মনোহরা পর্ব-০৩

0
1410

#মনোহরা
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃনির্মলা

কারন শান ভাইয়ার সাথে আরও একজন আসছে তাই দুটো গাড়ি নিতে হয়েছে। এক গাড়িতে সবাইকে ধরবে না তার জন্য। গাড়ি তার নিজ গতিতে চলা আরম্ভ করলো। কিছু সময় পর দেখলাম।বড় আন্টি আমার হাতে একটা টিফিন বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ ইশা মা এটার মধ্যে নুডুস আছে খেয়ে নে
আমি অবাক হয়ে বলাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি আবার এসব করতে গেলে কেনো
বড় আন্টি হেসে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ তো কে করবে শুনি, আমি তো তোর মা তাই না।আমাদের প্রত্যেক মায়ের উচিত সন্তানের খেয়াল রাখা।তাড়াতাড়ি কারনে তো সকালে খেতও পারিস নি নে খেয়েনে।

অহনা আপু আমার পাশ থেকে বলে উঠলো
অহনাঃ সব আদর নিজের ছেলের বউকে দিলে হবে আমাকেও একটু ভাগ দেও
বড় আন্টিঃ তোকে দিতে দিতে আমি বিরক্ত এখন আমি আমার সব আদর বউমাকে দেবো (ইশার গালে হাত দিয়ে)
অহনা আপু মুখ গোমড়া করে বলল
অহনাঃ তাহলে তুমি আর আমাকে আদর করবেনা
অহনা আপুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি আর বড় আন্টি এক সাথে হেসে দিলাম।অহনা আপু সেটা দেখে বলল
অহনাঃ তোমরা হাসছো,,, আর এদিকে আমার কত খারাপ লাগছে জানো
আমি হাসতে হাসতে বললাম
ইশাঃ আপু বড় আন্টি তোমার সাথে মজা করছে
বড় আন্টি আমাকে ইসারা দিয়ে জানালার পাশে সরিয়ে দিয়ে অহনা আপুর কাছে বসে আপুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ তুই তো আমার নাড়ি ছেড়া ধন তোকে ভালো না বেশে যাবো কোথায়।
অহনা আপু এটা শুনে বড় আন্টিকে জোরিয়ে ধরে বললো
অহনাঃ আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি মা।
দুজনে কিছুটা, Emotional হয়ে গেলো।সেটা দেখে আমি একটু কাশি দিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক করতে বললাম।
ইশাঃ বড় আন্টি নুডুসে সবজি দেও নি তো
বড় আন্টি অহনা আপুকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ দিয়েছি তবে অল্প, একটু আকটু সবজি খেতে হয় ইশা মা।
ইশাঃ কিন্তু আমার তো খেতেই ভালো লাগে না।
অহনাঃ আমারও ভালো লাগতো না তবে এখন ভালো লাগে তুমিও খাও ভালোলাগবে।

অবশেষে কি আর করার খেয়ে নিলাম।

এয়ারপোর্টে…………
কিছু সময় আগে এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালাম।আমি আর অহনা আপু দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম।হঠাৎ করে বড় আন্টি শান বলে চিল্লিয়ে উঠলো। আমি আর অহনা আপু সামনে তাকালাম।দেখলাম একজন সুদর্শন পুরুষ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে আমার চিনতে ভুল হলো না এত তো শান ভাইয়ার। আমি তার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। শান ভাইয়া কাছে আসতেই অহনা আপু, বড় আন্টি, আঙ্কেল তার দিকে ছুটে গেলো আমি সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম।আসলে উনাকে দেখে আমি যেনো কেমন ফ্রিজ হয়ে গেছি পা চলছে না।
_______________________________________
এদিকে শান তার মা, বাবা, আর বোনকে তার দিকে আসতে দেখে দ্রুত পায়ে তাদের দিকে এসে। মা বাবা কে সালাম করলো,শান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কান্না করছে।এটা দেখে শান তার মাকে জোরিয়ে ধরে বলল
শানঃমা কান্না করছো কেনো আমি তো এসে গেছি।
শানের মাঃ কত দিন তোকে দেখিনি বলতো। (কান্না করতে করতে)
শানের বাবাঃ আহ্ তুমিও না ছেলেটা সবে এলো আর তুমি কি কান্না কাটি আরম্ভ করলে

শানের মা শানকে ছেড়ে দিয়ে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

শানের মাঃ তুমি কি করে বুঝবে একজন মায়ের কত কষ্ট হয় সান্তান কাছে না থাকলে।
অহনাঃ মা এখন তো ভাইয়া এসে গেছে এখন please কান্না করো না
কথাটা বলে অহনা তার ভাইয়াকে জোরিয়ে ধরে বলল

অহনাঃ কেমন আছিস ভাইয়া
শানঃ ভালোরে ছুটকি,,, কত বড় হয়ে গেছিস তুই।
অহনাঃ তুমিও
বলেই দুজনে হেসে উঠলো

অহনাকে ছেড়ে দিয়ে শান আশেপাশে তাকাতে লাগলো।তার চোখ তো অন্যকাউকে খুঁজছে।মনে মনে ভাবতে লাগলো তাহলে কি ইশা আসেনি।কিন্তু তার জানা মতে এখানে ইশার ও থাকার কথা ।
হঠাৎ করে অহনা ইশা কথা মনে পড়তেই পাশে ফিরে ইশাকে দেখতে না পেয়ে তার মাকে বলে উঠলো
অহনাঃ মা ভাবি কোথায়
শানের মাঃ আসলে তো ইশা মা কোথায় গেলো (আশেপাশে তাকিয়ে)
কথাটা শুনে শানের মনে হলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার Heartbeat মিস করলো।

সবাই ব্যাস্থ হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। হঠাৎ করেই শানের চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে পরনে তার হালকা গোলাপি কালারের সালোয়ার খোলা চুল পিঠ অব্ধি । চুল গুলো হালকা বাতাসে উড়ছে। তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শানের আর চিনতে ভুল হলো না মেয়েটি কে। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইশার দিকে।

অহনা একটু পেছেন তাকিয়ে দেখলো ইশা দাড়ানো দেখে বলে উঠলো
অহনাঃ ওই তো ভাবি
সবাই ইশার দিকে তাকালো………..

হঠাৎ করে সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার কেমন জানি লাগছিলো তখনই বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ কি রে ইশা মা ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো এখানে আয়।
কিন্তু আমার যেতেই ইচ্ছা করছিলো না।শান ভাইয়াকে দেখলেই কেনো জানি আমার ভয় সাথে লজ্জা ও করছিলো। আর আমি খেয়াল করলাম শান ভাইয়া আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে।উনাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।তখনই অহনা আপু আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো।আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম ঠিক তখনই

Hey everyone!!!!!!!.
একটা মেয়ের গলা শুনতে পেয়ে আমি সামনে তাকালাম। দেখলাম শান ভাইয়ার পাশে একটা মেয়ে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখে শান ভাইয়া বলে উঠলেন
শানঃ মা,, বাবা,,, ও রুসা আমরা এক সাথে লন্ডনে পড়াশুনা করেছি।
রুসাঃ hi
আমরা সবাই মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।কারন মেয়েটা জিন্স আর আর T-shirt পড়া মুখ ভর্তি মেকাপ। পুরো মেকাপ
সুন্দরিদের মতন লাগছিলো।
বড় আন্টি আর আঙ্কেল এক সাথে বলে উঠলো ~~ভালো মা তুমি কেমন আছে~~~
রুসাঃ আমিও ভালো আছি

অহনা আপু আমার কানের কাছে এসে বলতে লাগলো।
অহনাঃদেখছো ভাবি কি পরিমান মেকাপ করেছে আর জামা কাপড়ের কি ছিড়ি বাবা গো

তখন শান ভাইয়া মেয়েটাকে বলে উঠলো
শানঃ কি রে এতো লেট কেনো করলি
রুসাঃ আর বলিস না dad এখুনি চট্টগ্রাম যেতে বলছে।
শানঃ মানে তুই না এ কয়েকদিন এখানে থাকবি
রুসাঃ হুম সেটা dad কে বললাম
শানঃ কি বলছে আঙ্কেল
রুসাঃ থাকতে বলেছ আচ্ছা এই মেয়ে দুটো কে তোর বোন

শানভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল দুটো না। অহনা আপুকে দেখিয়ে বলল
শানঃ ও আমার ছোট বোন আর ও
আর কিছু বলতে পারলো না শান তার আগেই রুসা বলে উঠলো
রুসাঃanyway শান মাথাটা ভিষন ব্যাথা করছে
শানঃ ok ok বাড়ি চল তারপর মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে
রুসঃYeah, let’s go.
এই বলে উনি আর মেয়েটা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো
আমার কেনো জানি না ভিষন খারাপ লাগলো। কারন শান ভাইয়া আমার সাথে একটি বারও কথা বললো না।

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম। আচ্ছা উনি কি আমার উপর রেগে আছে।গত দু বছর উনার সাথে যোগাযোগ করিনি তার জন্য। উনিও তো আমাকে কখনও জোর করেন নি।আর মেয়েটা ওনার কেমন বন্ধু।যেমন বন্ধু হোক তাতে আমার কি। কিন্তু কেমন বন্ধু????

এসব দাড়িয়ে দাড়িয়ে গালে হাত দিয়ে ভাব ছিলাম।তখন অহনা আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
অহনাঃ ভাবি কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো সবাই তো গাড়ির কাছে গেছে।
অহনা আপুর ধাক্কায় আমি ভাবনার যগত থেকে বেড়িয়ে এলাম আর বললাম
ইশাঃ ইস এসব আমি কি যাতা ভাবছি
অহনাঃ কি ভাবছিলে
আমি অহনা আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম।সে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তখন আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ কিছু না চলো

আমি আর অহনা আপু গাড়ির কাছে গিয়ে দেখলাম সবাই আমাদের জন্য দাড়িয়ে আছে।এরই মধ্যে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ শান তুই আর রুসা,ইশা তিনজনে এক গাড়িতে যা আমরা আর এক গাড়িতে আসছি।
আমি বড় আন্টির মুখ থেকে এমন কথা শুনে ফট করে বলে দিলাম
ইশাঃনা আমি তোমার সাথে যাবো বড় আন্টি

বলেই শান ভাইয়ার দিকে তাকালাম দেখলাম উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে বড় আন্টি দিকে তাকালাম।
বড় আন্টিঃ কেনো ইশা মা কোন সমস্যা
ইশাঃ না এমনি
তখনই শান ভাইয়াকে বলে উঠলো
শানঃ মা তোমরা যাও ইশা আমার সাথে আসছে
বড় আন্টিঃ ঠিকছে সাবধানে আসিস(হেসে দিয়ে)
শানঃ ওকে
তখনই রুসা মেয়েটা শান ভাইয়ার কাছে এসে বলতে লাগলো
রুসাঃ ও যখন এ গাড়িতে আসতে চাচ্ছে না তাহলে তুই কেনো ওকে জোর করছিস যেতে দেনা ওকে
শানঃ সেটা তুই বুঝবি না গাড়িত বস,
কথাটা বলেই শান ভাইয়া আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো।সেটা দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসলাম।

গাড়িতে আমরা কেউ তেমন কথা বললাম না।গাড়িটা শান ভাইয়াদের বাড়ির সামনে থামলো। সবাই আস্তে আস্তে নামলাম। তারপর যে যার রুমে চলে গেলাম fresh হতে। অহনা আপু আমার আগে fresh হয়ে নিচে গেলো।আমি ভাবলাম এক বারে গোসল করবো।আজ বড্ড গরম লাগছে।যেই ভাবা সেই কাজ গোসল করতে গেলাম।গোসল করে বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে তাওয়াল দিয়ে মাথার চুল মুছিলাম।হঠাৎ করেই আমি দরজা অটকানোর শব্দ পেলাম।পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে