মন গহীনে তুমি পর্ব-০৭(শেষ পর্ব)

0
1174

#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৭ ( শেষ )
আদ্রিশের পরিবার বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজকেই বিয়েটা হবে৷ আদ্রিশ বিয়েটা আটকাতে পারেনি।

কায়রা আদ্রিশকে লাগাতার কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আদ্রিশ রিসিভ করছেনা। রিসিভ করেই বা কি বলবে। আদ্রিশ তো কায়রাকে বলেছিলো যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙবে৷ কিন্তু ও এখনও সেটা করতে পারেনি। আজকে বিয়ে অথচ আদ্রিশ এখন পর্যন্ত ওর পরিবারকে বলতে পারেনি ও বিয়েটা করতে চায়না৷

আর এদিকে কায়রা লাগাতার কল দিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিশ একসময় বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলো৷

কায়রা বললো, আপনাকে আমি কি বলেছিলাম আর আপনি কি করলেন? আপনার মত খারাপ মানুষ আমি আমার লাইফে আজ পর্যন্ত দেখিনি৷ আমার বয়ফ্রেন্ড আছে এটা বলেছি তাও আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন। আপনার মন- মানসিকতা এতটাই নিচে যে কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতেও আপনার আপত্তি নেই।

আদ্রিশ রাগীভাবে বললো, হ্যা আমি খারাপ৷ আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আপনাকে বিয়ে করবো। এতদিন শুধু বিয়ে ভাঙার নাটক করেছি। হয়েছে এবার? শান্তি আপনি?

আপনি আমার সিচুয়েশনটা কখনই বুঝার চেষ্টা করেননি। সবকিছু তো আমার উপর ছেড়ে দিলেন৷ কারন আপনি আপনার বাবার কাছে খারাপ হতে পারবেন না। আমি খারাপ হই তাতে কোন সমস্যা নেই। আমাকে সবাই অপমান করুক,মারুক তাতে তো আপনার কিছু যায় আসেনা। আপনি সবার কাছে ভালো হলেই হলো৷
সত্যি বলতে আপনার মত স্বার্থপর মানুষ আমি কখনও দেখিনি৷ একবার নিজেকে আমার জাগায় রেখে ভাবুন৷

আমার পরিবার,রিলেটিভ, আপনার পরিবার সবার বিরুদ্ধে আপনাকে যেতে হবে। আপনার তো কোন সমস্যা নেই কারন আপনি তো সবাইকে বলবেন আপনি বিয়ে করার জন্য রাজি আছেন৷ ছেলেটা যদি আপনাকে বিয়ে না করে তাহলে তো আপনার কিছু করার থাকবেনা। সবাই ছেলেটাকে খারাপ বলবে। আপনাকে সমবেদনা জানাবে।

শুধুমাত্র একটা কথার জন্য আপনি দিনের পর দিন আমাকে অপমান করে গেছেন আর আমি সব সহ্য করেছি৷ আমি যদি আপনাকে এভাবে অপমান করতাম তাহলে আপনি কি আমার মত সব সহ্য করতেন?

করতেন না। আমাকে কিছু না কিছু বলতেন। কলেজ লাইফে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো আমার। ও আমার সাথে রিলেশনে থাকা অবস্থায় আরও অনেকগুলো রিলেশন করতো। একটা সময় আমি বুঝতে পারি। ওকে জিজ্ঞেস করলে ও বলে, ও সবার সাথে টাইমপাস করেছে।

আমি ওকে বলেছি, আমি এমন একজনকে বিয়ে করতে চাই যার লাইফে আমি একমাত্র ছেলে হবো।

তখন ও আমাকে বলেছিলো, আমি কোন ভা*র্জি*ন মেয়ে বিয়ে করতে পারবো না। মেয়েরা নাকি ৮/৯ থেকে রিলেশন শুরু করে। না চাইতেও কারও না কারও মায়ায় পরে যায়।

ও চলে যাওয়াতে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রথম ভালোবাসা এত সহজে তো ভুলে থাকা যায়না। তবে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কখনও রিলেশনে জড়াবো না। বিয়ে করবো মন মত কোন মেয়েকে৷

সবসময় মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করতো। আমি কারও জিবনে দ্বিতীয় ব্যক্তি হতে চাইনি৷ এসব কথা আপনি ওইদিনই বলতাম। কিন্তু তার আগেই তো আপনি বলে দিলেন বিয়েটা হবেনা৷ তাই আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করিনি। এখন কেন বলছি তাও জানিনা। কিছু জিনিস আড়ালেই ভালো লাগে। আমাদের মন গহীনেই লুকিয়ে থাকে৷ এটাই মায়া যা নিজের কাছে থাকে৷

আপনি চিন্তা করবেন না৷ আমি যখন কাউকে কথা দেই তখন অবশ্যই তা রাখার চেষ্টা করি৷ আপনাকে যখন বলেছি বিয়েটা হবেনা তখন অবশ্যই বিয়েটা হবেনা সে যা হোক না কেন। আর এর জন্য আপনাকে কেও দোষ দিবেনা এটা নিশ্চিত থাকুন।

এসব বলে আদ্রিশ কল কেঁটে দিলো। ওর কাছে এখন একটা মাত্র অপশন রয়েছে বিয়েটা ভাঙার আর ও সেটাই কাজে লাগাবে৷

আদ্রিকে সবাই বললো, এখনও রেডি হসনি কেন? আমরা তো কিছুখন পরই বের হবো।

– এইতো হব

– তাড়াতাড়ি কর

———–

আদ্রিশের পরিবার মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে সবার সামনে আদ্রিশকে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি আমাকে ভালোবেসে অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করতে পারো? তুমি তো বলেছিলে কখনও ছেড়ে যাবেনা৷ তাহলে এখন কেন আমার সাথে এমন করতেছো?

সবাই অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই ভাবতেছে মেয়েটা কি সব বলছে।

– তোমার মাথা ঠিক আছে তো কিসব বলছো? আদ্রিশের কোন রিলেশন আছে এটা অসম্ভব। ওর লাইফের সবকিছু আমাদের সাথে শেয়ার করে।

– এটা করেনি৷ আর সত্যি না মিথ্যা তা আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করেন

সবাই আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিশ কি বলে তা শোনার জন্য। আদ্রিশ মাথা নিচু করে বলে, হ্যা ওর সাথে আমার রিলেশন ছিলো। রাগারাগীর কারনে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি৷ তোমাদের অনেকবার বলতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি৷ জানি এটা সঠিক সময় না কিন্তু এখন সবকিছু না বললে আমাকে সারাজীবন কষ্ট পেতে হত৷

” তুই এরকমটা করবি তা আমরা কখনও কল্পনাও করিনি। তুই আগে আমাদের বলতি তাহলে তো মেয়ে দেখতে যেতাম না আমরা। তোর মন যা চায় তাই করবি। মেয়েটার সম্মানের কথা একবারও ভাবলি না? এখন মেয়েটাকে আমরা কি বলবো? মেয়েটার পরিবারকেই বা কি জবাব দিবো।

——-

আদ্রিশের বাবা কায়রার বাবাকে কল দিয়ে মাফ চাইলো৷ কায়রার বাবা অনেক বাজে ব্যবহার করতেছে। অনেক কিছু বলতেছে। অসম্মান করে কথা বলতেছে। তাও আদ্রিশের বাবা চুপ করে আছে কারন দোষটা যে তাদেরই৷ আদ্রিশের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ও কখনও ওর বাবাকে ছোট হতে দেখেনি৷ আজকে ওর জন্য ওর বাবা এতটা অপমানিত,ছোট হলো৷ সব দোষ ওর। ও একজন যোগ্য ছেলে হতে পারেনি৷ এসব মনে হতে লাগলো আদ্রিশের।

কায়রার বাবা ওকে বললো, আমাকে তুই মাফ করে দে মা৷ ছেলেটা এত খারাপ হবে তা আমি কখনও কল্পনাও করিনি৷ আর কখনও তোর অনিচ্ছায় বিয়ে ঠিক করবো না।

কায়রা কিছু বলছেনা৷ একদম পাথর হয়ে আছে। ওর জন্য আদ্রিশ আর ওর পরিবার এত অপমানিত হলো কায়রা তা মেনে নিতে পারছেনা৷ ও আজ পর্যন্ত শুধু শুধুই আদ্রিশকে অপমান করে এসেছে কিন্তু আদ্রিশ কখনই তার প্রতিবাদ করেনি। আদ্রিশের সামনে গিয়ে সরি বলারও ক্ষমতা ওর নেই। ও কখনও লজ্জায় আদ্রিশের সামনে দাঁড়াতে পারবেনা। মনে হচ্ছে জিবনের প্রথমবার ও মানুষ চিনতে ভুল করেছে৷

২ দিন পর

ফিহা আদ্রিশকে বলতেছে, তুমি কেন এমন করলা? কায়রার জন্য কেন তোমার পরিবারকে ছোট করলা? নিজেকে সবার সামনে খারাপ বানালা?

– ও চায়না বিয়েটা হোক।

– কিন্তু তুমি তো ওকে ভালোবাসতা৷ বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যেতো।

– ওর বয়ফ্রেন্ড ও আছে৷ আর ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কিছু করবো না৷

– আর তোমার ভালোবাসার কি হবে?

– মন গহীনেই থাকবে।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে