ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০২

0
967

#ভালোবাসি_ভালোবাসা ❤️

#Written_by_Liza_Moni

#part_2

____________
আমি হিয়া কে বিয়ে করতে চাই।
.
সাদাফের কথাটা শুনে রিয়ান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ভ্রু কুঁচকে জিগ্গেস করে
তোর না অনিমার সাথে বিয়ে ঠিক করা আছে?
.
বিয়ে ঠিক করা আছে, বিয়ে তো আর হয়নি তাই না?
.
তোদের না রিলেশন চলছে?আর সব থেকে বড় কথা তোর পরিবার মানবে তো?
.
দুই মাসের রিলেশন,এতে কী হবে? যেখানে আমি নিজে বিয়ে করতে চাচ্ছি সেখানে আমার পরিবার না মেনে যাবে কোথায়?
.
তাহলে অনিমার কী হবে?
.
দেখ রিয়ান, তুই যে ভাবে বলছিস অনিমার কী হবে?অনিমার সাথে তো আর হিয়ার মতো হয় নি। আমাদের বিয়ের কথা বলা হয়েছে শুধু। বিয়ে হয়ে যায় নি।আর আমাদের বিয়ের কথা শুধু আমার আর অনিমার পরিবার আর তুই জানিস।আর হিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা পুরো সমাজ জানে।
.
রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আয় আমার সাথে।

রিয়ান সাদাফ কে নিয়ে ড্রইং রুমে যায়।মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন সোফায় বসে এখনো কেঁদে যাচ্ছে।
.
মা সাদাফ হিয়া কে বিয়ে করতে চায়।
.
রিয়ানের কথা শুনে সবাই ওদের দিকে তাকায়।
মিসেস সাবিনা কী বলবেন বুঝতে পারছেন না।এই চার বছরে সাদাফ কে তিনি কোনো খারাপ কাজ করতে দেখেননি। সাদাফ তার কাছে ভালো ভদ্র একটা ছেলে।
সাদাফ বর্তমানে একটা কোম্পানিতে মেনেজার হিসেবে আছে।
তিনি সাদাফের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন আমার মেয়েটা অনেক ভালো।অন্য সব মেয়েরা যেমন একটার সাথে ব্রেকআপ হলে আরেকটার সাথে প্রেম করে আমার মেয়েটা ওমন মেয়ে না। কখনো ওর নামে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দিতে পারেনি।ওর মাথায় সব সময় একটা কথা চিন্তা করেই ও পদক্ষেপ নিত। ওর তো বাবা নেই যে বিপদে তার ঢাল হয়ে দাঁড়াবে।
যদি কোনো বদনাম বের হয়ে যায় এই ভয়টা ওর সব সময় ছিল, আছে,থাকবে। আমি মা হয়ে বলছি আমার মেয়ে অপায়া অলক্ষী কোনোটাই না।
তুমি যখন নিজে বিয়ে করতে চাইছো আমি তোমায় বাঁধ সাধবো না। শুধু একটাই চাওয়া থাকবে তোমার কাছে আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিও না। তুমি হিয়ার সাথে কথা বলে এসো। ওর কথা ও শুনা দরকার যাও।
.
সাদাফ কিছু বললো না।হিয়ার রুমে চলে গেলো।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হিয়া।সাদাফ রুমে গিয়ে দেখে হিয়া নেই।ব্যালকনির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গলা খাঁকারি দিল।
হিয়া আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো কিছু কী বলবেন সাদাফ ভাই?
.
তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
.
হুম বলুন।
.
হিয়া আমি জানি তুমি আমানকে অনেক বেশি ভালোবাসো।

হিয়া সাদাফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, মনে মনে বললো না সাদাফ ভাই আপনি জানেন না।
.
এই ঘটনার পর হয়তো তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। অবশ্য কষ্ট হওয়ারি কথা। আমার নিজেরও অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের থেকে সর্বত্তম পরিকল্পনা কারি।
.
শান্তনা দিতে আসছেন। বিপদের সময় শান্তনা জিনিসটাকে অনেক বিরক্ত লাগে জানেন তো?
.
আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই হিয়া।
.
সাদাফের কথায় স্তব্দ হয়ে যায় হিয়া।
কী বললো সাদাফ ভাই?আমায় বিয়ে করতে চান,কথাটা শুনার জন্য আমি অনেক আগে থেকেই আকুল হয়ে ছিলাম। কিন্তু এই ভাবে না। এমন একটা সময়ে এই কথাটা ঠিক হজম হলো না হিয়ার।
.
Will you marry me hiya?
.
শান্ত দৃষ্টিতে হিয়া সাদাফের দিকে তাকায়।
শান্ত কন্ঠে বলে,
দয়া দেখাতে আসছেন সাদাফ ভাই?
.
হিয়ার কথায় অসস্তি হচ্ছে সাদাফের। সেতো দয়া দেখানোর জন্য এই প্রস্তাব দেয়নি।এই অসময়ে এই পরিবার,হিয়ার পাশে থাকতে চেয়েছে। এই পরিবারটাকে সে নিজের পরিবারি ভাবতো।সে কখনো চায়না এই পরিবারের অসম্মান হোক। বিশেষ করে হিয়ার অসম্মান হোক সে চায় নি।
.
কী হলো সাদাফ ভাই কিছু বলছেন না যে?
.
হিয়ার কথায় সাদাফের ভাবনায় ছেদ পড়ল।
.
আমি দয়া দেখানোর মানসিকতা নিয়ে তোমায় এই প্রস্তাব দিইনি হিয়া।আর যদিও বা এটা দয়াই হয় তাহলে ভাবো তোমার কপাল ভালো যে এতো কিছুর পরেও কোনো একজন তোমায় বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।
.
এই অপায়া অলক্ষী মেয়েকে আপনার পরিবারের লোকজন মানবে তো সাদাফ ভাই?
.
পরিবারকে মানানো আমার কাজ।
.
আর যদি না মানে?
.
তাহলে আমরা আলাদা করে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবো টুনা টুনির মতো।
.
বাহ্ কী সহজেই উত্তর দিয়ে দিলেন। আপনি আপনার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। আপনার বড় বোনের অনেক আদরের একটা মাত্র ছোট ভাই আপনি।কী সুন্দর করে বলে দিলেন আপনার ফ্যামেলি না মানলে আপনি আমাকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকবেন। পারবেন আপনি আপনার ফ্যামেলিকে ছাড়া থাকতে? মনে পরবে না তাদের কথা যারা আপনাকে ছোট থেকে বড় করেছেন।
.
আসলে আমি এভাবে,,,
সাদাফ কে থামিয়ে দিয়ে হিয়া বললো,
.
শুনেন সাদাফ আপনি আপনার ফ্যামেলিকে রাজি করাতে পারলে এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
.
সাদাফ আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।ড্রইং রুমে এসে বলে,,
.
আন্টি,রিয়ান আমি বাড়িতে যাচ্ছি।
.
সেকি বাবা এতো রাতে বাড়িতে কেন যাচ্ছো হিয়া কী কিছু বলেছে?
.
না আন্টি কী বলবে?যত দিন মা বাবা কে এই বিয়েতে রাজি করাতে পারছি ততো দিন এই বাড়িতে আর আসবো না।আসছি আন্টি দোয়া করিয়েন।
সাদাফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না।বাইক নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
.
হিয়া ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাদাফের চলে যাওয়া দেখছে।মেনর ভেতরে চিৎকার করে বলছে
আমি আপনাকে এমন করে চাইনি সাদাফ ভাই। আমি তো আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম খুব সুন্দর কোনো এক দিনে আপনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিবেন। যেখানে অপায়া অলক্ষী মেয়ে নামের সাথে তমকা লাগানো থাকবে না। সময়টা খুব ভালো হবে।এমন একটি দিনের কথা তো ভুলেও চিন্তা করিনি সাদাফ ভাই।
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় হিয়া।
.
তোর মনের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমি তা বুঝছি মা।এই ভাবে মন পুড়ে ফেলিস না মা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা রাখ তিনি সব ঠিক করে দিবেন। অনেক রাত হয়েছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
.
সিফাত ভাইয়ের কী খবর জানো আম্মু?
.
একটু আগে রিয়ান বললো সিফাতের জ্ঞান ফিরেছে, আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।
.
জায়ান ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে খুব।
.
একদিন সবাইকেই যেতে হবে রে মা।এই সব তো একটা উছিলা মাত্র।আর মন খারাপ করিস না। নিজেকে শক্ত করতে হবে তো। জীবন তো এখন ও বাকি আছে।
.
আজ আমার পাশে ঘুমাবে আম্মু।
.
হুম।আগে ভাত খেয়ে নে।
.
আমার গলা দিয়ে কিচ্ছু নামবে না আম্মু। জোর করি ও না।
বলে হিয়া বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। মিসেস সাবিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হিয়া কে জড়িয়ে ধরলেন বুকের মাঝে।
একটা আশ্রয় পেয়ে হিয়ার চোখের পানি যেন বাঁধ মানছে না। হিয়া কাঁদছে বুঝতে পারলেন মিসেস সাবিনা। বাঁধ সাধলেন না। থাক কাদুক। কেঁদে মনটা হালকা করুক।
.
.
রাত তখন ১টা ৫৫ মিনিট।সাদাফ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপ দেয়।প্রায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর সাদাফের আব্বু সোহেল আহমেদ দরজা খুলে দেন। বাহিরে সাদাফ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিগ্গেস করেন
.
এত রাতে ফিরে এলি যে,আজ তো তোর রিয়ানদের বাসায় থাকার কথা।
.
আমি এখন অনেক ক্লান্ত আব্বু। সব কথা সকালে বলি?
.
আচ্ছা যা।
.
সাদাফ আর কথা বাড়ালো না। নিজের রুমে চলে গেল। কাভার্ড থেকে ট্রাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াস রুমে চলে যায়।
গোসল করে বের হয়ে বিছানায় শুয়ে বলে আগে একটা ঘুম দি কালকে সকালেই মিশন শুরু করে দিবো।
.
.
ফজরের আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় হিয়ার। উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে মাকে ডাক দেয়। মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে চলে যান নাস্তা বানাতে।
চারদিকে সবে আলো ছড়াচ্ছে। হিয়া খালি পায়ে হাঁটতে বের হলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছে সে।
ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হলে মনে এক আলাদা শান্তি লাগে।
হঠাৎ করে হিয়ার গায়ে একটা কাগজের দলা পড়ে।
আশে পাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। কাগজটা নিচ থেকে তুলে ভাঁজ খুললো হিয়া।
সেখানে লিখা,,
.
কী ভাবছো আমানদের গাড়ি এক্সিডেন্টলি ভাবে এক্সিডেন্ট করছে? বোকা মেয়ে। তোমার লাইফ হেল করে দিবো আমি।
.
লেখাটা পড়ে হিয়ার শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। আমার সাথে কার কী শত্রুতা?
কে এই মানুষ?
.
.
চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে