মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৫+১৬

0
1250

#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৫+১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_____________________________
আভার অভিমান মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। অভিমানে ক্রমশ ক্ষয় হতে লাগল ভালোবাসার আনন্দ। এতদিন পর আহনাফের মনে পড়ল আভা বলেও এক পাগল প্রেমিকা তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে? আভা চোখের কার্নিশের জলটুকু মুছে জানালার জানালার পর্দা আটকে দিল। আভার অভিমানী চেহারা ঢাকা পড়ল ফিনফিনে কাপড়ের আড়ালে। আহনাফের ভ্রু কুচকে এল। হঠাৎ আভার মতিগতি পরিবর্তন হওয়ায় সে বেশ বিরক্ত। সে দেরি করে এসেছে। কিন্তু দেরি করার কারণ কি আভা নয়? অবশ্যই। আভা যদি আহনাফকে ঠিকানা দিত, তাহলে নিশ্চয়ই আভাকে খুঁজে পেতে আহনাফের এত কসরত করতে হত না। আহনাফ ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বিরক্তি আড়াল করল। নারীরা বড্ড রহস্যময়ী, উক্তিটি মাথায় রেখে ফোন হাতে নিল। আভার নাম্বার ডায়াল করে কল দিল তাকে। দুবার রিং বাজল। আভা কল ধরল না। আহনাফের বিরক্তি আকাশ ছুঁলো। আহনাফ মেসেজ করল,
‘ কল রিসিভ করবে। নাহলে দুতলা বেয়ে উপরে উঠে আমার হবু শাশুড়িকে সালাম করে আসব। সেটা কি চাও? ‘

আভা বার্তা পড়ে চোখ গোলাকৃতি করল। ইশ, কেমন কথা। হবু শাশুড়ি? বউয়ের খোঁজ নেই। আসছে শাশুড়িকে সালাম করতে। খারাপ লোক। আভা উত্তর দিল না মেসেজের। অথচ একটি বার্তা বারংবার পড়তে লাগল। আহনাফের একটা বার্তা তার হৃদয়ের ঘণ্টা নাড়িয়ে দিচ্ছে। যতবার আহনাফের এই ক্ষুদে বার্তা পড়ছে, আভার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। মানুষটা আগাগোড়া কেমন প্রেমময়। তার কথা ভাবলে প্রেম পায়, তার স্মৃতি মাথা চাড়া দিলে প্রেম পায়, তার কন্ঠ শুনলেই প্রেম পায়। তার সবকিছুতেই আভার কেমন যেন প্রেম প্রেম পায়। যতক্ষণ সে সামনে থাকে আভার ইচ্ছে হয়, সারাক্ষণ তার দিকে অপলক চেয়ে থাকতে। তাকে আগাগোড়া জরিপ করতে ইচ্ছে করে। তার ঘন ভ্রু, ঘোলাটে দৃষ্টি, বলিষ্ট পেটানো দেহ সব আভাকে ভীষন টানে। কিন্তু সে সামনে থাকলে লজ্জার কারণে আভা চেয়ে থাকতে পারে না। অথচ সে চেয়ে থাকে। পুরুষ মানুষ হলে ভীষন সুবিধা। প্রিয় মানুষকে মন খুলে চেয়ে দেখা যায়। যখন তখন স্বইচ্ছায় ছুঁয়ে দেখা যায়। অথচ মেয়ে মানুষ পারে না। আভা পারে না। লজ্জায় ভেঙে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা মেয়েদের এত লজ্জা কেন দিয়েছেন?

পুনরায় মুঠো বার্তার শব্দে আভা সম্বিত ফিরে পায়। মুঠোফোনের দিকে চায়। আহনাফের মেসেজ,
‘ আমি তোমাদের বাসায় দরজার সামনে। কলিং বেল বাজাতে হবে নাকি তুমি আসবে? ‘

আভা চমকে উঠল। সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে? কলিং বেল বাজালে আভার মা তাকে দেখে নিশ্চয়ই বিশাল ঝটকা খাবেন। মা আভাকে নানা প্রশ্ন করবেন। আহনাফের সামনে সেসব প্রশ্ন শুনলে আভার লজ্জায় আক্কেলগুডুম হবে। ইশ, না, না। আভা আর দেরি করল না। ফিরতি বার্তা পাঠাল,
‘ খবরদার! বিল্ডিংয়ের নিচে গিয়ে দাড়ান। আমি নিচে আসছি। ‘

আহনাফের ঠোঁটের কোণায় কুটিল হাস। বোকা মেয়ে!

কয়েক প্রহর কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল আভা চাদরের আড়ালে মুখ লুকিয়ে নিচে নেমে আসছে। লম্বা চাদরে শরীর থেকে মুখ অব্দি ঢেকে। চোখ দুখানা দেখা যাচ্ছে। আভা আহনাফের পাশে এসে দাঁড়াল। চারপাশ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করে আহনাফের দিকে চাইল। রাগান্বিত কণ্ঠস্বরে বলল,
– ‘ আপনি জানেন আপনি খুব খারাপ। একদম বাসায় চলে গেলেন? জানেন মা আপনাকে দেখলে কি করবে? মেরেই ফেলবে আমাকে। ‘
আহনাফ ভ্রু বাঁকাল। বুকে আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে বুক টানটান করে দাঁড়াল। অতঃপর বলল,
–’ কে বলল, আমি তোমার বাসায় গিয়েছি? আমি তো নিচেই ছিলাম এতক্ষণ। ‘
–’ মানে? আপনিই তো বললেন আপনি বাসার দরজার সামনে। আমি না এলে কলিং বেল বাজাবেন। ‘
–’ এটা তো তোমাকে নিচে নামানোর ছোট্ট এক প্রয়াস। ‘
আহনাফের নির্লিপ্ত উত্তর। অতি স্বাভাবিক কণ্ঠ। ভয়ডর নেই। কেমন যেন গা ছাড়া উত্তর শুনে আভা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। মুখ কুঁচকে বলল,
–’ মিথ্যা বলেছেন? ‘
–’ হ্যাঁ। ‘
আভা হাল ছেড়ে দিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–’ আপনি আসলেই খুব খারাপ। ‘
–’ আমি কি একবারও বলেছি, আমি ভালো। ‘
আভা বাঁকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আহনাফের পানে। আহনাফ মৃদু হাসল। আভার দিকে ঠোঁট ঝুঁকে এনে কানেকানে সুধাল,
–’ খারাপের এখন তো সবে শুরু মিস. বউফ্রেন্ড! সামনে তোমার জন্যে আরো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে। বি রেডি। ‘

আহনাফের কানেকানে বলা বুলি আভার সারা গায়ে কম্পন সৃষ্টি করল। আভা ওপর পাশের মানুষকে নিজের অনুভূতির জোয়ারে ভেসে বেড়ানো দেখাতে চাইল না। কিন্তু নিজের অনুভূতি দল ছুটে পালিয়েছে। আভার কথা অমান্য করে কেমন বেহেয়ার ন্যায় আহনাফের প্রেম প্রেম বানি শুনে কেমন জমে গেছে। আহনাফ আভার কানের কাছে থেকে চাদর সরাল। কানের লতিতে আলতো করে ঠোঁট বসাতেই আভার সারা অঙ্গ শিরশির করতে লাগল। পায়ের আঙ্গুল বেকে যেতে চাইল। আভা পায়ের নখ দ্বারা স্যান্ডেল আকড়ে ধরল। মিনমিন করে বলল,
–’ এ-এটা র-রাস্তা। ‘
রাস্তা কথাটা কানে প্রবেশ করলে আহনাফের ঘোর ভেঙে যায়। আহনাফ তড়িৎ ভঙ্গিতে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ইতি অতি চেয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে আঙ্গুল কর্তৃক ঘাড় ঘষে। আভা লজ্জায় ইতি ওতি চায়। আহনাফ প্রশ্ন করে,
–’ হেঁটে হেঁটে কথা বলা যাক? ‘

আভা উত্তর দেয় না। কথা বলতে পারছে না সে। গলার কাছে সমস্ত অনুভূতি জট পাকাচ্ছে। কথা আটকে আটকে যাচ্ছে। আহনাফের প্রথম স্পর্শ সহ্য করা যাচ্ছে না। এখনো সবকিছু কেমন ঘোর-ঘোর লাগছে। আভা গায়ের চাদর খামচে ধরে সামনে হাটতে লাগল। আভাকে এগিয়ে যেতে দেখে আহনাফ আভার পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।

পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে আভা এবং আহনাফ। মনে পড়ে যাচ্ছে পুরনো সব স্মৃতি। সাজেকের রাতের আকাশের নিচে এভাবেই দুজন একসাথে হেঁটেছিল। তবে সেদিনের চিত্র একরকম আর আজকের চিত্র অন্য। আভা প্রশ্ন করল,
–’ আজ কি মনে করে আমার কথা মনে পড়ল? ‘
আভার প্রশ্ন স্পষ্ট ব্যঙ্গাত্মক ছিল। তবে তা আহনাফকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারল না। আহনাফ জিন্সের পকেটে দু হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সুধাল,
–’ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। ‘

আভা থমকে গেল। পায়ের পাতা আটকে গেল চকিতেই। আভাকে থামতে দেখে আহনাফ পা থামাল। আভার দিকে চেয়ে বলল,
–’ জানতে চাইবে না উত্তরটা কি ছিল? ‘

আভা উত্তর দিল না। হেঁটে এগিয়ে গেল সামনে। তবে উত্তরের প্রয়োজনবোধ করল না আহনাফ। আভার অভিমানের পাহাড় বড্ড উচু হয়েছে। অভিমানের পাহাড় ধ্বসে পড়ার জন্যে আহনাফের প্রশ্নের উত্তরটা জানা জরুরী। তাই সে নিজ তাগিদেই উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করল। আভার হাত ধরল। আভা থেমে গেল। আভার নরম হাত আহনাফের শক্ত হাতের ভাঁজে বন্দী। আভা সামনে তাকিয়ে আছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চিপে ধরে আছে। চোখ খিঁচে রাখা। আহনাফের উত্তর শোনার সাহস আভার নেই। উত্তরে যদি বিচ্ছেদ লেখা থাকে, তবে আভার বেচে থাকার কোনো কারণ থাকবে না। আভা মৃদু স্বরে বলল,
–’ হ-হাত ছাড়ুন। ‘
–’ উত্তর শুনবে না? ‘
আহনাফের নেশাল কণ্ঠ আভাযে মুহূর্তেই নাড়িয়ে দিল। আভা ঠোঁট কামড়ে ধরল। সদ্য জন্মানো অনুভূতির যন্ত্রণা আভার আর সহ্য হচ্ছে না। বুকের ভেতর শক্ত লোহা যেন ঘা পেটাচ্ছে। উত্তেজনা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে বেড়াচ্ছে। রক্তের তাপমাত্রা উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। হৃদপিন্ড চঞ্চল ব্যাঙের ন্যায় লাফাচ্ছে। উত্তর কি হবে?

#চলবে

#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_________________________
আহনাফের পা চলছে। তাড়াহীন পায়ে এগিয়ে আসছে আভার পানে। আভার পা থেমে। বিস্ময়ে ডুবে যাওয়া চোখ দুখানা দিয়ে অপলক চেয়ে দেখছে আহনাফ নামক প্রেমিক পুরুষকে। আহনাফের গা আভার গায়ে ছুঁইছুঁই। আভা আহনাফের বুক বরাবর। আহনাফকে চেয়ে দেখতে আভাকে মাথা উচু করতে ইচ্ছে। আহনাফের মাথা ঝুঁকে আছে আভার দিকে।
হঠাৎ আকাশ ডেকে উঠল। আকাশের বুক চিড়ে দেখা গেল সুদীর্ঘ ফাটল। বিদ্যুৎ চমকে উঠল। ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা আকাশ নিংড়ে মাটিতে ঝড়তে লাগল।
দুজনের গা বৃষ্টিতে ভিজে ছুপছুপ। আহনাফের চুল থেকে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে আভার লাজুক লাজুক চেহারার উপর। আহনাফের চোয়াল বেয়ে নেমে আসা প্রতিটা বৃষ্টির ফোঁটা আভার বুকে ভূমিকম্পের ন্যায় কাপন ধরাচ্ছে। আভার ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে। নয়ন জুড়ে রয়েছে সে। আহনাফ আভার কোমড় টেনে ধরল। আভা মিশে গেল আহনাফের বলিষ্ট বুকের সাথে। আহনাফের ভেজা হাত আভার কোমড় স্পর্শ করলে আভার দেহ শিরশির করে উঠে। পেটের মধ্যে মোচড় অনুভব করে। আহনাফ আভার চোখে চোখ রাখে। চোখে চোখে হয় হাজার হাজার কথোপকথন। দৃষ্টি বিনিময় হয় দুজনের। আহনাফ কথা বলে। হুইস্কি কণ্ঠে সুধায়,
–’ আমার একটা গোলাপ আছে। যার সুগন্ধ, যার সৌন্দর্য্য শুধুমাত্র আমাকে মুগ্ধ করার জন্যে তৈরি হয়েছে। আমার সেই গোলাপ তুমি। আমার একান্ত গোলাপ। আমার একটা আকাশ আছে। সেই আকাশে ভিড় করে লক্ষ কোটি তারা। কিন্তু একটা তারা দিনে রাতে সবসময় জ্বলজ্বল করে। সমস্ত অন্ধকার এক হয়ে তাকে কালো করতে পারে না। সে মুক্তোর ন্যায় উজ্জ্বল সদা! আমার আকাশের সেই তারা তুমি। আমার একান্ত তারা। যার আলো শুধুমাত্র আমার জন্যে। আমার জীবনে দুজন নারী আছেন। যারা আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন, ভালো রাখতে জেনেছেন, আগলে রেখেছেন। মায়ের পর তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ট নারী। যে নারী আমার বুকের বাম পাজরের হাড়, আমার বুকের স্পন্দন, আমার হৃদপিণ্ডের তীব্র শিহরণ, আমার চন্দ্র, তারা, সূর্য, আকাশ সবকিছু। সেই নারী হলে তুমি, আভা। ‘

আভা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। চোখ খুলে আহনাফের দিকে চেয়ে দেখবার সাহসটুকু কোথাও যেন হারিয়ে গেছে। আভার প্রাণ বোধহয় এখুনি বেরিয়ে আসবে। এই বুঝি সুখে আভার মরণ হল! আভার কান থেকে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে রেখেছে। এতদিন আভা যা শুনতে চেয়েছে, আজ তাই আহনাফ তাই গভীর আবেগ দিয়ে আভাকে বলছে। আহনাফের আকাশের তারা আভা? ইশ, আভা আর কিছু ভাবতে পারছে না। হাঁটু ভেঙে আসছে। এই বুঝি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
আহনাফ আভার গালে হাত রাখল। দু হাতের আজলায় পুড়ল আভার নরম তুলতুলে গাল। আভার ভেজা চুল কানের পেছনে যত্নসহকারে গুঁজে দিয়ে সুধাল,
–’ তাকাবে না? ‘

আভা কথা বলতে পারছে না। গলায় কেউ যেন পাথর বসিয়ে রেখেছে। সে পাথর লোহা দিয়ে তৈরি নয়। এ পাথর প্রেমের পাথর। পাথরের গায়ে মুক্তোর ন্যায় জ্বলজ্বল করে প্রেমের উত্তপ্ত শিখা। পাথরের গায়ে একগুচ্ছ আদর দিয়ে লেখা,
‘ আভার অনুভূতি আরো একটু বেহায়া হোক
আরো একবার সে কণ্ঠে আদর ঢেলে ভালোবাসি বলুক
দেহমনে একটুখানি কাপন ধরাক
সুখে দিক, যত ইচ্ছে তত। ‘

–’ তাকাবে না? আচ্ছা, তাকিও না। শুনো। আজ আমার অনেককিছু বলার আছে। অনেকদিন কারো সাথে এভাবে মন খুলে কথা বলিনি। সবসময় নিজের অনুভূতি আটকে রাখতে পছন্দ করতাম। অথচ দেখো। তুমি এলে। এক কিশোরী মেয়ের কারণে চব্বিশ বছরের সকল নিয়ম কেমন উল্টেপাল্টে গেল। আমাকে কেড়ে নিলে আমার থেকে। গত এক সপ্তাহ শুধু নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি। তুমি অনেক ছোট, অনুভূতি বুঝো না, নিজেকে এসব বলে বাঁধা দিতে চেয়েছি। আমি পারিনি। শত চেষ্টা করেও প্রেমে হোচট খাওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারিনি। আমি স্বইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করছি। আমাকে আটক করো। মনে শেকল পড়াও। প্রেমের গুলিবর্ষণ করে মনটাকে ঝাঁজরা করে দাও। তবু আমার হয়ে যাও। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হবে? আমার একজন বউফ্রেন্ড হবে, আভা? ‘

আহনাফ আভার বন্ধ চোখের পাতায় চুমু খেল। আভার বোধ হল, চোখে যেন কেউ গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে হয়েছে। তার স্পর্শে এত শান্তি কেন? আভা ক্রমশ চোখ খুলে চাইল। চোখ রাখল আহনাফের চোখে। আহনাফ একবুক আশা নিয়ে আভার দিকে চেয়ে আছে। আভা যে প্রেমের আগুনে এতদিন পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে, আজ আহনাফের চোখে সেই একই দহন লক্ষ্য করছে সে। আহনাফের ঘোলাটে চোখে কিসের যেন কাতরতা। আভাকে না পাওয়ার শঙ্কা। আভা ঢোক গলাধঃকরণ করল। আভা লালা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরল। আহনাফ আভার কোমড়ে হয় রেখে সামলালো আভাকে। আভা মুচকি হেসে পরিষ্কার কণ্ঠে বলল,
—’ আপনি যা বলবেন তাই হব আমি। আমাকে আপনার বানিয়ে নিন। সোনা যেভাবে পুড়িয়ে খাঁটি করে, আমাকে এভাবে খাঁটি করে তুলুন। তবুও আপনি আমার হয়ে যান। ‘

আজ দুজনের ঠোঁটে প্রাপ্তির হাস। দুজনেই যেন বিশ্ব জয় করেছে। সুখের হাসি দেখে রাতের বৃষ্টি হাসল। আকাশ গান গেয়ে উঠল। বাতাস নেচে উঠে শীতল হাওয়া ছুয়ে দিল দুজনের গা। আহনাফ আভার কপালে কপাল ঠেকাল। মৃদু কন্ঠে বলল,
–’ বৃষ্টি পড়ছে। ঠাণ্ডা লাগবে তোমার। ‘
–’ লাগুক। একটু ঠাণ্ডা লাগলে কিছু হয় না। ‘
–’ হাঁচি হবে। জ্বর হবে। ‘
–’ হোক। আপনাকে পেয়ে গেলে সব পালিয়ে যাবে। ‘
–’ আমি কি ঔষুধ? ‘
–’ উহু। আপনি আমার মনের ঔষুধ। ‘
আহনাফ মৃদু হাসে।
–’ এমনি এমনি বাচ্চা বলি না তোমাকে। তুমি আসলেই একটা বাচ্চা। কথাবার্তা এখনো বাচ্চাদের মত। ‘
–’ বাচ্চা নই। শুধু আপনি সামনে থাকলে বাচ্চা হয়ে যাই। ইচ্ছে করে নয়, কেমন করে যেন হয়ে যাই। ‘
–’ এই বাচ্চা মনে এত প্রেম আসে কোথা থেকে? ‘
–’ আপনি শিখিয়েছেন। ‘
–’ আমি নই। বরং তুমি আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছ। ‘
–’ আচ্ছা, আমরা দুজন দুজনকে শিখিয়েছি। ‘
–’ এবার ঠিক আছে। ‘

ঘড়ির কাঁটা আটটায় এসে থামলে আহনাফের ফোন আলার্ম বেজে উঠে। আভা আহনাফের থেকে সরে আসে। আহনাফ মোবাইল বের করে। ‘ ওহ, শিট। ‘ বৃষ্টিতে ভিজে মোবাইলের অবস্থা খুব নাজেহাল। ভিজে অর্ধেক ডিসপ্লে চলে গেছে। মোবাইল খুব কষ্টে এখনো কাজ করছে। অ্যালার্ম দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে, আহনাফের আগামীকাল আইটেম। এখন পড়তে না বস্পে নির্ঘাত কালকে পরীক্ষা খারাপ হবে। মেডিকেল আহনাফের রেজাল্ট বরাবরই প্রশংসনীয়। পড়াশোনা নিয়ে কম্প্রোমাইজ আহনাফ পছন্দ করে না। আহনাফ মোবাইলের পানি হাত দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করল। যেকোনো সময় মোবাইল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বৃষ্টি থেমে গেছে। আভা মন খারাপ করে বলল,
—’ মোবাইল তো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন? ‘
আহনাফ সুন্দর হাসল। আভার দিকে চেয়ে বলল,
–” আরেকটা কিনে ফেলব। এটা বাদ দাও। চলো তোমায় বাসায় পৌছে দিয়ে আসি। অনেক রাত হয়ে গেছে।তোমার মা চিন্তা করবেন। কি বলে বেরিয়েছ? ‘
–’ বান্ধবীর বাসায় নোট আনতে গিয়েছি। ‘
আভা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। যেন খুব মজার কথা বলেছে সে। আহনাফ ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
–’ চব্বিশ বছরের দামড়া ছেলে হয়ে এখনো লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে হচ্ছে। ব্যাড লাক। সমবয়সী হলে এত কষ্ট করতে হত না। দুজনেই ম্যাচিউর থাকতাম। ‘
আহনাফ একটু অন্যমনস্ক ছিল। তাই কথাটা খুব একটা ভেবে বলে নি। কিন্তু আহনাফের কথায় আভার দিলে মোচড় দিয়ে উঠল। আহনাফের কি এই সম্পর্ক নিয়ে আপসোস হচ্ছে। আভা আহনাফকে পিছু ফেলে হাঁটতে শুরু করল। আহনাফ বোকা বনে গেল। কি হয়েছে ধরতে পারল না। মস্তিষ্কে চাপ প্রদান করল। মনে পড়ল, সে একটু আগে কি বলেছে। মুচকি হাসল। পেছন থেকে চিৎকার করে জানাল,
–’ ওহে মেয়ে, আমার শুধু তোমাতেই চলবে। একবার তোমাতে আটকে গেছি। এখন সমবয়সী কেন, পৃথিবীর সবচে সুন্দর মেয়ে এনে দিলেও কাজ হবে না। আ’ম অল ইউরস। ‘

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে