ভালোবাসি প্রিয় পর্ব-১০+১১

0
719

#ভালোবাসি_প্রিয়

পর্ব:১০
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

সুন্নত শুধু তুমি একা আদায় করবে কেন? আমি ও একটু করি ।এ কথা বলেই রাজ আমাকে আবার ও ঝর্নার নিচে দাড় করিয়ে দিয়ে ফট করে কপালে একটা চু*মু দিয়ে বলল #ভালোবাসি_প্রিয়।

আমি যেন পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছি।রাজ যে এমন একটা কাজ করবে আমি কখনো ভাবতে ও পারিনি। ইচ্ছে করছে কয়েক টা কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।প্রায় দশ মিনিট ধরে দুইজনে ভিজছি কারো মুখে কোন কথা নেই। নিরবতা ভে*ঙ্গে রাজ বলে উঠলো, অনেক হয়েছে সুন্নত আদায় করা। এখন তাড়াতাড়ি চেন্জ করে নাও।না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

আমি কোন নড়াচড়া না করে ঠাঁই সেইখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে রাজ নিজেই টাওয়াল দিয়ে আমার মাথা মুছে দিতে শুরু করলো।
একি! কুয়াশা তোমার চুল এতো ছোট কেন?

আমার বড় চুল ভালো লাগে না।তাই চুল একটু বড় হলেই পার্লার থেকে কে*টে ছোট ছোট করে আসি।

মেয়েদের বড় চুলেই বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া মেয়েদের চুল মুন্ডন করা বা কে*টে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। আবার এতো বড় রাখা উচিত নয় যে, গোছলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো।সেমতে কোমরের নিচের অংশ কে*টে ফেলা জায়েজ আছে।অবশ্য না কা*ট*লে ও কোনো সমস্যা নেই‌।[তিরমিজি শরিফ ১/১৮২, মুসলিম শরিফ ১/১৪৮]

সময় বহমান।সময় তার আপন গতিতে ব‌ইতে থাকে। হাসি ঠাট্টা মজা খু*নসুটিতে কে*টে গেল তিন দিন। ফুরিয়ে গেল সময়। ঘনিয়ে এলো বিদায় বেলা। মেয়ে জামাইয়ের বিদায় উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের রান্না করা হয়েছে যার ঘ্রাণে রুমে থাকা দুঃষ্কর হয়ে পড়েছে। “শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি” এই কথাটা এতো দিন যাবৎ শুনে আসছি কিন্তু বিয়ের পরে রাজকে শ্বশুর বাড়িতে আদর আপ্যায়ন করা দেখে বুঝতে পারলাম “শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি” কথাটার মানে। খাবার টেবিলে বেচারা রাজের মুখ টা দেখার মতো হয়েছে ।প্লেটে মাছ ,মাংস চিংড়ি, ডিম দিয়ে ভর্তি রয়েছে,যা বেচারা সারাদিন খেয়ে ও শেষ করতে পারবে না।এর‌ই মধ্যে বাবা আবার বলে উঠলো রেহেনা, জামাইকে আর একটু গরুর গোশত দাও।জামাই আদরে যেন কোন ত্রুটি না থাকে।

না!না! বাবা‌। আমার আর কিছুই লাগবে না। আমি তো এগুলো খেয়েই শেষ করতে পারছি না।

লাগবে না বললে তো হবে না বাবা‌।

রাজ কোনো উপায় না পেয়ে আমাকে ইশারা দিল কিছু বলার জন্য। আমি ও সুযোগ টা কাজে লাগালাম। আসলে বাবা উনার খুব পাঙ্গাশ মাছ পছন্দ , তুমি বরং পাঙ্গাশ মাছের মাথাটা উনাকে দাও। বলার সাথে সাথেই বাবা রাজের প্লেটে পাঙ্গাশ মাছের মাথা টা দিয়ে দিল। আমি ও রাজকে ইশারা করে বোঝালাম এবার দেখ কেমন লাগে এই কুয়াশার সাথে পাঙ্গা নেওয়া?

রাজ আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,দেখ কুয়াশা আমর জন্য তোমার মনে ভালোবাসার অভাব রয়েছে। আমার দাদি বলত , স্বামীর খাওয়া প্লেটে খেলে নাকি স্বামীর প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। আমার দাদু আর দাদি কে দেখতাম সবসময় এক প্লেটে খেতে।তাই এখন তোমার‌ ও উচিত আমার প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে এই খাবার টুকু খাওয়া। রাজের সাথে বাবা ও তাল মিলিয়ে বললো হ্যাঁ রে মা রাজ ঠিকই বলেছে, আমি আর তোর আম্মা ও এক প্লেটে খেতাম। অতঃপর ব্যাটা রাজ আমাকেই আমার জালে ফাঁসিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে রুমে চলে গেল।

খাবার শেষ করে রুমে এসে দেখি রাজের ব্যাগপত্র গোছানো হয়ে গিয়েছে। আমি ও তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিলাম।সাথে করে ব‌ই , সাজেশন নিয়ে নিলাম। বিদায় বেলা আম্মা ,বাবা শীতল কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।সবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম আমার আপন ঠিকানায়। বাসায় ফিরে কলিং বেল দিতেই আম্মা দরজা খুলে দিল।

কেমন আছেন আম্মা?

বাড়ির লক্ষী ছাড়া ভালো থাকি কি করে? এতো দিন বাড়িটা একদম ফাঁকা ফাঁকা ছিল, এখন তুমি চলে এসেছ, আবার আমার বাড়িটা পরিপূর্ণ হবে।

কে*টে গেছে এক সপ্তাহ।এই এক সপ্তাহে রাজের সাথে আমার সম্পর্কের কোন উন্নতি হয়নি।তবে আমি বেশ বুঝতে পারছি আমি রাজের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি।
রাতে ডিনার শেষ করে ব‌ইখাতা নিয়ে পড়তে বসেছি। পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। হুট করেই পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত হয়ে যেতে পারে। এইবার ফেল নিশ্চিত।আর বিয়ের পরে ফেল করা মানে খুব‌ই লজ্জাজনক ব্যাপার।
প্রায় এক ঘন্টা ধরে” নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুতকরণ অধ্যায়ের ম্যাথ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু কোন মতেই সলভ করতে পারছি না।অন্য অধ্যায়ের ম্যাথ মোটামুটি পারলেও এই নগদ প্রবাহ বিবরণী আমার মাথায় কিছুতেই নিতে পারে না। অথচ আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের কাছে নাকি এই অধ্যায় টা পানির মতো সহজ।তারা ১০০% নিশ্চিত পরীক্ষায় নগদ প্রবাহ বিবরণী আসলে চোখ বুজে ১০ শে ১০ পেয়ে যাবে। অথচ এই ম্যাথের আগা মাথা কিছুই বুঝি না আমি। ইউটিউব এ সার্চ দিয়ে অনেক ভিডিও দেখলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। ইশ্ এখন যদি শায়ান ভাইয়ার ফোন নাম্বার টা থাকত,তাহলে ভাইয়ার থেকে বুঝে নিতে পারতাম ম্যাথ টা। তড়িঘড়ি করে জামিয়াকে কল দিলাম, কিন্তু রিসিভ হলো না।আসলে যখন বেশি প্রয়োজন থাকে তখন‌ই ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি টা কল রিসিভ করে না।৩য় বারে জামিয়া কল রিসিভ করল, হ্যাঁ কুয়াশা বল।

দোস্ত শায়ান ভাইয়ার নাম্বার টা একটু দিবি?আসলে আমি নগদ প্রবাহ বিবরণী বুঝতে পারছি না।আমরা যেহেতু ভাইয়ার কাছে প্রাইভেট পড়ব , তাহলে এখন নিশ্চয়ই ভাইয়ার কাছে এই টপিক টা জানতে চাইলে বুঝিয়ে দিবে।

সরি দোস্ত!শায়ান ভাইয়া কোন মেয়েকেই তার নাম্বার দেয় না। এমনকি আপুর কাছে ও শায়ান ভাইয়ার নাম্বার নেয়।

আচ্ছা রাখছি তাহলে বাই।

এই শায়ান ভাইয়া টা কে কুয়াশা?

সেইটা আপনার না জানলেও চলবে।

দেখ কুয়াশা! তুমি আমার স্ত্রী। তাই আমার সামনে তুমি অন্য পুরুষের গুনগান গাইবে এইটা তো আমি মানতে পারব না।

শায়ান ভাইয়া একজন প্রাইভেট টিউটর। অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির নিচ্ছে।

তো পেলে শায়ান ভাইয়ার ফোন নাম্বার?

না।এতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট নিশ্চয় ১০_১২ টা গার্লফ্রেন্ড তার জন্য বরাদ্দ রয়েছে।তাই তো গার্লফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে তার ফোন নাম্বার দেয় না।

সব পুরুষ কিন্তু ১০_১২ টা নারী তে আসক্ত থাকে না কুয়াশা। কিছু পুরুষ এক নারীতেই আসক্ত থাকে। তুমি রুমের একি অবস্থা করেছ কুয়াশা? পুরো রুম সাদা কাগজের টুকরো ছিঁ*ড়ে ভর্তি করে ফেলেছ?

আপনি মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে কিভাবে বুঝবেন ম্যাথ বুঝতে না পারার কষ্ট?ম্যাথ করতে গেছিলাম কিন্তু পারি নি ,তাই পেজগুলো ছিঁ*ড়ে ফেলে দিয়েছি।

“ক‌ই ম্যাথ টা আমাকে দেখাও দেখি, আমি সলভ করে দিচ্ছি” । দেখি পারি কি না?

সিরিয়াসলি! আপনি মজা করছেন আমার সাথে? আমি সেই মাধ্যমিক থেকে কমার্সের ছাত্রী। জন্ম থেকে কমার্সের ছাত্রী হয়ে আমি পারছি না সলভ করতে আর আপনি কি না মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে আমার ম্যাথ সলভ করে দিবেন।হাও ফানি!

কিন্তু রাজ আমাকে অবাক করে দিয়ে…

চলবে ইনশাআল্লাহ….

#ভালোবাসি_প্রিয় (১১)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

কিন্তু রাজ আমাকে অবাক করে দিয়ে বলতে শুরু করলেন,”নগদ প্রবাহ বিবরণী” তিনটা ধাপে শেষ করতে হয়।যথা:১.পরিচালনা কার্যভিত্তিক ২.বিনিয়োগ কার্যভিত্তিক ৩. অর্থায়ন কার্যভিত্তিক।
১.পরিচালনা কার্যভিত্তিক এ প্রথমে আসে নীট আয়। এরপর সংযুক্ত করতে হয় অবচয়।অবচয় সবসময় যোগ হয়।সম্পদ বৃদ্ধি পেলে বিয়োগ,হ্রাস পেলে যোগ।দায় বৃদ্ধি পেলে যোগ,কমে গেলে বিয়োগ।লাভ হলে বিয়োগ,লস হলে যোগ।খরচ যোগ করতে হয়।

২.বিনিয়োগ কার্যভিত্তিক এ আসে দুইটা।
স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় করলে বিয়োগ ,আর বিক্রয় করলে যোগ‌।
৩. অর্থায়ন কার্যভিত্তিক এ নগদ লভ্যাংশ বিয়োগ হয়।
সাধারণ শেয়ার ইস্যু বা বিক্রয় করলে যোগ হয়।ঋনপত্র ইস্যু করলে যোগ। শেয়ার ক্রয় করলে বিয়োগ, বিক্রয় করলে যোগ‌।ঋনপত্র প্রদান করলে বিয়োগ।ব্যাস এগুলোই আসে নগদ প্রবাহ বিবরণী তে।আর কিছু সমন্বয় যোগ করতে হয়। এরপর রাজ বোর্ড থেকে কয়েক টা ম্যাথ সলভ করে বুঝিয়ে দিল। দুই থেকে তিন টা ম্যাথ সলভ করার পর বুঝতে পারলাম নগদ প্রবাহ বিবরণী ম্যাথ টা আসলেই ১০শে ১০ পাওয়ার মতো একটা ম্যাথ। আমি খুশি যে রাজকে ধন্যবাদ ‌দিতে যাবো তার আগেই রাজ গাল এগিয়ে দিয়ে বলল, ধন্যবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি চাইলে চু*মু
দিতে পার। তুমি সুন্নত আদায় করবে আর আমি ও আমার পাওনা পেয়ে যাবো?

আপনি ঠিক কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না?

নিজেকে হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী দাবি কর অথচ দেওয়া নেওয়া বুঝো না? আমি যে দুই ঘণ্টা তোমার পিছনে ব্যয় করলাম। তুমি আমার থেকে জ্ঞান নিলে। এখন তোমার কি উচিত নয় আমার পাওনা পরিশোধ করার?

মোটেই না! আমি আপনার এমন লজিক মানতে পারব না। আপনি কি ভেবেছেন হ্যাঁ। আমার একটা ম্যাথ সলভ করে দিলেই আমি আপনাকে মেনে নিয়ে জ*রি*য়ে ধরে বলব #ভালোবাসি_প্রিয় । কখনোই নয়‌। আপনি ম্যাথ টা সলভ না করে দিলে আমি ঠিকই শায়ান ভাইয়ার থেকে বুঝে নিতে পারতাম। শায়ান ভাইয়ার কথা শুনেই রাজ আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল, এই শায়ানের মধ্যে পেয়েছে টা কি হ্যাঁ?সেই তখন থেকে শায়ান শায়ান করে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছ। তুমি পড়তে যাবে না শায়ানের কাছে।

আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য ন‌ই। তাছাড়া আমার বান্ধবীকে আমি কথা দিয়েছি শায়ান ভাইয়ার কাছে পড়তে যাবো।

তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী কুয়াশা। অবশ্যই তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য। তুমি যদি মনে কর তোমার যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াবে , এইটা তোমার ভুল ধারণা। তোমার বান্ধবীকে বলে দাও তুমি শায়ানের কাছে পড়তে যাবে না।

কে*টে গেছে এক মাস।এই এক মাসে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর আগের মতো টিকটক করতে ভালো লাগে না। প্রায় ছেড়ে দিয়েছি বলা চলে। নামাজ পড়তে শুরু করেছি যদি ও নিয়মিত হতে পারি নি।এর‌ই মধ্যে আবার পরীক্ষার রুটিন প্রকাশিত হয়েছে। ডিসেম্বর এর দুই তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। জামিয়া ওর আপুর বাসায় থেকে শায়ান ভাইয়ার কাছে পড়ছে। আমাকে রাজ শায়ান ভাইয়ার কাছে পড়তে যেতে দেই নি।এই এক মাস রাজ‌ই পড়াচ্ছে আমাকে। প্রথম প্রথম আমার বেশ সন্দেহ হতো ম্যাথ সঠিক হচ্ছে কি না?পরে আমি জামিয়ার থেকে শায়ান ভাইয়ার ম্যাথ গুলো সংগ্রহ করে দেখি ভিন্ন পদ্ধতিতে ম্যাথ করা হলেও উত্তর সঠিক হয়েছে।বরং রাজ আমাকে আরো সংক্ষেপে শিখিয়েছে। মোটামুটি পরীক্ষার ভালো একটা প্রিপারেশন নিয়ে নিয়েছি। এই এক মাসে আমি হাজার বার রাজের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে হিসাববিজ্ঞানের ম্যাথ কিভাবে পারেন?প্রতিবারে রাজ উত্তর না দিয়ে আমাকে এড়িয়ে গিয়েছে। আমি ও বেশি জোর করিনি। ,কি দরকার শুধু শুধু ঝামেলা বাড়ানোর।

ফজরের নামাজ পড়ে আম্মা কে রান্নার কাজে সাহায্য করছিলাম। এখন মোটামুটি ভাত আলুভর্তা ডিম ভাজি এগুলো রান্না করতে পারি। এতেই আম্মা, বাবা ,রাজ অনেক খুশি। আম্মা সরষে ইলিশ রান্না করছে, আমি এটা ওটা দিয়ে আম্মা কে সাহায্য করছিলাম, তখনই দেখি বাবা কল করেছে।

আসসালামুআলাইকুম বাবা?

ওয়ালাইকুমুস সালাম।তোর মধ্যে এই পরিবর্তন টুকু দেখে অনেক ভালো লাগলো রে মা।কল রিসিভ করেই আগে সালাম দিলি। আমি তোকে অপাত্রে দান করি নি মা। সঠিক মানুষের কাছে তোকে পৌঁছে দিতে পেরেছি।আর শীতল কে একটা সঠিক মানুষের হাতে তু*লে দিতে পারলে আমি ম*রে ও শান্তি পাবো।যাক গে তুই কেমন আছিস তাই বল?

আমি ভালো আছি বাবা। তোমার শরীরের কি অবস্থা? ঔষধ খাচ্ছ তো ঠিক মতো? আম্মা শীতল কেমন আছে?

আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই ভালো আছি। রাজ কোথায়?

ও বোধহয় মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। নাস্তা সেরে বেড়িয়ে যাবে। কেন কিছু বলবে বাবা?

শীতলের জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ আসছে। আমার পুরোনো বন্ধুর ছেলে। ছেলেটা অনেক ভালো। ওরা আজকেই শীতল কে দেখতে আসতে চাচ্ছে। পছন্দ হলে আজকেই বিয়ের পাকা কথা হবে।তাই ভাবলাম বাড়ির ছোট মেয়েকে দেখতে আসবে অথচ বড় মেয়ে জামাই থাকবে না , এইটা কেমন কথা? তোরা কি আজ আসতে পারবি?

আচ্ছা বাবা আমি রাজের সাথে কথা বলে দেখি কি বলে!

ঠিক আছে মা। রাখছি তাহলে।

আচ্ছা বাবা।

রুমে এসে দেখি রাজ তৈরি হচ্ছে তবুও রাজকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি তৈরি হচ্ছেন?

তুমি আবার কানা হলে কবে থেকে কুয়াশা? এজন্যই তো বলি কচুর শাক খাও, ছোট ছোট মাছ খাও। তা তো খাবে না খাবে শুধু পাঙ্গাশ মাছ।

দেখুন পাঙ্গাশ মাছ নিয়ে কোন বাজে কথা বলবেন না।আই লাভ পাঙ্গাশ।

নিজের বর কে তো কখনো বল না আই লাভ ইউ রাজ। অথচ পাঙ্গাশ মাছ কে দিনে একবার ঠিকই বলো আই লাভ ইউ পাঙ্গাশ। তুমি যে কিছু একটা বলতে আসছো সেইটা বেশ বুঝতে পারছি।কি বলবে বল?

বাবা ফোন করছিল। শীতল কে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে। আমাদের কে যেতে বলেছে।

আমি যেতে পারব না। তুমি বরং বাবার সাথে যাও।

তাহলে আমি বাবাকে ফোন করে বলে দিলাম আমরা আসতে পারছি না।

আমি তো তোমাকে যেতে বারণ করি নি। তুমি যাও।

বাবা দুজনকেই যেতে বলেছে। আমি একা গেলে বাবা কষ্ট পাবে।

বাবা কষ্ট পাবে নাকি আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে না , তাই যেতে চাচ্ছো না? আচ্ছা বাইকে চড়তে পারো তো?

হুম ।

তাহলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসব।

কি রে মা তুই একা কেন?রাজ কোথায়?

আসলে বাবা এখন রাজ একটু ব্যস্ত ।তাই নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। সন্ধ্যায় আসবে বলেছে। যদিও রাজ বলেছে সে আসতে পারবে না । আমি যেন বাবার সাথে চলে যায়। কিন্তু বাবা কষ্ট পাবে দেখে এই মিথ্যা টুকু বললাম।

পাত্রপক্ষ আসবে এই উপলক্ষে রান্নার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আম্মা একা হাতে সবটা সামলাচ্ছেন। আমি আম্মাকে গিয়ে পিছন থেকে জ*ড়ি*য়ে ধরলাম। আমি কি তোমাকে হেল্প করব আম্মা?

না!না! তুমি আসছো একদিনের জন্য তোমার কোন কিছু করতে হবে না। তুমি বরং শীতলকে রেডি করে নিয়ে এসো।

ঠিক আছে আম্মা।

রুমে গিয়ে দেখি শীতল সবেমাত্র শাওয়ার নিয়েছে। আমি শীতল কে একটা কালো শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে হিজাব বেঁধে দিলাম। মাশাআল্লাহ আমার বোন কে একদম পরীর মতো লাগছে। ছেলের তো হার্টবিট মিস হয়ে যাবে তোমাকে দেখে।

তুমি যে কি বল না কুয়াশা?আমার খুব নার্ভাস লাগছে ।এক গ্লাস পানি এনে দিবে?

আচ্ছা তুমি বস আমি পানি নিয়ে আসছি।

নিচে এসে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে উপরে উঠতে যাবো এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। আম্মা কিচেনে থাকায় আমি গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দিলাম। মূহুর্তের মধ্যে আমার সামনে ভেসে উঠলো চির চেনা একটা পরিচিত মুখ।যাকে দেখে থমকে গেলাম। আমার হাত থেকে গ্লাস পরে গিয়ে ঝনঝন আওয়াজে ভেঙ্গে গেল।কারন আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে….

চলবে ইনশাআল্লাহ…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে