ভয় পর্ব-৭+৮

0
786

ভয়
লেখিকা_বিন্দু_মালীনি
#পর্ব_৭_ও_৮

কিন্তু হঠাৎ একদিন ছেলেটা আমাকে সালাম দিয়ে নক দেয়।
আর আমি তার মেসেজ দেখেতো রীতিমত অবাক।

কারণ এই ছেলেকে আমি কোন দিন কোন মেয়ের সাথে কমেন্টেও তেমন কথা বলতে দেখিনি।
ওর লিখায় কমেন্ট করলেও শুধু ছোট্ট একটা রিপ্লাই দিয়ে আর কথা বাড়াতো না।
তারা আরো কয়েকটা রিপ্লাই দিলেও।
সেই ছেলেটা আমাকে নক দিয়েছে।

তাও আবার এত দিন যাবত লিস্টে আছে।
আর নক দিলো এত দিন পর।

আমি মেসেজ টা সীন করে উত্তর দিলাম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_কেমন আছেন?
_জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্‌।আপনি?
_জ্বী ভালো।
_এত রাত পর্যন্ত জেগে আছেন যে?
_ঘুম আসছেনা।
আপনিও তো জেগে আছেন।
_হুম,ঘুমিয়েছিলাম হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো।
_আচ্ছা, আবার ঘুমিয়ে পড়ুন।
_হুম,আপনিও ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে।
_আচ্ছা আল্লাহ্‌ হাফেজ।
_আল্লাহ্‌ হাফেজ।

সেদিনের মত আমাদের কথা ওখানেই শেষ।

এরপর আমাদের আর কথা হয়না।

দুই তিন দিন পর আবার আমি রাত জেগে ফেসবুকিং করছি।
নিউজফীড দেখছি।
ঘুম আসছিলোনা তাই।

দেখি আবার সে মেসেজ দিয়েছে সালাম দিয়ে।

আমি সালাম নিয়ে উত্তর দিলাম।

_আজো রাত জেগে আছেন?
_আজো সেইম প্র’বলেম,ঘুম আসছেনা।
_কেন ঘুম আসেনা শুনি?
_জানিনা।
আপনার কেন ঘুম আসেনা?
_আমার তো কত রকমের চিন্তা।
_কি চিন্তা?ওই সব না হয় পরে এক সময় বলবো।
_আচ্ছা ঠিক আছে।

এভাবে আমাদের টুকটাক অনেক কথাই হলো সেদিন।

তারপর দুজনই আমরা বিদায় নিয়ে ঘুমিয়ে যাই।

এখন মাঝে মাঝেও ও আমাকে ইনবক্সে নক দেয়।
হাই হ্যালো অতটুকুই হয়।

একদিন ও আমাকে বলে আমি আপনাকে নক দিলে আপনি তারপর কথা বলেন।
কখনো তো নিজে থেকে একদিনও নক দিলেন না।

এবার আপনি নক দিলে কথা হবে।
আর আপনি নক না দিলে কথা হবেনা।
এ কথা বলে ও বিদায় নিয়ে অফলাইন হলো।

সারাদিন যায়,সে আর মেসেজ দেয়না।
আমিও কেন যেন ওর মেসেজের অপেক্ষা করি এখন।

দেখি সে সত্যি সত্যি আর নক দেয়না।
অনলাইন দেখায়,সবুজ বাতি জ্বলে তবুও নক দেয়না।

কি আর করার,বাধ্য হয়ে আমিই নক দিলাম।

_আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_কেমন আছেন?
_সারাদিন পর জানতে মন চাইলো কেমন আছি না?
_আপনিও তো সারাদিন কোন খবর নেন নি।
_আমি তো বলেছিলামই আমি আপনার মেসেজের অপেক্ষায় থাকবো।
_খুব জেদি আপনি।
_হুম অনেক টা।

এভাবে চলতে থাকে আমাদের কথোপকথন।

আমরা কেউ কাউকে দেখিনি এখনো।

একদিন ও আমাকে জিজ্ঞেস করে,
_আচ্ছা আপনার কেমন ছেলে পছন্দ?
আরকি সবার নাকি একটা ভাবনা থাকে আমার প্রিয় মানুষ টা এমন হবে ওমন হবে।
আপনি কেমন চান?
আপনার কল্প পুরুষ টা কেমন?

_সত্যি বলবো?
_হুম বলুন।
_আমার কল্প রাজ্যে যার পদচারণ সে দেখতে উজ্জ্বল শ্যামলা।
তার চোখ দুটো একদম মায়ায় ভরা।
চোখের দিকে তাকালেই আমার ওই চোখে ডুবে যেতে ইচ্ছে করবে।

_আর?
_ওর চুল গুলো হবে অনেক সুন্দর।দেখলেই যেন আমার হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
_আর?
_ওর হাসিটা হবে এমন,
ওর হাসিটা যেন সরাসরি আমার কলিজায় আ’ঘা’ত করে।
_আর?
_ও চশমা পরবে।
_আর?
_সে খুব রোমান্টিক হবে।
_আর?
_আর আমাকে অনেক ভালবাসবে।

_ধু’র,চশমা টাও তো পরিনা।
কোন গুণ ই নেই আমার।

_হা হা হা।

_আচ্ছা,আমি কিছু জিজ্ঞেস করি?
_হুম করুন।
_আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ?
_আমার কোন মেয়েই পছন্দ না।
মেয়েদের প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।

কথা টা শুনে আমি মনে মনে বলি,
শালা!আমাকে কি তোর ছেলে মনে হয়?

আর নরমালি বলি,
_আচ্ছা,ঠিক আছে।বিয়ে করলে কোন ছেলেকেই কইরেন।
_ধুর,কি যে বলেন না।
বিয়েই করবোনা কোন দিন।বিয়ে আর বউ তে আমার এ্যালা”র্জি।

মনে মনে বলি,
আপনাকে কোন মেয়ে বিয়েও করবেনা।
যে আনরোমান্টিক আপনি।আপনার টাইমলাইন দেখলেই বোঝা যায়।
দুঃ”খ ভরা কান্না কাটি ময় লেখা।
কোন একটা রোমান্টিক স্ট্যাটাস নাই।
লেখা দেখলে মনে হয় ১০ ১২ টা ছ্যাঁ”কা খেয়ে বসে আছেন।

_এই মেয়ে,চুপ যে?
_না কিছুনা।

আরেকটা কথা বলি?
_হুম বলুন।
_কিছু মনে করবেন নাতো?
_না।
_আপনার আইডি নেইম টা আমার একটুও ভালো লাগেনা।
কি একটা নাম।
”পুরান পা”পী”

এটা কোন নাম হলো?
মেজাজ খারাপ হয় এমন নাম দেখলে।
এই নাম কেন দিয়েছেন আইডির?
আপনার কি কোন নাম নাই?

হা হা হা লিখে অফলাইন চলে যায়।

পরের দিন হঠাৎ করে দেখি ওর আইডি নেইম চেইঞ্জ।

আইডি নেইম পুরান পা”পী থেকে হয়েছে।
“রণ আহমেদ”

আমি তো মনে মনে বহুত খুশি আর সেই রকমের অবাক।

ছেলেটা আমার কথাতে নাম চেইঞ্জ করে দিয়েছে।
নিজের নাম দিয়েছে আইডিতে।

_এবার ঠিক আছে?
_হুম একদম।

তবে এখন ওই ব্ল্যাক Er”ror লিখা প্রোফাইল পিক টাও চেইঞ্জ করা লাগবে।

_উঁহু।ওটা চেইঞ্জ হবেনা।
_কেন হবেনা?
_এমনি।
_আচ্ছা,ওকে,ঠিক আছে।
করতে হবেনা চেইঞ্জ।
যদি আপনার কখনো ইচ্ছে হয় তবে করে নিয়েন চেইঞ্জ।
_হুম।

এখন আমাদের প্রতিদিনই কথা হয়।
রণ প্রবাসী।কাজের ফাঁকেফাঁকে আমাকে নক দেয়।
আমিও পড়াশোনার ফাঁকেফাঁকে ওকে নক দেই।আমাদের শুধু চ্যাটেই কথা হয়।
এখনো ফোনে কথা হয়নি।
আর দেখাদেখি তো দূরেই থাক।

একদিন হঠাৎ করে ও আমাকে নক দিয়ে বলে,

_আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
_আচ্ছা করুন।
_আমাদের শেষ কথা যদি আজই হয়!
রাগ করবেন কি!?

_উঁহু একদমই ই না।
কারণ কথার শুরুটা হয়েছে আপনার দ্বারা।শেষ টাও আপনার ইচ্ছাতেই হওয়া উচিৎ।কিন্তু কারণ টা জিজ্ঞেস করবো।

_আর একটা কথা শুনবো তারপর উত্তর গুলো সব একসাথে দেবো!
_বলুন
_যদি কারণ না বলে উধাও হয়ে যাই!
মনে একটা সং”শয় থেকে যাবে তাই না!?
_হুম।

_যাই হোক অনেক কথা বলে ফেলেছি আপনাকে!
বিরক্ত মনে করবেন না!
কোনো ভুল ত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করবেন!

মনে মনে বলি,শা”লা মায়া বাড়িয়ে মাঝ পথে এসে বিদায় নিচ্ছিস।
কে বলেছিলো আমার সাথে কথা বলতে?কে বলেছিলো আমাকে নক দিতে?
আমি কি নিজে থেকে নক দিয়েছিলাম?আমি কি নিজে নিজে কথা বলেছিলাম?

আর টাইপ করলাম,

_আমার চোখে কোন ভুল ধরা পড়েনি আপনার।

_সত্যি বলতে কি,
আর ফেবুতে আসার ইচ্ছে তেমনটা নেই!
তাই আপনাকে এমন ভাবে বলেছি!
মনে কিছু নিবেন না!
আর যদি আসি এই আইডিতে আর আসবো না!

মনে মনে বলি, একবার যে এই ফেসবুকের নে”শায় পড়েছে,সে কোন দিন এই নে”শা ছাড়তে পারবেনা।
তুমি যে অন্য আইডি নিয়ে ফেসবুকে এন্ট্রি নিবা তা আমার বোঝা শেষ।

আর টাইপ করলাম খুবই নরমাল ভাবে,

_হুম।

_অন্য কোনো আইডিতে আসলে অবশ্য আপনাকে ম্যাসেজ করবো!
আর যদি আগেই চিনতে পারেন!
ম্যাসেজ দিয়েন!
অপেক্ষায় থাকবো!

আমি জানি ও অন্য আইডি থেকে আমার সাথে এড আছে।কিন্তু কোনটা ওর আইডি সেটা আমি জানিনা।

_চুপ যে?কিছু বলবেন না?

_কি জানি,হয়তো চিনবো।নয়তো না।যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।আর,একেবারে হারাবেন না।যেহেতু ভা”র্চুয়াল লাইফে আপনার সাথেই আমার সব থেকে বেশি চ্যাট হয়েছে,সেহেতু মিস করাটাও স্বাভাবিক।
আর,আপনার লিখা গুলোও মিস করবো!

_অনেক লেখকের লেখার ভিতরে সামান্য একজন অনুভূতি প্রকাশকের
অব্যক্ত কথন গুলো ও একদিন পুরাতন হবে!
এটাই স্বাভাবিক!
আচ্ছা,এটাইকি আমাদের শেষ কথা?

_আমি তো আর আপনার অন্য আইডিটা চিনিনা।
তাই,আপনি নক না দেয়া পর্যন্ত তো আর কথা হচ্ছেনা।

_আচ্ছা গেলাম. আল্লাহ হাফেজ!
ভালো করে স্টাডি করবেন!
বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন!
ছোট বোন টাকে ভালো ভাবে খেয়াল করবেন!
দোয়া করি আপনার কল্পনার কল্প পুরুষকে খুঁজে পান সুখী হন!
শুভ রাত্র বাই আল্লাহ হাফেজ!
আর এসব লেখা লেখি,পড়া ছেড়ে দিয়ে!
নিজের পড়ার দিকে একটু মনোযোগ দেন!

_আচ্ছা।আর আপনিও এমন রাত জাগা বাদ দিয়ে ঠিক মত ঘুমান।

_তাহলে এটাই শেষ কথা সুখে থাকুন
কল্পনার মানুষ টাকে কল্পনায় রেখে!
কিংবা বাস্তবে রূপ দিয়ে সুখী হন!
আল্লাহ হাফেজ.!
যদি না চিনতে পারেন আমাকে
তিন দিন অতিবাহিত হলে
রাত 12 টার পর বাংলাদেশ টাইম
নিউজ ফিড থেকে বুঝে যাবেন কে আমি.!
ইচ্ছে হলে একটা ফোন দিয়েন!
অপেক্ষায় থাকবো!
আল্লাহ হাফেজ!

_ঠিক আছে যান,তবে আমি যদি আপনার আইডিটা চিনে আপনাকে খুঁজে নিতে পারি।তাহলে কিন্তু আমিও আপনার মত হারিয়ে যাবো।আর স্থান নিবো নতুন অন্য এক আইডিতে।
তখন আপনারো আমাকে খুঁজে পেতে হবে।
যদি খুঁজে না পান তাহলে আমাকে চিরদিনের মত হারাবেন।
অর্থাৎ আমি কখনোই আপনার সামনে আর আসবোনা।

আর যদি খুঁজে না পাই আপনাকে তাহলে কোন দিন হারাবোনা আপনার থেকে।
যদি কখনো এই আইডিটা ছেড়েও যাই।তবে নতুন আইডিতে এসে আপনাকে নক দিবো।

আল্লাহ্‌ হাফেজ।যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।

তারপর ও আইডিটা ডি এক্টিভ করে চলে যায়।
ও ভেবেছিলো,
ও যখন বলবে আমি ফেসবুক থেকে চলে যাবো,
তখন আমি ওকে যেতে বারণ করবো।
কিন্তু আমিও কম কি,
আমিও যেতে বারণ করিনি।
কারণ আমি জানি,
ও ঠিকই ব্যাক করবে আমার জীবনে।
কারণ মায়া খুব খারাপ জিনিষ।
যদি একবার কারো উপর পড়ে যায়,
তা আর কাটানো যায়না।

এ দিকে আমি ওকে খুঁজছি তো খুঁজেই যাচ্ছি।
কিন্তু পাচ্ছিনা,
ওকে খুঁজে পাওয়ার একটা কু’লুউ ই আছে আমার কাছে,
সেটা হলো- ওর লিখা।
আমি আমার আইডিতে থাকা সব আইডি ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
কিন্তু ওর মত লেখা কারো আইডিতে নেই।

যদিও একটা আইডিকে সন্দেহ হয়েছিলো।
তাই আমি সেই আইডির টাইমলাইনে একটা পোস্ট করে আসি।
কিন্তু সেখানে কোন কমেন্ট বা রিপ্লাই আসেনি।
ও হলে তো রিপ্লাই বা কমেন্ট করতো।সেই ভেবে আমি আবার পোস্ট টা ডিলিট করে দেই।

এভাবে দুই দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো।
আমি আর ওকে খুঁজে পাইনা।

এদিকে কিছুটা খারাপ লাগাও শুরু করেছে আমার।
তত ক্ষণে আমি বুঝতে সক্ষম হই,আমি ওর মায়ায় আটকে গেছি।

কিন্তু এ সম্পর্কটা কিসের তা আমার জানা নেই।
হয়তো কোন এক নামহীন সম্পর্ক।

দুদিন হয়ে যাবার পরও খুঁজে না পেয়ে আমি আমার আইডিতে রাতে একটা পোস্ট করি।

লিখি_

দেখুন,আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি,কিন্তু পাচ্ছিনা।
আচ্ছা যান,আপনিই উইনার।
আমিই ফেই’লার।
আমি হেরে গেছি আপনি জিতে গেছেন।
এবার তো সামনে আসুন।

এখন শুধু বাংলাদেশ টাইম রাত ১২ টা বাজার অপেক্ষা।
আমি অপেক্ষায় আছি,
যেখা যাক কি হয়।
আর এই নাম হীন সম্পর্ক টা কোথায় গিয়ে পৌছায়।
নাকি আজই হবে এর পরিসমাপ্তি।
ভয় হচ্ছে কিছুটা।বুকের ভেতর চিনচিনে ব্য’থা অনুভব করছি।

একটু পরেই অ’বসান ঘটতে চলেছে আমার অপেক্ষার।
নাকি চিরতরেই হারিয়ে ফেললাম মায়ায় পড়া মানুষটাকে।

#পর্ব_৮

আমার তিন দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ টাইম রাত ১২ টার সময় আমাকে ওর নিউ আইডি থেকে মেসেজ দেয়।
আমি তাড়াতাড়ি করে ওর প্রোফাইলে ঢুকি।
দেখি প্রোফাইলে কোন লেখা নেই।
আমি ওকে বললাম,

লেখা না থাকলে চিনবো কি করে হুম?
কোন লেখা দেখি নেই প্রোফাইলে।

ও রিপ্লাই দেয়,কই লেখা নেই?
এইতো কত লেখা।

আমি আবার প্রোফাইলে ঢুকি।
এখন দেখি লেখার অভাব নেই।
ওর টাইমলাইন জুড়ে কত লেখা।

যাতে আমি লেখা গুলো না পড়তে পারি,না দেখি সেই জন্য ও লিখা গুলো অনলি মি করে রেখেছিলো।

_আমার সাথে চা”লাকি করেন হুম?লিখা গুলো অনলি মি করে রেখেছিলেন।যাতে আমি না চিনি আপনাকে আপনার লিখা পড়ে।
এখন পাব্লিক করলেন।

_হা হা হা।
_হি হি হি।

_কেন এভাবে গা’য়েব হলেন শুনি?
_দেখলাম আমার জন্য মায়া আছে কিনা।
_কি দেখলেন?
_একটুও মায়া নেই।
_ওকে,খুব ভালো।

এভাবে চলতে থাকে আমাদের চ্যাটিং।

একদিন হঠাৎ করে রণ আমাকে মেসেজ দেয়,
_আমরা ভয়েজ কলে কথা বললে কোন সমস্যা আছে?
_উঁহু,নেই।
_কল দেই মেসেঞ্জারে?
_আচ্ছা।

রণ কল দেয় মেসেঞ্জারে।
আমি রিসিভ করে চুপ করে বসে আছি।
কেমন যেন অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।

_ও পাশ থেকে রণ কথা বলে উঠলো,
ওই ছে”মড়ি,কথা বলো না কেন?

_উহুম উহুম।জ্বী বলুন।
_কেমন আছো?
_জ্বী ভালো।আপনি?
_এইতো চলছে।
_কি করো?
_বসে আছি।আপনি?
_বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখি।
_আচ্ছা দেখুন।পরে আবার কথা হবে,বাই।

আমি লাইনটা কেটে দেই।
অনেক টা লজ্জা,সং”কোচ নিয়েই।

সেদিন প্রথম আমি রণর ভয়েজ শুনি।
সেদিন প্রথম কথা হয় আমাদের ফোনে।

তারপর আবার শুরু হয় মেসেজিং।

_সরি আপনাকে আমি তুমি করে বলে ফেলেছি।
_সমস্যা নেই।তুমিই সুন্দর।
_আচ্ছা।তাহলে তুমিও আমাকে তুমি বলবে,কেমন?
_দেখা যাক।

কিছু দিন পর হঠাৎ একদিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রণ আমাকে মেসেজে বলে।

_আমি তোমার ভয়েজ শুনবো।
_এখন?
_হুম এখন।
_পিচ্চি পাশেই ঘুমাচ্ছে (ছোট বোন)
শুনে ফেললে স”র্ব’না’শ হয়ে যাবে।
_কিচ্ছু হবেনা।
আমি এখন ভয়েজ শুনবো মানে শুনবোই।
নইলে সারা রাত জেগে থাকবো।ঘুমাবোনা।
_প্লিজ রণ,জেদ করেনা।দিনে কথা বলি?
_না এখনি।
_আমি পারবোনা।
_জাস্ট দুই মিনিট।
_উঁহু।
_তাহলে দেড় মিনিট।
_না।
_১মিনিট।
_না না না।
_ওকে ৩০ সেকেন্ড।
_ওকে বাবা ওকে,দাও ফোন।

রণ ফোন দেয়,আর আমি এত রাতে বারান্দায় গিয়ে ফোন টা রিসিভ করে হ্যালো বলি।

তারপর বান্দা শান্ত হয়।

_হয়েছে ভয়েজ শোনা?
_হুম।
_এবার রাখি?
_হুম।

লাইন কেটে দেই।

মেসেজে লিখি,
_এত জেদ?
_হুম অনেক।
_আমি এং”ড়ি ইমুজি দিয়ে বলি,ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।

এর মাঝে ও একদিন আমাকে বলে,তুমি আমার বন্ধু হবে?

_হতে পারি,তবে কোন দিন আমার প্রেমে পড়তে পারবেন না।শ’র্তে রাজি?
_হে হে হে, বিয়ে এবং বউতে আমার এ্যালা”র্জি।আর প্রেম ভালবাসা মানুষ বিয়ে করার জন্যই করে সো আমার দ্বারা এসব সম্ভব না।ভয় নেই।
ভয় পেওনা।বরং নিজেকে কন্ট্রোল করো।
নিজেই যেন আবার আমার প্রেমে পড়ে না যাও।
_হুহ,আমার বয়েই গেছে।

মনে মনে বললাম,
আহ হা,বউতে এ্যালা”র্জি না?দেখবো চাঁ”ন্দু কোন দিন কাউকে ভালবাসো কিনা বিয়ে করো কিনা।
যেহেতু বন্ধু হয়েছি,সেহেতু সম্পর্ক টাতো সারাজীবন থাকবেই।
তখন দেখে নিবো।বিয়ে করো কি করোনা।

চলছে আমাদের বন্ধুত্ব।

দুজন দুজনের খবর নেই।
আমাদের মেসেজিং টাই বেশি হয়।
ফোনে কথা খুবই কম হয়।

আমরা দুজন একদমই ভিন্ন প্রকৃতির।
ও বি’ষাদ প্রেমী।
আর আমি লাভিং টাইপ।
ও আনরোমান্টিক,
আমি রোমান্টিক।
ওর পছন্দ নীল,
আমার পছন্দ হলুদ।
আমার বৃষ্টি প্রিয়,
ওর প্রিয় আকাশ।
কিন্তু একটা দিকে খুব মিল আমাদের,
ও ভীষণ লাজুক,আর আমিও ভীষণ লজ্জাবতী।

একদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো,
আমি ওকে বললাম,
রণ রণ,বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে.

এই কথা টুকু কথা আমি লিখেছিলাম,
আর সে শুরু করে দিয়েছে বৃষ্টি আর আমাকে নিয়ে কবিতা লিখা।
(আকাশ থেকে পড়ে যে বৃষ্টি ওই বৃষ্টি,
কোন মেয়ে বৃষ্টি না কিন্তু)
নইলে কি আমি তারে আস্ত রাখতাম।

_চলো না আজ সব অভিমান ভুলে বৃষ্টি জলে স্নান করি।
সব অভিমান ভুলে এসো তব মোর হৃদয়ে।
ছুঁয়ে দিও আলতো করে নরম দুহাতের স্পর্শে।
জানো জানো কি?
ইচ্ছেরা আজ মেলেছে ডানা,পাড়ি দিবে অথৈ,সাগর।
ডুব সাগরে,মা”তলামোতে,নিশি হবে ভোর।

এই যে মেয়ে,
এখনো কি তোমার,অভিমান জমা আ’দ্র”সী’তানে?

ডাকছি আমি নিশীর ডা”হুক,দাও জানালা খুলে।
এই জানো,
মন বে”চারা,ছ”ন্নছাড়া,উথাল পাথাল ঢেউ।
তোমার মন যমুনায় ঘাটে বাধা আমার ভাঙা নাও।

আরো অনেক বড় কবিতা লিখে পাঠায় আমাকে ও।

লিখা শেষে সে আমাকে বলে,চলো যাই ভিজে আসি বৃষ্টিতে,করে আসি বৃষ্টি স্নান।

রে”গেমেগে বললাম,তোর কবিতা লিখতে লিখতে বৃষ্টি চলেই গেছে করে অভিমান।

_হা হা হা,ভালোই হয়েছে।

সম্পর্কটা দিন দিন গভীর হচ্ছে,
আমি ওর মায়ায় আটকা পড়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

এখন অনলাইনে আসলেই ওর মেসেজের অপেক্ষায় ইনবক্সে চেয়ে থাকি।
ওর আইডির সবুজ বাতি জ্বলে কিনা চেয়ে থাকি।

ওর সাথে কথা না হলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
কিছুই ভাবতে পারিনা আমি ওকে ছাড়া।
ও মেসেজ দিতে লেইট করলে রেগে মেগে আ”গুন হয়ে যাই।

কখনো তো কারো জন্য এমন ফীল হয়নি আমার।তবে ওর জন্য কেন এমন ফীল হচ্ছে?
না ওকে দেখেছি,না কখনো হাত টা ছুঁয়ে দেখেছি।ও কোথায় আর আমি কোথায়।
তবুও কেন ওকে এত আপন মনে হয়?
তবে কি আমি ওকে…
না না, তা কেন হবে?
ও আমার বন্ধু,তাই হয়তো এমন টা লাগে।
এর থেকে আর বেশি কিছু না।

ইদানীং ওকে আমি কিছুটা এভ”য়েড করে চলি।
কারণ আমি অলরেডি ওর মায়ায় জড়িয়ে গেছি।আরেকটু মায়া বাড়ালে আমার কপালে শ”নিই আছে।

ও বুঝতে পারে আমি যে ওকে এভ”য়েড করে চলছি।

_তুমি কি আমাকে এভ”য়েড করে যাচ্ছো?
_কই নাতো।
_চিন্তা করোনা,বিয়ে বউ ভালবাসায় আমার এ্যালা”র্জি।
এসবে আমি জড়াবোনা।ভয় নেই তোমার।
এভয়েড করতে হবেনা আমাকে।
তুমি নিশ্চিন্তে আমার সাথে কথা বলতে পারো।

মনে মনে বলি,ভয় তো আমার আমাকে নিয়ে কখন কি হয়ে যায়।

_সমস্যা নেই।আমি জানিতো তুমি অন্য রকম।
আসলে আমি একটু বিজি থাকি ইদানীং।তাই অনলাইনে তেমন আসা হয়না।
_হা হা হা,ঠিক আছে।

অনেক দিন হয় আমাদের ফোনে কথা হয়না তাইনা?
_হুম।
_আজ আমার ছুটি।
ফোন দেই?
_আচ্ছা।

রণ আমাকে ফোন দেয়।

রিসিভ করে সকাল থেকে দুপুর অবধি আমরা দুজন ফোনে কথা বলি।

একটা সময় আর কি বলবো কোন কথাই পাইনা,
তারপর ও আমাকে বলে,
_তারপর বলো।
_তুমি বলো,
_না তুমি।
_না তুমি।
_বলোনা,
_বলোনা,
_তুমি বলো,
_তুমি বলো।

আমি দু”ষ্টুমি করে ওর বলা কথা গুলো রিপিট করে বলছিলাম।
ও যা বলছিলো আমিও তাই বলছিলাম।

_কি হলো?
_কি হলো?
_এমন করছো কেন?
_এমন করছো কেন?
_বিন্দুউউ।
_রণঅঅ।
_কি?
_কি?
_উফফ।
_উফফ।
_আমি রে’গে যাবো কিন্তু।
_আমি রে’গে যাবো কিন্তু।
_আমাকে ভেং’চি কাটা হচ্ছে না?
_আমাকে ভেং”চি কাটা হচ্ছে না?
_দাঁড়াও এবার।
_দাঁড়াও এবার।
_কি করবে শুনি?
_কি করবে শুনি?
_শোনো,
_শোনো,
_হুম বলো।
_হুম বলো।
_ভালবাসি।
_ভালবাসি। কিইইই?
_হা হা হা,করো আরো রিপিট।
_হা হা হা,করো আরো রিপিট।
_উম্মম্মাহ।
_(আমি চুপ)
_কি হলো?দাও পাপ্পি।
_পঁ”চা কোথাকার।
রাখলাম আমি।
_উঁহু।শোনো তো,
_হুম শুনছি।(লজ্জা পাচ্ছি খুব)
_ভালবাসি।
_আই লাভ ইউ টু।
_থেকে যাওনা আমার জীবনে।
_উঁহু,আপনার তো বউতে এ্যালা”র্জি।সো নো নো নো নো।
রাখছি।

আমি ফোন টা কেটে দেই।
আর লাইন কাটার সাথে সাথে মোবাইল টা বুকে জড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে বলি,
রণঅঅঅঅঅ ভালবাসিইইইইইইইই।

কিছু ক্ষণ পর দেখি রণর প্রোফাইলে Err”or লিখা পিক টা আর নেই,
ও পিক চেইঞ্জ করেছে,
আর নিজের পিক আপলোড করেছে।
আর ওর পিক দেখার সাথে সাথে আমার বুকের ভেতর কত ডিগ্রী এঙ্গেলে যে ক”ম্পন অনুভূত হচ্ছিলো,
তা আমার নিজেরও জানা নেই।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে