ভালোবাসি প্রিয় পর্ব-০৬

0
742

#ভালোবাসি_প্রিয়

পর্ব:০৬

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

কি যুগ আইলো এহনকার যুগের মাইয়াগোর সোয়ামির মঙ্গল অমঙ্গল নিয়া কোন মাথা ব্যাথা নাই।কেমনে নাক খালি হাত খালি করে রাখিছে।বলি ও মাইয়া সোয়ামি রে কি ভালোবাস না?এমনে যে নাক খালি হাত খালি করে রাখিছ এতো যে তোমার সোয়ামির হায়াত কা*টা যাচ্ছে ,সেদিকে তোমার কোন খেয়াল নেই?আর রাজ তুই ও চুড়ি ছাড়া ব‌উয়ের হাতে পানি খাস কেমনে?

এসব কুসংস্কার দাদি।আমাদের সমাজে অনেক বিবাহিতা মহিলাকেই শুনতে হয় যে হাতে চুড়ি না পরলে বা নাকে নাকফুল না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যায় বা স্বামীর অমঙ্গল হয়।ঠিক যে বিশ্বাস নিয়ে বিধর্মী মহিলারা শাঁখা-সিঁদুর পরে, আজও অনেক মুসলমান মা বোন সেই একই ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে চুড়ি-নাকফুল পরেন।স্বামির মঙ্গলের জন্য হাতের চুড়ি ও নাকফুল পরে হিন্দুরা।কেউ যদি মনে করে এগুলো দ্বারা স্বামীর মঙ্গল হবে তবে সে শিরক করলো।কারন মঙ্গলের একমাত্র মালিক আল্লাহ।কখনও চুড়ির, নাকফুলের মধ্যে মানুষের মঙ্গল থাকে না এগুলো হল নারীর সৌন্দর্যের জন্য আর কিছু না।এটা মেয়েদের প্রসাধনি মাত্র।বিবাহের আগে ও পরে মহিলারা হাত চুরি,নাকফুল,গয়না পরতে পারে এতে কোন নিষেধ নেই।আর বিবাহের পর তার স্বামীকে তার সৌন্দর্য দেখানোর জন্য আরোও বেশি বেশি গয়না ইত্যাদি পড়তে পারবে।তবে এসব পড়া বাধ্যতামূলক নয়,তার থাকলে পরবে,না থাকলে পরবেনা।এতে স্বামী অথবা সংসার এর কল্যাণ ,অকল্যাণ এর সাথে সংপৃক্ত নয়,এসব পরতেই হবে,এই বিষয়ে ইসলামে কোন বাধ্যকতা নেই।সাজসজ্জার ক্ষেত্রে আপনার ও আপনার স্বামীর পছন্দের ওপর নির্ভর করে।আর আমাদের জীবনে কি হবে তা আল্লাহ নির্ধারণ করবে কোন চুড়ি নাকফুল না আর আপনি পরতে পারবেন তবে মন থেকে শিরক টা মুছে ফেলুন।আর এগুলো যে কোন সময় খুলে রাখতে পারবে, এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।অনেকে বিবাহের পর এগুলো খুলে রাখলে কুসংস্কার মনে করে, অমঙ্গল হবে,এটা হবে,সেটা হবে এগুলো বিশ্বাস করা যাবেনা কেননা কোন বস্তুতে কুসংস্কারে বিশ্বাস করা শির্ক!!আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মানুষের হায়াত নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।সে সময়ের পূর্বে বা পরে কারো মৃত্যু হবে না।তাই ঐ সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা পরিত্যাগ করা অপরিহার্য। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃকোন বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা ‘শিরক’,একথা তিনি তিনবার বললেন(সহিহ হাদিস).

এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনছিলাম আমি। প্রথম প্রথম রাজের এই লেকচার শুনতে খারাপ লাগলেও এখন বেশ ভালো লাগে।কি সুন্দর ভাবে সবটা বুঝিয়ে দেয়,মনে হয় সবজান্তা। মানুষ কে মুগ্ধ করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে রাজের মধ্যে। আমি না চাইলেও বারবার মুগ্ধ হয়েছি রাজের কথায় ,রাজের আচরণ, ব্যবহারে। কিন্তু একটা ব্যাপারে মনের মধ্যে খটকা থেকেই গেল।এই বাসায় বিসিএস পরীক্ষা কে দিবে?বাবা দিবে না,আপু দিবে না। তাহলে কি রাজ ? কিন্তু শুনেছি রাজ তো মাদ্রাসার লাইনে পড়াশোনা করছে। মাদ্রাসার লাইনে পড়াশোনা করে কি আদৌ বিসিএস দেওয়া যায়?আপু কে জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই দেখি বাবা, শীতল ,শীতলের আম্মা এসেছে।মাএ দুই দিন তাদের দেখি নি অথচ মনে হচ্ছে কতো যুগ পরে তাদের দেখা পেলাম। আমার কি হলো জানি না লজ্জা, সংকোচ ভুলে শীতলের আম্মা কে জ*রি*য়ে ধরলাম। আমার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে আম্মা ডাক বেরিয়ে আসল।

আমার মুখে আম্মা ডাক শুনে তিনি আমাকে আর ও শক্ত করে জ*ড়ি*য়ে‌ ধরলেন। আমার মুখে অজস্র চু*মু*তে ভরিয়ে দিতে লাগলেন।
তুমি কি বললে ‌মা?আর এক বার বল। আমি কি ঠিক শুনেছি তুমি আমাকে আম্মা ডাকলে? তুমি নিজেও জানো না মা তুমি আজ আমাকে কতোখানি সুখ দিলে। তোমার মুখে একবার আম্মা ডাক শোনার জন্য আমি এতো গুলো বছর চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছি।

আমাকে মাপ করে দাও আম্মা। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। কিন্তু আমি দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি আমি ও তোমাকে ভালোবাসি। হয়তো দুরে না আসলে কখনো এই ভালোবাসা টা বুঝতে পারতাম না।

অনেক হয়েছে ভালোবাসা, বাসি । তোমার পছন্দের সব খাবার রান্না করে এনেছি এবার চলো আমার নিজের হাতে তোমাকে খাইয়ে দিব।

আম্মা মা*রা যাওয়ার পর এই প্রথম সবার সাথে এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত অতিবাহিত করলাম। কিন্তু আনন্দঘন মূহুর্ত হয়না কখনো স্থায়ীত্ব। দেখতে দেখতে বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। সেই সাথে সাথে সব আত্মীয় স্বজন ও বিদায় নিল।

বাবা,মা যাওয়ার পর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে একটা থ্রিপিস পরে নিলাম। হঠাৎ ফোনের দিকে নজর পরতেই দেখি ৫০ টা কল এসেছে আমার বান্ধবী জামিয়ার নাম্বার থেকে।কল ব্যাক করতেই ঐ পাশ থেকে বললো,
ক‌ই ম*র*ছি*লি তুই? বরের সাথে নিশ্চয় রো*মা*ন্সে বিজি ছিলি। বিয়ের আগে তো খুব বলেছিলি তুই কখন রাজ কে মেনে নিতে পারবি না।অথচ এখন বর পেয়ে নিজের বেষ্টি কে ভুলে গেছিস।বর অনেক আ*দ*র সোহাগ করছে তাই না?

ননস্টপ বকবক বন্ধ করবি তুই, নাকি তোর কানের নিচে লাথি দিব? তুই কখন ও শুধরালি না জামিয়া।বিয়েতে তো আসলি না । এখন আবার ফোন দিয়েছিস কেন?

আমার অনেক ইচ্ছা ছিল তোর বিয়েতে উপস্থিত থাকার। কিন্তু হঠাৎ করে বাবা অসুস্থ হয়ে গেল।বাবাকে নিয়ে ঢাকা চলে আসলাম।এখন বাবা অনেকটাই সুস্থ দুই এক দিনের মধ্যে বাসায় ফিরব। বাসায় ফিরে আমরা অনেক আড্ডা দিব কিন্তু।

আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি বাই।

ওকে লাভ ইউ।

লাভ ইউ টু।

রাতে গিফট গুলো দেখছিলাম কে কি দিয়েছে। গিফটের মধ্যে দেখি রাজ নামের একটা প্যাকেট রয়েছে। প্যাকেট খুলে দেখলাম দুইটা বোরকা আর সাথে ম্যাচিং হিজাব।

বোরকা পরে দেখ তো ঠিক ঠাক‌ হয় কি না?

আপনি শুধু শুধু বোরকা কিনেছেন কেন? আমি বোরকা পরতে পারি না ,দম বন্ধ হয়ে যায় আমার।

হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়।
এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে, এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’
[সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৫৩]

আল্লাহর ওহি অনুযায়ী নারীদের জন্য হিজবা পরা বাধ্যতামুলক এবং ফরজ। আর হিজাব ফরজ কিনা তা নিয়ে ইজতিহাদ তথা এ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণারও প্রয়োজন নাই বরং এটি সুস্পষ্ট সত্য বিষয় যে, হিজাবের বিধানের ব্যাপারে কেউ মত-পার্থক্য কিংবা বিরোধিতা করতে পারবে না।
মূলত পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দা করে না। তুমি তো বোরকা পরিধান কর না এই জন্য তোমার দম বন্ধ লাগে। কিন্তু যখন বোরকা পরার অভ্যাস হয়ে যাবে , তখন আর বোরকা ছাড়া বের হতে ইচ্ছে করবে না, তোমার বিবেকে বাধা দিবে।

মনে হচ্ছিল রাজ কে কয়েক টা কঠিন কথা শুনিয়ে দেই। কিন্তু রাজের চোখের দিকে তাকালে‌ সব যেন আউলা ঝাঊলা হয়ে যায়। আমি কিছু বলতে পারি না। কি আছে ঐ চোখে যা আমাকে কঠিন হতে দেই না?

ঘুমবে‌ কোথায়? বিছানায় নাকি সোফাতে।

বিছানার কথা বলতেই গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল।কি একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিল। আমি সোফাতেই রাত কা*টি*য়ে দিতে পারব। আপনি শুয়ে পড়ুন।

আমি মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে দেয়াল তৈরি করে দিয়েছি বিছানায় আসো।

সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় আসা মাত্রই দুই চোখের পাতা এক হয়ে গেল। ঘুম ভাঙল চোখে মুখে পানির ছিটা পেয়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ……
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে