ভালোবাসার রং পর্ব-১৮

0
2381

#ভালোবাসার_রং (❣️You are my Lifeline ❣️)

#Part_18

#Ishita_Rahman_Sanjida_(Simran)

আকিব: ভাইয়া,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আকিব দৌড়ে গিয়ে রাকিবকে জড়িয়ে ধরে,,,,,আনহা রাকিবকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,,,,

আকিব: ভাইয়া তুমি,,,,(রাকিবকে ছেড়ে)আই এম সো হ্যাপি,,,,,,,বাবা প্লিজ ভাইয়াকে ক্ষমা করে দাও,,,,,,প্লিজ,,,

রাকিব: বাহ ভেরি নাইস আকিব,,,,(হেসে) আর কত নাটক করবি এবার তো থাম,,,,,

সাথে সাথে আকিবের মুখটা মলিন হয়ে গেল রাকিব কি বলছে আকিব কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,,,,বাড়ির সবাই অবাক,,,,

আকিব: মানে ভাইয়া তুমি কি বলতে চাইছ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,,,,,নাটক মানে

রাকিব: বুঝতে পারছিস না নাকি বুঝতে চাইছিস না,,,,,
মা: কি হচ্ছে রাকিব,,,,,একে তো আমাদের সম্মান ডুবিয়ে দিয়েছিস এখন আবার কি শুরু করেছিস,,,,,
বাবা: আমরা তোমার কোন কথা শুনতে চাই না,,,,আকিবের সাথে তোমার কথা শেষ এখন তুমি আসতে পারো,,,,,
আনহা আর রিমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কি হচ্ছে আগাগোড়া কিছুই বুঝতেছে না ওরা

রাকিব: বাবা সবে তো কথা শুরু আজকে সব কিছুর হিসেব আমি বুঝাব,,,,,
আকিব: ভাইয়া তুমি একটু ক্লিয়ার করে বলবে

রাকিব: তুই জেনেও সবকিছু না জানার ভান করছিস ওকে তাহলে আমি ই বলি,,,,, বিয়েটা তো তোর প্ল্যান মাফিক হয়েছে

আকিব: বিয়ে,,,,
রাকিব: হুম,,,,,, প্ল্যান করেই তো আমাকে সরিয়ে তুই আনহাকে বিয়ে করলি,,,, আর আমাকে সবার সামনে খারাপ করে নিজে ভালো মানুষ হয়ে গেলি,,,,তোর তারিফ না করে থাকা যায় না,,,,,
বাবা: এসব কি বলছ তুমি,,,,,,

রাকিব: ঠিকই বলছি বাবা,,,,,,জানো সেদিন কি হয়েছিল,,, তাহলে শোন,,,, আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার বন্ধুর জন্য ওয়েট করছিলাম আর তখন আকিবের লোকেরা এসে আমাকে তুলে নিয়ে যায়,,,আর তোমরা আকিবের সাথে আনহার বিয়ে দিলে আর আমি খারাপ হয়ে গেলাম,,,, কি ঠিক বলছি তো আকিব (আকিবের দিকে তাকিয়ে)

আকিবের পা থেকে মাটি সরে যায়,,,,,রাকিব মিথ্যে কেন বলতেছে ও কিছু ভেবে পাচ্ছে না

বাবা: মিথ্যা বলো না,,,, কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে,,,,
রাকিব: আমি জানি বাবা,,, আমাকে প্রমাণ দিতে হবে,,,,, আর প্রমাণ সঙ্গে করে নিয়ে
এসেছি,,,, অফিসার প্লিজ কাম,,,,,
তিনজন পুলিশ দুজন লোককে নিয়ে বাড়িতে ঢুকল,,,,,,,
রাকিব: এই হলো আকিবের ভাড়া করা লোক ওরাই আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল,,,,, আমি এতদিন প্রমাণের কারণে সবাইকে সত্যিটা বলতে পারিনি,,,, কিন্তু আজকে আমি প্রমাণসহ এসেছি,,,,, অফিসার (পুলিশের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো)

অফিসার: এই বল সব সত্যি,,,,,,

__ হ্যা আকিব স্যার আমাদের টাকা দিয়ে বলেছিল ওনার ভাইকে কিডন্যাপ করতে,,,,
আমরা টাকার জন্য তাই করেছিলাম,,,,,

একথা শুনে আকিব দুকদম পিছিয়ে যায় আকিব আর নিজের মধ্যে নেই কোন এক অজানা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেছে ও,,,,,বাড়ির সবাই কেমন যেন হয়ে গেছে রাকিবের কথা শুনে আনহা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল,,,,,আনহা এসব কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না,,,,,,,,সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে ওর কাছে,,,,আনহা আস্তে আস্তে আকিবের সামনে যায়,,,, কাঁপা কাঁপা হাতে আকিবের শার্ট ধরে টানতে টানতে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,,
আনহা: আ,,কিব,,,,এসব কি সত্যি,,,, হুম বল
তুমি সত্যি এসব করেছ বলো,,,(একটু জোরে)

আকিব: আনহা,,,, ট্রাস্ট মি,,, আমি এসব কিছুই করিনি,,,, আমি এসবের কিছুই জানি না,,,,
রিমি: এক্সজাটলি,,,,আকিব এরকম ছেলে না আমি বিশ্বাস করি না,,,,,
রাকিব: আমি জানি এসব কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না তাই আমি সব প্রমাণ নিয়েই এসেছি
আমার সত্যি ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে আকিব আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারল ও যদি একবার আমাকে বলত যে ও আনহাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে আমি ওর কথাই মেনে নিতাম,,,,,, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আনহার সাথে ওর বিয়ে দিতাম,,,,,

মা: ছিঃ আকিব তুই এতটা নিচে কিভাবে নামতে পারলি,,,,, আমার তোকে নিজের ছেলে ভাবতে লজ্জা করছে,,,,,

বলতে বলতে তিনি সোফায় বসে পড়ে আকিবের বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,,
আকিব ওর বাবাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে তিনি আকিবকে থামিয়ে দিল,,,,

বাবা: আকিব তুমি এমনটা করতে পারবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি,,,, কেন করলে
এখন তো তোমাকে পুলিশে দেওয়া উচিৎ,,,

রাকিব: না বাবা আমি এসব চাই না এতে আকিবের লাইফটা নষ্ট হয়ে যাবে,,, আমি এটা চাই না,,,, অফিসার আপনি ওদেরকে নিয়ে চলে যান,,,,,
পুলিশ চলে যায়,,,,,,

আকিব ফ্যালফ্যাল চোখে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,কেউ ওর কথা বিশ্বাস করছে না,,,,,আকিব আনহার কাছে যায়,,,,

আকিব: বিশ্বাস করো আনহা,,,,,এটা সত্য না

আনহা এবার মুখ খুলল,,,,,
আনহা: তাহলে সত্যিটা কি,,,,,
আকিব: আনহা,,,,,
আনহা: বলো তাহলে সত্যিটা কি,,,, তুমি এতটা নিচ মনের মানুষ সেটা আমি আজ বুঝলাম,,,, ছিঃ তুমি কেন করলে এটা কেন
(কলার ধরে ঝাঁকিয়ে)
আকিব: আনহা প্লিজ ট্রাস্ট মি এসব মিথ্যে
আনহা: তাহলে ওই লোক গুলো কেন তোমার নামে মিথ্যা কথা বলবে,,,,,বলো কেন আমার লাইফ নিয়ে খেলা করলে,,,,,কেন এতো নাটক করলে,,,,,
আকিব: আনহা আমার কথাটা একবার শোন
(আনহার বাহু ধরে)

আনহা আকিবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল,,,, চোখের পানি ওর বাধ মানছে না যে আকিবকে এতো বিশ্বাস করল,,ভালোবাসলো
সেই আকিব ওকে ঠকালো এটা আনহা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না,,,,

আনহা: অনেক হয়েছে,,, আর না তোমার মতো একটা জঘন্য মানুষের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না,,,,,,

আনহা উপরে চলে যায়,,,,,আকিব ও পিছু পিছু যায়,,,,,,আকিবের বাবা মা সোফায় বসে পড়ল,,,রিমি ওর মাকে সামলাচ্ছে আনহা এক দৌড়ে রুমে চলে আসে ওর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,,,,আকিবকের কাজে ওর ঘৃণা হচ্ছে,,এই আকিবকে ও কিনা ভালোবেসেছিল
ছিঃ,,,,,আনহা নিজের ব্যাগ গোছাচ্ছে,,,,,, আকিব আনহাকে বাঁধা দিচ্ছে আকিব আনহার হাত টেনে ধরে,,,,,,
আকিব: প্লিজ আনহা রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিয়ো না,,,,, আমাকে ছেড়ে চলে যেও না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ,,,,,,,
আনহা: আমি ঠান্ডা মাথায় সব কিছু ভেবছি
তোমাকে আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম আর তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে,,,,
আকিব: তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,,,,,,
আনহা: এতদিন তোমাকে আমি ভুল বুঝে এসেছি,,,,,আজ ঠিক বুঝলাম,,,,,,তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারব না,,,,,,,প্লিজ আমাকে আটকিও না,,,,,,
আকিবের শত বাঁধা আনহা মানলো না,,,,,, নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল আকিব নিচের ফ্লোরে বসে পড়লো চোখের পানি টলমল করছে,,,,, শেষমেশ আনহা ওকে ভুল বুঝলো,,,,আনহা তো ওকে ভালোবেসেছে
তাহলে আজকে কেন আনহা ওকে বিশ্বাস করতে পারল না আর আকিব ভেবে পাচ্ছে না ওর ভাইয়া কেন এমন মিথ্যা অপবাদ দিল ওর নামে,,,,,,,






আনহা নিচে নেমে আসে,,,,,
আনহা: মা বাবা আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এখানে থাকতে পারবনা (কান্না ভেজা কন্ঠে)

আকিবের বাবা মা কিছুই বলল না,,,,আনহা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে,,,,,,রাকিব আনহার যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে এক টুকরো হাসি দিল যা কারো চোখে পড়ল না,,,,,,
রাকিব: সরি,,,,,,আকিব এন্ড আনহা,,,,, আমার লাইফটা সেটেল করার জন্য তোমাদের লাইফে গন্ডগোল লাগিয়ে দিলাম রাকিব কখনো নিজের ভাগ ছাড়ে না,,,,,, এজন্য যদি আকিবকে বাড়ি ছাড়া হতে হয় তাতেও আমি রাজি আছি,,,,,,, (মনে মনে)
বলেই একটা ডেভিল হাসি দিল,,,,,তারপর বাবা মায়ের কাছে গিয়ে ভালো মানুষির অভিনয় করতে লাগলো,,,,,,

আনহা অটোতে করে বাড়ি ফিরছে,,,,, চোখের পানি বারবার মুছছে তবুও পানি পড়ছেই খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,,আকিব কেন ওর সাথে এমনটা করল,,,,কেন,,,,,এতটা খারাপ আকিব,,,,তা এতো দিন কেন বুঝতে পারল না,,,,,রিধিকে কি সাজিয়ে এনেছিল,,,, আর সোহানকে,,,,,
সোহানকে কি টাকার লোভ দেখিয়ে সরিয়েছে হুম তাই হবে হয়তো,,,,,,,আকিবের মতো ছেলে সব কিছু করতে পারে,,, সবকিছু,,,,,

আনহা এসব ভাবছে আর চোখের পানি মুছতেছে,,,,,এসব ভাবতে ভাবতে ও বাড়ি চলে আসে,,,,,, দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজায়,,,,, একটু পরে আনহার মা এসে দরজা খুলল,,,,,আনহা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো,,,,,আনহার মা কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,এত রাতে আনহা কেন এল আর কাদছেই বা কেন,,,,,,আনহার মা ওকে কোনরকমে শান্ত করে সোফায় বসাল
আনহার বাবা ও এসেছে,,,,,তিনি ও আনহাকে দেখে অবাক,,,,, ওনারা আনহাকে শান্ত করার চেষ্টা করতেছে কিন্তু পারছে না শেষে আনহার শ্বশুর কে ফোন করে সব জেনে নিল আনহার বাবা,,,,,,ওনারাও মেনে নিতে পারছে না যে সত্যি আকিব এটা করতে পারে,,,,,আনহার মা অনেকেই কষ্টে আনহাকে রুমে নিয়ে যায়
আনহা কাঁদতে কাঁদতে ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়,,,,,,,আনহার মা আঁচলে চোখ মুছে চলে আসে,,,,,সব বাবা মা চায় সন্তান এর সুখ দেখতে,,,,,কষ্ট না সন্তানের কষ্টে বাবা মা দ্বিগুণ কষ্ট পায়,,,,,,,







আকিব নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে বসে আছে,,,,, বারান্দার ফাঁক দিয়ে বাইরের একটু খানি আলো এসে পড়ছে ওর রুমে,,,,,, এতেই রুমটা একটু আলোকিত হয়েছে,,,,,আকিব একটু আগের ঘটনা বার বার চোখে ভাসছে,,,,যদি এটা কোন দুঃস্বপ্ন হতো তাহলে আকিবের চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না,,,,, এমন যদি হতো আকিব এখনো স্বপ্ন দেখছে ঘুম ভাঙলে দেখবে সবকিছু আগের মতোই আছে তাহলে খুব ভালো হতো
কিন্তু তা হবে না একটু আগেই সব শেষ হয়ে গেছে,,,,আনহা ওকে ছেড়ে চলে গেছে আনহাকে ছাড়া আকিব বাঁচবে কি করে,,,, ওকে ছাড়া আকিব কিছুতেই থাকতে পারবে না,,,,, আচ্ছা আনহা কি আকিবকে ছাড়া থাকতে পারবে যতই মুখে বলুক সে আকিবকে ঘৃণা করে কিন্তু একদিনের জন্য হলেও ও আকিবকে ভালোবেসেছিল তাহলে
আকিব এসব ভাবছে আর ওর চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বইছে,,,,,মা বাবা আপু ওকে অবিশ্বাস করল,,,,, কিন্তু আনহার তো উচিত ছিল আকিবকে বিশ্বাস করা,,,,,আনহা কেন আকিবকে বিশ্বাস করল না,,,,,,কেন করল না
আকিব আর কিছু ভাবতে পারছে না মাথাটা ধরে গেছে ওর,,,,,আকিব বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল,,,,, কিন্তু ঘুম আসছে না ওর
সবকিছু আবছা হয়ে আসছে,,,, জীবনের সাথে লড়াই করে ও ক্লান্ত,,,,, ভালোবাসার মানুষ গুলো এভাবে যদি পেছন থেকে ছুরি মারে তাহলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না,,,,,,,

ভাইয়াকে তো আকিব কত ভালোবেসেছিল একসাথে চলাফেরা করেছে,,,,,এতবছর একসাথে ঘুমিয়েছে,,,,,খেলেছে,,,,আরও কত স্রৃতি ওর ভাইয়ার সাথে,,,,, আর সেই ভাইয়া যখন ওর সাথে বেইমানি করতে কিভাবে পারল,,,,, কিভাবে নিজের রক্তের সম্পর্ক কে ছিন্ন করতে পারল,,,,, আর এর পিছনে ওর ভাইয়ের কোন উদ্দেশ্যে আছে,,,, এভাবে অন্যকে কষ্ট দিয়ে না,,,,অন্যকে না,,,, নিজের ভাইকে কষ্ট দিয়ে কি লাভই বা হবে,,,,,,

এবার সত্যি সত্যিই আকিবের মাথা ঘোরাচ্ছে আর কিছু ভাবতে পারছে না,,,, দুচোখ বন্ধ করে আছে,,,,বন্ধ চোখের কোণে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পরতেছে,,,, চোখের পানিতে বালিশ ভিজে গেছে,,,,, এভাবেই আকিব একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে