মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৯+২০

0
1134

#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-১৯+২০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
____________________________
কলিং বেল বেজে উঠল। খানিক পর আহনাফের মা এসে দরজা খুলে দিলেন। কামরুল, চিত্রা, দিহান ও বাঁধন একসঙ্গে সালাম করল। আহনাফের মা মিসেস শেখ হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে সবাইকে ঘরে প্রবেশ করালেন। আহনাফের মা বলেন,
–’ এত রাতে তোমরা? ‘
কামরুল উত্তর দিল,
–’ আহনাফের জ্বর শুনে এসেছি। ‘
–’ ভালো করেছ। আহনাফ ঘরেই আছে। চলে যাও। ‘
বলার সঙ্গেসঙ্গে চিত্রা একপ্রকার দৌঁড়ে গেল আহনাফের ঘরে। আহনাফের মা সেদিকে ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকলেন। চিত্রার এহেন কাজে সবাই কিছুটা বিব্রত হল। দিহান বলল,
–’ আসলে…. চিত্রা…’
আহনাফের মা আটকে দিলেন। বললেন,
–’ থাক। কৈফিয়ত দিতে হবে না। আহনাফের ঘরে যেতে পারো তোমরা। ‘
কামরুল বলল,
–’ ধন্যবাদ, আন্টি। ‘

সবাই দরজা ঠেলে আহনাফের ঘরে ঢুকল। বিছানার উপর অবসন্ন দেহে শুয়ে আছে আহনাফ। কপালে জলপট্টি রাখা। চিত্রা আহনাফের চুলে হাত বুলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। আহনাফ দু একবার উত্তর দিলেও এখন আর কথা বলছে না। কথা বলার শক্তি ওর মধ্যে আর একটুও অবশিষ্ট নেই। সবাই আহনাফের পাশে বিছানায় বসল। আহনাফ বন্ধুদের দেখে উঠে বসার চেষ্টা করল। পারল না। চিত্রা দ্রুত বলল,
–’ দাড়া, আমি ধরছি। ‘
চিত্রা আহনাফকে ধরে উঠে বসাল। পিঠের পেছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসল আহনাফ। ক্লান্ত চোখে সবাইকে নিরীক্ষণ করে বলল,
–’ কি ব-ব্যাপার? স-সব একসাথে? ‘
দিহান আহনাফের পায়ে আঙ্গুল খুঁচা দিয়ে বলল,
–’ শুনলাম বৃষ্টিতে ভিজে তুমি নাকি আল্লাহ পেয়ারা হয়ে যাচ্ছ। তাই ভাবলাম পেয়ারা গাছকে দেখে আসি একটু। তা মাম্মা, কার সাথে ভিজলা? আমাদের জানাও। আমরাও শুনে একটু রোমান্টিক-রোমান্টিক খেলা খেলি। ‘
চিত্রার বুক জ্বলে উঠল। আভা কি আবার আহনাফের জীবনে এসেছে? দিহান অনুমানের ভিত্তিতে ভুল কিছু বলে নি নিশ্চয়ই কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে। চিত্রা কাতর চোখে চেয়ে আছে আহনাফের দিকে। না বোধক উত্তর শুনার জন্যে তার হৃদয় ব্যাকুল। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে চাইল। কোনপ্রকার উত্তর দিতে না পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
–’ তোদের মাথা। কার সাথে ভিজব? বাইকে বাসায় আসার সময় ভিজেছি। ‘
চিত্রার বুকে পানি এল। ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ল। যাক, আভা ছিল না। কামরুল বলল,
–’ কিছু খেয়েছিস? ‘
আহনাফ মৃদু কন্ঠে বলল,
–’ মা ফল কেটে দিয়েছিল। ‘
–’ ভাত খাবি? ‘
ভাতের কথা শুনে আহনাফের পেট গুলিয়ে আসতে লাগল। মুখের ভেতর টক স্বাদ অনুভব করতে লাগল। বলল,
–’ না। ‘
–’ স্পেশাল তরকারি আছে। ‘
–’ স্পেশাল মানে? ‘
আহনাফের বিরক্ত প্রশ্ন। কামরুল হাসল। আহনাফের কানের কাছে বিড়বিড় করে শুনাল,
–’ আভা টমেটোর তরকারি রেঁধে পাঠিয়েছে। এবারেও কি খাবি না?’
আহনাফের চক্ষু বিশাল আকার ধারণ করল। ক্লান্তিতে অবসন্ন দেহ ঝরঝরে হল। আভা রান্না করে পাঠিয়েছে? অর্থাৎ আভা জানে আহনাফ অসুস্থ! শিট! আহনাফের কল করার কথা ছিল। অসুস্থতার কারণে মোবাইল হাতে নেওয়ার শক্তি হয় নি। নিশ্চয়ই আভা অপেক্ষা করেছে। আহনাফের কল না পেয়ে নিজেই কল দিয়েছে। কে রিসিভ করেছে? মা? মা আবার চিনে ফেলে নি তো? মাকে এখনি সব বলার সময় হয় নি। সময় হলে আহনাফ নিজে জানাবে তার মা-বাবাকে। কিন্তু এখন না।
বাঁধন কিছুক্ষণ সন্দেহবাতিক চোখে কামরুল ও আহনাফকে দেখে গেল। অতঃপর কামরুলের পিঠে ভয়ানক এক থাবা বসিয়ে বলল,
–’ ওই ব্যাটা? কানে কানে কি কস? আমাগোও কইলে বউ ভাইগা যাইব তোর? ‘
আহনাফের সকল বন্ধুরা সবসময় খাঁটি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে। কিন্তু যখন তাদের রাগ উঠে কিংবা মজা করতে ইচ্ছে হয় তখন সবাই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। বাঁধনের এখন রাগ উঠছে নাকি মজা করছে বোঝা মুশকিল। কামরুল পিঠে হাত ঘষে ব্যথাতুর কণ্ঠে বলল,
–’ হাত না দানব। আমার বউ ভাগার আগে আমি তোর বউকে ভাগাই নিয়ে যাব। শালা, হাত চলে ক্যান এত? ‘
বাঁধন আরো একটা ঘা বসাল কামরুলের পিঠে। চিত্রা বাধনকে আটকাল। বলল,
–’ মারামারি করার সময় না এখন। আহনাফ অসুস্থ। দেখছিস না? ওকে খাওয়াতে হবে কিছু। ‘
কামরুল সোজা হয় বসল। একের পর এক থাপ্পর খাবার দরুন পিঠ বেকে আসছে তার। কামরুল গলা কেশে বলল,
–’ ওয়েট। আমি টিফিনে খাবার এনেছি। ‘
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলল,
–’ তুই রেধেছিস? ‘
–’ আব.. না। হোটেল থেকে আনিয়েছি। ‘
দিহান চিত্রার মাথায় চাটা দিল। চিত্রা বিরক্ত ভঙ্গিতে মাথা ঘষে দিহানের দিকে চাইল। দিহান বলল,
–’ এত প্রশ্ন কেন করিস? তোর প্রশ্ন শুনে আহনাফের পেট ভরবে? চুপ করে বসে থাক। ‘
কামরুল রুদ্ধশ্বাস ফেলল। টিফিন খুলে একে একে তরকারি আর ভাত বের করো। তরকারি ঘ্রাণে ঘর ম-ম করতে লাগল। দিহান বলল,
–’ ভাই, কোন হোটেল থেকে খাবার এনেছিস? এত সুন্দর ঘ্রাণ! ‘
কামরুল আড়চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে হেসে বলল,
–’ আহনাফের পার্সোনাল হোটেল। ‘
সবাই অবাক হল। আহনাফ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কামরুলের মাথায় চাটা দিয়ে বলল,
–’ বেশি কথা না বলে খাবার সার্ভ কর। ‘
কামরুল মাথায় হাত ঘষে বলল,
–’ করতেসি তো। মারস ক্যান? ‘
বাঁধন ভ্রু বাকাল। বলল,
–’ ওয়েট, ওয়েট, কামরুল। আহনাফের পার্সোনাল হোটেল মানে? ‘
কামরুল দ্বিধায় পড়ে গেল। মজা করতে গিয়ে কি থেকে কি বলে ফেলল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আহনাফ বলল,
–’ আমার প্রিয় হোটেল বুঝিয়েছে। নূর দাদীর হোটেলের তরকারি এসব। ‘
দিহান ওহ বলে টানা স্বর তুলল। বাঁধন বলল,
–’ তাই বলি, এত ঘ্রাণ কেন? নূর দাদুর হাত ছাড়া কারো রান্নায় এত ঘ্রাণ আসে না। আমারও খেতে ইচ্ছে করছে। ‘
কামরুল বলল,
–’ আহনাফ খেয়ে তরকারি থাকলে খাবি। ‘
টমেটো দিয়ে মাছ আর ভাত প্লেটে রেখে আহনাফের দিকে এগিয়ে দিল। আহনাফ লোকমা নিউজ নিজের মুখে তুলল। প্রথম খাবার মুকুর দিয়ে চোখ বুজে ফেলল। প্রিয়তমার হাতের রান্না সকল প্রেমিকের কাছেই কি অমৃত মনে হয়? এত সুস্বাদু খাবার মায়ের পরে আহনাফ এই প্রথম খেল। আহনাফ খাবার চিবুতে চিবুতে বন্ধুদের দিকে চাইল। সবাই মুগ্ধ চোখে আহনাফের খাওয়া দেখছে। আহনাফের মা দরজা থেকে আহনাফকে খেতে দেখে শান্তি পেলেন। রাতভর মুখে কিছু তুলে নি ছেলেটা। দু টুকরা আপেল জোর করে খাওয়াতে পারলেও আর কিছু মুখে দিতে পারেন নি। এখন এত মজা করে ভাত খাচ্ছে দেখে আহনাফের মায়ের বুকে পানি এল। আহনাফ আরো এক লোকমা তৈরি করে চিত্রার মুখে এগিয়ে দিল। চিত্রা খুশিতে পাগল হল। আহনাফের হাত থেকে লোকমা মুখে নিয়ে সুখী মনে চিবুতে লাগল। একে একে আহনাফ নিজের হাতে বাঁধন, কামরুল আর দিহানকেও খাইয়ে দিল। মিলেমিশে সবাই আহনাফের হাতে ভাত খেল। বন্ধুদের সাথে থেকে আহনাফের জ্বর কোথাও যেন পালিয়ে গেল। সুখী সুখী হাসছে আহনাফ। বন্ধুদের এমন মিল দেখে আহনাফের মায়ের চোখে জল ভরে। মনে পড়ে যায়, নিজের এক বন্ধুগোষ্ঠীর কথা। একসময় এমনই এক দৃশ্যের সৃষ্টি তিনিও করেছিলেন। ছেলের আচরণে নিজেকে দেখতে পারছেন মিসেস শেখ।

#চলবে

#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ২০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_______________________________
রাত দুটো বেজে দশ মিনিট। সারা পাড়া চুপ। রাতের আঁধারে ঢাকা ধরনী। নিস্তব্দ ঘরে নিঃশ্বাসের শব্দ অব্দি শোনা যাচ্ছে। পড়ার টেবিলে বসে রয়েছে আভা। সশব্দে সাধারণ জ্ঞান মুখস্ত করছে। রাতে নিশ্চুপ অবস্থায় পড়া ভালো হয় আভার। আহনাফের কড়া নজরদারির কারণে আভার আরো ভালো করে পড়াশোনা করতে হয়। আভা হামি ছাড়ে। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে, বিছানায় এখনি লুটিয়ে পড়তে। কিন্তু পড়া বাকি এখনো। কি করবে?
আভা ফোন বের করল। আহনাফের দুটো মেসেজ এসেছে।
‘ পড়ছ? ‘
‘ কল করব? ‘
আভা হেসে ফেলল। কদিন ধরে আহনাফের সাথে পড়াশোনা ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা হয় না তার। আভা চায়, আহনাফ আগের ন্যায় বেহেয়া কথা বলুক, দুষ্টু হোক। অথচ আহনাফ সেসব কিছুই করে না সারাক্ষণ শিক্ষকদের ন্যায় আভার পড়া নিয়ে পড়ে থাকে। খারাপ লোক! আভা কল দিল আহনাফের নাম্বারে। আহনাফ কল কেটে দিল। এক মিনিট পর নিজে কল ঘুরাল।
‘ কল কাটলেন কেন? আমার মোবাইলে টাকা ছিল। ‘
আহনাফ উত্তর দিল,
‘ একজন কল করলেই হলো। পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে? ‘
আভা ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ পড়াশোনা ছাড়া আর কিছু বুঝেন না আপনি? সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া! ‘
আহনাফ মৃদু হাসে। বলে,’ আপাত অর্থে না। ‘
‘ খারাপ লোক। ‘
‘ ভিডিও কলে আসো। ‘
‘ এখন? আচ্ছা। ‘
আভা কল কেটে ভিডিও কল দেয় আহনাফকে। আহনাফ কল ধরে। আহনাফ পড়ার টেবিলে বসে রয়েছে। টেবিলের একপাশে মোবাইল হেলান দিয়ে রাখা। টেবিলের সবখানে ছড়িয়ে আছে বই আর বই। একেকটা বইয়ের আকার বিশাল থেকে বিশাল। আভা চোখ বড়বড় করল। অবাক কণ্ঠে সুধাল, ‘ এত বড় বই? কখন পড়েন এসব? ‘
আহনাফ ক্লান্ত কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘ মেডিকেলে সব বই এমন। কিছু করার নেই। পড়তে হয়। ‘
আভা ভয় পেয়ে বলল,’ এসব বই দেখে আমার মেডিকেল পড়ার ইচ্ছে মাটি হয়ে গেছে। ‘
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল, ‘ বাজে কথা বলবে না। জীবনে কিছু অর্জন করতে হলে কষ্ট করতে হয়। তুমিই তো বলেছিলে, কষ্ট ছাড়া কিছু পেয়ে গেলে তার মূল্য ফিকে হয়ে যায়। এখন নিজেই পিছিয়ে যাচ্ছ। ‘
আভা মন দিয়ে শুনে আহনাফের কথা। মনে পড়ে, বাবা মায়ের তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা। বাবার ইচ্ছে, আভা যেন দেশের সেরা মেডিকেলে পড়ে খুব ভালো ডাক্তার হয়। আভাকে এভাবে হেরে গেলে চলবে না। জিততে হবে।
আহনাফ বলল, ‘ আজ কি কি পড়লে? সব একে একে বলো। ‘
আভা বিরক্ত হল। বলল, ‘ আমি এখন পড়া নিয়ে কিছু বলতে চাইছি না। আমি এখন অন্য কথা বলব। ‘
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘ পাগলামি করবে না। এখন প্রেম করার সময় না। বই বের করো। ‘
‘ না। বই বের করব না। ‘
আভার নাছোড়বান্দা উত্তর। আহনাফ চোখে উল্টে মৃদু নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘ পড়ার ব্যাপারে সিরিয়াস হতে হবে, আভা। এভাবে পড়লে ডাক্তার হতে পারবে না। ‘
‘ আপনি অযথাই চিন্তা করছেন। আমি সবসময় পড়া ফাঁকি দেইনা।”
‘ তাই? ‘
আহনাফ ভ্রু বাঁকাল। ঠোঁটে কৌতুক হাস। আভা বলল, ‘ হ্যাঁ। কোনো সন্দেহ আছে? ‘
‘ আচ্ছা? তা, আর কি কি জানেন আপনি? ‘
আহনাফের কণ্ঠে আপনি সম্বোধন শুনে আভার শিরদাঁড়া কেপে উঠল। এত মধুর লাগল কথাটা। ইশ! সে সদা এমন করে কথা বলে না কেন? আভা উত্তর দিতে পারল না। কেমন যেন কণ্ঠ অসাড় হয়ে এল। আভাকে লজ্জায় লাল হতে দেখে আহনাফের চোখে লাল-নীল মুগ্ধতা ছড়াল। ভুলে গেল নিজের গম্ভীরতা। মেতে রইল প্রিয়তমাতে।
_____________________________________
আজ আভার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা হবে। সকাল থেকে আভা ভয়ে সেটে আছে ল্যাপটপের সামনে। গা কাপছে। এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজকে জানবে আভা। এ কদিন আহনাফের সাহায্য আভার সারাজীবন মনে থাকবে। কথায় আছে, প্রেমে পড়লে পড়াশোনা গোল্লায় যায়। অথচ আভার ক্ষেত্রে তা একদম ভিন্ন। এই তিনমাস আহনাফের সাথে পড়াশোনা ব্যতীত অন্য কথা খুব কমই হয়েছে। আহনাফ সদা সতর্ক ছিল আভার পড়াশোনা নিয়ে। আভার হয়তো হঠাৎ হঠাৎ আহনাফের এসব সতর্কতা ভালো না লাগলেও, আহনাফ ঠিক বেশ সামলে নিয়েছে আভাকে। এই তিনমাস আহনাফ নিজ হাতে আভাকে পড়িয়েছে। আজ যদি আভা হেরে যায়, আভার সাথেসাথে আহনাফও হেরে যাবে। আভা চায় না, আহনাফ হেরে যাক। আহনাফের এতদিনের কষ্টের মূল্য আভা দিতে চায়। একসঙ্গে ডাক্তার হতে চায় দুজনে।
ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। আভার হাত কাপছে। ল্যাপটপের কিবোর্ড চাপতে পারছে না। বুক ধরফর-ধরফর করছে। এই বুঝি জ্ঞান হারাল আভা। আভা চোখ বুজে কালিমা পড়ল কয়েকবার। আভার মা মেয়ের পাশে বসে শক্ত করে চেপে রেখেছেন আভার হাত। আভার বাবা জুনায়েদ মেয়ের পাশে বসে ল্যাপটপে চেয়ে আছেন। কখন ফলাফল চোখের সামনে ভাসবে? মেয়েকে নিয়ে দেখা এতদিনের স্বপ্ন কখন পূরন হতে দেখবেন?
আভা নিজেকে শান্ত করল। আল্লাহর নাম জপ করে নিজের নাম লিখে সার্চ করল। লোডিং হচ্ছে। আজ সার্ভার বেশ ডাউন। প্রতি বছর এমন হয়। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখার সময় সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। আভা চোখ খিচে রয়েছে। প্রাণ যেন কেউ টেনে ধরেছে। সময়টা এত লম্বা কেন?
‘ আমার মা চান্স পেয়ে গেছে, মনোয়ারা। আমার মা চান্স পেয়ে গেছে। ‘
আভার বাবা জুনায়েদ খুশিতে আত্নহারা হয়ে আভাকে জড়িয়ে ধরলেন। আভা পাথর হয়ে আছে। বিশ্বাস করতে পারছে না। আভা ধীরে চোখ খুলে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকাল। ঢাকা মেডিকেলের পাশে আভার নাম জ্বলজ্বল করছে। আভার চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল। সে জিতে গেছে, বাবা-মা জিতে গেছেন, আহনাফের কষ্টগুলো জয়ী হয়েছে। আভা কেঁদে ফেলল। ঝরঝর করে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বাবা-মাকে। আভার বাবা মায়ের চোখেও আজ জল চিকচিক করছে। এ দিন আভার জীবনে শ্রেষ্ট দিন হয়ে থাকবে। আভা সারাজীবন মনে রাখবে জীবনের এই শ্রেষ্ট প্রাপ্তির দিনকে।
____________________________
আভা বিছানায় বসে আছে। দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে আহনাফের ফোনে কল করল। প্রথমবার রিং বাজার সঙ্গেসঙ্গে আহনাফ কল রিসিভ করল। আভা কথা বলতে পারছে না। কথাগুলো গলায় আটকে রয়েছে। আভা নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করল। অতঃপর মৃদু চিৎকার করে বলল,
‘ আমরা জিতে গেছি, আহনাফ। জিতে গেছি আমরা। ‘
আহনাফ মৃদু হাসে। আভা খুশিতে আজ পাগল হয়ে গেছে। আহনাফের বুকে পানি আসে। বুকটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়। মৃদু কন্ঠে বলল
‘ ওয়েলকাম টু আওয়ার কলেজ, বউফ্রেন্ড! ‘
আভার চোখে জল টুইটুম্বর করছে। বুকে হাত চেপে চোখ বুজে রয়েছে আভা। এত খুশি সে আর কখনো হয়নি। আহনাফ আভার খুশি অনুভব করার চেষ্টা করে। আভা আর আহনাফের সাথে কথা বলছে আর অযথাই হাসছে। হাসি যেন আজ বাঁধ ভেঙেছে আভার। আহনাফ ধৈর্য্য নিয়ে আভার কথা শুনছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে