লতাকরঞ্চ (১২)

0
650

লতাকরঞ্চ (১২)

” আম্মা দেখেন না, ওরা সবাই চলে আসছে। আপনি তাড়াতাড়ি যান। ”
লিমা আপু কথাটা বলেই দৌঁড়ে চলে যাচ্ছে।
আমিও দৌঁড়াচ্ছি। কিন্তু কেন দৌঁড়াচ্ছি তা জানিনা।

সব ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে এসব?

একজন কালো চশমা পড়া, সাদা পাঞ্জাবী পরুয়া, সাদা ধবধবে রঙের দাঁড়ি ওয়ালা লোককে দেখতে পাচ্ছি। সাথে একজন সাদা চুলওয়ালা বৃদ্ধা।

এরা কে?

কিছুক্ষন পর কেউ একজন এসে হাত ধরে তারপর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আপু, কেমন আছো?
আমি হা করে তাকিয়ে আছি!
আরে এ তো রাফা!

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
– ওমা! তুমিও এখানে?
– হ্যাঁ আপু!
– কি করো এখানে? কেন আসছো?
– আ…আমি… তো…
– তুমিতো… কি??
– কেন আপু? আমি এখানে আসায় তুমি খুশি হওনি?

উফ!
এভাবে জিজ্ঞেস করাটা একদম উচিত হয়নি।
মেয়েটার সাথে আমি সবসময় সহজ-সরল ব্যবহার করি। খুব পছন্দ করে ও আমায় , আমি যে করিনা তা না। আমিও করি। কারণ ও খুব মিশুক, ভালো আর চঞ্চল একটা মেয়ে। কিন্তু আজ মনে হয় একটু বেশিই রুড হয়ে যাচ্ছি ক্রমস!

ঢোঁক গিলে চোখ উপরে তুলে হাত নাচিয়ে নাচিয়ে নিজেকে রিলেক্স করছি আর আস্তে করে বলছি,
কুল ডাউন লতা, কুল ডাউন!

দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে ধীরে,সুস্থে বললাম,
– সরি ডিয়ার! আসলে, আমি গোলকধাঁধায় ফেঁসে গেছি। তাই মাথাটা ঠিক নেই।
তারপর আবার বললাম,
– ওকে! একটু ক্লিয়ার করে বলোতো কেন আসছো এখানে? এটা জানা আমার জন্য খুব জরুরি। প্লিজ সবটা বলো।

রাফা হেসে হেসে বললো,
– জানিনা আমি আপু। আমাকে শুধু বলা হইছে রেডি হয়ে আসতে, তোমাদের বাড়ির ইনভাইটেশন আছে। আমি রেডি হলাম, আসলাম। ব্যস! এসে দেখি বাসা না,এটা রেস্টুরেন্ট! আর কিছুই জানিনা আপু!

আমি খুব বিরক্ত হলাম।
মেয়েটা কোনো কাজেই আসলোনা। ধুর!
_____________
________

কিছুক্ষন পর আরো চারজন আসলো।

তন্মধ্য একজন চুল ছেড়ে দিয়ে সামনের দিকটা ফুলিয়ে রাখছে জিরাফের গলার মত করে(উদাহরণস্বরুপ-পাহাড়) ,
লম্বা লম্বা কাশ্মিরী দুল দিয়ে, ভ্রুগুলো সুতার মত চিকন করে প্ল্যাক করে, ঠোঁটে টাটকা লাল লিপস্টিক দিয়ে…

এককথায় ডাইনীর মত সেজে আসছে। শাড়িটাও একদম টিস্যু টাইপ, আর ব্রাইট কাজ করা, কাজগুলোই দাম বহন করে। পাথরের, স্ট্রিমার টাইপ একদম মিহি সুতার কাজ।

তার পাশেই শোভা আপুকে দেখতে পেয়ে সুনিশ্চিত হলাম যে মাকা বেটি হে ইয়ে।

যেমন মা, তেমন তার সন্তান।

একজন ভদ্র লোককে দেখলাম সাথে। একজন মাইকেল কেও দেখলাম। মাইকেলটাকে চেনা চেনা লাগতেছে। কোথায় যেন আগে ‘দেখছি দেখছি বলে মনে হচ্ছে। উনারা টোটাল চারজন।
নির্ঘাত এরা শোভা আপুর ফ্যামিলি।

একদম তাই! আমার ধারণাটাই ঠিক!
শোভা আপু দৌঁড়ে এসে আম্মাকে বললো,
– আন্টি, এইযে আমার মাম্মাম আর ডেড আর ছোট ভাইটা আসছে।

ছোট ভাইটা যে কে…
ছেলেটা আমার দিকে তাকাচ্ছেই না।
কিন্তু আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে।
খুব চেনা মুখ!
কে এইটা!
_____________
________

মঞ্জু ভাইকে একটু আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে আজ।

ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ঘোলাটে।
কিছুক্ষন পর আমাদের বলা হলো ভেতরের রুমে যেতে। গেলাম।
তারপর বললো লিপ্টে করে পাঁচতালায় যেতে।
আসলাম। তারপর বলা হলো, পর্দা সরিয়ে ভিতরে যেতে। গেলাম।
এই গেলাম-আসলাম-গেলামই করতেছি সেই কখন থেকে! কিন্তু…

পর্দা সরিয়েই,

ওয়াও!

কি সুন্দর ডেকোরেশন!
মঞ্জু ভাইয়ের কাজ।
ডাক্তার মানুষ, বাবার আলালের ঘরের দুলাল।
কিশোর ভাইও হেল্প করেছে কিছু।
প্রান্তিক ভাইয়ের নাকি পকেট খালি তাই দিতে পারেনি।

রেস্টুরেন্টের শেয়ারে আছে মঞ্জু ভাইয়ার আব্বা। তাই এত সময় অপচয়ের পর ও কোনো বাধা-বিপত্তি বা সমস্যা হয়নি।

দোতালায় রেস্টুরেন্ট।
পাঁচতালায় আবার কমিউনিটি সেন্টারের শেয়ারে আছে মঞ্জু ভাইয়ারা। ওটা শেয়ার না, মূলত উনারাই মালিক, নামমাত্র কেউ কেউ ইনভলভ হয়েছিলো। মঞ্জু ভাইয়ার বাবা সেকালের ইঞ্জিনিয়ার। টাকা-পয়সার অভাব নেই মাশাল্লাহ্!
তবুও জেঠা, কাকা, মাসতুতো, পিসতুতো ভাইদের জড়াতে হয়েছে। আরো নানান সাংসারিক ঝামেলা..

যাক গে,
কমিউনিটি সেন্টারের একটা রুমে ডেকোরেশন করার ব্যবস্থা করেছিলো মঞ্জু ভাই, হাতে হাত রেখে হেল্প প্লাস সব একুরেটলি চয়েস করা, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি..
সবই কিশোর ভাই করেছে।
___________

লিমা আপুকে অনেকক্ষন দেখিনা।
বুঝলাম না।

মঞ্জু ভাই না হয় লিমা আপুর জন্য এত সব আয়োজন করেছে। কিন্তু কিশোর ভাই কেন সবাইকে জামা-কাপড় কিনে দিতে গেলো?
আমি চেয়ার টেনে ধঁপাস করে বসে পড়লাম।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
– আল্লাহ, আমাকে কেউ কিছুই বলতেছেনা! কেন?
কি হচ্ছে আর কি হতে চলেছে? কিছুই বুঝতেছিনা!

কিছুক্ষন পর…

আব্বা এসে চোখ গরম করে বললো,
– তোর কানে কি কথা যায়না নাকি?
আমি কি ফকির? কি পরে আছিস এসব? যা বলতেছি। বলদ।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।

ভাবতেছি,
– বাহ্! প্রান্ত ভাই ও বলদ বলে, আব্বাও। প্রান্ত ভাইও রাগারাগি করে, আব্বাও! দুজনের কি মিল।

দুচোখ আশেপাশে ঘুরাচ্ছি। কাকে দেখা যায়, কে কি করছে…দেখার জন্যই এদিক-সেদিক চোখ ঘুরাচ্ছি।

হঠাৎ আবিষ্কার করলাম,
প্রান্ত ভাই দূর থেকে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখে তার কালো ভাব ছেঁয়ে আছে।

কি হলো ব্যাপারটা!
তবে কি এখনি বৃষ্টি নামবে?
ঐ বৃষ্টির নামই কি “হঠাৎ বৃষ্টি” বলে কিছু একটা হয়?

চলবে…

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে