#মনোহরা
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃনির্মলা
আমি একটা ঢোক গিলে উনার থেকে চোখ সরিয়ে ড্রেসিংটেবিলের উপর গহনা গুলো রেখে ঘুরে দাড়াতেই।
এদিকে
অহনা তার রুমে এসে জিসানকে বার বার কল করে যাচ্ছে। ফোনটা বেজে যাচ্ছে কিন্তু জিসান ধরছে না। অহনার এবার চিন্তা হতে লাগলো কারন ইশার বিদায়ের সময় জিসান বাড়িতে ছিলো না।সারা রাস্তা অহনা জিসানকে ফোন করেছে কিন্তু ফোনটা বার বার বন্ধ বলছিলো। এখন ফোনটা খোলা তবুও ফোন ধরছে না। অহনা এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা বিছানায় রেখে washroom এর দিকে পা বাড়ালো। washroom থেকে fresh হয়ে বেড়িয়ে অহনা আবার জিসানের ফোনে কল করলো। দুইটা রিং বাজতেই ওপাশ থেকে
জিসানঃ hello
জিসানের গলার আওয়াজ পেয়ে অহনা যেনো দেহে প্রান ফিরে পেলো।তারপর বলে উঠলো
অহনাঃ hello জিসান কোথায় ছিলে তুমি এত সময়। কত সময় ধরে আমি তোমার ফোনে কল করে যাচ্ছি তুমি কেনো ধরছিলা না।
জিসান একটু ভারি গলায় বলল
জিসানঃ এমনি
অহনা কিছুটা রেগে বলল
অহনাঃ এমনি মানে কি জিসান, তুমি জানো তোমাকে যখন ফোনে পাচ্ছিলাম না তখন আমার অবস্থা কি হয়েছিলো।
জিসানঃ হুম (শান্ত কন্ঠে)
অহনাঃ তুমি জানো ভাবি তোমাকে একবার দেখার জন্য কত সময় দাড়িয়ে ছিলো তোমাকে না দেখে সে যেতে চাই নি। কিন্তু তোমাকে তো কোথাও পাওয়া গেলো না কোথায় গিয়েছিলে তুমি।
জিসান এবার কান্না করে দিলো।অহনা ফোনের মধ্যে জিসানের কান্নার আওয়াজ পেলো।সেভাবতে পাচ্ছে না জিসান কান্না করছে। অহনা অস্থির হয়ে জিসানকে বলে উঠলো
অহনাঃ তুমি কি কান্না করছো জিসান??
জিসানঃ……………
জিসান অহনার কথার জবাব দিলো না শুধু কান্না করে যাচ্ছে।জিসানের কান্নার আওয়াজটা অহনার একদম বুকে গিয়ে লাগলো।কারন প্রিয় মানুষের কান্না কেউ সইতে পারে না।জিসান কান্না জোরিত গলায় বলল
জিসানঃ তুমি জানো অহনা আমার বুকটা খালি হয়ে গেলো আজ।আমার কলিজার টুকরো বোনটা আজ এ বাড়ি থেকে চলে গেলো। আমি ওর বিদায়ের সময় কেনো ছিলাম না জানো। আমি ওকে নিজের হাতে বিদায় দিতাম কি করে বলো। (বলেই আবার কান্না করে দিলো)
অহনা জিসানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে নিজের কান্না আটকে রাখতে পারলো না সেও কান্না করলো কিন্তু শব্দ ছাড়া যাতে জিসান বুঝতে না পারে।জিসান আবারও বলে উঠলো
জিসানঃ তুমি জানো অহনা মা, বাবা, যখন প্রথম ওকে বাড়িতে নিয়ে আসে সেদিন সবার থেকে আমি খুশি হয়েছিলাম।খুশে হয়ে আমি ওকে আমার কোলে তুলে নিয়েছিলাম।আমার সেই ছোট বোনটা দেখতে দেখতে এত বড় হয়ে গেছে।আর আজ তার বিয়ে হয়ে গেলো।
আহনা জিসানকে শান্ত করতে বলে উঠলো
অহনাঃ জিসান please একটু শান্ত হও।এভাবে কান্না করছো কেনো সব মেয়েদেরই বাপের বাড়ি ছেড়ে শশুর বাড়িতে যেতে হয় এটাই স্বাভাবিক। আমারও যখন বিয়ে হবে তোমার সাথে তখন আমি ও এ বাড়ি ছেড়ে তোমার বাড়িতে চলে যাবো।আর ভাবি কি এখানে একেবাড়ে চলে এসেছে নাকি। মাঝে মাঝে তো ওবাড়িতেও যাবে।তুমি please কান্না করো না।
জিসানঃ জানি অহনা কিন্তু মন তো মানে না।
অহনাঃ মানাতে হবে জিসান, আচ্ছা শোন না খেয়েছো কিছু। সারাদিন তো কিছুই খাও নি
জিসানঃ উহু, তুমি কি করে জানলে আমি সারাদিন কিছু খাই নি
অহনাঃ জানি আমি, তুমি এখন আর কান্না না করে যাও খেয়ে নেও আর ইশা ভাবির জন্য চিন্তা করো না আমি আছি
জিসানঃ হুম।
অহনাঃ bye!
জিসানঃ bye!
ওদিকে ইশা ঘুরে দাড়াতেই শানকে তার সামনে দেখতে পেলো।হঠাৎ এমনভাবে শানকে তার সামনে দেখে ইশা কিছুটা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠল। শান সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
শানঃ আমি সামনে এলেই তুমি এমন কাঁপতে থাকো কেনো
ইশা সেটা শুনে শানের দিকে না তাকিয়ে নরম সুরে বলে উঠলো
ইশাঃ আসলে ভাইয়া না মানে আপনি হঠাৎ এভাবে সামনে চলে এলেন তাই আমি
শান আর কিছু না বলেই ইশাকে ধরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিলো।ইশা শানের এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেলো।
আমি বুঝতে পারলাম না উনি হঠাৎ করে আমাকে আয়নার সামনে ঘুরালেন কেনো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে এসে নরম শুরে বললেন
শানঃ শুনেছি বিয়ের পর নাকি বউকে বাসর ঘরে কিছু উপহার দিতে হয়।
বলেই উনি উনার পকেট থেকে একটা সোনার চেইন বের করে আমার গলায় পড়িয়ে দিতে গেলেই আমি বলে উঠলাম
ইশাঃআপনার পড়ানোর দরকার নেই আমি পড়ছি দিন আমার কাছে
আমার বলা কথাটা হয়তো উনার পছন্দ হলো না তাই উনি বলে উঠলেন
শানঃ ইশা please আজ অন্তত তুমি আমাকে রাগীয়ে দিয়ো না।আমি পড়িয়ে দিলে কি কোন সমস্যা আছে।
ইশাঃ না মনে
শানঃ চুপ কোন কথা বলো না
এই বলে উনি কাঁধ থেকে আমার চুল সরিয়ে দিলেন।উনার হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। উনি কখন আমাকে চেইনটা পড়িয়ে দিলেন আমি বুঝতেই পাড়লাম না। হঠাৎ করে উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি সেটা বুঝতে পেড়ে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি সেটা দেখে উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম
ইশাঃ কি করছেন
উনি আমাকে বিছানার কাছে নিয়ে শুয়ে দিলেন আর বললেন।
শানঃ অনেক রাত হয়েছে ইশা ঘুমিয়ে পড়ো কাল আবার তাড়াতাড়ি উঠতে হবে
এই বলে শান ইশাকে শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে ইশার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ইশার কাছে আজ সত্যই শানের ব্যবহার গুলো ভাবাচ্ছে।কারন শান আগে ইশার সাথে এমন ভাবে কথাই বলেনি।শানের এমন ব্যবহারে ইশার মধ্যে যে ভয়টা কাজ করতো সেটা কেটে যেতে লাগলো
ইশা ভাবতে লাগলো লোকটা কি সত্যই বদলে গেছে নাকি। কখনও তো আমার সাথে এমন ব্যবহার করেনি। সবাই বলে বাসর রাতের পর নাকি সব মেয়েদের জীবন বদলে যায়।তারা নাকি নতুন জীবন শুরু করে তাহলে কি এটাই আমার নতুন জীবনে পা রাখার শুরু।যদি এটাই হয় তাহলে আমি চাই বদলে যেতে।ভেবেই ইশার একটা মুচকি হাসি দিলো।
_______________________________________
সকালে……..
আজ কেনো জানি না খুব সকাল সকালই আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো।আমি চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখলাম উনি ঘুমিয়ে আছে।ঘুমের মধ্যে উনাকে ভীষণ মায়াবী লাগছিলো।ছেলেদের কেও যে মায়াবী লাগতে পারে সেটা আমার আগে জানা ছিলো না আর হয়তো উনাকে না দেখলে হয়তো বুঝতে পাড়তাম না।হঠাৎ করে আমি অনুভব করলাম।উনার হাত আমার পেটের উপর। আর আমার শাড়ি আমার পেটের থেকে সরে গেছে। আমার খোলা পেটে উনার হাত। ভাবতেই আমার কেমন জানি লাগলো আমি আস্তে করে উনার হাতটা সরিয়ে দিতেই উনি হালকা নড়েচড়ে উঠলেন।আমি আস্তে করে বিছানা ছেড়ে যেতে নিলেই হঠাৎ করেই আমার শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করলাম।এমনি তেও আমি শাড়ি পড়তে পাড়ি না কোন রকম পেচিয়ে পড়ছি।তার উপর উনি আমার শাড়ি টেনে ধরেছেন এবার আমি কি করবো বুঝতে পাড়লাম না।একবার ভাবলাম উনাকে ডাক দিবো তারপর ভাবলাম থাক ডাকার দরকার নেই।ঘুম থেকে উঠালে উনি যদি রাগ করে। তাই আমি বিছানার উপর বসে রইলাম।
অনেক সময় বসে থাকার পর। হঠাৎ করেই রুমের দরজায় নাক পড়লো।আমি উঠে যেতে নিলেই আবার শাড়ি আঁচলে টান পড়লো।এবার একটু জোরেই টান পড়লো যার কারনে উনার ঘুমটা ভেঙে গেলো।আমি সেখানেই দাড়িয়ে পড়লাম।উনি আধো আধো চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন।আর এদিকে আমি উনাকে তাকাতে দেখে লজ্জায় পড়ে গেলাম কারন আমার শাড়িটা পেরায় খুলে যায়। আমি কোন রকম শাড়ি টান দিয়ে উনার কাছ থেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে washroom ঢুকে গেলাম।
শান ইশাকে এভাবে যেতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।আর ভাবতে লাগলো ও এভাবে দৌড়ে গেলো কেনো আমি তো ওকে কিছুই বলি নি। তখনই শান শুনতে পেলো তাদের রুমের দরজায় কেউ নক করছে।শান দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলতেই দেখলো অহনা দাঁড়ান।
আমি washroom এ ঢুকে ভাবলাম গোসল করবো নাকি করবো না।তারপর ভাবলাম না করলে যদি বাড়ির সবাই বকা দেয় তাহলে।তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে গোসলটা করার সিদ্ধান্ত নিলাম
অহনাঃ ভাইয়া তুই,, ভাবি ঘুম থেকে উঠে নাই
শান চোখ ঢলতে ঢলতে বলল
শানঃ হ্যাঁ উঠেছে washroom কেনো কিছু বলবি
অহনাঃ হ্যাঁ মানে উনাকে গোসল করে বসে থাকতে বলো। আর হ্যাঁ তুমি fresh হয়ে নিচে আসো বাবা ডাকছে।
শানঃ কেনো
অহনাঃ জানি না চলে আসো,আর হ্যাঁ মনে করে বলো কিন্তু ভাবিকে
শানঃ ঠিকাছে যা তুই
অহনাঃ যাচ্ছি বাবা এত বলার কি আছে
গোসল করার পর এবার পড়লাম মহা বিপদে আমি তো শাড়ি টারি কিছুই আনি নাই।ভেবেই নিজের মাথায় নিজেই কয়েকটা হাত দিয়ে গাট্টা মারলাম
চলবে….
[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]