বড়_বেশি_ভালোবাসি part: 7

0
1797

বড়_বেশি_ভালোবাসি
part: 7
writer : Mohona

.

যারজন্য….
মেরিনের শাড়িটা একটু ওলট পালট হয়ে গেলো। পেটের দিকটা একটু বেরিয়ে গেলো। আর কালো মিচমিচে তিলটা বেরিয়ে গেলো। নীড়ের ভীষন হাসি পাচ্ছে। আর দেখতেও cute লাগছে। তবে মেরিনের শাড়িযে loose হয়ে গেছে। তখনই রুবেল পানির বোতল নিয়ে দৌড়ে এলো। যা দেখে নীড়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আবার দেখলো যে মেরিন পানি খাচ্ছে আর রুবেল ওর কোমড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন তাকিয়ে আছে তা দেখার জন্য ওও তাকালো। আর দেখলো মেরিনের পেট খানিকটা বেরিয়ে আছে। পেটের তিলটা দেখা যাচ্ছে। যা দেখে নীড়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রেগে আগুন হয়ে গেলো। রেগে বোম্ব হয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। মেরিন তো নীড়কে দেখেনি। ও পানি খেয়েই দৌড়ে washroom এ গেলো। গিয়ে মাথায় একটু পানি দিলো।

.

washroom থেকে বেরিয়ে এলো। আসতে আসতে খপ করে শাড়ির কুচিই সব খুলে গেলো। নীড় সেটাও দেখলো। কুচি ওঠাতে না ওঠাতেই মেরিনের গালে সপাত করে ১টা থাপ্পর পরলো। মেরিন ধপ করে পরে গেলো। কে থাপ্পর দিয়েছে সেটা না দেখলেও নীড়ের শরীরের ঘ্রাণে ঠিকই বুঝে গেছে এটা নীড়। কিন্তু ও যে ঘাড় ঘুরিয়ে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করবে অথবা নীড়কে বকাঝকা করবে তারও উপায় নেই। কারন নীড়ের থাপ্পরের ভয়াবহতায় মেরিনের কথা বলা তো দুরের কথা ঘাড় ঘোরানোরও শক্তি নেই। নীড় মেরিনকে টেনে তুলে ১টা খালি রুমে নিয়ে ওর কুচি ঠিক করে
বলল: নিজের শরীর দেখাতে মন চাইলে অন্যকোথাও যাবা… ভার্সিটিতে আসবেনা…. আর যদি কখনো শাড়ি পরতে দেখি তো জানে মেরে দ…
আর বলতে পারলোনা। কারন মেরিনের চোখের পানি। ও মুখে কিছু না বললেও রাগের চোটে যে কুমাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে। মেরিনের গালের দিকে তাকিয়ে দেখে গাল লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে রক্ত পরবে। আরো দেখে যে মেরিন নিজের হাতে এতো শক্ত করে খামছি দিয়ে রেখেছে যে হাত থেকে রক্ত পরছে। আসলে মেরিন যখন নিজের রাগ প্রকাশ না করতে পারে তখন নিজেকেই hurt করে।
নীড় মনে মনে: কি করে ফেললাম…..
নীড়: মে….
মেরিন দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। নীড়ও পিছে পিছে গেলো। মেরিন পাগলের মতো drive করছে। নীড়ও পিছে পিছে আছে। মেরিন কখনো কোনো ফুলের টোকাও খায়নি। ও মাইর জিনিষটাকে ভীষন বেশি ভয় পায়। তারমধ্যে নীড় ওকে থাপ্পর মেরেছে।

.

মেরিন পারলে নীড়কে এখন খুনই করে ফেলে। উল্টা পাল্টাভাবে drive করতে করতে মেরিনের গাড়ি গিয়ে লাগলো মেঘের গাড়ির সাথে ধাক্কা। লাগলো।
মেঘ: মিষ্টি বাচ্চা…
মেঘ নেমে দৌড়ে মেরিনের গাড়ির সামনে গেলো। দেখলো মেরিনের কপাল লাল হয়ে আছে।
মেঘ: মিষ্টি এই মিষ্টি… সোনাবাচ্চা…. কি হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছো?
মেরিন: হামম।
মেঘ: কি হয়েছে?
মেরিন: কিছুনা বাসায় যাবো….
মেঘ: হ্যা হ্যা অবশ্যই… এই ফালতু গাড়ি আর চালাতে হবেনা….
মেঘ মেরিনকে বাসায় নিয়ে গেলো। নীড়ের মরে যেতে ইচ্ছা করছে। কি করে ফেলল ও। নিজের হাতকে অনেক আঘাত করলো। ক্ষত বিক্ষত করলো।

.

রাতে….
নীড় মেরিনকে দেখতে গেলো। আর গিয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে এলো। কারন মেরিনের পাশে ওর মা-বাবা-ভাই শুয়ে আছে। আসলে থাপ্পর খেয়ে মেরিনর জ্বর চলে এসেছে। পরদিন নীড় জানতে পারলো যে মেরিনের জ্বর এসেছে । কিন্তু সেদিন রাতেও নীড়কে ফিরে আসতে হলো।

.

৩দিনপর….
রাতে…
নীড়: হয়তো আজও আমাকে ফিরে আসতে হবে….
আজকে গিয়ে নীড় দেখলো মেরিন একাই ঘুমিয়ে আছে। নীড় গিয়ে মেরিনকে বুকে জরিয়ে কাদতে লাগলো। আর যে গালে থাপ্পর মেরেছে সেখানে অসংখ্য চুমু দিলো। মেরিনের ঘুমের ঘোরে মনে হলো কেউ ওকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। আর ঘাড়টাও ভেজা ভেজা লাগছে।

.

১৫দিনপর….
এই ১৫দিনে রোজ রাতে নীড় মেরিনকে জরিয়ে ধরে কেদেছে। ১৫দিনপর আজকে মেরিন ভার্সিটিতে গেলো। মেঘ নিয়ে গেলো।
মেঘ: মিষ্টি বাচ্চা ক্লাসে যেতে পারবে তো?
মেরিন: হামম ভাইয়া….
মেঘ চলে গেলো। মেরিন ভেতরে ঢুকে অবাক। কারন সারা কলেজে sorry ভরা ….। সবার গলায় sorry বোর্ড ঝোলানো। সেই সাথে সবার হাতে সাদা গোলাপ । সবাই এক এক করে মেরিনের হাতে সাদা গোলাপ দিচ্ছে আর sorry বলে চলে যাচ্ছে। মেরিন এর আগা মাথা কিছুই বুঝলোনা। ফুল নিতে নিতে মেরিনের হাত ভরে গেলো। বিরক্ত + অবাক হয়ে class এ গেলো। দরজাতে লেখা ক্লাস পুল সাইডে হবে।

.

মেরিন: পুল সাইডে ক্লাস? কাহিনি কি? জাহান্নাম হোক।পুলে হোক আর জুলে হোক আমার বাপের কি? শালা গরু মার্কা ইয়া lover পেয়ে সব ভুলে গেছিস। একটু বললিও না যে আজকে এই ভার্সিটিতে sorry উৎসব । জানলে তো আমিও গলায় sorry বোর্ড আর হাতে সাদা গোলাপ নিয়ে আসতাম। নিজেকে ফকিন্নি মার্কা মনে হচ্ছে। আমার কি গোলাপ কেনার টাকা নেই? সবাই কি সুন্দর sorry উৎসব পালন করছে। আমিই বিরত। ইয়ারে যেদিন আমি bf পাবোনা সেদিন তোকে চিনবোও না… দেখেনিস শালা রাক্ষসের শশুড়…
তখন john নামের ১টা ছেলে এসে মেরিনকে সাদা গোলাপ দিয়ে
বলল: sorry মেরিন।
মেরিন: জন জন… sorry জন.& happy sorry festival …☺️.
জন:!!!
মেরিন পুল সাইডের ওখানে যাওয়া ধরলো।
দেখলো ফুলের পাপড়ি দিয়ে রাস্তার মতো করা আর sorry লেখা। আর ২পাশে তো sorry বোর্ড আছেই।
মেরিন : এই ভার্সিটিতে এতো cute করে sorry festival হয়!!! আমাদের বাংলাদেশে তো কখনোই এই sorry festival হয়না। ধুর ভালো লাগেনা।
মেরিন এগিয়ে যেতে লাগলো। এগিয়ে গিয়ে অবাক। কারন ওখানে কেউ নেই ১জন ছাড়া। কেউ ১জন নিল ডাউন করে কানে ধরে বসে আছে।তার পিছন দেখা যাচ্ছে। মেরিন বুঝেও বুঝতে পারছেনা যে এটা নীড়…

.

মেরিন এগিয়ে গেলো।
মেরিন: কে???
নীড় ওভাবেই পিছে ঘুরলো। নীড় আজও সব কালো পরেছে। মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ব্যান্ডেজ, দাড়ি টারি বেরে গিয়েছে। পাক্কা বিরহ প্রেমিক লাগছে। নীড়কে দেখে মেরিনের বুকটা মোচর দিলো।
মেরিন মনে মনে: আহারে আমার dark chocolate টা একে বারে কিসমিস হয়ে গেছে। হোক আমার বাপের কি? huh… নির্ঘাত ওই চিড়িয়াখানার ছারপোকাটের সাথে break হয়েছে। তাই এমন ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে। হোক আমার বাপের কি?
ভেবেই মেরিন চলে আসতে নেয়।
নীড়: মেরিন….
এমন মায়া ভরা সুরে এতো ভালোবেসে কেউ কখনো মেরিনের নাম ধরে ডাকেনি।
তাই না চাইতেও মেরিন দারিয়ে গেল। ঘুরলো।
নীড়: i m sorry… আমি জানি অনেক জোরে থাপ্পর মেরেছি। আমি তোমার অপরাধী… ক্ষমা করে দাও.. আসলে সেদিন মাথা ঠিক ছিলোনা। রুবেলকে তোমার পেটের তিলটা বাজে ভাবে দেখছিলো। যেটা আমার সহ্যসীমার বাই…
মেরিন: আমার পেটে তিল আছে? কোথায় কোথায়? হায় হায় আমি দেখলাম না… এখনই দেখবো।
নীড় আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে। মেরিন জামায় হাত দিলো। তখন খেয়াল হলো যে ও কি করছে। থেমে গেলো। আর ঠিক তখনই নীড়ও মেরিনের হাত ধরে
ফেলল: এই পাগল হলে নাকি?
মেরিন: আপনি কি ভেবেছেন আপনার মতো ১টা অসভ্য লোকের সামনে আমি … huh.. লুচি পরাটা….
নীড়: আমি অসভ্য ? আমি লুচি পরাটা? সাহস থাকলে আবার বলো….
মেরিন: কেন বললে কি আবার থাপ্পর মারবেন?
নীড়: i m s…
মেরিন: not needed mr. chowdhuri….
নীড় অবাক হলো । কারন মেরিন ওকে এভাবে ডাকলো। বুঝতে পারলো রেগে আছে।
নীড়: মের…
মেরিন: its miss খান for you… সেদিন অপ্রস্তুত ছিলাম তাই থাপ্পর মারতে পেরেছিলেন। আজকে থাপ্পর মারতে আসলে সেই হাতটা গলায় ঝুলবে।
নীড়: imressive… এই attitude টা বাকী ছিলো দেখার। আজকে ১৬আনা পূরন হলো। আর আমাকে পায় কে।
মেরিন: আপনার খুশি হওয়ার কারন জানতে পারি?
নীড়: তোমার ঢেড়শ মার্কা মাথায় ঢুকবেনা। এখন বলো ক্ষমা করবে কিনা?
মেরিন চলে যেতে নিলো।

.

নীড় মেরিনের কোমড় টেনে সামনে আনলো। এক্কেবারে নিজের সাথে মিশালো। মাঝে একটুও ফাক নেই। সেই সাথে মুখটাও ঠিক মেরিনের সামনে। মেরিনের চোখ রসোগোল্লার মতো হয়ে গেলো। জমে বরফ হয়ে গেছে মেরিন। নীড় মেরিনের কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
নীড়: so…. sorry accept করবে? ক্ষমা করবে…
মেরিন উত্তর কি দিবে। এতোক্ষন তো বরফ হয়েই ছিলো আর এখন মরে যাওয়ার উপক্রম। কারন নীড়ের মুখ ওর ৩ইঞ্চি দূরে। নীড় বলা কথা কিছুই ঠিকমতো শুনতে পায়নি। নীড়ের কথা গুলো ওর মুখে বারি খাচ্ছে।
মেরিন মনে মনে: এর ঠোটগুলা দেখতে পুরাই cream chocolate লাগছে। খেয়ে ফেলবো। এ এতো কাছে কেন? সর ভাই হুশ হুশ.।।। হুরর…হুররর…
নীড় মনে মনে: না এভাবে আর বেশিক্ষন থাকা যাবেনা। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নীড় ঝাড়ি মেরে
বলল: বলো sorry accept করেছো কিনা….
মেরিন কেপে উঠলো।
মেরিন: আম্মুগো….
নীড়: বলো ক্ষমা করেছো কিনা?
মেরিন: উহু…
নীড়: করবেনা?
মেরিন: উহু…
নীড় মেরিনকে আর শক্ত করে ধরলো।
নীড়: করবে ক্ষমা….
মেরিন মনে মনে: এখন যদি হ্যা না বলি তবে আমাকে আলুভর্তা বানিয়ে ফেলবে।
নীড়: বলো….
মেরিন: হামম।
নীড়: কি হামম?
মেরিন: ক্ষক্ষক্ষমা করেছি…
নীড়:সত্যি?
মেরিন: হামম।
নীড়: মন থেকে?
মেরিন: হামম।
নীড়: prove করতে পারবে?
মেরিন: এ্যা।
নীড়: এ্যা না হ্যা। বলো prove করতে পারবে?
মেরিন: হামমম। ?।
নীড়: তোমাকে ছারার পর আমার হাতে তোমর style এ কামড় দিবে।
মেরিন: হামম।
কি??
নীড়: হ্যা। দিবে কামড়?
মেরিন জনমে এমন অবাক হয়নি।
নীড়: কি হলো বলে। দিবে?
মেরিন: হামম।?।
নীড়: জোরে দিবে কিন্তু…
মেরিন:হামম।?।
নীড় মেরিনের কপালে kiss করলো। এরপর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো।

.

নীড়: looks better …. পাগলি….
নীড় মেরিনকে ছারলো।
নীড়: কি হলো? কামড় দাও।
মেরিন:….
নীড়: ভুলে গেলো আমি তোমাকে থাপ্পর মেরেছি…. মেরিন বন্যা খানকে…. মেঘ খান থুরি গাম্বাট খানের বোনকে মেরেছি।
মেরিন: খবরদার আমার ভাইয়াকে গাম্বাট বলবেন না।
নীড়:বলবো বলবো বলবো। মেঘ খান is a গা….
আর বলতে পারলোনা। মেরিন রেগে গিয়ে নীড়ের হাতে কামড় দিলো। নীড়ের উদ্দেশ্য
হাসিল হলো।

.

একটুপর…
মেরিন নীড়কে ছারলো। দেখলো নীড় ১টা মিষ্টি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মেরিন :আরেকবার আমার ভাইয়াকে গাম্বাট বললে সব রক্ত খেয়ে ফেলবো।
বলেই মেরিন চলে গেলো। নীড় মেরিনের কামড় দেয়া জায়গায় চুমু দিলো।
নীড়: মিষ্টি মোহ পাগলি….
তখন কেউ নীড়ের মাথার রক্তে ভেজা ব্যান্ডেজ ১টানে খুলে ফেলল। নীড় তাকিয়ে দেখে মেরিন। অবাক হলো ।
নীড়:তুমি?!!!

.

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে