মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-২৩+২৪

0
1256

#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-২৩+২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
__________________________________
পূর্ব দিকে ঝলমলে এক সূর্য উদিত হয়েছে। আকাশ নিংড়ে লাজুক কিছু আলো ঝড়ছে। ফকফকা ঝরঝরে দিনে আভা বসে আছে পার্কের একটি বেঞ্চে। অপেক্ষা প্রিয় মানুষের। চোখের সামনে পার্কময় হেঁটে বেড়াচ্ছে কপোত কপোতীরা। চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে ইতি ওতি দৌঁড়ে যাচ্ছে ছোট কিশোর কিশোরী। আভা চা খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আহনাফের সাথে চা খাবে বলে ইচ্ছেটা নিজের মধ্যে একপ্রকার দমিয়ে রাখল। আহনাফকে কল করেছিল। বলেছে, মাত্র মেডিকেল থেকে বেরিয়েছে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে। আভা সুন্দর করে হেসে বলেছে, দ্রুত আসুন। আমি অপেক্ষা করছি।
প্রিয় মানুষের জন্য পাঁচ মিনিট কেন, আজন্ম অপেক্ষা করা যায়। আভার চোখ পড়ল সম্মুখে। ওই যে, আহনাফ এগিয়ে আসছে। গায়ে এপ্রোন জড়ান, কাঁধে ছোট আকারের একটি ব্যাগ, হাতে কালো রঙের ঘড়ি। আহনাফ দূর হতে আভাকে দেখে ক্লান্তিমাখা মৃদু হাসল। এগিয়ে এসে বসল আভার ডান পাশে। আহনাফের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা ছুঁয়ে আছে। গলায়ও ঘাম লেগে আছে। আভা শাড়ির আঁচল দিয়ে আহনাফের ঘামটুকু মুছে দিয়ে বলল,
‘ এত দেরি হল! ‘
আহনাফ আভার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঘষল। পুনরায় শাড়ির আঁচল আভার কোলে রেখে বলল,
‘ ওয়ার্ড ছিল। ‘
আভা মিহি হাসল। আজ অযথাই আভা হাসছে। আহনাফের সম্মুখে থাকলে, পাশাপাশি বসলে আভা খুশিতে শুধু হাসতে থাকে। আহনাফের ছোট্ট স্পর্শে বুকের ভেতরে বাস করা হৃদপিন্ড যখন তিরিংবিড়িং কর লাফিয়ে উঠে আভা সেই চেনা অনুভূতিকে ভীষন উপভোগ করে। আহনাফ জিজ্ঞেস করল,
‘ আজ শাড়ি পড়লে যে? ‘
‘ মায়ের শাড়ি। পড়তে ইচ্ছে করছিল। পড়েছি। এখন পড়ার পর আপনাকে শাড়ি পড়ে দেখাতে ইচ্ছে করছিল। কেমন লাগছে আমাকে শাড়িতে? ‘
আহনাফ সবার অলক্ষ্যে শাড়ির ভাজ ভেদ করে আভার কোমড় চেপে ধরল। আভা শিহরণে চোখ খানিক বুজে নিল। আহনাফ গভীর স্বরে বলল,
‘ সুন্দরীতমা আমার। ‘
ইশ, আভা যে কেঁপে উঠল। কানের কাছটায় আহনাফের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। গা মৃদুমন্দ কেপে উঠছে। এ কেমন অসহ্যকর অনুভূতি। আহনাফের বেহেয়া হাতের স্পর্শ আভা আর সহ্য করতে পারছে না। এই বুঝি জ্ঞ্যান হারাল! আভা গহীন সুরে বলল,
‘ ছা-ড়ুন। মরে যাব আমি। ! ‘
আহনাফ আভার অস্বস্তি বুঝে ছেড়ে দিল তাকে। সোজা হয়ে বসল বেঞ্চে। আভা লজ্জায় আর তাকাতে পারছে না। হালকা লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট তিরতির করে কাপছে। আভার শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আহনাফ তা দেখতে পেরে কোমড় কিছুটা ঝুঁকিয়ে শাড়ির আঁচল মাটি থেকে তুলে আভার কোলে বিছিয়ে দিল। আভা অবাক হল। আহনাফ বলল,
‘ ময়লা হচ্ছে আঁচল। খেয়াল রাখো। ‘
আভার চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল জমে! পরিবারের পর এই প্রথম কেউ আভার এতটা যত্ন করছে। বাবার ন্যায় আগলে রাখছে। বাবা সবসময় বলেছে, মা দুনিয়াটা বড্ড স্বার্থপর। এখানে সবাই ভালোবাসার নামে স্বার্থ দেখে। ভালোবাসাটা বড্ড অমূল্য অনুভূতি নিজের পছন্দকে পছন্দ করার আগে তাকে যাচাই করে নিবে। দেখবে সে আদৌ তোমার মূল্যবান ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য কি না!
আজ আভা বাবাকে নিয়ে পুরো পৃথিবীকে চিৎকার করে জানাতে চায়, বাবা আমি আমার জীবনে সেরা মানুষটাকে পছন্দ করেছি। সে আমার যত্ন করে যেমন তুমি করো, সে আমায় ভালোবাসে যেমন তুমি আমায় ভালোবেসেছ।
আহনাফের নিজের হাতে চেপে ধরলো আভার নরম তুলতুলে হাত। হাত উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। যেন এ এক মজাদার খেলা। আভা আহনাফের কাধে মাথা রেখে বলল,
‘ আপনার মা কেমন আছেন? ‘
‘ ভালো। ‘
‘ সেদিন আমি আপনার মায়ের কণ্ঠস্বর শুনেছি। ‘
আহনাফ অবাক হল না। বরং বলল,
‘ ফোনে? ‘
‘ হ্যাঁ। আপনি কি করে জানলেন? ‘
‘ জেনেছি একভাবে। তা মা কি বলল? ‘
‘ আপনার নামে অভিযোগ করেছে। এত্ত এত্ত অভিযোগ। ‘
আভা হাত দিয়ে অভিযোগের পরিমাণটা দেখিয়ে দিল। কথা বলতে বলতে আভা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আভার হাসির শব্দ শুনে আহনাফের মাথা ঝিম ধরে গেল। সে ভ্রু কুচকে নির্নিমেষ চেয়ে রুল আভার পানে। আহনাফের এমন বেপরোয়া চেয়ে থাকা দেখে আভা কেসে উঠল। মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল,
‘ দয়া করে আমার দিকে এভাবে চেয়ে থাকবেন না প্লিজ। আমার বুকে ব্যথা করে। ‘
আহনাফ মুচকি হাসল। আভার চুলের খোঁপা খুলে দিল। সঙ্গেসঙ্গে ঝরঝর করে এক ফালি চুল ছিটকে পড়ল আভার পিঠে। আহনাফ অবাক হয়ে গেল। খোলা চুলে আভাকে সুন্দর লাগবে ভেবেছিল। কিন্তু এত সুন্দর লাগবে কল্পনা করে নি। আভা থেমে গেল। ‘
‘ এমন কেন করলেন আপনি? এখন আবার খোঁপা বাঁধতে হবে। আমি এখন আয়না পাবো কোথায়?! ‘
আহনাফের কাধে থাকা মাথা তুলে হাত দিয়ে খোঁপা করতে চেষ্টা করল। আহনাফ আভার হাত আটকে দিল। মৃদু স্বরে বলল,
‘ খোলা চুলে ভালো লাগছে। ‘
আভার হাত আটকে গেল। আপনাআপনি চুল থেকে হাত নেমে এল নিচে। আহনাফের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল? কি? শীতলতা? গভীর প্রেম, নাকি অন্য? আভা মুচকি হাসল। বলল,
‘ তাহলে থাক। ‘
আভা আহনাফের কাধে পুনরায় মাথা রাখল। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে। দুপুরের খাবারের সময় আরো কিছুক্ষণ আগে পেরিয়ে গেছে। আহনাফ বলল,
‘ খাবে না? চলো, উঠো। ‘
আভা উঠে সোজা হয়ে বসল। বেঞ্চের একপাশ থেকে একটা ছোট টিফিন বের করে আহনাফের সামনে নিয়ে এল। আভা বলল,
‘ আমি আজ রেধে এনেছি। আজ দুজন একসাথে খাবো। ‘
আহনাফ বিস্ময় নিয়ে চাইল। সেদিন আভার হাতের রান্না খেয়ে আহনাফের বড্ড লোভ জেগেছে। ইচ্ছে করেছে, প্রিয়তমার হাতের তৈরি আরো রান্না খেতে। আভা টিফিন খুলল। একে একে শুটকির ভর্তা, আলু ভর্তা আর মাছের ভর্তা প্লেটে নিয়ে বেঞ্চে সাজিয়ে রাখল। তারপর আরো একটা প্লেটে কাতলা মাছের ঝোল রাখল। একটা প্লেট ধুতে সেটায় ভাত নিয়ে আহনাফের দিকে এগিয়ে দিল।
‘ ভর্তা দিব না মাছ? ‘
আহনাফের বুকে প্রশান্তির ফোয়ারা বয়ে বেড়াচ্ছে। কথা বলতে পারছে না। গলা কাপছে। এমন একটা মেয়েকে কি ভালো না হেসে থাকা যায়? এত আদুরে মেয়ে এক বুক ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। আভাকে ভালো না বাসলে আহনাফ এত আদর, এত ভালোবাসা সব মিস করে যেত। আহনাফ যে বড্ড লোভী। আভাকে ভালোবাসার লোভ যে সে সামলাতে পারেনি।
‘ বললেন না যে, কি খাবেন? ‘
আহনাফ নিজের হাতে আলু ভর্তা নিয়ে ভাতের সাথে মাখাল। প্রথম লোকমা আভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ হা করো। ‘
আভা মুচকি হেসে হা করল। আহনাফ আভাকে খাইয়ে দিল। নিজেও খেতে থাকল। আভা বলল,
‘ মাছের তরকারি দেই? ‘
আহনাফ হাত দিয়ে মানা করল। বরং নিজে মাছের ভর্তা নিয়ে প্রথম লোকমা আভাকে খাইয়ে দিল। আভা খেতে খেতে বলল,
‘ শুধু আমাকে খাওয়াচ্ছেন। নিজে তো কিছু খাচ্ছেন না। ‘
আহনাফ খাবার মুখে দিল। বলল,
‘ শরীরের দিকে একবার চেয়ে দেখেছ? দিনদিন শুকিয়ে কাঠ হচ্ছ। বেশিবেশি খাও।নাহলে দেখা যাবে, বিয়ের পর আমাদের বাচ্চাকাচ্চাও তোমার মত শুকনো হচ্ছে। ‘
বলতে বলতে আরো দু লোকমা ভাত আভার মুখে তুলে দিল আহনাফ। আভা গাল ফুলালো। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ হ্যাহ! সবাই বলে আমার শরীর ক্যাটরিনা কাইফের মত। চিকনে চামিলি। ‘
আহনাফ কেশে উঠল। আভার মাথায় ছোট্ট করে এক টোকা দিয়ে বলল,
‘ তোমার সিনেমার নায়িকা হতে হবে না। তুমি আমার জীবনের নায়িকা। তাই তোমায় আমার মত হতে হবে। বুঝেছ? ‘

আভা শুনে। মুগ্ধ হয়। গা কেপে উঠে। শিউরে উঠে মন। এত ভালো লাগল কেন কথাগুলো। সে এমন করে? আভাকে এত ভালোবাসে কেন? এই যে এত ভালোবাসা পেয়ে আভা সুখে মরে যেতে ইচ্ছে হয়। উড়ে ভেসে যেতে ইচ্ছে হয়! তা ত এই পাশে বসে থাকা লোক জানতেই পারল না।

#চলবে

#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – পর্ব ২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_____________________________
তপ্ত দুপুরের ঝাঁজ তুঙ্গে। খাবারের পর্ব শেষ হয়েছে সবে। আহনাফ হাত মুখ ধুয়ে আভার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছল। বার-দুয়েক কব্জিতে পড়া ঘড়ির দিকে চাইল। সময় এখন তিনটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। মায়ের ঔষুধ খাবার সময় হয়েছে। আহনাফ বাসায় না থাকলে, মাকে নিজের হাতে ঔষধ না খাওয়ালে আহনাফের মা বড্ড অনিয়ম করেন। আহনাফ ফোন বের করল। মায়ের নাম্বারে কল করে কানে ধরে রাখল ফোন। দুবার রিং বাজল। আহনাফের মা কল ধরলেন। আহনাফ সালাম করে জিজ্ঞেস করল,
‘ ভাত খেয়েছ, মা? ‘
‘ হ্যাঁ। ওই রেশমা এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে। ‘
‘ আর ঔষধ? ‘
‘ হ্যাঁ, খেয়েছি। ‘
‘ ইনসুলিন কত দিয়েছ? ‘
‘ ১৬। ঠিক করেছি না? ‘
‘ হ্যাঁ, ঠিক করেছ। শুনো, আমার আসতে দেরি হবে। একটু অন্য জায়গায় যাব। ‘
‘ তোর বাবার কাছে? ‘
আহনাফ আড়চোখে আভার দিকে চাইল। আভা আহনাফের কাধে মাথা রেখে চোখ দুখানা মেলে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। আহনাফ মৃদু স্বরে বলল,
‘ হু। ‘
আহনাফের মা আর কথা বললেন না। চট করে ফোন কেটে দিলেন। আহনাফ মায়ের সাড়া শব্দ না পেয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন কানের থেকে নামিয়ে পকেটে পুড়ল। আভা আহনাফের হাত নিজের হাতে নিয়ে আঙ্গুল টেনে দিতে দিতে বলল,
‘ আপনার বাবা কোথায় থাকেন? ‘
আহনাফ উত্তর দিল না। বরং এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে খানিক বেহায়া হল। আভার কোমড় একহাতে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,
‘ একটু চরিত্রহীন হতে ইচ্ছে করছে! হই? ‘
আভা হকচকাল। আহনাফের বুকে হাত দিয়ে ঠেলে ধরে মিনমিন করে বলল, ‘ ইশ! লজ্জা লাগছে। ছাড়ুন। ‘
আহনাফ ছেড়ে দিল। আভার নাক টেনে বলল,
‘ এত লজ্জা কই রাখো? ছুঁলেই লজ্জাবতী গাছের ন্যায় লুটিয়ে পড়।’
আভা মৃদু হাসল। আহনাফ নির্নিমেষ চেয়ে রইল মেয়েটার হাসির পানে। আভা হাসলে তার চোখ ছোট হয়ে আসে। চোখের কোণে দু’ফোঁটা জল জমে যায়। হাসলে যেন মেয়েটার সমগ্র মুখ হেসে উঠে। চোখে চোখে হাসার রাজত্ব চলে। এই মেয়েটা এমন কেন? আহনাফ তার দিকে যতবার চায়, চোখ ফেরাতে পারে না। চোখে ছানি পড়ে যায়। তবুও মেয়েটাকে চোখ ভরে দেখার তৃষ্ণা মেটে না। এমন কেন হয়? ভালোবাসে বলেই তো! আহনাফ নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
‘ শাড়িতে ভালো লাগছে। বিয়ের পর সবসময় শাড়ি পড়বে। ‘
আভা বিয়ের কথা শুনে বিমোহিত হয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে থাকল। অতঃপর বাচ্চাদের ন্যায় আবদার করে বসল,
‘ আচ্ছা, শাড়ি পড়ব। কিন্তু আমরা বিয়ে কখন করব? ‘
আহনাফ চোখ টিপে বলল,
‘ আমার কাছে আসার এত তাড়া? ‘
‘ তাড়া নয় ত কি? এই যে লুকিয়ে দেখা করি। মন ভরে না তো? আপনার ভরে? বিয়ের পর সারাজীবন আপনাকে আমার সামনে বসিয়ে রেখে চোখ জুড়িয়ে সারাক্ষণ চেয়ে থাকব। কিন্তু তার আগে তো বিয়ে করতে হবে। ‘
আহনাফ ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বেঞ্চে হেলান দিল। আভার শাড়ির আঁচল আবারও আভার কোলে তুলে বলল,
‘ শাড়ির আঁচলই সামলাতে পারো না। আবার বিয়ে করবে? ‘
‘ ধুর। এটা বারবার কেন পড়ে যায়। ‘
আভা শাড়ীর আঁচল কোমরে গিঁট বেধে রেখে দিল। মুচকি হেসে বলল,
‘ এই যে সামলে নিলাম। আর পড়বে না। এবার বলুন, বিয়ে কবে করব? ‘
আহনাফ মৃদু হাসল। অতঃপর ভীষন থমথমে ভাবভঙ্গি নিয়ে আভার দিকে চাইল। বলল,
‘ দেখো আভা। তুমি মাত্র মেডিকেল ভর্তি হয়েছ। এখন তোমার সামনে সুবিশাল ক্যারিয়ারের ঝাঁপটা। এসব সামলে বিয়ে নামক দায়িত্ত্ব নিতে পারবে না তুমি। হাপিয়ে উঠবে। আমি চাই, তুমি তোমার সর্বোচ্চ দিয়ে পড়াশোনা করো। আমার চেয়েও ভালো ডাক্তার হও। আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না। পাঁচ বছর পর বিয়ে করব আমরা। হু? ‘
আভা ডান হাতের পাঁচ আঙুলের দিকে চোখ রেখে টেনে বলল,
‘ পাঁচ বছর? আমি অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হয়ে যাব। ‘
‘ আমিও বুড়ো হব। বুড়ো বুড়ি মিলে আমাদের বুড়োময় সংসার হবে। কি ক্ষতি তাতে? আমরা দুজন একসাথে আছি। তাতেই হবে। ‘
আভা কি বুঝতে পেরেছে? আহনাফ জানে না। আহনাফ চায়, আভা বুঝুক। বিয়ে নামক গুরুত্তপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় হাজারবার ভাবুক। বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়। আজ যাকে ভালো লাগছে, কাল থেকে অসহ্যও লাগতে পারে। মনের রহস্য বোঝা কার দায়? আহনাফ চায়, আভা বুঝে শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেক।
আভা মুচকি হেসে বলল,
‘ ঠিক আছে। কিন্তু পাঁচ বছরের পর আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করাবেন না। তাহলে কিন্তু আমি ভীষন রাগ করব। রাগে কথা বলা বন্ধ করে দেব। ‘
‘ যথা আজ্ঞা। চা খাবে? ‘
‘ হু, খাব। ‘
আহনাফ এক চা’ওয়ালা কিশোরকে ডেকে বলল দুকাপ চা দিতে। আভা এতক্ষণ একটা কিছু বলার জন্যে হাসফাঁস করছিল। কিন্তু বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না। আহনাফ যদি বকা দিয়ে উঠে?
আভাকে উশখুশ করতে দেখে আহনাফ বলল,
‘ খারাপ লাগছে? কিছু বলবে? ‘
আভা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে মানা করল। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আভার দিকে চেয়ে পুনরায় কিশোর ছেলেটার দিকে মন দিল। কিশোর ছেলেটা দুকাপ চা আহনাফের হাতে দিয়ে বলল,
‘ দুই কাপ বিশ টাহা। ‘
আহনাফ পকেট থেকে একশ টাকার নোট বের করে ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা টাকার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে আহনাফের দিকে চাইল। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার ন্যায় এক মিষ্টি হাসি দিয়ে ফ্লাস্ক নিয়ে চলে গেল সামনে। আভা চেয়ে দেখল সব। আহনাফের এই ছোটখাট বিষয়টা আভাকে বারবার বিমোহিত করে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, শুনো পৃথিবী, এই অসাধারণ প্রেমিকটা শুধু আমার, শুধুই আমার। গর্ব হয় আভার। আহনাফ চায়ের কাপ একটাতে চুমুক দিল। ‘ ঠিক আছে ‘ বলে চুমুক দেওয়া চায়ের কাপ আভার দিকে এগিয়ে দিল। আভা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,
‘ কি দেখলেন চায়ে? ‘
‘ চিনি,লিকার ঠিক আছে কি না। ‘
আভা চা খেতে খেতে আড়চোখে আহনাফকে দেখতে লাগল। সরাসরি কখনোই আহনাফের দিকে চোখ রাখতে পারে না আভা। লজ্জায় গুটিয়ে যায়। আর আহনাফের দু একটা লাজহীন কথা যে আভাকে লজ্জায় কিভাবে যেন খু’ন করে দেয়। তার সবসময় আড়চোখে আহনাফকে দেখে আভা। দেখা গেল, কোনদিন আহনাফকে চোখ বাঁকা করে দেখতে গিয়ে আভা চোখ ত্যাড়া হয়ে গেল। তারপর আভা যা দেখবে সব দুটো দেখবে। আহনাফও কি দুটো দেখবে? ইশ, দুটি আহনাফ। ভাবতে কেমন যেন পেটে মোচড় দিচ্ছে। রোমাঞ্চকর লাগছে। ইচ্ছে করছে, এখনি ত্যাড়া চোখ হয়ে যেতে।
‘ কি ভাবছ? ‘
আহনাফের কথা শুনে আভার ধ্যান ভেঙে যায়। আভা হালকা করে কাশে। তারপর আহনাফের দিকে মায়াময় চোখ দুখানা রেখে মিষ্টি কেউ আবদার করে,
‘ আমার তো এখন ছুটি। মেডিকেল শুরু হতে আরো দুমাস। আমরা আরো একবার ট্যুরে গেলে কেমন হয়? এবার কিন্তু সিলেট যাব। ‘

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে