপরদিকে মেহরিমা চোখ খুলে সামনে ফারহানকে দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক তাকায়। ফারহানকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেহরিমা ওর পাশে দিয়ে দাঁড়ায়। ফারহান মেহরিমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে বলে,

– সরি মেহরিমা। আই রিয়্যলি সরি।

– ইটস্ ওকে ফারহান। তাছাড়া তোমার স্পর্শ আমার খারাপ লাগে না। আমার মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো তোমার ভালোবাসায় প্রাণ ফিরে পায়। ফারহানের হাতে নিজের হাত ডুবিয়ে বলে মেহরিমা। ফারহান মেহরিমার হাত শক্তকরে ধরে ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তখন দূর থেকে কেউ মুন মুন বলে চিৎকার করে ডাকে। মেহরিমা পিছনের দিকে ঘুরে রনিকে দেখে একগাল হাসলো। তারপর ফারাহানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে রনির কাছে চলে আসলো।

সেদিন রনির সাথে নাইট ক্লাবে যায় মেহরিমা। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রনির কথায় অতিরিক্ত ড্রিংক করে ফেলে যার ফলে নিজের ভারসাম্য হাড়িয়ে যায়। নেশা হয়ে যায় তার। নেশার ঘোরে রনিকে ফারহান ভাবতে শুরু করে।

থাই গ্লাসের কাচ বেদ করে সূর্যের লাল রশ্নি এসে মুখে পরতেই ঘুম ভাঙে মেহরিমার। ঘোমের ঘোরে সে অনুভব করলো কেও তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। কারো বাহুবন্ধনে আবদ্ধ সে। চট করে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই মাথা কাজ করা বন্ধকরে দেয়। আপনাআপনি তার হাত মাথায় চলে যায়। তখনি মনে পরে কাল রাতে তো ও রনির সাথে ছিলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার। অশ্রুসিক্ত নয়নে সামনে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বলল,

– র-রনি। আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস তুই। কি করেছিস আমার সাথে।

রনি কোন জবাব দিচ্ছে না দেখে মেহরিমা সজোরে ওকে ধাক্কা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায় রনি। চমকে উঠে মেহরিমার দিকে তাকায়। ততক্ষণে মেহরিমার চোখ দিয়ে জল পরতে শুরু করেছে। নিজের মনে হাসলো রনি। সেটাতার মুখে প্রকাশ পেলো না। মেহরিমার মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে উঠে আবার গিয়ে মেহরিমার পাশে বসে।মেহরিমার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

– এখন কাঁদছিস কেন? কাল রাতে তো,,,

– চুপ কর। কেন করলি তুই আমার সাথে এরকমটা। রনির কলার চেপে ধরে মেহরিমা। রনি দু-হাতে মেহরিমার হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, কেন আবার? তোর মতো একজন হ*ট মেয়ের উপর যে কোন ছেলের-ই লোভ থাকতে পারে। আমারও ছিলো। তোর শরীরের উপর আমার অনেক দিনের লোভ ছিলো তাই আজ সুযোগ পেয়েছি আর কাজে লাগিয়েছি। তাছাড়া তুই তো জানিস মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলা আমার একটা নেশা।

মেহরিমা অবাক দৃষ্টিতে তাকায় রনির দিকে। এটা কি সেই রনি যাকে ও এতদিন ধরে চিনতো। না এটা সে রনি নয়। রনি ওকে সব সময় প্রটেক্ট করতো। তাহলে আজ এমন কেন করছে রনি। মেহরিমা রনিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই করতালির শব্দ শুনতে পায় দুজনে। শব্দের সোর্স সন্ধানের সামনে তাকাতেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে মেহরিমার। ফারহান করতালি বাজিয়ে ওর দিকেই আসছে। মেহরিমা নিঃপলক তাকিয়ে রইলো ফারহানের মুখের দিকে। মাথায় এলোমেলো চুল। চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। নাকের মাথাটা লাল আর সেটা মাঝে মাঝে ফুলে উঠছে। ধীর পায়ে মেহরিমার সামনে এসে দাঁড়ায় ফারহান। ওর দিকে তাকিয়ে তাছিল্যের হাসি হাসে সে। তারপর রনির দিকে তাকিয়ে বলে,

– ধন্যবাদ রনি। এই থার্ডক্লাস মেয়ের আসল রুপটা আমার সামনে আনার জন্যে। আমার চোখ খুলে দেওয়ার জন্যে তোকে ধন্যবাদ। কথা বলতে পারছে না ফারহান। কথাগুলো বারবার গলায় আটকিয়ে যাচ্ছে। চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। মেহরিমা ফারাহানের সামনে গিয়ে জড়ানো গলায় বলে,

– এসব তুমি কি বলছো ফারহান। একবার আমার কথাটা শুনো। তুমি ভুল বুঝছো ফারহান। প্লিজ একটা বার,,,

– আর কি শুনাবে তুমি আমাকে। নিজের চোখেই তো সবটা দেখলাম।

– তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

– আমার ভুল হচ্ছে। হ্যাঁ আমার-ই তো ভুল। তোমাকে ভালোবাসাটা আমার ভুল। তোমাকে বিশ্বাস করটা আমার ভুল। নিজের চোখে যেটা দেখলাম সেটাও ভুল। আচ্ছা তাহলে তুমিই বলো, সারারাত ধরে কি করছো এই হটেলে? আর তোমার পরনে ওয়েস্টার্ন ড্রেস কেন? তুমি তো আমাকে কথা দিয়েছিলে বাহিরে খোলামেলা পোষাক পরে ঘুরাফেরা করবে না। বলো কোনটা মিথ্যে আর কোনটা সত্যি। চিৎকার করে উঠে ফারহান। ফারহানের চিৎকারে কেপে উঠে মেহরিমা। মেহরিমা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই ফারহান ওকে থামিয়ে বলে, ব্রেকআপ। তোমার মতো একটা অসভ্য থার্ডক্লাস মেয়ের সাথে আমার কোন রিলেশন নেই। আর কখনো আমাকে তোমার এই নোংরা মুখ দেখাবে না।

– না, তুমি এমনটা করতে পারো না ফারহান। কেঁদেকেঁদে বলে মেহরিমা। তারপর দু-হাতে ফারহানের হাত ধরে বলে, এসব মিথ্যে, আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি। ফারহান মেহরিমার কথা শুনে কিছু বলে না। ঠোট কামড়ে হাসার চেষ্টা করে। তখন পাশ থেকে রনি বলে,

– সত্যি, সব সত্যি। আর এটাও সত্যি যে তোর সাথে আমার ফিজিক্যাল রিলেশন আরো আগে থেকে আছে। তাছাড়া তুই শুধু আমার সাথে নয় আরো অনেক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে তোর। তার প্রমান ও আছে আমার কাছে। রনি ওর পকেট থেকে মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি দেখায় ফারহানকে যেখানে আকাশ আর মেহরিমা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছবিগুলো দেখে ফারহান ঘৃনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেহরিমার দিকে। তার ওকে আরো অনেক খারাপ কথা বলে চলে যায়। মেহরিমা সেখানেই হাটু গেরে বসে কাঁদতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুখে উঠে দাড়ায় মেহরিমা। রনির কাছে গিয়ে ওর কলার চেপে ধরে বলে,

– কেন করলি আমার সাথে এমনটা। আমি জানি তুই আমার সাথে খারাপ কিছুই করিস নি। যদি আমার সাথে খারাপ কিছু হলো তাহলে আমি সেটা ফিল করতে পারতাম। তাহলে ফারহানকে মিথ্যে কেন বললি।

– বেশ করেছি। মিথ্যে বলেছি বেশ করেছি। এত এত ছেলে থাকতে তুই কেন ফারহানের সাথেই প্রেম করলি। শালা, ওকে আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। আমার সামনে তোর সাথে প্রেম করে বেড়াবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো সেটা তো হয়না। মেহরিমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রনি। তারপর বলে, তুই সত্যি বলেছিস আমি তোর সাথে কিছু করিনি। শুধু ফারহানকে দেখিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলাম।

তারপর মেহরিমা ফারহানের সাথে অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু ফারহান ওকে সব সময় এড়িয়ে চলেছে। মেহরিমার কোন কথাই সে শুনেনি। তারপরেই মেহরিমা কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর আর কোনদিন তাদের দেখা হয়নি।

১১,
ফেলে আসা অতীতের কথা মনে পড়তে চোখদুটো থেকে জল গড়িয়ে পরলো। গিটারটা শক্তকরে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসে পড়লো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

– আমি তো তোমাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম, তাহলে কেন তুমি আমাকে ঠকালে। আমাকে ছাড়া তো তুমি দিব্যি ভালো আছো শুধু আমিই ভালো থাকতে পারিনি। ভেবেছিলাম দূরে সরে গেলে তোমাকে ভুলতে পারবো কিন্তু না। আমি ভুল। তোমাকে ভুলতে পারিনি বরং, দূরত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তুমি আমার #হৃদমাঝারে আছো।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে