মনোহরা পর্ব-১৩

0
1202

#মনোহরা
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃনির্মলা

ভেবেই নিজের মাথায় নিজেই কয়েকটা হাত দিয়ে গাট্টা মারলাম। ভাবলাম এখন কি করবো আমি। এ অবস্থায় বাহিরে কি করে যাবো।একবার ভাবলাম অহনাকে ডাকবো।কিন্তু কিভাবে ডাকবো ফোন ও তো নেই আমার কাছে। এসব ভাবছিলাম ঠিক তখন washroom এর দরজায় উনি নক করলেন আর বললেন
শানঃ কি হলো আর কত সময় লাগবে ইশা।
এখন আমি কি করি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।
উনি আমার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার বলে উঠলেন
শানঃ কি হলো কথা বলছো না কেনো।
আমি নিরবতা ভেঙে বলে উঠলাম
ইশাঃ আসলে আমি
বলেই আমি চুপ হয়ে গেলাম কারন উনাকে কি করে বলবো যে আমি শাড়ি আনতে ভুলে গেছি এটা বলতে আমার কেনো জানি না লজ্জা লাগছিলো।উনি আমাকে বলে উঠলেন
শানঃ ইশা কি হয়েছে বল আমায় কোন সমস্যা হয়েছে কি?
ভাবলাম এবার তো আমাকে বলতেই হবে। কেনো না এর পরের বার হয় তো উনি এতটা শান্ত ভাবে বলবেন না। আর আমি উনাকে রাগাতে চাই না।তাই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বললাম

ইশাঃ ইয়ে মানে আমি শাড়ি আনতে ভুলে গেছি

কথাটা বলেই আমি চুপ হয়ে গেলাম।প্রায় ১ মিনিট হয়ে গেলো কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ পেলাম না।আমি দরজায় ধারে গিয়ে কান পেতে বোঝার চেষ্টা করলাম যে উনি কি আবার রেগে গেছেন নাকি আর এই কাজের জন্য।কিন্তু না কোন সাড়াশব্দ শব্দ পেলাম না।প্রায় ২ মিনিট পর হঠাৎ করে দরজায় নক পড়লো। আমি ভয় পেয়ে উঠলাম ঠিক তখন ওপাশ থেকে
শানঃ দরজা খোলো
দরজা খোলার কথা শুনে আমি এক প্রকার ঘাবড়ে গেলাম।উনি আবারও বলে উঠলেন
শানঃ কি হলো খোলো।
ইশাঃ ক….ক……কে…….কেনো( তুতলিয়ে)
শানঃ আরে না খুললে দিবো কি করে
ইশাঃ কি!!!!!! (কিছুটা জোরে বলাম)
শানঃ কি মানে!!!! তুমি তো বললে শাড়ি নিয়ে আসো নি।তো আমি সেটা নিয়ে এসেছি।
উনার কথাটা শুনে দেহে মনে হয় প্রান ফিরে এলো।ছি আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে আমি উনাকে কি ভেবেছিলাম।আমি আস্তে করে দরজাটা হালকা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলাম।

এদিকে ইশার হাত বাড়িয়ে দিতেই। শান ইশার শাড়ি দেবার সময় ইশার হাতের দিকে খেয়াল করলো। ফর্সা হাতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।শান এক দৃষ্টিতে ইশার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো
ইশাঃ কি হলো দিন।
ইশার ডাকে শানের ধ্যান ভাঙলো সে ইশার হাতে শাড়ি দিতে দিতে বলল
শানঃ তাড়াতাড়ি বেড় হও।তুমি বেড় হলে আমাকে fresh হয়ে নিচে যেতে হবে।
ইশাঃ হুম

অবশেষে কোন রকম শাড়িটা পেঁচিয়ে নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে এলাম।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে fresh হতে চলে গেলেন। fresh হয়ে উনি নিচে চলে গেলেন। উনি নিচে যেতেই অহনা হাতে ট্রেতে করে খাবার নিয়ে আমার রুমে এলো।তার সাথে করে দুইটা মেয়ে কে নিয়ে এলো।তাদের দেখেই বুঝতে পারলাম এরা পার্লারের লোক। অহনা আমার কাছে আসতেই বলল
অহনাঃ কি হলো ভাবি মন খারাপ
ইশাঃ উহু,,,, দেখনা আমি কিভাবে শাড়ি পড়েছি
অহনা এবার ইশার দিকে খেয়াল করলো, দেখলো সে শাড়ি অগোছালো ভাবে পড়ে আছে। অবশ্য সেও তেমন একটা শাড়ি পড়তে পাড়ে না তাই বলে উঠলো
অহনাঃ ওহ হো কোন ব্যাপার না ভাবি এরা তোমাকে খুব সুন্দর ভাবে শাড়ি পড়িয়ে দেবে।সেটা দেখে তুমি শিক্ষে নিয়ো হুম( হাসি মুখে)
ইশাঃ হুম
অহনা খাবারের ট্রেটা সাইডে রেখে বলল
অহনাঃ আগে একটু কিছু খেয়ে নেও তারপর সাজুগুজু করবে
আমি শুধু তার কথায় হাসলাম

অবশেষে আমাকে ওরা খয়েরি রঙের সুন্দর একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলো।তার সাথে ম্যাচিং করে গহনা পড়িয়ে দিলো।আর আমি ওদেরকে হালকা মেকাপ করিয়ে দিতে বললাম।অহনা আমাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাড় করিয়ে দিয়ে বলল
অহনাঃ বাহ্ তোমাকে তো কালকের থেকে আজ আরও বেশি সুন্দর লাগছে। ভাইয়া তো আজ আর তোমার থেকে চোখ সরাতে পারবে না

কথাটা শুনে আমার ভিষন লজ্জা লাগলো। আমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হলো। নিচে নামতেই দেখতে পেলাম আমাদের বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে।মা, বাবা, ভাইয়াকে দেখে দৌড়ে তাদের কাছে গেলাম।তাদের দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না কান্না করে দিলাম।তারাও আমাকে দেখে কান্না করে দিলো।
এরই মধ্যে বড় আম্মু থুক্কু মানে আমার শাশুড়ী মা চলে এলেন আর বলেন
শাশুড়ীঃ ইশা মা কান্না করো না, আর তোমরাও মেয়েটা কান্না করছে কই তাকে সামলাবে তা না নিজেরাও কান্না করছো।
ইশা মাঃ আসলে আপা মেয়েটাকে দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।
এরই মধ্যে ইশা ঘর ভর্তি লোকের মধ্যে কান্না করতে করতে বলল
ইশাঃ মা আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো

কথাটা শুনে সবাইতো পুরো অবাক হঠাৎ পিছন থেকে শান বলে উঠলো
শানঃwhat????
ইশা নিচে নামার পরপর শান তার মায়ের রুম থেকে change করে নিচে নামছিলো সে।কারন তার রুমে ইশাকে সাজানো হচ্ছিলো। আজ ইশার সাথে ম্যাচিং করে একটা খয়েরী পাঞ্জাবি পড়লো। সে তার মায়ের রুমে গিয়ে change করে নিচে এসে দেখে ইশা কান্না কাটি করছে।শান চুপচাপ ইশার পিছনে দাড়িয়ে ছিলো।কিন্তু ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে সে আর চুপ করে থাকতে পারলো না।

শান ইশার দিকে দ্রুত পায়ে এসে ইশার ডান হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
শানঃ তুমি বাড়ি যাবে মানে!
ইশা শানকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো তারপর বলর
ইশাঃ না মানে
শানঃ দেখো ইশা please আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবার কথা বলবে না ( অনুরোধের শুরে বলল)
ইশা শানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ওদের কথা বার্তাশুনে সবাই হেসে উঠলো। একজনতো জোরে বলে উঠলো। শানের মা তোমার ছেলেতো বউকে চোখে হারাতে চায় না।এতে অবশ্য শানের মার ভালোই লাগলো কারন সে চায় তার ছেলে সব সময় ইশাকে নিয়ে ভালো থাকুক।

অনুষ্ঠানে শেষ হয়েছে ঘন্টাখানিক আগে। ইশার পরিবারে লোকজন সবাই চলে গেছে। রাতে সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে।অহনা ইশাকে নিয়ে তার রুমে দিয়ে আসলো। ইশা রুমে এসে fresh হতে গেলো। fresh হয়ে ইশা রুমে এসে দেখে শান এখনও আসে নি।সে বিছানার থেকে একটা বালিশ নিয়ে তার পিছনে দিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। এভাবে কিছুসময় বসে থাকার পর ইশা কখন যে ঘুমিয়ে গেলো সেটা সে টেরই পেলোনা।

এদিকে শান তার বাবার সাথে অফিসের কিসব কাজের ঝামেলা হয়েছে সেসব নিয়ে কথা বলছিলো। কাল থেকে তাকে অফিসে যেতে হবে ।কথা বলতে বলতে অনেকটা রাত হয়ে গেলো।তার বাবার সাথে কথা বলে বেড় হয়ে তার হাতের থাকা ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো রাত ১২টা বাজে।সেটা দেখে সে দ্রুত পায়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।রুমের দরজা খুলতেই ইশাকে বসা অস্থায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো। জানালা খোলা থাকায় রুমের ভেতরে হালকা বাতাস ঢুকছে আর তাতে ইশার সামনের ছোট ছোট চুল গুলো মুখের উপর পড়ছে।শান ধিরে ধিরে ইশার কাছে গিয়ে ইশার অবাধ্য চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে দিতে লাগলো এতে ইশা হালকা নরে উঠতেই ইশা পড়ে যেতে নিলো শান তাড়াতাড়ি করে ইশাকে ধরে নিলো।তারপর ইশাকে ঠিক করে বিছানায় শুয়ে দিতে নিলেই ইশার ঠোঁটের দিকে শানের নরজর পড়লো। সে কোন কিছু না ভেবেই ইশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

ঘুমের মধ্যে কারও ভারি নিশ্বাস আমার মুখে পড়তে লাগলো।হঠাৎ আমার ঠোঁট কেউ তার নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। আমার ঘুমের মধ্যেই মনে হতে লাগলো তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমি আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারলাম না চোখটা খুলে ফেললা।খুলেই দেখাম উনাক।আমার গায়ের যত শক্তি আছে সব শক্তি দিয়ে উনাকে ধাক্কা মারলাম।উনি তাল সামলাতে না পেড়ে বিছানা থেকে নিচে পড়ে গেলো।আমি বিছানা থেকে উঠে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে উনার দিকে তাকালাম।দেখলাম উনি আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ কি করছেন আপনি এসব
উনি এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। আমি সেটা দেখে বললাম।
ইশাঃ আর একটু হলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।
তখনই উনি ভারি গলায় বলে উঠলেন
শানঃ তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেনো।
এত সময় পর আমার হুস এলো যে আমি উনাকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়েছি।আমি চটজলদি বিছানা ছেড়ে উনার কাছে গিয়ে বললাম
ইশাঃ ও sorry আপনার হাত দিন
ইশা তার হাত শানের দিকে বাড়িয়ে দিলো। শান ইশার হাত ধরে দাড়ালো তারপর বলল
শানঃ যাও শুয়ে পড়ো
ইশাঃ আপনি কি রাগ করলেন
শানঃ আমি রাগ তোমার উপর একটা (তাছিলোর হাসি দিয়ে বলল)
তারপর washroom এর দিকে পা বাড়াতে গেলেই ইশা বলে উঠলো
ইশাঃ শুনুন
শান পিছনে ঘুরে তাকালো তারপর বলল
শানঃ কিছু বলবে
ইশাঃ বলছিলাম এত লেট কেনো করলেন আসতে, আর আজ রুসাকেও তো কোথাও দেখতে পেলাম না।
শান ইশার চোখে চোখ রেখে বলল
শানঃ বাবার সাথে কিছু কাজ ছিলো তাই আসতে লেট হয়ে গেছে। আর রুসা সকালে চলে গেছে ওর বাবা অসুস্থ তাই।আমাকেও বলে যেতে পারে নি মেসেজে বলেছে যাই হোক শুয়ে পড়ো
ইশা আর কিছু বললো না শান washroom এর দিকে পা বাড়ালো।ইশার শানের সাথে এমন ব্যবহার করার কেমন জানি খারাপ লাগলো। সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো

সকালে………..
ইশা ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান নেই।দুই হাত তুলে আলসেমি ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে ৯টা বাজে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে washroom এ চলে গেলো।

চলবে………
[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে