ভালবাসি শুধু তোমায় আমি পর্ব-০৩

0
1304

#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

কিছুক্ষণ পড়ে স্পর্শক আরনিয়ার রুমে খাবার নিয়ে এসে দেখে রুমে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ফ্লোরে পড়ে আছে ভাঙা ফুলদানি, সো পিচ। বেডশিট মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুমে সাজানো সমস্ত ফুল আর বেলুন ফ্লোরে পড়ে আছে। আরনিয়া রুমের এক কোণে ঘুটিশুটি মেরে বসে আছে। এলোমেলো চুল, অগোছালো শাড়ি। এক হাত টুপ টুপ করে রক্ত পড়ছে। আরনিয়া দুই হাত দিয়ে চুল মুঠো করে টানছে। স্পর্শক বুঝতে পারে আজকে ড্রাগস না নেওয়ার ফলে আরনিয়া এমন বিহেভ করছে।

স্পর্শক ড্রয়ার থেকে ঘুমের ইনজেকশন বের করে আরনিয়া শরীরে পুস করে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই আরনিয়া ঢলে পড়ে স্পর্শকের বুকে। স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে করে বেডে শুইয়ে দেয়। ফাস্ট এইড বক্স এনে আরনিয়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। স্পর্শকের চোখ থেকে ফোটা ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। স্পর্শক আরনিয়ার শরীর থেকে সমস্ত গয়না খুলে বেড সাইড টেবিলে রেখে দেয়। আরনিয়ার হাতের ব্যান্ডেজের ওপর স্পর্শক ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।

তোমার কী কোনো দিনও আমার কথা মনে পড়বে না? তুমি আমাকে চিন্তে পারছ না এই মরন যন্ত্রনা যে আমি আর সহ্য করতে পারছি না জানপাখি। তুমি তোমার স্পর্শক কী করে ভুলে গেলে?

আরনিয়ার গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে স্পর্শক রুম থেকে বের হয়ে যায়। ছাদের রেলিংয়ের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শক। স্পর্শকের দুই হাত থেকে রক্ত পড়ছে। স্পর্শকের দৃষ্টি ঐ দুর আকাশের দিকে।

কথা দিয়েছিলাম তোমার সব কষ্ট ভাগ করে নিবো। এই কষ্ট তো ভাগ করে নিতে পারবো না কিন্তু অনুভব করতে পারবো। তাই তো নিজেকে দ্বিগুন কষ্ট দিলাম।

যে কাউকেই ভালোবাসা যায়। ভালোবাসা অনেক পবিত্র একটি অনুভূতি। স্বার্থসিদ্ধির জন্যও প্রেম করা উচিত নয়। প্রেম হচ্ছে পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্ক যেখানে থাকবে না কোনো চাওয়া-পাওয়া, থাকবে না কোনো স্বার্থ, থাকবে শুধুই ভালোবাসা।

রাত দুইটা বাজে স্পর্শক এখনো ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে। দু চোখের পাতায় ঘুম নেই। অনেক রাতই এভাবে নির্ঘুম কাটিয়েছে স্পর্শক। রাতের পর রাত জেগে প্রিয়তমার ছবি দেখা। ঘন্টার পর ঘন্টা প্রিয়তমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল একটা বার প্রিয়তমাকে দেখার জন্য। এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে স্পর্শক। আলতো হাতে কেউ পিছন থেকে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। সে জানে এই হাতের মালিক কে? এই স্পর্শ তার বহুদিনের চেনা। এই মেয়েটার নিশ্বাসের শব্দই তাকে মেয়েটার উপস্থিতি জানান দিতে পারে।

কী ম্যাম ঘুম ভাঙলো তাহলে?

হুহ। অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত আমি।

আর মাত্র কয়েকটা দিন অভিনয় করো তার পরে আমি সব ঠিক করে দিবো।

আমাদের ওপর যে ছেলেটা নজর রাখছিলো সেই ছেলেটা কোথায়।

স্টোর রুমে আটকে রেখে এসেছি।

আমি তোমার ওপর রেগে আছি স্পর্শক।

কেনো? আমি আবার কী করলাম?

আজকে আমাদের বিয়ে হয়েছে তার মানে আজকে আমাদের বাসর রাত। বাসর রাতে কেউ নতুন বউকে একা রেখে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে।

তো আপনার কী বাসর করতে ইচ্ছে করছে? ( চোখ টিপ দিয়ে)

তুমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো।

আল্লাহ এটা কেমন বিচার? নিজে বললে কিছু না আর আমি বললেই আমি অসভ্য।

আরনিয়ার চোখ যায় স্পর্শকের হাতের দিকে। হাত দুটো উপরে তুলে স্পর্শককে জিঙ্গেস করে,

তোমার হাত কী করে কাটলো।

তেমন কিছু না।

স্পর্শক নিজের হাত দুটো পিছনে লুকিয়ে ফেলে। আরনিয়া আবার স্পর্শকের হাত দুটো টেনে সামনে আনে। তখনি নজর যায় নিজের হাতের দিকে। আরনিয়া বুঝতে পারে স্পর্শক নিজেই নিজের হাত কাটছে। টপ টপ করে আরনিয়ার চোখ থেকে পানি পড়ছে। আরনিয়া স্পর্শকের হাত দুটো অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয়। স্পর্শক আরনিয়ার মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে।

আমার এক হাত কাটা তুমি তোমার দুই হাত কেনো কাটলে। তুমি জানো না তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। আমার এক হাত কেনো কাটা থাকবে? আমারও আরেকটা হাত কাটতে হবে।

আরনিয়া ছুটার চেষ্টা করতেই স্পর্শক আরনিয়াকে আরো শক্ত করে নিজের বুকে চেপে ধরে।

তুমি নিজের হাত কাটার চেষ্টা করলে আমি আমার হাত কেটে ফেলো দিবো।

আরনিয়া নাক টানতে টানতে বলে,

থ্রেট দিচ্ছো?

থ্রেট ভাবলে থ্রেট।

স্পর্শক আরনিয়ার চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে ৫ দিন আগের কথা। আরনিয়া স্পর্শকের সাথে দেখা করতে আসে একটা কফিশপে। তাদের সম্পর্কের এক বছর চলছিলো। আরনিয়া কফিশপে এসেই স্পর্শকের হাত ধরে কান্না কাটি শুরু করে দেয়।

আরু তুমি কাঁদছো কেনো?

আরনিয়া কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলছে। স্পর্শক আরনিয়ার কান্না বন্ধ করতে না পেরে আরনিয়াকে জড়িয়ে ধরে।

আরে বাবা কান্নার কারণ তো বলবে।

পাপা আমার বিয়ে ঠিক করছে। আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।

আমাকে ছাড়া তোমাকে আর কাউকে বিয়ে করতে হবে না। তুমি তোমার পাপাকে আমার কথা বলো।

পাপা মানবে না। পাপা একবার যেটা ঠিক করে সেটাই করে ছাড়ে। আমাকে যদি ঐ ইহান ফিহানকে বিয়ে করতে হয় তাহলে আমি সুইসাইড করবো।

কথাটা শোনার সাথে সাথে স্পর্শক আরনিয়াকে থাপ্পড় মেরে হনহন করে কফিশপ থেকে চলে যায়। আরনিয়া ওখানে বসেই কাঁদতে থাকে। এই কান্না স্পর্শক মেরেছে বলে না স্পর্শকের জন্য। আরনিয়া জানে স্পর্শক যে হাত দিয়ে তাকে মেরেছে সেই হাতের অবস্থা খারাপ করে দিবে। এখন তার নিজের ওপর নিজের রাগ হচ্ছে। আরনিয়া তো জানতো স্পর্শক তার মুখে মরার কথা সহ্য করতে পারে না।

__________________

আরনিয়া বাসায় চলে আসে। নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেডে বসে স্পর্শককে কল দিতে থাকে। বার বার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে। ৮ বার কল দেওয়ার পরে স্পর্শক রিসিভ করে।

মামুনি আসবো?

আরনিয়া তার পাপাকে দেখে ফোনটা বালিশের নিচে রেখে দেয়। স্পর্শক লাইনে আছে ইচ্ছে করেই ফোনটা রেখে দেয়নি। সে জানতে চায় এহসান খান আরনিয়াকে কী বলে? তবে সে আন্দাজ করতে পারছে এহসান খান কী বলতে এসেছে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে