লতাকরঞ্চ (১১)

0
667

লতাকরঞ্চ (১১)

কিশোর ভাই উদ্যত হয়ে শোভা আপুকে বললো,
– স্কাউনড্রেল। ভুল হতেই পারে। তারজন্য এরকম একটা বিহেভিয়র আশা করা যায়না! এত বড় সাহস হয় কি করে তোমার?

প্রান্তিক ভাই বললো,
– শোভা তুমি এটা ঠিক করোনি। সামান্যই তো!
আমি চোখ উপরে তুলে একবার আড়চোখে সেই হৃষ্টপুষ্ট যুবকটাকে দেখে নিলাম।

কিশোর ভাই আমাকে বললো,
– চলো আমরা অন্য রেস্টুরেন্টে যাবো। এর চেয়েও ভালো, ফার্স্ট ক্লাস কোনো রেস্টুরেন্টে যাবো। দেখা যাক, কার দৌঁড় কতদূর।
আমি মিনতি করে বললাম,
– না ভাইয়া। আমাকে বাড়িতেই নিয়ে চলেন। আমি বাড়িতে যাবো। প্লিজ।
– না। তুমি যাবা। দ্যটস ফাইনাল।
– দোহাই আপনার। আসলে আমার সাথে এসব যায়না। তাছাড়া আমার এসব বড়লোকি কাজ-কারবার ভালোও লাগেনা। সরি। আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলেন ভাইয়া। বিনিময়ে আপনার একটা চাওয়া পূর্ণ করবো।

খুশিতে ভাইয়ার চোখ চকচক করছে! মনে হচ্ছে এইমাত্র বুঝি কোটি টাকার লটারি জিতেছে এই মানুষ! মুখে হাসি রেখেই বললো,
– সত্যি?
– হুঁ।
– আচ্ছা, আমার সেই একটা চাওয়া হচ্ছে…
তুমি আমার সাথে যাবা। ব্যস।
____________
________

কিশোর ভাই আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি একবার তাকিয়ে দেখলাম প্রান্ত ভাই এখনো বিজি উনার নষ্ট হয়ে যাওয়া সেই শার্ট নিয়ে।
শোভা আপু খাচ্ছে আর ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি রেখে, ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে অদৃশ্যভাবেই আমাকে বলছে,
– কি, কেমন দিলাম?

আমি চলে গেলাম।
অন্য রেস্টুরেন্টে যাবো।
কিশোর ভাইয়ের আবদার বলে কথা!
গাড়িতে যাচ্ছি। আমদের বাড়ি শহরতলী থেকে বেশি দূরে নয়।

ফোনের রিংটোন হচ্ছে। কিশোর ভাই বললো,
ফোন তুলতে হবেনা। আমি যাদের যাদের জানানোর সবাইকেই জানিয়ে দিয়েছি। এখন খামোখা অন্য কেউ বিরক্ত করবে; তুমিও উল্টাপাল্টা বলে বসবা। কারণ মাথা গরম আছে।
আজতো ৬-০২-২০।
আমি বললাম, হুঁ।

ভাইয়া বললো,
– সামনে তো ভ্যালেন্টাইন ডে আসছে। কোনো প্ল্যান আছে?
– কিসের প্ল্যান?
– প্রান্তকে নিয়ে।
সারা পথ আর ফিরেও তাকালাম না। চুপচাপ পাড়ি দিলাম সারাপথ।
উনি কি বুঝাতে চাইলেন জানিনা। তবে মনে হচ্ছে প্রান্ত ভাইকে নিয়ে যে আমি ভিতরে ভিতরে জ্বলে-পুড়ে যাই এটা হয়তো উনি ধরতে পারছে।
লজ্জ্বার আর অন্ত-শেষ রইলোনা।

•°•

আমি প্ল্যান করে রেখেছি।
এই কথা বলার জন্য আমি তাকে চরম শাস্তি দিবো। কিছুই খাবোনা। এক-দু চামচ চেখে রেখে দিবো। শুধু স্বাদ নিরূপণের জন্য একটু..
তাছাড়া দরকার নেই আমার।
রেস্টুরেন্টে পৌঁছে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম!
কি মুশকিল!

সেখানে আব্বা, আম্মা, লিমা আপু, ফুফু,ফুফা,কালুসহ সবাই উপস্থিত!
ব্যাপার কি?
এরা এখানে কি করে আর কেনই বা আসছে?
______________
__________

ওদিকে প্রান্ত ভাইকেও দেখা যাচ্ছে।
লাল শার্ট ছেড়ে এখন হালকা বেগুনী কালারের শার্ট পড়েছে। শোভা আপুকে দেখা যাচ্ছেনা। কোথায় আছে এই ঢাকাইয়্যা,ফ্যাশনাবল নারী তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রান্ত ভাইয়ের আশেপাশে নেই.. অলৌকিক দৃশ্য!
প্রান্ত ভাইতো এক-কথায় চোখে হারায় ঐ মেয়েটাকে।

আমি কিশোর ভাইয়ের দিকে তাকালাম একবার।
উনি মৃদ্যু হেসেই যাচ্ছে।
•°•
লিমা আপুর কাছে গেলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,
– আপু কি হচ্ছে এখানে? তোরা এখানে আসবি আমাকে আগে বলিসনি কেন?

আপু হেসে দিলো।
আমার প্রচন্ড রাগ হলো।
আমি সিরিয়াস একটা কথা জিজ্ঞেস করলাম আর ও কথাটাকে ফেলনা মনে করে ইগ্নোর করলো!
তারপর আমি মজা নিয়ে বললাম,
– কিরে, তোর আর মঞ্জু ভাইয়ের এনগেইজমেন্ট বুঝি এখানেই হবে?

আম্মা উঠে এসে তাড়াতাড়ি বললো,
– এই নে লিমা। যা এটা গিয়ে লতাকে পরিয়ে আন। তাড়াতাড়ি করিস।

আমি বুঝতেছিনা এসব কি হচ্ছে!

আমি যেটা পরে আছি ওটায় কি অসুবিধা?
আর রেস্টুরেন্টেই কেন আমার ড্রেস চেইঞ্জ করতে হবে!

সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি ড্রেস চেইঞ্জ করবোনা মানে করবোনা। ব্যস!

কিশোর ভাই এসে বললো,
– থাক না লিমা। ও যখন চাচ্ছেনা তখন ঠিক আছে। বাদ দাও। ও এমনিতেই যথেষ্ট সুন্দর। এমন সাদামাটা সৌন্দর্য আজকাল পাওয়া দূর্লভ।
এই বলে উনি গিয়ে আব্বার পাশে বসলেন।
লিমা আপু ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে মুখে ব্যঙ্গ হাসি দিয়ে বললো,
– কিরে?

আমি লিমা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
– ড্রেসটা কে দিয়েছে রে?
আপু বললো,
– কে আবার! কিশোর।
আমি হা করে বললাম,
– কি!!!
আপু বললো,
– মুখ বন্ধ কর! শুধু তোকে না, বাড়ির সবাইকেই দিয়েছে। এত আশ্চার্যান্বিত হওয়ার কি আছে, হুম?
আমি লজ্জ্বা পেয়ে গেলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,
– আচ্ছা, নতুন জামা পরে খেতে আসছোস সবাই। তাহলে খাচ্ছিস না কেন? আর খাবারই বা কই?

আপুর চোখ চকচক করছে। মনে হচ্ছে কোনো খুশির সংবাদ আছে।

আপু আম্মাকে খুব উত্তেজিত হয়ে বলতেছে,
-আম্মা দেখেন, দেখেন! ওরা চলে আসছে!

আমি লিমা আপুকে টান দিয়ে নিয়ে আসলাম আমার কাছে।
আপু স্লিপ কেটে পড়ে গেলো!
মঞ্জু ভাই দৌঁড়ে এসে খানিক বিরক্তি নিয়ে বললো,
– লতা! এখনো বাচ্চাই আছো!
এই বলে আপুকে উঠিয়ে নিলো ভাইয়া!

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
” আহ্! কি প্রেম! ”
পিছন থেকে কোথা থেকে যেন প্রান্ত ভাই এসে বললো,
” আহ্! কি ভালোবাসা! ”
চলবে..

( নতুন জায়গায়,নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে একটু হিমসিম খাচ্ছি যদিও; তবুও আপনাদের ভালোবাসার #লতাকরঞ্চ কে বাঁচিয়ে রাখছি জাঁকজমকপূর্ণভাবে! বাই দ্য ওয়ে, কালকে কারা কারা বইমেলায় যাচ্ছেন?)

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে