ভালবাসি শুধু তোমায় আমি পর্ব-১১

0
1137

#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:১১ (রহস্য উন্মোচন ১)
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো আমি এই লোকটাকে সহ্য করতে পারছি না। স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো।

স্পর্শক এহসান খানকে চলে যেতে কী বলবে? তার তো মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। স্পর্শক তো এখনো অবাকের রেশই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। যে মেয়ে তার বাবা অন্ত প্রাণ সেই নাকি তার বাবাকে সহ্য করতে পারছে না। স্পর্শক নিজেকে সামলে নিয়ে এহসান খানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

মি. খান আপনি এখান থেকে চলে যান।

না আমি আমার মেয়ের সাথে কথা না বলে যাবো না। আমি জানি আমার আরু সোনা আমার ওপর অভিমান করেছে। তাই আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না। আরু মামুনি পাপার সাথে এতো অভিমান করলে চলে। তুমি যে আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো তাতে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।

স্পর্শক এই লোকটাকে এসব ন্যাকামো বন্ধ করতে বলো আর এখান থেকে চলে যেতে বলো।

আপনি কী এখান থেকে যাবেন নাকি আমাকে অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে? ( কঠিন সুরে )

আরু মামুনি এই সয়তানটা কী তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে ভয় দেখিয়ে এসব বলতে বাধ্য করেছে? ভয়ের কিছু নেই আমাকে বলতে পারো। স্পর্শক তোমার বা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

স্পর্শক তুমি এই লোকটাকে এক্ষুনি এই কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে বলো। নাহলে কিন্তু আমি এখান থেকে চলে যাবো।

আরনিয়া বেড থেকে উঠতে গেলেই স্পর্শক ধরে শুইয়ে দেয় আরনিয়াকে। স্পর্শক কয়েকটা গার্ড ডেকে এহসান খানকে গাড় ধাক্কা দিয়ে কেবিন থেকে বের করে দেয়। এহসান খান রেগে হাতে থাকা বুকেটা ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর হনহনিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে যায়। স্পর্শক এখনো হা করে আরনিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

মুখ অফ করো নাহলে মশা ঢুকে যাবে।

আরনিয়ার কথায় স্পর্শক থতমত খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি নিজের মুখ বন্ধ করে ফেলে।

আরু তুমি তোমার বাবার সাথে এমন বিহেইভ করলে কেনো?

উনি বাবা না বাবা নামের কলঙ্ক। উনি কারো বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।

এসব কী বলছো তুমি?

স্পর্শক আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে?

সত্যি??

হুম।

স্পর্শক আরনিয়াকে শোয়া অবস্থাই জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ আরনিয়া ফুফিয়ে কেঁদে দেয়। আরনিয়ার কান্নার শব্দ শুনে স্পর্শক ব্যস্ত হয়ে যায়।

আরু কী হয়ছে তোমার? কাঁদছো কেনো? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমায় বলো।

স্পর্শক পাপা কী করে পারলো আমার মাম্মা, বাবাই ( স্পর্শকের বাবা ) আর মামুনিকে ( স্পর্শকের মা ) খুন করতে? এখনো তাদের চিৎকার আমার কানে ভেসে আসে । এখনো মনে হচ্ছে তারা বলছে, আরু মা পালিয়ে যা নাহলে এই লোকটা তোকে মেরে ফেলবে। আরু মা তুই স্পর্শকের কাছে চলে যা। স্পর্শক থাকতে কেউ তোর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। চোখের সামনে তাদের মরতে দেখেছি। তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। কি কষ্ট ছিল সেই মৃত্যু যন্ত্রনা।

আরু এহসান খান তোমার পাপা না।

কী বলছো এসব?

যা বলছি সত্যি এহসান খান তোমার মামা।

এটা কী করে সম্ভব? আমি ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি উনি আমার বাবা আর আজকে তুমি হঠাৎ করে বলছো উনি আমার মামা।

এতোদিনেও তুমি খেয়াল করোনি উনার পদবী খান আর আমাদের পদবী আহম্মেদ।

সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি আমাকে সব ক্লিয়ার করে বলো। উনি যদি আমার মামায় হন তাহলে আমাকে কেনো মারতে চাইলেন নিজের বোনকে কী করে মেরে ফেললেন।

মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। জানো আরুপাখি এই পৃথিবীর কিছু মানুষ বড্ড নিষ্টুর। তাদের কাছে অর্থের বাইরে সবকিছু মুল্যহীন। অর্থের কাছে সম্পর্কগুলোও মুল্যহীন। তেমনি তোমার মামাও একজন অর্থ লোভী মানুষ। টাকার নেশায় পড়ে নিজের বোনকে খুন করছেন নিজের ভাইকে খুন করেছেন এমনকি নিজের বাবাকেও খুন করতে চেয়েছিলেন।

এভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে তুমি সবকিছু ক্লিয়ার করে বলো।

আজকে তোমাকে সবকিছু খোলে বলবো। সবকিছুর সূচনা হয়েছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে। এহসান খান মানে তোমার বড় মামা সম্পত্তির জন্য তোমার নানাকে খাবার সাথে বিষ মিশিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন তোমার ছোট মামির জন্য।তোমার ছোট মামি এহসান খানকে খাবারে বিষ দিতে দেখে ফেলেন। তিনি গিয়ে বাড়ির সবাইকে বলে দেন এ কথা। তোমার নানা রেগে এহসান খানকে অনেক বাজে কথা বলে অপমান করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং উনাকে ত্যাজ্য পুত্র করে দেন। তখন তিনি আমাদের বাসায় মিষ্টি মা মানে তোমার মার কাছে আসেন। তোমার মা বরাবরই বড় ভাই পাগল ছিলেন। উনার কাছে পুরো দুনিয়া একদিকে উনার ভাই আরেকদিকে। এতোটাই বিশ্বাস করতেন। উনার মতে উনার বড় ভাই কোনো অন্যায় কাজ করতেই পারেন নাম। এহসান খান এসে তোমার নানা আর ছোট মামার নামে মিথ্যা কথা বলেন মিষ্টি মার কাছে আর উনি বিশ্বাস করে ফেলেন।

তারপর কি হয়ছিল?

মিষ্টি মা এহসান খানকে বিশ্বাস করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেন।

২০ বছর আগে

বোন বাবা তো আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন এখন আমি কোথায় থাকবো?

তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই আজ থেকে তুমি এই আহম্মেদ বিলাতে আমার কাছে থাকবে।

এ হয় না বোন নিজের ছোট বোনের শ্বশুরবাড়িতে বড় ভাই হয়ে কী করে থাকবো।

মিসেস রেশমি আহম্মেদ ( স্পর্শকের মা ) এগিয়ে এসে বলেন,

কেনো হয় না এহসান ভাই? আপনি আমাদের নিজের লোক ভাবতে পারছেন নাহ।

ছিঃ ছিঃ বোন এসব কী বলছো? তোমরাই তো আমার নিজের লোক। ( এহসান খান একটু নাটক করে বললেন)

পলা ( আরনিয়ার মা) এহসান ভাই আজ থেকে এখানেই থাকবেন তুই রহিমাকে ( স্পর্শকদের বাসার কাজের লোক) গেস্ট রুম পরিষ্কার করতে বল।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে