লতাকরঞ্চ (১৭) [উপসংহার]

0
969

লতাকরঞ্চ (১৭) [উপসংহার]

প্রান্তিক ভাই বাসায় এসে পৌঁছেছে।
বোধ হয় এসেই আমার কাছে চলে আসছে।
– কিরে লতা, মিস লতাকরঞ্চ! কি করছিস?

আমি মাথা আঁচড়াচ্ছিলাম।
চিরুনি দিয়ে লম্বা লম্বা চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দেখছিলাম নিজেকে।
খুব আনচান করছে মন কারণ কিশোর ভাই এভাবে হুট করে চলে এসেছে তাও আবার মা-বাবাকে নিয়ে। কেন এসেছে, কি হয়েছে কিছুই জানতে পারছিনা কারণ আমার বাহক ‘কালু’ এখন পর্যন্ত অবসর পায়নি রান্না ঘর থেকে। অবসর পেলেই সে এদিকে একবার আসবে। কিন্তু এখনো আসছে না।

আমি নিজ থেকে যেতে ও পারছিনা কারণ আম্মা একবার এসে বলে গিয়েছে,
– লতা, রুম থেকে আমি না বলা পর্যন্ত বের হবিনা। বাড়িতে মেহমান আসছে। টৈটৈ করে ঘুরাঘুরি কম করবি আজ।
অথচ আমি একদমই টৈটৈ করিনা।

সারাক্ষন নিজের রুমে নিজেকে বন্ধ করে রাখি।
আম্মা এইতো সেদিনই উঁচু গলায় বলেছিলো,
এভাবে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকিস না লতা। একটু বের হবি। আকাশ দেখবি, বাতাস দেখবি, পুকুর দেখবি । মানুষের সাথে মেলামেশা করবি। এভাবে ঘরবন্দি হয়ে বসে থাকলে মানুষ তোকে অসামাজিক বলবে।

সাধারণত আমি খুব কমই বেরোই। কেবল সপ্তাহে একবার করে বারান্দায় উঁকি মারা আর মাসে একবার করে ছাদে যাওয়া- এই হলো আমার ঘুরাঘুরি বা নিত্যকর্ম।
একটা গান আছে না? আমার আছে জল?
আমার জন্য পার্ফেক্ট হবে,
” আমার আছে বারান্দা! ”

সবসময় সেন্টার সিঁথি করে বিণুনি অথবা হিজিবিজি করে বাঁকা সিঁথির বিণুনি বা চুল টাইট করে বেঁধে রাখতে রাখতে নিজেকে এখন একঘেয়ে মনে হয়। এইজন্যই হয়তো শোভা আপু সারাক্ষন আমায় অপমান করতো..

তাই আয়নায় আজ খোলা চুলে নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করছি।
একপাশে নিয়ে নিলাম চুলগুলো।
কপালে কালো টিপ দিয়ে এমনি করেই দেখছিলাম নিজেকে। তখনি প্রান্ত ভাই এসে হাজির।

ভাই আবার বললো,
– কিরে? কি করছিস? সাজুগুজু করছিস? হাহ্ হা হা..

আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।

লজ্জ্বা পেয়েই বললাম,
– হ্যাঁ তো? হাসার কি আছে?

ভাই হাসতে হাসতে ব্যঙ্গ করে বললো,
– তুই সাজছিস? হাহ্ হা হা… উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে লাভ কি! তোর যা চেহারা! আমার তো দেখেই হাসি আসতেছে… হেহ্ হে হে!!!

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
– হ্যাঁ। বটে। তা আমি তো আমার সাজগোজ কাউকে দেখাতে যাইনি। নিজের রুমে নিজে নিজেকে সাজাই,গুছাই,খাই। যা ইচ্ছা তাই করি। তো, এগুলো কি আপনার দেখার বিষয়?
– না, এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তো, এক পলক দেখতেই ভাবলাম একবার গিয়ে দেখে আসি জোকারটাকে।(প্রান্ত)
– আমিতো জোকার। জানি। কিন্তু এইভাবে আমার রুমে ঢুকে পড়ার কোনো অধিকার নেই আপনার।

ভাই আবার হেসে হেসে বললো,
– এই তোকে একটা কথা বলবো বলবো করে বলা হয়না। বলি?
আমি টিপটা খুলে রেখে দিয়ে চুলে তেল দিচ্ছি।
সাড়া না পেয়ে নিজে নিজেই বললো,
– এই তুই কি বিয়ে করবি না? সারাজীবন কি এভাবেই থাকবি? চিরকুমারী? হাহ্ হা হা। অবশ্য তোর বিয়ে হবেনা আমি জানি।

আমি কোনো কথার উত্তর দিবো না ভাবছিলাম কিন্তু তবুও ভুল করে বলে ফেললাম,
– কিভাবে?
উনি উৎসাহ পেয়ে বললেন,
– জানি। কারণ এমন মেয়েকে কে বিয়ে করবে! সবাই_ই একজন সেই লেভেলের সুন্দরী,স্মার্ট,শহুরে মেয়ে চায়..বুঝলি? তুই তো তুই_ই। ভাবছিলাম আস্তে আস্তে বড় হলে ঠিক হয়ে যাবি। কিন্তু না, হলিনা। এইজন্যই বলে, যেই লাউ সেই কদু।

আমি প্রচন্ড বিরক্তি অনুভব করলাম।
বিরক্তি নিয়েই বললাম,
– আপনি রুম থেকে বের হন।
ভাই হাসতে হাসতে বললো,
– রাগ হইছিস? আগে উত্তরটা দে। তারপর চলে যাচ্ছি।
আমি বললাম,
– হ্যাঁ। আমার ভবিষ্যৎ তো আপনিই বলেই দিয়েছেন। আমি আর কি বলবো,বলেন? আমি তো আর আপনার মত ভবিষ্যৎ দেখতে পাইনা, তাই কিছু বলতে পারছিনা। আপনি তো সবসময়ই আপনার নিজের কথায় অনড়। আপনি যা বলবেন তাই সঠিক। যাইহোক, এবার যান।

উনি হা করে তাকিয়ে আছে।

আমি আবার হাত দিয়ে দরজার দিকে ইশারা দিয়ে বললাম,
– আপনি এখান থেকে যাবেন কিনা?
উনি আমতা আমতা করে বললো,
– তুই রেগে গেছিস? আমিতো সিরিয়াসলি বলিনি।
শোন,

আমি তাকে আর সুযোগ দিলাম না।
রুম থেকে ঠেলে বাইরে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

অন্যসময় হলে আশা করতাম এখনি দরজায় একটা টোকা দিক। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজ এরকমটা আশা করছিনা, দিলেও খোলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পোষণ করছিনা। ঐদিকে ঐ ব্যক্তিটিও অটল। সেও দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেনা। ধাক্কাতো দূর, টোকা পর্যন্ত দিচ্ছেনা।

আমি নিশ্চিত, সে পাত্তা না দিয়ে চলে গিয়েছে।
__________________________________________

” স্যার একটু কষ্ট করে ড্রয়িংরুমে আসেন দয়া করে। আমার আব্বা-আম্মা এসে বসে আছে। একটু আসুন। ”
কিশোর ভাই কথাটা বলার পর আব্বা নাকি গায়ের চাদরটা তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমের দিকে গিয়েছে। যাওয়ার আগে নাকি আম্মাকে বলে গিয়েছে যাতে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে রাখে ঠিকঠাকমত করে।

কালু এসে আমাকে শুধু এতটুকু জানিয়েই আবার হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সে এখনো রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত আছে। এদিকে আসার আর কোনো নামগন্ধ ও নেই।

আমি খুব চিন্তিত আছি।
পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।
কি হচ্ছে না হচ্ছে জানা দরকার।
জানতে পারছি না। কারণ আমার স্পাই এখনো মহাব্যস্ত।

আব্বা এসেছে অনেক আগেই।
কিশোর ভাইয়ের আব্বার সাথে অনেকক্ষন যাবৎ খোশগল্প চলছে।
কিশোর ভাইয়ের বোন রাফা আজ আসেনি।
নয়তো এতক্ষনে ও আমার কাছেই চলে আসতো।
আর উনার মা আমার আম্মার সাথে ভেতরের রুমে গল্প করছেন।

আব্বা- আম্মা লজ্জ্বিত হয়ে আছে কারণ আলাদা করে দাওয়াত করা উচিত ছিলো। অনেকবার আব্বা আম্মার দাওয়াত পড়েছিলো ঐ বাড়ি। অথচ লিমা আপুর বিয়ে ছাড়া এ পর্যন্ত আর একবার ও উনারা আসেনি। দাওয়াত ছাড়াই হঠাৎ করে সবাই এসে হাজির; তাই আমরা সবাই বিস্মিত হয়ে আছি।

এবারে পরিবারের সবাই একসাথে আছে। লিমা আপু নেই, শশুর বাড়িতে আছে।
কিশোর ভাইয়ের আব্বা শুরু করলেন,
– আমি এইখানে কেন হঠাৎ করে আসছি এই নিয়ে টেনশনে আছেন নাকি স্যার?
আব্বা ইতস্ত করে বললেন,
– আরে না না। কি বলেন এসব! আমরাই তো আপনাদের দাওয়া করতাম.. বিশ্বাস করেন.. কিন্তু আমাদের কি সৌভাগ্য।
আব্বাকে আজ একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে; অজানা কোনো কারণে আব্বা ঘাবড়ে আছে।
তো বলেন কি খবর?

কিশোর ভাইয়ার আব্বা বললেন,
– আসলে ছেলেমেয়ে বড় হলে যে খবর হওয়ার কথা সেই খবরই আরকি.. ছেলের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে আসছি একটু।
আব্বা আরো ঘাবড়ে গেলেন।
– তো, ছেলেতো একটাই। বিয়ের বন্দোবস্ত হয়ে গিয়েছে মনে হয়?
– না না। এখনো হয়নি। হবে আশা করি। যদিনা আপনি আপত্তি না জানান।
আব্বা অবাক হয়ে গেলেন।
– মানে?

– মানে হচ্ছে এই যে…
আপনার ছোট মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্য চাই। দিবেন নাকি?
আব্বা বাকরুদ্ধ।
কিশোর ভাইয়ের আম্মা বলছেন,
– সম্বন্ধ করতে আসছি স্যার। আপনার লতাকে আমাদের দারুন লাগে। আমরা ওকে আমাদের বাড়িতে চিরদিনের জন্য নিয়ে যেতে চাই।

আব্বার চোখ চকচক করছে খুশিতে।
আব্বা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
– আপনাদের ছেলে কি বলে?
কথাটা শুনতেই কিশোর ভাই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
উনি উনার আব্বাকে বললো,
– আব্বা আমি ভিতরে যাচ্ছি। আপনারা কথা বলেন।

উনার আব্বা রাগী স্বরে বললো,
– ভিতরে যাচ্ছিস মানে? এখানেই থাক।
আমার আব্বা বললেন,
– থাক না। ও যখন লজ্জা পাচ্ছে তখন ভিতরে গিয়েই বসুক না।
কিশোর ভাইয়ের আব্বা বললেন,
– না স্যার। আমরা পাত্রী দেখতে আসিনি।
আব্বা ভ্রু কুঁচকে বললো,
– মানে! এই মাত্রই তো বললেন..

কিশোর ভাইয়ের আব্বা মৃদ্যু হেসে বললো,
– আমরা পাত্রীকে চিনি। খুব ভালো করেই চিনি। ঐ পাত্রীকে আমরা ও মন থেকে চাই, আমাদের ছেলেও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই আমরা পাত্র দেখাতে আসছি, পাত্রী দেখতে নয়।

এই কথাটা শুনে খুশিতে আব্বার চোখে জল এসে গেলো।
আব্বা বললেন,
– যে ছেলের বাবা এত আদর্শবান হয়, সে ঘরে মেয়ে দিতে আপত্তি থাকবে কেন.. আলহামদুলিল্লাহ।

উনি বললেন,
– লজ্জা দিয়েন না। আমার ছেলের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আপনি। আর তার মেয়েকে বৌমা হিসেবে পাওয়াও সৌভাগ্যের ব্যাপার। আপনি রাজি থাকলে… পাকা কথা সামনে এগোবে আরকি।
আব্বা বললেন,
– কি বলেন এসব। আমি রাজি। আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র এই ছেলেটা, এটা কি আর এমনি এমনি?
এই বলে আব্বা আম্মাকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন,
– লিমার আম্মা যাও মিষ্টি নিয়ে আসো। লতাকেও রেডি করে নিয়ে আসো। আজ কিন্তু সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসবা।

আম্মার চোখে মুখে আনন্দময়ী হাসি।
__________________________________________

আমাকে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হলো।

কি হতে যাচ্ছে সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। কিন্তু কিছুই বলিনি।

আমি আসার পর আব্বা বললেন,
– এই যে আমার লতা মা। যা যা জিজ্ঞেস করার, করে নেন বেয়ান।
কিশোর ভাইয়ের আব্বা বললেন,
– আমাদের কারোরই কিছু জিজ্ঞেস করার নেই।
এই রইলো আপনার ছাত্র। আপনি বরং তাকে সেসব জিজ্ঞেস করুন যা যা জিজ্ঞেস করার কথা ছিলো আমাদের, আপনার মেয়েকে।

আব্বা খুশিতে বার বার কেঁদে দিচ্ছে। একটা বাবার কাছে যে যোগ্য শশুর বাড়িতে নিজের মেয়েকে সম্প্রদান করাটা কতটা আনন্দের হয়; সেটা কেবলমাত্র বাবা সম্প্রদায়রাই আন্দাজ করতে পারে।

সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো।
আমি কোনো অসম্মতি জানাতে পারলাম না আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আব্বাকে এতটা খুশি হতে কোনোদিন দেখিনি। হার্ট এট্যাকের পর এই প্রথম আমি আমার আব্বাকে মন খুলে হাসতে দেখছি।

____________________________________________

কিশোর ভাইকে আব্বা ডেকে বললেন,
– বাবা, তোমার কিছু বলার আছে?
কিশোর ভাই একবার উপরের দিকে চোখ নিয়ে বললো,
– স্যার আপনি আজকে ঔষধ খান নি কেন?
আব্বা বললেন,
– দেখছেন বেয়ান? এইজন্যই আপনার ছেলেকে আমার এত পছন্দ। হাহ্ হা হা। তোমার কি এই ছাড়া আর কিছু বলার নেই?
কিশোর ভাই বললো,
– লতার কিছু বলাটাকে আমি আবশ্যক মনে করি স্যার। ও চাইলে তবেই সব হবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত ওর উপরে চাপিয়ে দিবোনা। ওকে জিজ্ঞেস করুন।

আব্বা আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি কিছুই বলতে পারলাম না লজ্জায়।

প্রান্ত ভাই একপাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি ভিতরে চলে গেলাম।

রুমে ঢুকেই বালিশ চাপা দিয়ে কিছুক্ষন জোরে জোরে কাঁদলাম। কেন কাঁদলাম জানিনা, তবে আমি কেঁদেছিলাম।

হঠাৎ দেখলাম প্রান্ত ভাই আমার জানালার পাশে বসে আছে।

আমাকে উঠতে দেখে উদাসীনভাবে বললো,
– অত:পর তোর বিয়েটা হয়েই যাচ্ছে.. আজই বললাম আর আজই জেদ করে রাজি হয়ে গেলি? আমার কথাটা একবারের জন্যও ভাবলিনা?

আমি চমকে উঠলাম। কি বলছে এসব?

প্রান্ত ভাই উঠে এসে হাঁটু ফ্লোরে রেখে আমার বিছানায় মাথা রেখে কিছুক্ষন কাঁদলো না কি করলো জানিনা। তবে এভাবেই আছে অনেকক্ষন যাবৎ।

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।

আমি বললাম,
– কি হলো হঠাৎ? কাঁদছেন কেন?

প্রান্ত ভাই বললো,
– এতদিন বুঝিনি। আজ আমার হৃদয় হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে কি যেন একটা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি।

আমি ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত চোখে তাকিয়ে আছি।

– লতা তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমি কি করবো রে?
কাকে রাগাবো, কার সাথে ঝাল ঝাল কথা বলবো?
কে হবে আমার দুস্টামির সঙ্গী?

আমি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।
প্রান্ত ভাইয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়াচ্ছে। এবার দেখলাম।

কিছুক্ষন পর একটা শব্দ ভেসে আসলো…
” এখনো সময় আছে লতা। তুমি যেটা চাও সেটাই হবে। আমি জানি তুমি প্রান্তের প্রতি দূর্বল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটা ভুলে যেওনা যে আমিও তোমার প্রতি দূর্বল। মাত্রাতিরিক্ত দূর্বল। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি প্রান্তের হলে ও আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো, আমার হলেতো বাসবোই। ”

কথাটা শুনে প্রান্ত ভাই চেঁচিয়ে উঠে বললো,
– আপনি যান তো। লতাকে আমি ভালোবাসি। ও আমারি। বেশি ঢং না? খুব ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে? পরের বউকে ভালোবাসবেন আপনি, আহ্ কি বীরপুরুষ উনি। গেট লস্ট। এই লতা, তুই বলে দেতো..

কিশোর ভাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর দেখলাম, কিশোর ভাইয়ের এক চোখের এক কোণা দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে।

তাই দেখে প্রান্ত ভাইয়ের ঠোঁটের কোণায় ফুঁটে উঠেছে বাঁকা, রুক্ষপ্রকৃতির এক বিভৎস্য হাসি।

এই দৃশ্য দেখে আমার হৃদয় হু হু করে কেঁদে উঠলো। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে আমার জান-প্রাণ। আমি কিছুতেই কিশোর ভাইয়ের ঐ এক ফোঁটা চোখের জলকে সহ্য করতে পারছিনা।

দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম কিশোর ভাইকে।

এবার তার সেই নি:স্বার্থ বুকে ঠাঁই পেয়ে আমিও হাউমাউ করে কাঁদছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– আপনি কাঁদছেন কেন?
উনি কান্না জড়ানো গলায় বললো,
– ভালোবাসি তাই।
কিশোর ভাই ও বোকার মত আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি কেন এত কাঁদছো?
আমি বললাম,
– আমিও ভালোবাসি। তাই…

কিশোর ভাইকে জড়িয়ে ধরার পর তার পকেট থেকে ফুলের সুগন্ধ পেলাম।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি,
একটা টকটকে লাল গোলাপ…

” সে আজো ফুল আনতে ভুলে যায়নি.. ”

(#সমাপ্ত)

(শেষটা ভালো না লাগলেও ভালো লাগাতে জানতে হয়। আমার পাশে থাকবেন। এমন আরো কিছু গল্প বলতে চাই। ধন্যবাদ সবাইকে।)

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে