স্নিগ্ধ অনুভব পর্ব-০৩

0
1441

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:৩
#পিচ্চি_লেখিকা

এত জোড়ে একটা থাপ্পড় খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেছি।
“কোন শালা রে? এত সাহস আমাকে থাপ….
আর কিছু বলতে পারিনি তাকিয়ে দেখি অনুভব ভাইয়া রাগী চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উঠতে যাবো তার আগে উনিই আমাকে টেনে তুলে হুড়মুড়িয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। আজব☹️ কথায় কথায় এমন থাপ্পড় মারার কি আছে? কি দোষ করলাম তাই বুঝলাম না। ভার্সিটি থেকে বাড়িটা একটু দুর ই হয়। এতোটা রাস্তা উনি হাওয়ার উপর গাড়ি চালালো মনে হলো। কিছু যে বলবো আমাকে তো গলা চেপেই মেরে ফেলবে তাই ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করেছি। কোনো রকম বাড়ি এসে আমাকে রেখেই বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। ভয়ে ভয়ে আমিও বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম। মামুনি আর তিশা আপু হা করে অনুভব ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গুটি গুটি পায়ে মামুনির কাছে যেতেই মামুনি বললো,,
” কি রে স্নিগ্ধু, অনুভব হঠাৎ এত রেগে বাড়িতে ঢুকলো কেন?”
“আমি নিজেও জানি না মামুনি!”
“উপরে যাবি এখন?”
“ভয় করছে।”
“স্নিগ্ধু তোর গাল এমন ফুলে আছে কেন?”
তিশা আপুর প্রশ্নে চমকে উঠে গালে হাত দিলাম। আমার কোনো উত্তর না পেয়ে আপু আমাকে আবারও প্রশ্ন করতে যাবে তখনই অনুভব ভাইয়ার রুম থেকে জোড়ে জোড়ে ভাঙচুরের শব্দ পেতেই উপরে যেতে লাগলাম,,
“স্নিগ্ধু তুই এখন যাস না। এমনি তে তো মনে হচ্ছে তোকে আজও মেরেছে।”
“না মামুনি আমি যায় আগে। কি হয়েছে দেখতে হবে। তোমরা দাড়াও!”
এটুকু বলেই ছুট লাগালাম রুমের দিকে। দরজা হালকা করে ভিজিয়ে দেওয়া রয়েছে। আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকতেই উনি আমার দিকে তেড়ে এসে আগে বিকট শব্দ করে দরজা লক করে দিলো। এত শব্দে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিয়েছি। উনি হঠাৎ করেই আমার দুই বাহু ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার খুব কাছে এসে দাতে দাত চেপে বললেন,,
“ভার্সিটি যাস ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে?”
আমি তো তাজ্জব বনে গেলাম। আমি তো ভার্সিটির একটা ছেলের সাথেও কখনো কথা বলছি কি না সন্দেহ আর উনি কিনা আমাকে এসব বলছে?চমি আমতা আমতা করে বললাম,,
“আব..আমি তো কারো সাথে কথাই বলি না ভাইয়া!”
উনি আমাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,
“সাট আপ ইডিয়েট আর একটা মিথ্যেও বললেও তোকে গলা চেপে মেরে ফেলবো।”
এত জোড়ে চেপে ধরায় ভিষন ব্যাথা লাগছে।
“আম..আমার লাগছে ভাইয়া।”
“লাগুক তোর আরো লাগুক। ভার্সিটি তে ছেলেদের সাথে তোর এত কিসের কথা? কিসের এতো ঢলাঢলি তোর?”(ধমকিয়ে)
প্রথমত এত জোড়ে চেপে ধরেছে তার ওপর ধমকিয়ে কথা বলছে। এদিকে কাল থেকে জোড়ে জোড়ে থাপ্পড় দেওয়ায় গালও ভিষন ব্যাথা করছে। তাই না পেরে কান্না করে দিলাম। আমার কান্না দেখেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে থাকা সেন্টার টেবিলটাই একটা লাথি মেরে হুংকার করে বলে উঠলো,,
” হ্যা পারিস তো শুধু কান্না করতে। কান্নাই কর তুই।”

উনি বেরিয়ে গেলেন। ভিষন রাগ হচ্ছে এত কেন নিষ্ঠুর এই লোক। কিছু বলি না বলে যা ইচ্ছা তাই করবে? আমি সিউর উনি ফাহিম ভাইয়াকে দেখেছে আমার সাথে তাই এত রিয়েক্ট কিন্তু তাতে উনার কি? উনি তো সহ্যই করতে পারে না আমাকে! আর ফাহিম ভাইয়ার সাথে তো আমার কোনো সম্পর্কই নেই। একবার অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতো!

বেলা গড়িয়ে রাত হয়ে আসলো। কিন্তু অভুভব ভাইয়ার আসার নাম নেই। সেই যে দুপুরে বেরিয়েছে এখনো আসেনি। ফোন দিয়েছি অনেকবার লাভ হয়নি। ফোন ধরেইনি উল্টো বন্ধ করে রেখেছে। আমিও রাগে দুঃখে রুম থেকেই বের হয়নি। মামুনি আর তিশা আপু এসে অনেক বার ডেকে গেছে কোনো উত্তরই দেয়নি। উনারা বার বার হতাশ হয়েই নিচে ফিরে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ২ টার বেশি বাজে। এখনো কেন আসছে না? রাগ করে কি বাড়ি ফিরবে না? নাকি কোনো বিপদ? না না কি ভাবছি এসব।

সময়ের মতো সময় যাচ্ছে উনার আসার নাম নেই। হঠাৎ করেই দরজায় খটখট আওয়াজ হতেই চমকে উঠলাম। এই সময় কে? ভুত টুত না তো? নাকি অনুভব ভাইয়া? ভয়ে ভয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি অনুভব ভাইয়া। এতক্ষণে যেন জান ফিরে পেলাম উনি আমাকে সরিয়ে দিয়ে রুমে এসে সোফায় এলোমেলো ভাবে শুয়ে পড়লো। উনার হেলে দুলে হাটায় বোঝা যাচ্ছিলো ড্রিংকস করে এসেছে।
” এটা তো পাতি ডক্টর। উনি আর কি মানুষকে সুস্থ করবে শুনি! উনি নিজেও জানেন এলকোহল মৃত্যুর কারন তবুও তো নিজেও গিলে আসছে হু..”
উনাকে ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে আমি নিজেও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

_________________
আযানের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায়।
“এত সহজে তো আমার ঘুম ভাঙে না আজ হঠাৎ ভেঙে গেলো। ধুর যা হয় হোক নামাজ পড়ে নেয়।”
ফজরের নামাজ আদায় করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। সকালের পরিবেশটা মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে নিচে চলে আসলাম।

কেটে গেছে ২ দিন। এই ২ দিনে অনুভব ভাইয়া আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলেননি। সম্পর্ক বাড়ানো তো দুর। ভার্সিটি এসে চুপচাপ বসে আছি। চুপ করে থাকতে দেখে তন্নি বললো,,
“কিরে স্নিগ্ধু তুই এত চুপচাপ কেন?”
“কই আমি চুপচাপ? কানা নাকি বয়রা তোরা?
” হয়ছে হয়ছে নাটক বন্ধ কর। শোন আজ ফাহিম তোদের ট্রিট দেবে সাথে একটা গুড নিউজ।”
“কি গুড নিউজ রে পেত্নি? তোর হবু বর বুঝি তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে!”
তন্নির কথায় চোখ গরম করে তাকায় মেঘলা,,তন্নি ফোকলা একটা হাসি দিয়ে বলল,,
“আ’ম জোকিং ইয়ার।”
“রাখ তোর জোকিং ফোকিং। তোর আজ ট্রিট বাতিল যা ভাগ।”
“এই না। তুই না টুকটুকি পাখি! এমন করিস না।”
“পাম দিবি না একদম।”
“আমি তোকে পাম দিচ্ছি নাকি?”
দুজনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেছো। এমনিতেই ভালো লাগে না তার ওপর এদের ঝগড়া আমি আরো শেষ।
“এই চুপ কর তোরা। একটু শান্তি দে মেরি মা। এত চিল্লাছ কেন তোরা?”
তন্নি কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোথা থেকে অনুভব ভাইয়া এসে সবার সাথে ক্যাম্পাসের ঘাসের ওপর বসতে বসতে বললো,,
“হ্যা তাই তো শালিক পাখিরা। তোমরা এত চেঁচাও কেন গো?”
তন্নি আর মেঘলা হা করে তাকিয়ে আছে। আর আমার মাথায় তে আকাশ ভেঙে পড়েছে।বলে কি এই লোক? শালিক পাখি!
“একি তোমরা হা করে কি দেখো? আচ্ছা তোমরা ট্রিট নিয়ে ঝগড়া বাধাচ্ছিলে নাকি? আচ্ছা সবাই চলো আমি আজ তোমাদের ট্রিট দেবো।”
মেঘলা মুখের হা বন্ধ করে আমতা আমতা করে বললো,,
“ইয়ে মানে..কিসের ট্রিট ভাইয়া?”
“আরে কিসের আবার আমার বিয়ের! এই স্নিগ্ধু তুই বলিস নি ওদের আমার বিয়ের কথা?”
আমি নাড়িয়ে বোঝালাম ‘হ্যা বলেছি’। উনি আমার মাথা নাড়ানো দেখে বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে বললেন,,
“তাহলে তো জানোই। তোমরা কি তো শালিক পাখি? আমাদের কোনো ফ্রেন্ড যখন বিয়ে করতো ট্রিট চাই ট্রিট চাই বলে পাগল করে দিতাম আর তোমরা তো দেখি একদম চুপচাপ। স্নিগ্ধু যে ট্রিট দেয়নি তা আমি জানি এবার চলো আমি ট্রিট দেবো।”
উনি এটুকু বলতেই হঠাৎ উনার ফোনে একটা কল আসে। স্ক্রিনের উপর নাম দেখে চোখ মুখ কুচকে কল কেটে দেয়। কিন্তু বার বার কল আসছে দেখে এক প্রকার রেগে কল রিসিভ করে একটু দুরে যায়। উনি যাওয়ার সাথে সাথেই মেঘলা আমার একদম কাছে এসে বলে,,
“স্নিগ্ধু রে আমি যা দেখলাম আর যা শুনলাম তুইও কি তাই দেখলি তাই শুনলি?”
“হুম রে।”
“এই রাগী লোকটা এত মিষ্টি কেমনে হইলো রে?”
“ওই চুপ কর এইডা আমার ক্রাশ না তাই আমার মতো মিষ্টি হয়ে গেছে।”
“এহ ঢং। তোর ক্রাশ তো সবাই। তা তোর ১১ নাম্বার বফের কি খবর?”
“ওই ছেরি ক্রাশের সামনে বফের কথা জিগাবি না কইলাম।”
“ওই ছেরি তুই কি ভুলে যাস? অনুভব ভাইয়া স্নিগ্ধুর জামাই। তোর আর আমার জিজু!”
“সর সর। এই স্নিগ্ধু শোন এইডা এহন থেইকা উলডা। আমার জামাই তোর জিজু আচ্ছা।”
আমি চুপচাপ দুজনের কথা শুনতেছি। কি শুরু করেছে এরা? তন্নিকে থামিয়ে বললাম,,
“ওই উগান্ডি চুপ। আমার জামাইরে তুই আঙ্কেল ডাকবি! তোরে বিশ্বাস নাই।”
আমার কথা শুনে মেঘলা শব্দ করে হেসে দেয়। আমাদের কথার মাঝেই অনুভব ভাইয়া চলে আসে।
“তো শালিক পাখিরা চলো যাই। আজকলর ট্রিট তোমাদের জিজুর পক্ষ থেকে।”
উনি এটুকু বলেই আমার হাত ধরে হাটতে লাগলো। আর পিছন পিছন মেঘলা আর তন্নি আসছে। আমার মতো ওরাও অবাক। যে ছেলে আমাকে আশে পাশে দেখলেই থাপ্পড় দেয় সে কি না নিজ থেকে আমার হাত ধরে হাটছে! এটাও সম্ভব? ৪ জন একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসলাম। আমি অনুভব ভাইয়ার পাশে, আমার পাশে মেঘলা আর ওই পাশে তন্নি। অনুভব ভাইয়া খাবার অর্ডার দিয়ল ওয়াশরুমে গেলেন। আমরা ৩ জন ৩ জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কি হলো একটু আগে তাই মাথায় আনার চেষ্টা করছি।
“ভাউউউ….
এমন শব্দে ৩ জনই চমকে উঠে পিছে তাকাতেই দেখি তামিম।
” তুই?এখানে? কিভাবে?”
“ম্যাজিক!”
“রাখ তোর ম্যাজিক! শালা কই লাপাত্তা হয়ে গেছিলি?” (তন্নি)
“দুলাভাই আপাতত আমি আপনাকে বলবো না আমি কই লাপাত্তা হয়ছিলাম হু।” (তামিম)
তন্নিকে তামিমের দুলাভাই ডাকা দেখে ৩ জনই কিছুক্ষণ থ মেরে বসে জোড়ে সড়ে হেসে উঠলাম। তখনই অনুভব ভাইয়া আসলো। উনাকে দেখে আমি কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললাম। সেদিন ফাহিম ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি বলে থাপ্পড় মারছে আজ কি করবে কে জানে? আল্লাহ বাঁচাও মোরে। এই লোক শুধু থাপ্পড়ই মারতে পারে…

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে