হৃদমাঝারে পর্ব-১২+১৩

0
1007

#হৃদমাঝারে – [১২+১৩]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা

১০,
কেটে গেছে আরো দুইদিন। মেহরিমা নার্সিংহোম থেকে তার নানুভাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে যায়। সবাই এটা নিয়ে প্রশ্ন করলে মেহরিমা প্রশ্নগুলো সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে।এনআর নার্সিংহোমের যত ঔষুদ আছে সব নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। আর তার নানুভাইয়ের জন্যে বাহিরের অন্য এক ফার্মেসী থেকে ঔষুদ দিয়ে বলল,

– মামা, তুমি নানুভাইকে এখন থেকে এই ঔষুদগুলো দিবে।দেখবে নানুভাই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ মামা, তোমাকে একটা কথা দিতে হবে।

– কি কথা? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো মেহরিমার মামা।

মেহরিমা একটা আমতা আমতা করে বলল,
– না মানে, না মানে, আসলে আমি যে ঔষুদগুলো বদলে দিয়েছি সেটা তুমি কাউকে বলবে না।

– মানে!

– পরে আমি তোমাকে সবটা বলবো। এখন আমার হাতে সময় নেই মামা। আমাকে বের হতে হবে। উঠে দাঁড়ায় মেহরিমা।

– কোথায় যাবি তুই এই অবেলায়?

– পুলিশস্টেশনে।

মেহরিমার কথা শুনে ওর মামা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। ততক্ষণ মেহরিমা ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। দরজার সামনে অর্ণার মুখোমুখি হতেই মেহরিমা অর্ণার কাঁধেও হাত রেখে বলল, নানুভাইয়ের খেয়াল রাখিস। তারপর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।

নিজের রুমে এসে বিছানায় লেপটপ নিয়ে বসলো মেহরিমা। পকেট থেকে মোবাইল বের করে বিছানার উপর রেখে দিলো। মোবাইলে থাকা ভিডিওটা লেপটপে নিজের নামে একটা ফাইল তৈরী করে সেটাতে রেখে দিলো।

পুলিশস্টেশনে সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহরিমা। এখানে আসার আগে সে আকাশকে কল করে বলে দিয়েছে পুলিশস্টেশনে আসতে আর এখন সে এখানে দাঁড়িয়ে আকাশের জন্যেই অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর মেহরিমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্কিনে দেখতে পেলো একটা অচেনা নাম্বার। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কলটা রিসিভ করলো মেহরিমা। কানের কাছে মোবাইটা ধরতেই ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,

– কোথায় তুমি মেহরিমা? কলেজে আসছো না কেন? তুমি জানো দুদিন ধরে তোমার খোঁজ না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।

ফোনের ওপাশে থাকা লোকটাকে চিনতে না পেরে বলে উঠলো,
– কে আপনি? আর আমাকে খুঁজে আপনি পাগল হচ্ছেন মানে কি? হু আর ইউ?

– ফারহান। ফারহান সাদিক আমি। মেহরিমা কোথায় তুমি? তুমি জানো কোথায় কোথায় খুঁজেছি তোমাকে, তোমার কোন ধারনা আছে?

ফারহানের কথা শুনে মেহরিমা স্মিত হাসলো। তারপর বলল,
– কেন খুঁজছেন আমাকে?

– তুমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারো না মেহু। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফারহান।

– আমি আমার বাড়িতে এসেছি। আসলে হঠাৎ নানুভাই অসুস্থ হয়ে পরেছে তো তাই।

– ওহ। এখান ঠিক আছে তোমার নানুভাই।

– আগের থেকে বেটার।

– কবে ফিরবে?

– খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো। আচ্ছা আমি এখন রাখছি কেমন। পরে তোমার সাথে কথা বলবো। তারপর ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয় মেহরিমা।

কিছুক্ষণ পর আকাশ আসে পুলিশস্টেশনের সামনে। আকাশ আসতেই দুজনে এক সাথে ভিতরে যায়। থানার ভিতরে ডুকেই ওরা সোজা চলে যায় ও সি সাহেবের রুমে। তারপর তাদের মাঝে কথা হয়। মেহরিমা ওসি সাহেবকে ভিডিওটা দেখাতেই তিনি চমকে উঠে। উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,

– তুমি, তুমি এই ভিডিওটা কোথায় পেলে?

– এনআর নার্সিংহোমে।

মেহরিমার জবাব শুনে থানার ওসি কিছুটা আতকে উঠে। আর বলে,
– এই মেয়ে তুমি এনআর নার্সিংহোমে পৌঁছালে কি করে। মেহরিমা আর আকাশ দুজনেই তার দিকে প্রশ্নের দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি আবার বলে উঠে,
না মানে বলছিলাম যে, ওখানে তো অনেক রিক্স তুমি কি করে সেখানে গেলে।

– ওনাকে অনেক রিক্স সেটা আপনি কি করে জানলেন? প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আকাশ।

– দেখুন মিস্টার,,

– আকাশ, আকাশ আমার নাম।

– হ্যাঁ, মিস্টার আকাশ। বলছিলাম যে যারা এই ধরনের কাজ করে তারা খুব ডেঞ্জারাস হয় এই আর কি।

– আপনি হয়তো জানেন না ডক্টর ইমরান খান আমার বায়োলজিক্যাল বাবা। হ্যাঁ ডক্টর ইমরান খানের মেয়ে আমি। তাই আমি এনআর নার্সিংহোমের প্রতিটা কোনে আমি পৌঁছাতে পারি।

মেহরিমার কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠে,ওসি সাহেব। তারপর বলে,

– ঠিক আছে তুমি ভিডিওটা এখানে রেখে যাও আমি দেখছি।

– দেখছি মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি? আকাশ কিছুটা রেগে উঠে। নিজের ওষ্ঠদ্বয় দাত দিয়ে চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করে বলে, দেখুন আমরা এখানে ডক্টর ইমরান খানের বিরুদ্ধ কমপ্লেন করতে এসেছি। ওনার নার্সিংহোমে এরকম বেআইনি কারবার হয়। তাছাড়া ডক্টর ইমরান খানের আরো অনেক কুকৃত্রি আছে যেগুলোর প্রমান আমাদের কাছে নেই। আপনার খুজে বের করুন। আর অপরাধীকে তার কৃতকর্মের শাস্তি দিন।

আকাশ আর মেহরিমার কথা শুনে ওসি সাহেব কিছুটা ঘাবড়ে যাবে। তবে কি করার, কমপ্লেইন করতে এসেছে সেটা তো করতেই হবে।

ডিনার শেষ বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মেহরিমার মনে পরে ফারহানের কথা। বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করে ফারহানের নাম্বারটা দেখে নেয়। একগাল হেসে নাম্বারটা মোবাইলে সেইভ করে নেয়। তারপর ডায়াল করে ফারহানের নাম্বারে। রিং হতেই ফারহান কল রিসিভ করে বলে,

– এতক্ষণে মনে পড়লো তাহলে!

– হুম। তা আপনি বুঝি আমার কলের অপেক্ষা করছিলেন।

– হ্যাঁ, করছিলাম -ই তো। আচ্ছা মেহরিমা, আমি কিন্তু আমার এ্যনসারটা এখনো পেলাম না।

– কোন এ্যনসার। ভ্রু কুঁচকায় মেহরিমা।

– সত্যিই বুঝতে পারছো না তুমি?

– না বুঝতে পারছিনা। আপনি বলুন তো কিসের এ্যানসার?

– ভা-ভালোবাসো আমায়?

কোন জবাব দেয় না মেহরিমা। স্মিত হেসে বলে,
– না, ভালোবাসি না আপনাকে।

– সত্যি বলছো?

– হুম, সত্যিই বলছি।

– তাহলে এত রাতে কল কেন করেছো।

– আমার ভুল হয়ে গেছে। এত রাতে আপনাকে কল করা, আমার ভুল হয়ে গেছে। রাখছি। বলেই কল কেটে দেয় মেহরিমা। কান থেকে মোবাইলটা নামিয়ে স্কিনের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে। তারপর বলে উঠে, ভালোবাসি তো আপনাকে, খুব ভালোবাসি।

মোবাইলটা পাশে রেখে ঘুমিয়ে পরে মেহরিমা। পরেরদিন সকালে রাজুর ফোনে ঘুম ভাঙে মেহরিমার। ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করে বলে,

– কিরে রাজু, এত সাতসকালে কেন কল করেছিস?

– এখানো সকাল। একটু শক্ত গলায় বলে রাজু। ঘড়ি দিকে তাকিয়ে দেখ কটা বাজে।

– সেটা জেনে আমার লাভ নাই রে। কেন কল করেছিস সেটা বল।

– কাল বায়োলজির প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস আছে সেটা কি তুই ভুলে গেছিস মেহু।

– ওহ হো। মাথায় হাত রাখে মেহরিমা। আমি একদম ভুলে গেছিরে। আসলে এখানে এসে এত বাজে ভাবে ফেসে গেছি না সব গোলমাল হয়ে গেছে আমার।

– কি হয়েছে রে মেহু। তুই ঠিক আছিস তো।কি- কি গোলমাল হয়েছে? উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে রাজু।

– আমি একদম ঠিক আছি। তুই কোন চিন্তা করিস না। রাখছি কেমন। এই বলে কল কেটে দেয় মেহরিমা। মোবাইলটা বিছানার উপর রেখে হাতের নোখ কামড়াতে থাকে আর ভাবতে থাকে এখন তার কি করা উচিৎ। এদিকে নিজের বাবার নামে পুলিশে কমপ্লেন করেছে আর অপর দিকে তার ক্লাস। দুটোই তার জন্যে ইম্পরট্যান্ট। ডক্টর ইমরান খানের মুখোশ খুলতেই হবে। তা না হলে আরো কত অসহায় নিরহের প্রাণ যাবে তার কে জানে। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর ওর মাথায় একটা নামই আসে, আকাশ। সাথে সাথে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে মেহরিমার। মোবাইলটা হাতে নিয়ে আকাশের নাম্বারে কল দেয় মেহরিমা। তারপর ওকে বলে,

– হ্যাঁ আকাশ। আমার সাথে একটু দেখা করতে পারে।
ওপাশের কথা শুনে দুঠোট প্রসারিত করে হাসে মেহরিমা তারপর ঠিক আছে বলে কল কেটে দেয়। মোবাইলটা বিছানায় রাখতেই সেটা আবারও বেজে উঠলো। বেশ বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাদকাতেই মুখটা চুপসে যায় মেহরিমা। স্কিনে জ্বলমল করছে বাবা নামটা। কাপাকাপা হাতে মোবাইলটা ধরতে গিয়েও হাত নামিয়ে নেয় মেহরিমা। কি বলবে ও। কি বা বলার আছে। যে ওকে এই পৃথীবিতে এনেছে তার নামেই ও পুলিশে কমপ্লেন করেছে। আচ্ছা বাবা যদি জিগ্যেস করে তাহলে কি জবাব দিবো। ভাবতেই কেপে উঠে মেহেরিমা। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে মোবাইলের দিকে।

#হৃদমাঝারে – [১৩]

কাপাকাপা হাতে মোবাইলটা নিয়ে কলটা রিসিভ করে মেহরিমা।

– হ্যাঁ, হ্যাঁ ডক্টর খান বলুন। কথাটা বলা শেষ মাত্রই মেহরিমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে। ওপাশ থেকে শুনতে পেল ডক্টর ইমরান খানের কঠিন কন্ঠশ্বর।

– কমপ্লেনটা তুলে নাও।

– কখনো না।

– যদি নিজের ভালো চাও তাহলে কমপ্লেনটা তুলে নাও আর তোমার কাছে থাকা ভিডিওটা আমাকে দিয়ে দাও। না হলে তোমাকেও,,,

ডক্টর ইমরান খানের কথা শুনে দাঁত চেপে হাসে মেহরিমার। তারপর বলে,
– উহ্, আপনি কখনোই এই ভিডিওটা পাবেন না। এবার লোকসম্মুকে আপনার ভালো মানুষের মুখোশ খুলে দিবো। ডক্টর ইমরান খান, অনেক অপরাধ করেছেন আপনি এবার আপনার শাস্তি পেতেই হবে।

– তুমি ভুল করছো?

– আমার জিবনটাই তো ভুল ডক্টর ইমরান খান। জন্মের দিন নানা মারা যায় আর তার পরেই দাদি। ওহ্ সরি দাদিকে তো আপনি মেরেছেন। কি ঠিক বললাম তো?

ডক্টর ইমরান খান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। যবে থেকে এই মেয়েটা পৃথীবিতে এসেছে তখন থেকেই তিনি একটা একটা ঝামেলায় সম্মুখীন হচ্ছে। যার কারনে নিজের মা-কেও খুন করেছেন ডক্টর ইমরান খান। এবার এই মেয়েটার একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে। খুব বেড়েছে এই মেয়েটা। কেন যে সেদিন এই মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সে। এখন আফসোস হয় ডক্টর ইমরান খানের। ডক্টর ইমরান খান তার চোয়াল শক্ত করে বলে,

– তুমি ভিডিওটা আমাকে দিবে। আর আজকের মধ্যেই কমপ্লেইনটা তুলে নিবে। না হলে এর ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে।

ডক্টর ইমরান খানের কথা শুনে স্মিত হাসে মেহরিমা। অধোর চেপে বলে, ঠিক আছে, আমিও দেখি আপনি আর কি কি করতে পারেন। কথাটা বলে কল কেটে দেয় মেহরিমা। বড় করে শ্বাস ত্যাগ ও ভাবেই বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

পরেরদিন সকালেই মেহরিমা রওনা দেয় কলেজের উদ্দেশ্যে। কলেজ গেটের কাছে আসতেই ফারহান এসে মেহরিমার হাত ধরে টেনে ওর গাড়িতে বসিয়ে দেয়। মেহরিমা কিছু বলতে যাবে তখন ফারহান ওর ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দেয়। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামে একটা নির্জন জায়গায়। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে মেহরিমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়েই মেহরিমাকে জড়িয়ে ধরে। ঘটনার আকস্মিক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে মেহরিমা।

– কি করে পারো তুমি আমাকে এত কষ্ট দিতে।

মেহরিমা কিছু বলে না। আসলে ও বুঝতে পারছে না ওর এখন কি বলা উচিৎ। আস্তে আস্তে মেহরিমা ওর হাত উঠায় ফারহানের পিঠে। মেহরিমার হাত বিচরণ করছে ফারহানের পুরো পিঠ জুড়ে। কিছুক্ষণ পর ফারহান মেহরিমাকে ছেড়ে ওর দুই গালে হাত রেখপ বলে উঠে,

– ভালোবাসি মেহু। খুব ভালোবাসি।

– আমিও তোমাকে ভালোবাসি ফারহান।

মেহরিমার জবাব শুনে ফারহানের চোখমুখ উজ্জল হয়ে যায়। অধোরে হাসি ফুটে উঠে তার। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ফারাহানের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আসলে মেহরিমা যে এখন তাকে ভালোবাসার কথা বলবে সেটা বুঝতে পারে নি ফারহান। তাই সে বুঝতে একটু সময় নিচ্ছে। মেহরিমা ফারহানের হাতের উপর হাত রাখে। অতঃপর বলে,

– তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলা তখনি আমি হাড়িয়ে গিয়েছিলাম তোমার ওই বাদামি চোখে। তোমার কাছে থাকে আমার অদ্ভুত এত ফিলিং হয়। আমি জানিনা সেই ফিলিংক্স এর নাম। তবে এটু বলতে পারি আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। সারাটা জিবন তোমার সাথে কাটাতে চাই ফারহান। আই লাভ ইউ।

– আই লাভ ইউ টু। বলেই ফারহান মেহরিমা কপালের সাথে তার নিজের কপাল ঠেকিয়ে নেয়। আর তখনি মেহরিমা টুপ করে ফারহানের ওষ্ঠে কিছু করে। মেহরিমা ফারহানের থেকে সরে আসতে চাইলে ফারহান এক হাতে মেহরিমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আর বলে,

– ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছ কেন? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো আর আমাকে একটু শ্বাস নিতে দাও। ফারহান মেহরিমার নাকের সাথে ওর নাকটা ঘষতে থাকে। মেহেরিমা মৃদু হেসে ফারহানের কলার চেপে ধরে।

১০,
মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে ডক্টর ইমরান খান। ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে তার শয়তানি হাসি। মোবাইলের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে মেহেরিমা ও ফারহানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় টুকু। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর এটা দেখেই শয়তানি হাসি হাসছে ডক্টর ইমরান খান আর মনে মনে প্ল্যান করছে। কিছুক্ষণ পর একটা নাম্বারে ডায়াল করলে সে। টিটটিট শব্দ হতেই ওপাশ থেকে কেউ কলটা রিসিভ করে। তখন ডক্টর ইমরান খান বলতে শুরু করে,

– ছেলেটা কে?

ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল। যেটা শুনে ডক্টর ইমরান খান স্মিত হেসে বলে,

– তুমি ওদের উপর নজর রাখো। সময় হলে আমি জানিয়ে দিবো কি করতে হবে। আর হ্যাঁ, আমার কিন্তু টাইম টু টাইম আপডেট চাই।

ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে অট্টহাসিতে ভেঙে পরে ডক্টর ইমরান খান। তারপর সে কল কেটে দেয়। মোবাইলের স্কিনের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর সেটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। দাঁত চেপে বলে,

– আমার নামে থানায় কমপ্লেন করেছো তুমি মুন। তোমার জিবনটা আমি নরকে পরিণিত করে দিবো।
আমার ভাবতেই অবাক লাগছে তোমার শরীরে আমার রক্ত বয়ছে।

সেদিন আর ক্লাস করা হলো না মেহরিমার। সারাদিন ফারাহানের সাথেই কাটিয়ে দিলো। গল্প আড্ডা খাওয়া আর রোমাঞ্চে ভরপুর ছিলো দিনটি। পরেরদিন ক্লাস করছে মেহরিমা এমন সময় আকাশ কল করে। আর বলে, পুলিশ ওকে ডাকছে। ডক্টর ইমরান খনের এরেস্ট ওয়ারেন্ট এসে গেছে। তার জন্যে মেহরিমার একটা সই লাগবে। তাই সেদিন কোনমতে ক্লাস শেষ করে মেহরিমা ফিরে তার নিজ বাড়িতে। মিঠুর সেদিন ক্লাস ছিলো না সেও বাসায় ছিলো। বাড়ি ফিরতেই ডক্টর ইমরান খান আবার দেখা করে মেহরিমার সাথে। রাত তখন এগারোটা বাজে ছুঁইছুঁই।

– ভিডিওটা আমাকে দিয়ে দাও মুন।

– কখনোই না। আমি আপনাকে এই ভিডিওটা দিবো না। একটু পর পুলিশ আসছে আপনাকে গ্রেফতার করতে তৈরী থাকুন। আপনি যে অপরাধ করেছে তাতে আপনার বাকি জিবনটা হয়তো ওই শ্রীঘরেই কেটে যাবে।

মেহরিমার কথা শুনে অট্টহাসিতে ভেঙে পরে তার বাবা। দু-হাতে মেহরিমার গাল চেপে ধরে বলে,

– দুদিনের একটা মেয়ে হয়ে আমাকে জেলের ঘানি টানাবি। এতটাও বড় হসনি এখনো। একদম মেরে ফেলে দিবো।

– ছাড়ুন আমাকে। লাগছে। মেহরিমা জোর করে তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। দাত কটমট করে ডক্টর ইমরান খানের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমার শরীরে আপনার রক্ত বয়ছে। তাই রাগ বলেন আর জেদ দুটোই আপনার থেকে কম নয়। আপনি যেমন নিজের অপকর্ম ঢাকতে মানুষের প্রাণ নিতে পারেন ঠিক তেমনি আমিও অন্যায়ের প্রতিবাত করতে নিজের প্রাণ দিতে পারি। নিজের জিবনের পরোয়া আমি কখনোই করি না। আমার ঘৃনা হচ্ছে আপনাকে বাবা বলতে। অবশ্য কখনো ডাকি তো তার একটু শান্তিও লাগছে। আপনার মতো একজন দেশদ্রোহীর রক্ত বয়ছে আমার শরীরে ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে। আমি মরতে ভয় পাই না ডক্টর ইমরান খান।

– আচ্ছা, নিজের প্রাণের ভয় তুই করিস না। কিন্তু ওর আপনজনেরা! তাদের প্রাণের ভয় তো করিস। তোর মা আর মিঠুর প্রাণের ভয় করিস না তুই। আর কি যেন তোর লাভারের নাম, ও হ্যা, ফারহান। তার প্রাণের ভয় করিস না।

– আপনি এমনটা করতে পারেন না। চিৎকার করে বলে উঠে মেহরিমা। আমার মা আপনার ওয়াইফ মিঠু আপনার ছেলে। আপনি তাদের সাথে এমনটা করতে পারেন না।

– আমি সব পারি। নিজের হাতে আমার মাকে খুন করেছি আমি।

– নাহ। আপনি এমনটা করবেন না।

– করবো। আমি এমনটাই করবো। প্রুভ দেখবে। মোবাইলটা মেহরিমার সামনে এনে ধরে। মেহরিমা মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থো হয়ে যায়। ওর মা আর মিঠু ঘুমিয়ে আছে। আর এখানে দুজন লোক তাদের মাথায় বন্ধুক ধরে আছে।

দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বসে পরে মেহরিমা। তখন ওর সামনে আরেকটা ভিডিও অন করে। যেটাতে একটা লোক ফারহানের গাড়ির বোম লাগাচ্চে।

– আপনি এরকমটা করবে না। চিৎকার করে কেধে উঠে মেহরিমা। আ- আমি আপনার স-সব কথা শুনবো। প্লিজ ওদের কোন ক্ষতি করবেন না।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে