বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে পর্ব-০৩

0
1943

বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে?
?পর্ব:৩
লেখা :Sakib Nisi?
.
আমি যে অপিকে ভালোবেসে ফেলেছি সেটা কি করে জানাবো এটাই ভেবে পাচ্ছি না। রাতভর চিন্তা করতেছি।
একে তো রাগী তারওপর বাড়িওয়ালার মেয়ে কি করা যায়???
যাইহোক আস্তে আস্তে ঠিক হবে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরদিন সকালে আব্বু অফিস যাবার আগে আমাকে বললো বিকেলে থাকতে। আমিও বুঝে গেলাম আজ আব্বু আবারো আড্ডা দিবে আমার সাথে। মানে হলো আব্বু আর আমি বেস্টুর মত (বাস্তবেও)।
আমরা একসাথে গান গাই আড্ডা দেই। আমার বন্ধু বান্ধবীরা সবাই আফসোস করতে থাকে এমনটা দেখে।
সকালে মেহজাবিনকে স্কুলে দিয়ে আমিও ভার্সিটি চলে গেলাম। সকাল থেকে অপিকে দেখিনি কেমন জানি লাগছে ওর জন্য। ভাবলাম দুপুরে যাবার সময় দেখা হবে নিশ্চয়ই।
সেদিনের মতো আজো ওর স্কুলের সামনে দিয়ে আসছি। কিন্তু পাচ্ছি না কোথাও। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হটাৎ দেখি কটকটি ওর বান্ধবীর সাথে বসে ফুসকা খাচ্ছে। আমি চুপচাপ ওর পিছনে গিয়ে দাড়াতে ওর বান্ধবী তাকিয়ে আছে মুখে একটা ফুসকা থাকায় কথা বলতে পারছে না। আমি অপির ফুসকার প্লেট থেকে দুহাতে ৪ টা ফুসকা উঠিয়ে টপাটপ গালে পুরে হাটা শুরু করলাম। এটা দেখে আশেপাশের সবার মুখে হাসির ঝলক। আর কটকটিটা চিল্লাতে চিল্লাতে কান ঝালাপালা করে দিলো। তাতে আমার কি?? আমি তো শুধু ফুসকা খেয়েছি।
বাসায় এসে খেয়ে অপিদের বাসায় গেলাম আন্টি নাকি যেতে বলেছে। ভয়ে তো আমার অবস্থা যায় যায়। অপি নিশ্চয়ই কিছু বলেছে, এভাবে ওর সাথে এমন করাটা মনে হয় আমার ঠিক হয়নি। আমি সবসময়ই একটু বেশি বেশি করে ফেলি। ধুরররর, আন্টি এখন কি বলবে আমাকে,,, না আর ওকে বিরক্ত করব না। এসব ভাবতে ভাবতে কলিং বেল বাজালাম। আন্টি এসে…
> আরে আবির এসো এসো।
> আন্টি কেমন আছেন?
> ভালো তুমি কেমন আছো, পড়াশোনা কেমন চলছে?
> এইতো আন্টি সবই ভালো চলছে। আম্মু বললো ডেকেছিলেন নাকি কি বলতে।
> হুমমম আসলে অপি বলছিল,,,,,,,,,,
[এটা শুনেই হার্টবিট বেড়ে গেলো আজ আমি শেষ ]
> কি কি কি বলছিলো আআআআন্টি?
> তুমি নাকি সুন্দর গীটার বাজাতে পারো…. অপি চায় তুমি ওকে প্রতিদিন গীটার বাজানো শিখাবে কিন্তু কোন না শুনতে চায় না।।
[ওওওওওওহহহহহহ বাচলাম তাহলে অপি উপরেই রাগ দেখায় আমার সাথে আর ভেতরে এতকিছু বাহ বাহ ]
> ওহ আচ্ছা এই কথা।।। ও যে রাগী আমার কথা শুনবে তো??
> না শুনলে পিটাবে,, আমি পারমিশন দিলাম হাহাহা।
> ওকে আন্টি ?? কিন্তু কখন শিখাবো??
> বিকেলে তুমিও ফ্রি ও ফ্রি। তখনই ভালো হবে। আর বাকি টাইমেও তুমি শিখাতে পারবে। এমন তো নয় যে খুব দুরে থাকো তুমি তাইনা।
> আচ্ছা সমস্যা হবে না। কিন্তু সে কই এখন??
> ওই যে টিভি দেখছে। যাও
> ওকে আন্টি।
যাক এখন একটু নয় অনেকটা ভালো লাগছে। আমি অপির আরো কাছে আসার সুযোগটা পেলাম। টিভির রুমে গিয়ে দেখি সোফায় বসে রিমোট হাতে নিয়ে বসে আছে। গিয়েই ওর হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিলাম আর সাথে সাথে চিল্লাতে শুরু করলো।
> আমমমমমমমমম্মু দেখো নাকবোচাটা আমার রিমোট নিয়ে গেছে এএএএএএএ।
> আমি কিছু বলব না তোরা তোরা সামলা।
আমি বললাম।
> এত চিল্লাও কেন? ক্যাচকেচি পাখি একটা।
> তুমি দুপুরে আমার ফুসকা খাইছো না বলে এখন আমার রিমোটটা ও নিলে তোমার সাহস কিন্তু দিনদিন বাড়ছে। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।
> সে তো পরে দেখব আগে বলো, আম্মু কে গীটার বাজানোর কথা বলেছো আর কিছু বলোনি তো??
> আর কি বলব।
> ওহ তাহলে ঠিক আছে।
> কি ঠিক আছে?
> কিছু না ,, শুনো আজ বিকেলে আমরা বাইরে আড্ডা দিব তুমি রেডি থেকো। আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
> কই যাব শুনি?
> এইতো বাসার সামনেই আমার বন্ধু বান্ধবী আর আব্বু ও থাকবে যেখানে আমরা গান গাই আড্ডা দেই। আজ থেকে তুমিও থাকবে।
> সত্যি??
> হুমমম সত্যি আমি তোমার আম্মু কে বলেছি আমার কথা না শুনলে তোমাকে পিটানোর ও পারমিশন দিছে।
> ইশশশশ কত্ত শখ আমাকে পেটাবে। অপির হাতে উল্টো পেটানি খাবা।
অপির চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে বাতাসে। তাই চুলগুলো ধরে জোরে টান দিয়ে বললাম।
> আজ থেকে তোমার ঘুম হারাম করবে এই আবির বলেই চলে এলাম।
অপির ওই রাগী চোখটা খুব মায়াবী। ইচ্ছে করে ওর চোখের কাঠগড়ায় আসামি হয়ে সব দোষ স্বীকার করে সারাজীবন থেকে যাই। অসম্ভব সুন্দর ওই চোখ আর তার মুখের মায়া। ভালো না বেসে কই যাব আমি??
বিকেলে গীটারটা নিয়ে বের হতেই মেহজাবিন জড়িয়ে ধরে বসে আছে সে ও সাথে যাবে। ও গান শোনার পাগলি। এদিকে অপিকেও সাথে নিয়ে বের হলাম। বন্ধুরা সব এসে বসে আছে আমাদের পুরানো জায়গায়। কিছু সময় পর আব্বু আসবে।
আমার সাথে অপিকে দেখে সবাই খুব অবাক হয়ে গেছে। কারন আমি এই প্রথম কোন মেয়েকে সাথে নিয়ে বের হয়েছি। গান গাওয়ার সুবাদে অনেক মেয়ে কাছে আসতে চায়। কারন মেয়েরা গীটার বাজানো ছেলেদের অন্য রকম ভাবে পছন্দ করে।
তারপর সবার সামনে গিয়ে অপিকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবাই মিলে একসাথে Hi বলে উঠলো। আর বান্ধবী গুলো ওকে পেয়ে খুব মজা করতে লাগলো। মেহজাবিন কে কোলে নিয়ে আদর করছে সবাই।
তখন আমি গীটার নিয়ে বসলাম। এরমধ্যে আব্বু ও হাজির। আব্বু এসে আমার পাশে বসলো। মেহজাবিন আব্বুর কোলে। আমার আরেকপাশে অপি। তারপর গান ধরলাম একসাথে….
ধন্য ধন্য মেরা সিলসিলা…
এলো দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া……..
গানের কোরাস ছাড়তেই চারপাশে সবাই জড়ো হয়ে একতালে গান শুনছে আর হাততালি দিচ্ছে। এমনটা হরহামেশাই হয়। বিশেষ করে শহরে।
এর পর আব্বু তার কোমল কন্ঠে সুর তুললো লালনের বিখ্যাত একটা গান,,,, আমার গান শেখাটাও মুলত আব্বুর থেকে। উনি আমার বেস্টু, ( বাস্তব জীবনেও)।
মিলন হবে কতদিনে………
ওহ আমার মনের মানুষের ও সনে….
আমি গীটারে সুর তুলি আব্বু গায়, আবার আমিও।। এভাবেই জমপেশ আড্ডা চলতে থাকে। হটাৎ খেয়াল করি দু তিনটা অল্পবয়সী মেয়ে আমাদের ছবি তুলছে।
এড়িয়ে গেলাম। অপি খুব খুশি হয় এমন আড্ডায়। ওকে বললাম..
> আজ তোমাকে শুনালাম কাল থেকে প্রাকটিস শুরু করাবো।
> তুমি আংকেল এত সুন্দর গান গাও জানতাম না তো।
মুগ্ধ করে দিয়েছো।
> থাক এতকিছু বলতে হবে না। কাল দেখব।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমরা সবাই উঠলাম। মেহজাবিন ফুসকা খাবে বলে বায়না করলো। আব্বু আমাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বললো ওদের কে নিয়ে ফুসকা খেয়ে বাসায় আসতে। আমিও খুশি। ??
একটা দোকানে বসে ফুসকার অর্ডার করলাম।
অপিকে বললাম…
> দুপুরের গুলো ফেরত দিব টেনশন করো না। ৪ টা ফুসকা নিছিলাম বলে কেমন করে চিল্লা চিল্লি করেছো কটকটি একটা।
> এই ছেলে একদম পিটাবো কিন্তু এখন। আমার ফুসকা খেয়ে আবার বড় বড় কথা।
> এএএএএহহহহ কটকটি।
> নাকবোচা।
> তোমার নাকে ভিট নাই, প্লায়ারস দিয়ে টেনে লম্বা করে দিব একদম।
ঝগড়া করতে করতে ফুসকা চলে এলো। মেহজাবিন একা একা খাচ্ছে। আর আমি অপিকে আস্তে করে বললাম।
> আমি খাইয়ে দেই??
> ইশশশ কত শখ নাকবোচাটার। আমার হাত আছে আমি একাই খেতে পারব হুহহহহ।
ওর দিকে করুন হয়ে তাকিয়ে আছি।
একটার পর একটা খেয়েই যাচ্ছে।
আমি চুপচাপ বসে আছি ওর খাওয়া শেষ হলে আমার টাও ওকে দিলাম। কিছু না বলেই এটাও খাচ্ছে। রাক্ষসী একটা।
তারপর আমরা সবাই বাসায় ফিরতে লাগলাম।
> অপি কাল সকালে একসাথে বের হবা??
> কেন?? কি দরকার??
> না মানে একসাথে ই যেতাম। একদিকে তো স্কুল আর ভার্সিটি।
> দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারি। সব ছেলেদের একটাই মতলব সুযোগ খোজা। আজ সাথে যাবে কাল বলবে ভালোবাসি। যতসব। এসব শুনতে শুনতে কানটা পচে গেছে আমার।
> কি বলো এসব অপি। আমি তো শুধু বললাম একসাথে যাব আর তার জন্য এমন সব কথা??
> সব ছেলেদের চেনা আছে। তুমি শুধু গীটার বাজানো শিখাবে এর বেশি কোনকিছুতে সুযোগ খুজলে তোমার খবর আছে। মনে রেখো।
ওকে এখনো আবিরকে চিনোনি এবার থেকে চিনবে।
মনে মনে ভাবলাম এত রাগ সামলাবো কি করে। যা ভেবেছিলাম হয়তো তা নয়। ও তো সুযোগই দিচ্ছে না। ঠিক আছে কাল থেকে আমিও আর বিরক্ত করব না। নিজের মত করে থাকতে হবে। দেখি তাতে ফলাফল কি আসে।
ওকে ওর বাসার সামনে দিয়ে আমি রুমে এলাম। ওর ওই কথাগুলো খুব ভাবালো আমাকে। একটু আগেও ভালো করে কথা বললো আবার এত রাগী রাগী কথা শুনালো। কিছু ই বুঝিনা ওর মনের বেপার।
পরদিন সকালে অপি ওর বাসা থেকে বের হবার ২০ মিনিট আগেই আজ বের হয়ে আমার বাসার সিঁড়ি তে ওয়েট করছে। আমি বের হতেই এমন একটা ভাব নিলো কেমন জানি ও মাত্র ই নামছে আর আমি ওর জন্য ওয়েট করে আছি।
> লজ্জা করে না তোমার?? কাল বললাম যে একসাথে যাব না। আর তুমি আমার জন্য ওয়েট করে আছো পিছু নেয়ার জন্য?? বেহায়া একটা। ????
অপির কথা শুনে আমার হার্টঅ্যাটাক হবার যোগাড়। বলে কি এই মেয়ে??? আমি নাকি ওর জন্য ওয়েট করে আছি???
> মানে কি?? কে তোমার জন্য ওয়েট করে আছে?? আমি তো মাত্র নামলাম।।
> চুপ বেহায়া,, কি মনে করো কিছু বুঝিনা তাইনা। সুন্দরী মেয়ে দেখলে ই তোমরা এমন করো যতসব।
> অপি বেশি হচ্ছে কিন্তু এখন।
> ওকে ওকে শুধু আজই সাথে যাব কাল থেকে আর না মনে থাকে যেন ঠিকাছে?? (খুব ভাব নিয়ে নাকে আঙুল ঘসে বললো)।
অপির এই স্টাইল টা আমার সবচেয়ে প্রিয় ?
> শুধু আজই???
> হুমমম আজই নাকবোচা………..
চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে