স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৪

0
1019

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৪
#লেখিকা – সাদিয়া জান্নাত সর্মি

একটু পরে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এলাম, সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে আমিও গিয়ে টেবিলে বসলাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার স্নিগ্ধা তুই এই নোজ পিন কোথায় পেলি?
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, ভাইয়া কালকে আমার বার্থডে তে কেউ একজন এই নোজ পিন টা গিফট করেছে তাই পড়লাম আজ। কেন দেখতে ভালো লাগছে না কি?
ভাইয়া একটু হাসল তারপর বললো,নাহ ভালোই লাগছে তোকে কিন্তু আগে তোকে নোজ পিন পড়তে দেখিনি তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
আমি কিছু বললাম না,হৃদান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আমি ওনার এই মিচকে হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না।তাই জিজ্ঞাসা করলাম,হৃদান ভাই তুমি আমাকে দেখে হাসছো কেন? আমাকে দেখে কি জোকার মনে হচ্ছে?

হৃদান ভাই হালকা কাশি দিয়ে বলল, না তোকে খুব সুন্দর লাগছে তো তাই হাসছি, কেন আমি হাসলে কি কোনো দোষ আছে?
আমি মুখ কালো করে বসে রইলাম আর কোনো কথা বললাম না। একটু পরেই মা সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিয়ে এলো।ব্রেকফাস্ট করে সোফায় বসে মাকে বললাম,
মামনি আমি একটু শপিং এ যাবো আজ, ফিরতে দেরী হতে পারে আমার।
মা আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
আজ আবার কিসের শপিং এ যাবে তুমি?পরশু দিনেই তো শপিং করে এলে।
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম,
না মানে হয়েছে কি, আমার কিছু দরকারি জিনিস কেনার আছে যেগুলো ওইদিন কিনতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই আজ যেতে চাইছি।
আমার কথা শুনে বাবা বললেন,
ঠিক আছে তুমি শপিং এ যাবে যাও, তবে একা নয় তোমার সাথে হৃদান ও যাবে।কি হৃদান তুমি যেতে পারবেনা?

হৃদান ভাই বাবার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো, আমার রাগ হলেও বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারছিনা।

গাড়ি তে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছি। পাশেই হৃদান ভাই বসে সাপের মত ফুসছে কিন্তু কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ পর আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম,, তোমার সাপের মতো ফুসা শেষ হলে এবার কি বাসায় যেতে পারি?
হৃদান ভাই আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো, আমি ওর সেই চাহনিতে ঠোঁটে হাত দিয়ে চুপ করে গেলাম।

কিছুক্ষণ আগে,,,,,
শপিং মলে একটা থেকে আরেকটা জিনিস দেখছি, কোনোটাই পছন্দ হচ্ছেনা আমার। পাশে সিকিউরিটি গার্ডের মতো হৃদান ভাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কান্ডকারখানা দেখছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে কে যেন বললো, কালকের সারপ্রাইজ টা কেমন ছিল স্নিগ্ধা?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আয়াশ দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন টা ওই করেছে আমাকে, আয়াশের কথা হৃদান ভাই কিছু বুঝতে না পেরে ওকে আবার জিজ্ঞাসা করল,
এই কে তুমি আর স্নিগ্ধা কে এইসব কি জিজ্ঞাসা করছো?
আয়াশ হাসিমুখে বললো,
আপনি বুঝি ওর নতুন বয়ফ্রেন্ড? আমি স্নিগ্ধার এক্স বয়ফ্রেন্ড,কাল ওর বার্থডে ছিল না তাই ওকে আমি অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দিয়েছি সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে সারপ্রাইজ টা ওর কেমন লেগেছিল।
হৃদান ভাই আয়াশের কথা শুনে একেবার আমার দিকে তাকালো আরেক বার আয়াশের দিকে তাকালো তার পর আর কোনো কথা না বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ি তে এনে বসিয়ে দিলো।
আমি হৃদান ভাইয়ের কাজকর্মে রীতিমতো অবাক হয়ে গেছি, বেচারা এমন করছে যেন আমি ওর বউ লাগি আর ওর বউ হয়ে অন্যকারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি। একটু পরে আবার হৃদান ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি হয়েছে হৃদান ভাই? তুমি আয়াশের কথা শুনে এমন করছো কেন,ও যে তোমাকে আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড বলছে এইজন্য এমন করছো? চিন্তা করোনা আমি আয়াশের দেখা পেলে এই কথার জন্য দুই গালে দুইটা স্ট্যাম্প বসিয়ে দেবো।হৃদান ভাই আমার দিকে ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে বললো, তুই অন্য কারো সাথে রিলেশনে ছিলি?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম,হৃদান ভাই আমাকে হ্যা সুচক উত্তর দিতে দেখে চোখ মুছে চুপ করে রইলেন। আমি হা করে ওনাকে দেখছি, ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে বিশাল বড় একটা ছ্যাকা খাইছেন উনি তাই এই বিহেবিয়ার করছেন। কিন্তু আমি উনার ছ্যাকা খাওয়ার কারন খুজে পেলাম না, উনার দেখাদেখি আমিও একটু মুখ ভার করে থাকলাম। একটু পরে হৃদান ভাই ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে যেতে বললো। গাড়ি চলতে শুরু করেছে, আমি গ্লাস নামিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হৃদান একটু পর পর চোখ মুছছে আর ভাবছে, স্নিগ্ধা এটা কি করলো? এতো তাড়াতাড়ি অন্য কারো সাথে রিলেশনে জড়িয়ে গেল, ওর কি বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছিল না কি যে যার তার সাথে রিলেশন করছিল। আমার সরল সোজা মনটাকে এইভাবে কষ্ট না দিলেও পারতো স্নিগ্ধা, এতো দিন পরে যখন ওর কাছে এলাম তখন ও অন্য কাউকে মন দান করে দিয়ে বসে আছে।
একটু পরে গাড়ি বাসার সামনে এসে দাড়ালো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম তার পর হৃদান ভাই নামলো।হৃদান ভাই গাড়ি থেকে নেমে আমার সাথে কোনো কথা না বলে হনহন করে বাসার ভিতরে চলে গেল, আমি ওটা পাত্তা দিলাম না বাসায় এসে মামনি কে দেখি সোফায় বসে টিভি দেখছে। আমি মামনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম, আমাদের কে এতো তাড়াতাড়ি করে চলে আসতে দেখে মামনি একটু অবাক হলো। আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে স্নিগ্ধা মা? তোমরা এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে, শপিং করো নি?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম, তার পর আস্তে আস্তে বললাম, মামনি হৃদান ভাই কেন জানি না আমার উপরে রেগে আছে তাই শপিং করতে দেয় নি।থাক অন্য দিন তোমার সাথে গিয়ে শপিং করবো।
মামনি আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর আমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,,
তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো করেও বলা হয় নি স্নিগ্ধা। আসলে তোমার বাবা চাইছিলেন যে হৃদানের সাথে তোমার বিয়ে দিতে, তুমি পড়াশোনা কমপ্লিট করেছো এবং এখন তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউর। নিজের ভালো তুমি এখন নিজেই ভালো বুঝবে।আর হৃদান ও অনেক ভালো একটা ছেলে, আমার ভাইয়ের ছেলে বলে বলছি না, তুমি নিজেও যদি একটু ভেবে দেখো তাহলে বুঝবে। সেজন্য আমরা চাইছিলাম হৃদানের সাথে তোমার বিয়ে দিতে।
আমি মামনির কথা শুনে চমকে উঠে বসলাম, এইসব কি বলছে মামনি।হৃদান ভাই কে বিয়ে, সেটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় ওকে তো আমি ভাইয়ের নজরে দেখি সেই জায়গায় বর হাউ ইটস পসিবল?

মামনি হয়তো আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো তাই বললো, স্নিগ্ধা তুমি হৃদান কে ভাই হিসেবে দেখলেও হৃদান তোমাকে বোন হিসেবে দেখে না।ও তোমার অনেক কেয়ার করে, যখন হৃদান দেশের বাইরে ছিল তখন প্রতিদিন ও তোমার খোঁজ নিতো তুমি কেমন আছো কি করছো ইত্যাদি। সেটা দেখেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাছাড়াও আমার মেয়ের জন্য একটি ভালো ছেলের দরকার যেটা হচ্ছে হৃদান। তুমি এখন সিদ্ধান্ত নাও, তোমাকে ভাবার জন্য সময় দিলাম ‌যদি তোমার মনে হয় হৃদান তোমার জন্য ঠিক তাহলে আমাদের জানিও।
আমি মামনির কথা শুনে ধীর পায়ে আমার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম,মামনির কথা গুলো কানে বাজছে আমার। রুমে এসে দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ভাবছি আয়াশের কথা, মাত্র আটচল্লিশ ঘন্টা আগেও আমার সবকিছু জুরে আয়াশ ছিল, ওকে ছাড়া অন্য কারো সাথে আমি নিজেকে ভাবতেই পারতাম না।

চলবে………….. ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে