মন গহীনে তুমি পর্ব-০৫

0
702

#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৫
আপু বললো, এখনও কিছু কিনলি না তোরা? তোদের বলেছিলাম পছন্দমত কিছু কিনে নিতে তা না করে তোরা এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস৷বিয়ের পর তো সবসময়ই কথা বলতে পারবি৷ এখন শপিং শেষ কর।

কায়রা কিছুটা লজ্জা পেলো। আদ্রিশ অবাক হয়ে কায়রার দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভাবছে, এখানে লজ্জার কি হলো? তার এসব কাহিনীর জন্যই তো সবাই উল্টা- পাল্টা ভাবে৷

আপু যাওয়ার পর কায়রাকে বললাম, আপু কি এমন বললো যে আপনার লজ্জা পেতে হবে?

– আপনি তো অভদ্র মানুষ আপনার লজ্জা না থাকতে পারে কিন্তু আমার যথেষ্ট আছে৷

– মেয়েরা কখন, কি কথায় লজ্জা পায় তা বুঝা মুসকিল। তা এখন শপিং করা যাক। তা না হলে তো আপু আবার আসবে৷ সবকিছু কম দামেরটা কিনবেন৷

———

কায়রা মূল্য দেখে সবকিছু কিনছে। যেটার মূল্য বেশি ওইটা নিচ্ছে। আদ্রিশ ইশারায় অনেক বুঝাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কায়রা যেনো বুঝেও না বুঝার ভান করে আছে। আদ্রিশ দোকানের ভিতর কায়রাকে কিছু বলতেও পারছেনা৷ কায়রা আদ্রিশকে বললো, আপনি কিছু কিনছেন না কেন?

আদ্রিশ কিছু না বলে চুপ করে আছে। রাগীভাবে কায়রার দিকে তাকিয়ে আছে৷ কেনাকাটা শেষ হলে আদ্রিশ কায়রাকে বললো, আপনাকে কি বলেছি আর কি করলেন আপনি৷

– আমি আবার কি করলাম?

– আপনাকে বলেছিলাম কম দামেন গুলা নিতে আর আপনি সব বেশি দামেরটা নিলেন কেন? দোকানের ভিতরে তো কিছু বলতেও পারছিলাম না। ইশারায় বলার চেষ্টা করলাম। আপনি বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকলেন৷

– তখন আপনি আমার বাবার থেকে ইচ্ছে করেই এতকিছু নিয়েছেন৷ তার উসুল করার বিন্দুমাত্র প্রয়াস৷

– ঠিক আছে সময় আমারও আসবে

———-

সবার কেনাকাটা শেষ। আদ্রিশ আর কায়রা দুজন একসাথে এক গাড়িতে যাচ্ছে। আদ্রিশ ড্রাইভ করছে আর কায়রাকে জিজ্ঞেস করছে, আপনার বয়ফ্রেন্ডের নাম কি? সে কি করে?

– আপনাকে কেন বলবো?

– আচ্ছা বলা লাগবেনা৷ আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে তাতে বিয়েটা সহজেই ভেঙে যাবে।

– বলুন

– আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যান৷ সব খরচ আমি দিবো। তারপর অনেক বছর পর আসবেন৷ তখন আপনার বাবা তার নাতি- নাতনি দেখে সব কষ্ট ভুলে যাবে৷

– আপনি যেমন অভদ্র আপনার আইডিয়াও অভদ্র। আমি কোথাও যাবো না, কিছু বলবো না৷ যা করার আপনি করবেন৷ বিয়েটা আপনি ভাঙবেন৷

– বার বার আমাকে অভদ্র বলে অপমান করবেন না তো৷ আমি কিন্তু সবসময় আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করি আর আপনি সবসময় আমাকে অপমান করে কথা বলেন৷

ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি আটকে আছে। হঠাৎ এক বাচ্চা এসে বললো, স্যার ফুল নিবেন?

আদ্রিশ বাচ্চাটার কাছ থেকে সব ফুল কিনে নিলো। সাথে বাচ্চাটাকে বখশিশ ও দিলো।

কায়রা বললো, আমার কাছে ভালো সাজার জন্য এসব করলেন নাকি?

কায়রার কথা শুনে আদ্রিশ গাড়ি ব্রেক করলো। হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতেছে না।

কায়রাকে বললো, আপনাকে দেখানোর কি আছে৷ আমার মন- মানসিকতাই এমন।

– মেয়েদের সাথে যে খারাপ ব্যবহার করে তার মন- মানসিকতা আর যাইহোক ভালো হতে পারেনা৷

– মাফ চাই। আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা৷ যা খুশি ভাবতে পারেন আপনি৷ খারাপ ভেবেই থাকুন৷ আমি কিছু বলবো না৷

– খারাপ মানুষকে খারাপ ভাবলে তার বলার কিছু থাকেও না৷

আদ্রিশ আর কিছু না বলে ড্রাইভ করতে লাগলো। আমি যা কিছুই করিনা কেন এই মেয়েটা সবকিছু নেগেটিভ ভাবে নিবে৷ সে যা ভাবার ভাবুক৷ তার কাছে নিজেকে ভালো প্রমান করতে হবে এমনটা তো না৷

কায়রা ভাবতেছে, আদ্রিশকে যতটা খারাপ ভাবছি আসলে কি ও ততটা খারাপ। এখন যা দেখলাম এর জন্য সবার মন- মানসিকতা থাকেনা৷ আদ্রিশ চাইলেই তো মেয়েটাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারতো। কিন্তু ও মেয়েটাকে ছোট করতে চাইনি। মেয়েটা যাতে বুঝে ও নিজের উপার্জন এটা তাই সব ফুল কিনে নিলো। আমি যে পরিমান অপমান ওকে করি তারপরও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেনা৷ আমি যা বলছি তাই করছে৷

হঠাৎ কায়রার আদ্রিশের সেই কথা মনে পরে গেলো। এটা মনে পরতেই কায়রা আবার আদ্রিশকে খারাপ ভাবতে শুরু করছে। যার এরকম চিন্তা-ভাবনা থাকে সে আর যাইহোক ভালো মানুষ হতে পারেনা৷ কাউকে সাহায্য করলেই তো আর সে ভালো মানুষ হয়ে যাবেনা।

আদ্রিশ কায়রাকে বললো, আমি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে চাই। কল দিন তাকে।

– আপনি ওর সাথে কেন কথা বলতে চান?
– কেন আবার। এত বড় ঝামেলায় আছি তাকে তো জানাতে হবে। পরে তো সে আবার আপনার মত আমাকে খারাপ ভাবতে শুরু করবে। আর কিভাবে কি করা যায় সেটা নিয়েও তার সাথে আলোচনা করতে হবে।

– আপনাকে খারাপ ভাবার কিছুই নেই কারন আপনি অলরেডি খারাপ আছেন। ওর সাথে আপনার কথা বলতে হবেনা। পরে উল্টা-পাল্টা কিছু বলে ফেলবেন। আপনার আচরন যে কেমন তা তো জানেনই।

– দেখুন সবসময় আপনি আমাকে এমন করে বলবেন না তো। এমনিতেই কত বড় ঝামেলায় আছি আপনি তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আপনাকে বললাম তার সাথে কথা বলতে হবে। তা না করে উল্টো আমাকে এসব বলছেন৷

– ঝামেলা তো আপনি নিজেই বাঁধিয়েছেন। আপনাকে কে বলেছিলো শপিং করতে আসতে৷ আবার আমার পরিবারকেও নিয়ে এসেছেন৷

– আমি নিজের পায়ে নিজে কেন কু*ড়া*ল মারতে যাবো। আমি তো জানতাম ও না শপিং করার কথা। আমি বাসায় যাওয়ার পর তারা আমাকে নিয়ে আসলো৷

– সে যাই হোক। ওর সাথে আপনার কথা বলতে হবেনা৷ বিয়েটা আপনাকে নিজেই ভাঙতে হবে।

আদ্রিশ আর কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলে কোন লাভ হবেনা তা আদ্রিশ বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। কায়রাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে ওর বাসায় চলে আসলো। বাসায় আসার পর ওর আপু যা বললো তাতে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।

চলবে—-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে