হৃদমাঝারে পর্ব-০৬+০৭

0
952

#হৃদমাঝারে – [০৬+০৭]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা

ফারহান মুনের দুই বাহু শক্তকরে চেপে ধরে ওর দিকে কটমট করে তাকায়। কিছু বলতে যাবে তখনি মুন ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠে। আহ, চোখ বন্ধ করে নেয় মুন। আকস্মিক ফারহান ওকে ছেড়ে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে বলল,

– সরি, তোমার লেগেছে খুব। ফারহানের চোখ-মুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। সে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মুনের দিকে। ফারহানের এমন কান্ডে অবাক হয়ে যায় মুন। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহানের চোখের দিকে। বেশ ভালো লাগছে মুনের। ফারহান ওকে নিয়ে এখনো ভাবে। না হলে মুনের একটু ব্যথায় ফারহান এভাবে রিএক্ট করত না। মুনের চোখের কোনে অশ্রুর ভীড় জমে যায়। ফারহান এখনো তাকিয়ে আছে মুনের চোখের দিকে। দুজন যেন দুজনের চোখে হাড়িয়ে গেছে। ফারহানের ধ্যান ভাঙ্গে ওর মোবাইলের রিংটোনের শব্দে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো স্কিনে মিদুলের নামটা জ্বলমল করছে। ফারহান কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে কি বলল বুঝতে পারলো না মুন। তবে লোকটার কথা শুনে যে ফারহান অবাক হয়েছে সেটা বুজতে বাকি রইলো না। ফারহান বলল,

– আমি আসছি। আর তুমি সবাইকে নিয়ে পৌঁছে যাও। সাবধানে যেও।

কথাটা বলেই কল কেটে দেয় ফারহান। তারপর আবার অন্য একজনকে কল করে। মুন অবাক হয়ে সবটা দেখে যাচ্ছে। কিন্তু ফারহান সে একেবারে জন্যেও মুনের দিকে তাকাচ্ছে না। ওর সামনে যে মুন দাঁড়িয়ে আছে সেটা হয়তো ফারহান ভুলেই গিয়েছে। এবার ফারহান কথা বলতে লাগলো,

– স্যার, আমার পুলিশ ফোর্স লাগবে। ইমারজেন্সি। তারপর কথা বলতে বলতে চলে যায় ফারহান। যাওয়ার আগে একবারও সে মুনের দিকে তাকায় নি। মুন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারহানের চলে যাওয়ার দিকে।

নিচে এসে ফয়সাল সাদিককে জানিয়ে সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে। গাড়িতে বসে আগে নিজের গায়ের কোটটা খুলে পাশের সিটে রাখে। পলাশ আর মিদুলকে কল করে সে তার গাড়ি স্টার্ট দেয়। ফুল স্পিডে গাড়ি চলছে ফারহানের। এই শহরের প্রতিটা অলিগলি চেনা ফারহানের তাই গাড়ি হাই স্পিডে চললেও ওর কোন অসুবিধা হচ্ছে না। গড়িটা এমন ভাবে চলছে মনে হচ্ছে, নাম মাত্র মাটি ছুয়ে উড়ে যাচ্ছে গাড়িটা। প্রায় আধঘণ্টা ড্রাইভ করার পর গাড়ি এসে থামলো একটা চলন্ত ট্রাকের সামনে। এক্সিডেন্টের ভয়ে ট্রাকটাও থামিয়ে দেয় ট্রাক ডাইভার। তারপরেই ট্রাকের পিছনে এসে থামে আরো দুটো গাড়ি। একটা পুলিশের গাড়ি। একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে ট্রাকের কাছে আসতেই দেখলো ট্রাক ড্রাইভার নেই। সে পালিয়েছে। মিদুল ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

– স্যার, ড্রাইভার পালিয়েছে?

কথাটা শুনে ফারহান দৌড়ে ট্রাকে উঠে। ড্রাইভারকে না পেয়ে রাগে গাড়িতে পরপর কয়েকটা লাথি মারে।উহ্ শিট। তারপর গাড়ির পিছনে উঠে। আর সেখান থেকে সতেরো জন শিশুকে উদ্ধার করে। তার মধ্যে দুজন একেবারেই ছোট। সদ্য হাটতে শিখেছে এমন শিশু। পুলিশ সবাইকে গাড়ি থেকে বের করে। আর শিশু দুটোকে নিয়ে ফারহানের সামনে আসে। বাচ্চাদুটোকে দেখে ফারহানের বুক কেপে উঠে। ছুয়ে দেখার জন্যে হাত বাড়ালে ওর হাতটা কেপে উঠে। নামিয়ে নেয় হাতটা। অজান্তেই চোখের কোনে জল এসে যায়।

– মানুষ কতটা হা*রামি। কি করে পারে এই শিশুদের অন্যদেশ পাচার করতে। মিদুলের কথায় তাল মিলিয়ে পলাশ বলে উঠে,

– এরা মানুষ নাকি। এরা একেকটা কু*ত্তা*র বাচ্চা। কু*ত্তা*র রক্ত বয়ছে ওদের শরীরে। তাইতো এমন কাজ করতে পারে। মানুষের বা*চ্চা হলে এমক কাজ করার কথা জিবনেও ভাবতে পারতো।

– হুম রে এরা মানুষ নয়। (মিদুল)

ফারহানকে এভাবে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিদুল ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

– স্যার এনি প্রবলেম?

ফারহান মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়। স্বস্তির শ্বাস ফেলে মিদুল। ফারহান মিদুলকে জিগ্যেস করে,

– গাড়িটা কোথা থেকে ছেড়েছে?

– স্যার, এটা বেনামী গাড়ি। সোর্স দেওয়া না।

– গাড়ির মালিককে খুজে বের করো। তারপর সে নিজেই গাড়ির নাম্বারটা দেখে পুলিশকে বলে গাড়িটা পুলিশস্টনে নিয়ে যেতে সাথে বাচ্চাদের ও। শিমুল সব বাচ্চাদের নিয়ে যায় পুলিশস্টেশনে। মিদুলের মোহনা পলাশা আর দিয়া চলে যায় ক্রাইম ব্রাঞ্চে। সেখান থেকেই যা করার করতে হবে। সবাই চলে যাওয়ার পর ফারহান গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যায় ঝিলের ধারে। ফারহানের মাখ খারাপ থাকে সে এখানে এসে বসে থাকে। ঝিলের ধারে বসে একের পর এক ঢিল ছুড়ে মারছে পানিতে। যার ফলে একটু শব্দ হয়ে পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে। ফারহানের মাথায় নানা প্রশ্ন লঘুপাক খাচ্ছে। কে করছে একমন জঘন্যতম কাজ। তাছাড়া শিশুদুটো ওরাই বা কারা? এত ছোট বাচ্চা-ই বা বিদেশে কেন পাচার করা হচ্ছে? তাছাড়া যত বেআইনি কাজ কারবার তো সব তো রাতের আধারে হয়ে থাকে তাহলে দিনের আলোয় এই ট্রাকটা কি করছে? এর পিছনে কে আছে? বাচ্চাদের কথা মনে পড়তেই ফারহানের বুকটা কেপে উঠে। কিছুক্ষণ পর পলাশ কল করে। ফারহান কলটা রিসিভ করে গম্ভীর গলায় বলে,

– কিছু জানতে পারলে?

– স্যার, আমরা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার চেক করেছি। কিন্তু স্যার, গাড়িটা এই শহরের কারো নয়।

– মানে?

– রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী গাড়ির মালিক আতাউর রহমান। যে একটা গ্রামে বাস করে।

– মিদুক আর মোহনাকে সাথে নিয়ে সেই গ্রামে চলে যাও। গাড়ির মালিকের খোজ নাও। ড্রাইভারকে খুজে বের করো।

– ওকে স্যার।

তারপর আরো কিছুক্ষণ ঝিলের পাড়ে বসে থেকে সে ফিরে যায় মুনদের বাসায়। ওখানে যে আজ ওর ভাইয়ের আকদ। আপাদত ফারহান সব ভুলে অনুষ্ঠানে মন দিয়েছে। অর্ণা আর রওনাকের যখন আংটি পড়ানো হচ্ছিলো তখন মুন ও ফারহান দুজনেই একে অপরের দিকে তাকায়। একজনের চোখে অনুতাপ আর অন্যজনের চোখে ছিলো হাজারো অভিযোগ। মুনের এই দৃষ্টি উপেক্ষা করে ফারহান সেখান থেকে চলে আসে বাহিরে। গাড়িতে বসে গাড়ির স্টিয়ারিং এ জোরে পাঞ্চ মারে। বড় বড় করে শ্বাস নিয়ে নিজেই বলে উঠে,

– নাহ্ ফারহান নাহ্। এটা তুই ঠিক করছিস না। এই মেয়েটা তোকে ঠকিয়েছে। এ কাউকে ভালোবাসতে পারে না। এ তো শুধু জানে,,, আচ্ছা তুই কেন এত ভাবছিস? তোর মনে ওই মেয়েটার জন্যে কোন অনুভূতি নেই।

স্টিয়ারিং এ মাথা রেখে চুপচাপ বসে থাকে ফারহান। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ওর ওই বাচ্চা গুলোর কথা মনে পড়ে। আর সাথে সাথে পকেট থেকে মোবাইল বের করে শিমুলকে একটা কল দেয়। শিমুল কল রিসিভ করতেই ফারহান বলে উঠলো,

– বাচ্চাগুলো কি খবর?

– সবাইকে তাদের পরিবারে কাছে পৌছে দেওয়া হয়েছে। আসলে আশেপাশে থানারা এঅব্দি যতগুলো মিছিং ডাইরি ছিলো তাদের সবাইকে থানায় আনা হয়েছিলো। আর তারা সবাই তাদের নিজনিজ সন্তানকে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু, শিমুলের গলাটা ভাড়ি। ওই শিশু বাচ্চাদুটোর পরিবারের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ফারহান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। চোখ বন্ধ করতে বাচ্চাদুটোর চেহারা ভেসে উঠলো তার চোখের সামনে।চট করে চোখ খুলে তারপরেই বলে উঠলো,

– আশেপাশে যতগুলো হসপিটাল নার্সিংহোম আছে সব কটা জায়গায় খোজ নাও। কোন ভালো খবর পেলেও পেতে পারো।

– আপনি একবার থানায় আসবেন?

– ওকে আসছি।

ফারহান কলটা কেটে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আর এদিকে দুটো চোখ যে ওকে খুজে চলেছে কখন থেকে। মুন প্রায় পুরো বাড়ি ওকে খুজে নিয়েছে কিন্তু কোথাও ফারহানের দেখা মিলছে না। মুনকে এমন উসকোখুসকো দেখে আকাশ ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়ে নিজেও বসে। তারপর মুনের হাত ধরে বলে,

– কি হয়েছে মুন? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

– ফা-ফারহানকে কোথাও দেখতে পারছি না। আমি চোখে চোখে অভিমান দেখেছি। আচ্ছা আমার উপর রাগ করে ফারহান অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেল নাকি? মব খারাপ মুনের।

আকাশ কিছু বলে না। শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর তাকিয়ে থাকে মুনের মুখপানে।

#হৃদমাঝারে – [০৭]

পুলিশস্টেশনে গিয়ে বাচ্চাদুটোর সাথে কিছু সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে ফারহান। আজ ওর মনটা বেশ ক্লান্ত। শারীরিক ক্লান্তি তো বিশ্রাম নিয়ে দূর করা যায় মনের ক্লান্তি কি করে দূর করবে সে। কোন কাজে মন বসাতে পারছে না ফারহান। বিছানায় হেলান দিয়ে দু-হাতে মাথা চেপে ধরে বসে ছিলো ফারহান। এমন সময় রওনাক ওর রুমে আসে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারে নি বলে রওনাক একটু চটে যায়। পরে ফারহান ওকে শান্তু করে শিশু পাচারের ঘটনাটা বলে। সব শুনে রওনাক তো হা। সে অবাক হয়ে বলে,

– মানুষ এত নিকৃষ্ট ও হয়।

কিছু বলে না ফারহান। শুধু তাকিয়ে থাকে।

রওনাকে চলে যাওয়ার পর ফারহান শাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায় ফারহান।

পরেরদিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে আগে পিটি জয়েন করে ফারহান। তারপর বেড়িয়ে আসে সেনানিবাস থেকে। এদিকে মুন নার্সিংহোম এসে রানার সাহায্য নিয়ে হসপিটালের কিছু ফাইল নিয়ে নিজের কেবিনে যায়। কাল রাতে আকাশের বাবা কল করে বলেছিলো হসপিটালের পুরনো ফাইলগুলো দেখা দরকার। ফাইল ঘেটে তেমন কিছুই পেল না মুন। তাই সেগুলো আবার আগের জায়গায় রেখে দেয়।

নিয়য় অনুযায়ী নিজের কেবিনে বসে রোগী দেখছে মুন এমনি সময় ইমারজেন্সি থেকে কল আসলো। মুন কোন রকমে নিজের কাল সামলে ইমারজেন্সিতে চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে বেশ অবাক হয় মুন। ইমারজেন্সিতে ফারহান বসে আছে আর ওর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মুন একদৃষ্টিকে ফারহানের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। বুকটা কেপে উঠছে মুনের। আর ফারহান সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ঠোঁটের কোনে ঝুলে আছে এক রহস্যময় হাসি। মুন ফারহানের দিকে তাকিয়ে আবার ওর পাশে তাকালো। ওর পাশেই দুটো ছেলে বসে আছে। এদের কাউকেই চেনে না মুন। মুন কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

– ডঃ মনোজকে ডেকে বলুন ওনার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে। আমার পেশেন্ট অপেক্ষা করছে। মুন চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই পিছন থেকে আওয়াজ এলো,

– ডঃ মনোজ হসপিটালে নেই।

– তাহলে অন্য কোন ডক্টরকে ডেকে নিন।

– সবাই এখন ব্যাস্ত।

– তো আমি কি করবো। একটা নার্সকে ডেকে বলুন ওনার হাতের ব্যান্ডেজটা করে দিতে।

মুন চলে যাওয়ার জন্যে সামনে পা বাড়াতেই ফারহানের কথা শুনে থেমে যায়।

– আপনাদরে এখানে মনে হয় পেশেন্টদের এভাবেই ট্রিট করা হয়। আমার হাতটা কেটেছে, কোথায় তাড়াতাড়ি করে ঔষুদ লাগিয়ে দিবে সেটা না করে আপনারা কি করছেন। উহ্ হাতটা ভিষন জ্বালা করছে। এই পলাশ চল আমরা বরং অন্য নার্সিংহোমে যাই।

ফারহান পলাশ ও মিদুল উঠে দাঁড়াতেই মুন ওদের দিকে এগিয়ে আসে। একটা নার্সকে ডেকে ফাস্টের্ড বক্স আনতে বলে। আর ফারহানকে বেডের উপর বসতে বলে।

বেশ যত্ন সহকারে ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজটা করে দিচ্ছে মুন। মুনের স্পর্শে বারবার কেপে ইঠছে ফারহান। স্বভাবত মুন জিগ্যেস করলো,

– কিভাবে কেটেছে হাত?

– স্যার তো নিজেই কাচে,,, আর কিছু বলতে পারলো না পলাশ। ফারহান তার পা দিয়ে পলাশের পায়ে আঘাত করে ওকে থামিয়ে দেয়। তারপর মৃদু হেসে জবাব দেয়,

– আপনি ডক্টর পুলিশ নয়। তাই এত ইনভেস্টিগেশন করার কোন প্রয়োজন নেই।

মুনও আর কিছু বলে না। চুপচাপ ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে কয়েকটা ঔষুদ লেখে দিলো। আর ফারহান মুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তার চোখ নামিয়ে নিলো। মনে মনে বলল, এটা কি করছিস তুই ফারহান। পাগল হয়ে গেছিস তুই। এই মেয়েকে দেখার জন্যে তুই নিজের কাজ ফেলে চলে এলি। পাগল হয়ে যাব আমি।কি হচ্ছে আমার সাথে। কেন বারবার মুনকে দেখতে চাই। না এমটা কিছুই হবে না। আমি মুনের থেকে দূরে থাকবো। এই মেয়েকে আর বিশ্বাস করবো না। এ শুধুই কষ্ট দিতে জানে। ভালোবাসা কি সেটা বুঝেই না।

এদিকে পলাশ কেবলার মতো তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। এর আগে তো ফারহান কখনো এমনটা করে নি। নিজের গাড়ির কাচে ঘুসি দিয়ে নিজের হাত কেটে হসপিটালে আসলো। ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিস থেকে এনআর নার্সিংহোমে আসতে না হলে চারটা নার্সিংহোমকে ক্রশ করে আসতে হয়। তাহলে স্যার এখানেই আসলো কেন? ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। পলাশ তোকে কিন্তু চোখ কান সবটা খুলে রাখতে হবে। আর এই ফুলপরি, ফুলপরিকে স্যার আগে থেকেই চিনে। তাহলে সেদিন আমাকে লাইন মারতে বলল কেন? মাথাটা ঘুরছে পলাশের। এত চাপ ওর ছোট মাথায় দেওয়া চলবে না। তবে ব্যাপারটা একটু ঘেটে দেখতে হবে।

৫,
বিকাল বেলা ফারহান তার টিম মেম্বারদের নিয়ে আতাউর রহমানের গ্রামে যায়। আতাউর রহমানের বাড়িটা অনেক বড়। বাড়ির চারদিকে চারটা টিনের ঘর। দক্ষিণ পাশের ঘরটাতে সে গরুর রাখে। উত্তর আর পূর্ব পাশেরটা তাদের নিজেদের আবাসস্থল। পশ্চিম পাশের ঘরটাতে তাদের দ্রব্যসামগ্রী রাখে। আমরা যেটাকে বলি গুদামঘর। বারান্দায় বসে ঝিমুচ্ছে আতাউর রহমান। চোখ-মুখে তার দুশ্চিন্তা। আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে কিছু ভেবে যাচ্ছে এমন সময় তার সামনে হাজির হলো পঞ্চমানব। তাদের মধ্যে একজন ছিলো ফারহান। ইন্সপেক্টর শিমুল। ও ফারহানের সহযোগী পলাশ মিদুল আর মোহনা। ওদের পাঁচজনকে দেখে আতাউর রহমান ভাবুক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকায়। মিদুল প্রশ্ন করে,

– আপনি আতাউর রহমান?

লোকটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। শিমুল পকেট থেকে নিজের কার্ড দেখিয়ে বলে,

– সাব ইন্সপেক্টর, শিমুল।

বাড়িতে পুলিশ দেখে আতাউর রহমান একটু অবাক হয়। সে তো থানায় কোন ডাইরি করে নি তাহলে তার বাড়িতে পুলিশ কেন? আতাউর রহমানের স্ত্রী এগিয়ে আসে। অতঃপর পলাশ সুধায়?

– VF 00 47 এই গাড়িটা আপনার তো?

গাড়ির কথা শুনে চমকে উঠে আতাউর রাহমান। তড়িৎগতিতে বলে,

– হো। কনে আমার গাড়ি। তোমরা জানো কত দিন ধইরা আমি আমার গাড়িটারে খুজবার লাগছি।

– খোজছেন মানে? আপনি জানেন না আপনার গাড়ি কোথায়?

– এসব কি কউ? জানলে আমি গাড়ি খোঁজুম ক্যা?

– আপনার গাড়ি খোঁজে পাননা কবে থেকে?

– এই ধরো সপ্তাহ খানেকের মতো?

– আপনার যে গাড়ি হাড়িয়েছে তারজন্যে থানায় মিছিং ডাইরী করেছেন? [পলাশ]

– যেডা চুরি অইছে হেইডা কি আর পাওন যাইবো? তাইলে খালি খালি টাহা খরচ করে পুলিশরে জানিয়া লাভটা কি অইবো। পুলিশ তো আবার টাহা ছাড়া কতা কয়না।

আতাউর রহমানের কথা শুনে শিমুল রেগে গিয়ে কিছু বলতে চাইলে ফারহান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

– কনট্রোল ম্যান, কনট্রোল।

– তুমি কিভাবে নিজেকে কনট্রোল করতে বলছো ফারহান। এই চাচা তো সমগ্র পুলিশ জাতিকে অপমান করছে।

ফারহান আতাউর রহমানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

– আপনাকে আমাদের সাথে পুলিশস্টেশনে যেতে হবে। না ভয় নেই। আপনাকে কিছু জিগ্যাসা করা হবে তাই।

আতাউর রহমান একবার ফারহানের দিকে তাকায় তো আরেকবার তার স্ত্রীর দিকে তাকায়।

শিমুল আতাউর রহমানকে নিয়ে পুলিশস্টেশনে চলে যায়। ফারহান পলাশ মিদুল আর মোহনা ওরা এক গাড়ি করে কমিশনড স্যারের বাসায় যাচ্ছে। ফারহান ড্রাইভ করছে আর ওর পাশের সিটে বসে আছে পলাশ। মিদুল আর মোহনা বসে আছে পিছনে। পলাশ ফারহানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,

– স্যার, আপনার কি মনে হয়না এই আতাউর রহমান মিথ্যে বলছে।

– আমার মনে হয় ওনি সত্যিই বলছে।

– কেন স্যার?

– জানিনা রে পলাশ। তবে আমার মনে হয় উনি সত্যি বলছে।

– আমারও তাই মনে হয়। [মোহনা]

গাড়ি এসে কমিশনড স্যারের বাসার সামনে পার্ক করতেই সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। বাড়ির ভিতরের দিকে এগোতে যাবে তখন দেখতে পায় কমিশনড স্যারের বাসা থেকে মুন বের হচ্ছে। ফারহান সেখানেই থেমে যায়। আর ভাবতে থাকে মুন এখানে কি করছে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে