বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে পর্ব-০৪

0
1774

বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে?
?পর্ব:৪
লেখা : Sakib Nisi
.
> হুমম আজই নাকবোচা।
> দেখো অপি,, আমার নাক অন্তত তোমার থেকে ভালো বুঝলে।
> আমি তোমাকে নাকবোচাই বলব কি করবা শুনি।
> তোমাকে আমি ছেচে শরবত বানিয়ে খাব কটকটি।
> তাহলে কিন্তু যাব না একসাথে।
> ওই না না,, আমিতো এমনি বলছি। দুষ্টামি করছি হেহেহেহে।
>,একসাথে যাব বলেছি কিন্তু তার মানে এটা না যে আমার গা ঘেঁষে থাকবা যাও ৩ হাত দুর থেকে হাটো।
> আজিব তো,, আমি কখন তোমার গায়ে পড়লাম?? নিজেই তো বারবার আমার গায়ে গায়ে চলতেছো।
> ওহহ আমি গায়ে ঘষে চলি তাইনা,?? ওকে সরেই গেলাম এবার দেখি কে কাছে আসে।। [ মুখ ঘুল্লি দিয়ে বললো ]
আমি অপির হাতে আস্তে করে আমার হাতটা রাখার চেষ্টা করলাম। আমার আঙ্গুল দিয়ে ওর একটা আঙ্গুলে ছোয়া দিতেই ও আমার হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিল। আমি আবারও চেষ্টা করলাম আবার ফেলে দিলো।
এবার আমি শক্ত করে ধরে বসলাম ওর কোমল হাতটা। ও আমার দিকে তাকিয়ে রাগি চোখ দুটোতে আগুন দেখালো। আমি মুচকি হাসি দিলাম।
কিন্তু ও হাত ছাড়ানোর কোন চেষ্টা করেনি। একটু পর বললো,,,
> এই যে মিস্টার নাকবোচা, তুমি যেভাবে আমার হাতটা ধরে আছো এটা যদি আমার বফ দেখে তবে আমার রিলেশনশিপ টা নষ্ট হয়ে যাবে।। ও কষ্ট পাবে,, আর ওর কষ্ট আমি কি করে সহ্য করব বলো?? হাতটা ছেড়ে দাও
অপির মুখে এই কথা শুনে আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম।। ওর বফ আছে?? আমি তাহলে এতদিন ভুল জেনেছি।
> অপি?? কি বলছো এসব?? তোমার বফ এলো কোথা থেকে?? আগে তো শুনিনি?? আর কে তোমার বফ??
> আজিব তুমি কয়দিন চিনো আমাকে?? আমার সবকিছু কি তোমাকে বলে করতে হবে নাকি?? কড়া গলায় বললো।
কষ্ট পাচ্ছি মনে মনে কিন্তু মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বললাম..
> আগে বলবা না আমাকে?? আমি ওর সাথে পরিচিত হতাম।।।
> সময় হলেই জেনে যাবে।। এখন যাও আমার স্কুল এসে গেছে।। টাটা বাই।
> হুমমম বাই,,, সাবধানে থেকো।
অপি চলে গেলে আমি ভার্সিটির দিকে যাচ্ছি।।। কি শুনলাম আমি?? যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম আর সে অন্যের স্বপ্নের রাণী হয়ে আছে,,,,,,, হায়রে আবির তোর কপালে ভালোবাসা নাই।।। ভুলে যা সবকিছু কাওকে বুঝতে দিস না তাহলে সবাই হাসবে।। নিজেকে কোনরকম একটা বুঝ দিচ্ছি।।
দুপুরে ফেরার পথে অপিকে দেখি একটা ছেলের হাত ধরে হাসছে। মন চাচ্ছে ওই ছেলের হাতদুটো কেটে ফেলি। আমার অপির হাত ধরে হাসছে কত বড় সাহস ওর।।। এটাই তাহলে ওর বফ মনে হয়।
ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছি আর ওদের দিকে তাকিয়ে আছি,, অপি আমাকে দেখেই ওই ছেলের হাতটা আরো জড়িয়ে ধরে নেকামো করছে,,, আমার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। রাগকে কন্ট্রোল করে চলে আসলাম। দুপুরে খেতেও ইচ্ছে করছে না। বিকেলের অপেক্ষায় আছি কখন অপির কাছে যাব।
কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি হটাত চিমটির বেথায় ঘুম ভাংলো। দেখি অপি আমার পাশে বসে রাগি চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে।।
> পড়ে পড়ে ঘুমানো হচ্ছে?? ক্লাস নিবে কে??
> ওহহ ঘুমায় গেছিলাম সরি।। একটু ওয়েট করো ফ্রেশ হয়ে আসি।
> আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আমার বিছানায় নিজের দখল নিয়ে গীটার নিয়ে টুংটাং করছে অপি।
> শুনো গীটারের প্রথম কথা হলো প্রতিটা স্ট্রীং কে ফিল করতে হবে। কান দিয়ে নয় মন দিয়ে অনুভব করবে।
অপির একটা আঙ্গুল দিয়ে স্ট্রীং গুলোকে ছুয়ে দিচ্ছি আর ও চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। আজ ওকে শুধু স্ট্রীং গুলোকে পরিচিত করালাম আর বেসিক টা নিয়ে বললাম। একটু পর আম্মু কিছু নাস্তা দিয়ে গেলো। আমি অপিকে বললাম….
> তোমার বফ টা খুব কিউট আছে।। খুব মানিয়েছে তোমাদের।।
> কি হিংসে হয়??
> না তা কেন হবে?? এমনি বললাম। কাল থেকে তো আর তোমার সাথে শুধু বিকেল ছাড়া দেখা হবে না আমিও আর তোমাকে বিরক্ত করব না। আমি তো চাইনা আমার জন্য তোমার রিলেশন নষ্ট হয়ে যাক।
> হটাৎ এত ভালো হলে কি করে?? এলাকায় কোন মেয়ের প্রেমে পড়ছো নাকি??
> ধুররর না,,,
> হুমম বুঝি, যদি এমন কেউ থাকে তো বইলো অপি সব মেনেজ করে দিবে।।
> দরকার নেই।
> ওকে এখন বাসায় যাব থাকো তুমি।
> আচ্ছা যাও।
মন খারাপ করে চুপ করে মাথা নিচু করে আছি। অপি বুঝলো ওর সাথে ওই ছেলেকে দেখে আমার মন খারাপ। রুম থেকে যাবার আগে আমার লম্বা চুলগুলো টেনে কিছু চিমটি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো…
আমি ওদিকে খেয়াল না করে গীটারটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। আমার রুমের ঠিক ওপরটাই অপির রুম। একই ভাবে বারান্দা। আমি গীটার নিয়ে গান গাইছি হটাত্ৎ দেখি আমার বারান্দায় ওপর থেকে একটা সুতায় পেচানো চিরকুট নেমে এলো। এটা নিশ্চয়ই অপির কাজ।। চিরকুটটা খুললাম তাতে লেখা
“” বারান্দায় বসে গীটার বাজালে কারো মনে প্রেম জাগে দয়া করে এভাবে কাউকে নাজেহাল করবে না “”
আমি অবাক হয়ে গেলাম। পাগল নাকি মেয়েটা কখন কি করে কি বলে কিছু ই বুঝিনা।
আমি চিরকুটে লিখে দিলাম।
“””যার যার বফ নিয়ে সে সে সুখি থাকুক “””
চিরকুটটা পেয়ে অপি কিছু সময় পরেই আমার রুমে এসে আমার কান টেনে বললো।
> কি বললি তুই?? আমার বফ আছে তাতে তোর কি?? তুই এসব বলার কে??
> আরে ছাড়ো ব্যাথা লাগছে তো,,, সত্যি বললে ফোস্কা পড়ে জানিতো।
> শয়তান নাকবোচা আজ তোকে মেরেই ফেলব আমি।।
একাধারে কিল ঘুষি চিমটি দিতেই থাকলো আমাকে। আর সহ্য করতে না পেরে অপিকে বিছানায় ফেলে দিলাম ধাক্কা দিয়ে। তারপর ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরে ওর কানের কাছে আস্তে করে বললাম।
> এভাবে আমার ওপর অত্যাচার করলে আমার বউ কষ্ট পাবে কেন মারছো আমাকে?? আমি তোমার কে??
> তুই আমার কচু,,, তোকে মেরে তোর বউকেও মারব।
> তোমার খুব রাগ তাইনা আজ তোমার রাগকে পানি করব।
> বলেই অপির ঠোঁটে…………. থাক না বললেও বুঝবে সবাই।।। টানা ৫ মিনিট কিস করে অপির চোখে চোখ রেখে বললাম
> আজ থেকে কোন ছেলের সাথে যদি দেখি হাত ধরে হাসাহাসি করতে সত্যি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।
> এএএএহহহহ আসছে জমিদার তোমার কথা শুনতে আমার বয়েই গেছে। আর আমাকে কিস করা তাইনা এর শোধও আমি তুলব মনে রেখো।
আমি অপিকে ছেড়ে দিলাম। ছাড়া পেয়ে ই আম্মুকে ডাকতে ডাকতে মিনিয়ে মিনিয়ে কান্না শুরু করলো।
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম সত্যি কি কথা বলে দিবে আমার অবস্থা আজ শেষ……
আম্মু আসতেই।
> আন্টি দেখোনা তোমার ছেলে আমার সাথে……..
> কি হইছে মামনি বলো।
> আমার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করে।
> কি করছে ও আমাকে বলো?
> আমি বললাম কাল সকালে আমাকে নিয়ে যেতে,, একসাথে স্কুলে যাব তা সে শুনবে না এটা বলতেই আমাকে একটা চড় দিছে।। এই দেখো হুহুহুুহু।
এটা কি মেয়েরে বাবা??? এমন পল্টি নিলো চোখেমুখে??
আর আম্মু ও ঠাস ঠাস করে গোটা কয়েক বসালো আমাকে।
আম্মু অপিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে আর অপি পিছনে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি আর চোখ মারতে মারতে চলে গেলো। শরীর জ্বলছে আমার ওর এমন ব্যবহার দেখে।
পরদিন সকালে উঠে ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছি তখন দেখি অপি সোজা বাসায় এসে হাজির। আমাকে জালিয়ে মারবে এখন উফফফ,,,, কেন যে ওর পিছনে লাগতে গেছিলাম…. ?????
> আমার সাথে নাকি যাবেনা কেউ তাহলে এত নাটক করে কেন এখন????
> বফ তো নাই থাকলে ওরে সাথে নিয়ে যেতাম। ??
> যাওনা তারে নিয়ে আমার কাছে কি?? ??
> তুই যাবি না আন্টি কে ডাকব?? ??
> থাক আর ডাকা লাগবে না যাচ্ছি।। আবার চড় খাওয়ার ইচ্ছে নেই আমার। ????
বিকেলে ফিরছি অপির স্কুলের সামনে আসতেই দেখি রাস্তার কিছু টা মাঝের দিকে অপি দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে ওর কানে হেডফোন। ওর বান্ধবী দোকানে কি জানি আনতে গেলো আর অপি দাড়িয়ে আছে।
এদিকে গাড়ি আসতে দেখে আমার বুকটা কেপে উঠলো দৌড়ে গেলাম ওর দিকে। প্রানের মায়া ছেড়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম বিনিময়ে আমি ও পড়ে গেলাম কিন্তু বুঝলাম কিছু টা ধাক্কা গাড়ির পাশ থেকে আমি পেয়েছি।
কিছু সময়ের জন্য সবকিছু জেনো থেমে গেছে চারপাশে। লোকজন আসতেছে দৌড়ে। অপি উঠে এসে সবার সামনে আমাকে ঠাস করে দুটো চড় বসিয়ে দিলো……
আমি অবাক হয়ে গেলাম,,,
> আমাকে টাচ করার সাহস কি করে হয় তোর?? রাস্তায় এসেও তোর জন্য একটু শান্তি নেই,, বাড়িতে ও জ্বালিয়ে মারিস এখানেও তাই,, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলি কেন?? রাস্তার ছেলে একটা ছোটলোক মেয়ে দেখলেই এসব করিস তোরা,,,,,,,
বুঝলাম ওর হেডফোন এর জন্য ও বুঝেনি ও কোন পরিস্থিতি থেকে বেচে গেছে। আশেপাশের মানুষের কথায় ও বুঝলো সবটা।
> এই মেয়ে তোমার জীবন বাচালো ওই ছেলেটা আর তুমিই তাকে মারছো???
> আমি মরলে মরতাম তাতে ওর কি?? আমাকে কেন টাচ করবে ও?? আর আপনারা জানেন ও আমার বাড়ির সামান্য একটা ভাড়াটিয়া মাত্র।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না খুব সুন্দর করে প্রতিশোধটা নিলো অপি। চরম সুযোগ টা কাজে লাগিয়েছে।। আমি বাকি সবাইকে থামিয়ে বললাম।
> Im sry,, আমি বুঝতে পারিনি।। আর কখনো আপনার সামনে এসে বিরক্ত করব না।।।
বলে হাটা শুরু করলাম পাশ থেকে কয়েকজন এসে বললো বাবা তোমার হাত থেকে রক্ত পড়ছে চলো আগে ড্রেসিং করাতে হবে। এতক্ষণ পর খেয়াল করলাম হাতের বেশ কিছু জায়গায় অনেক কেটে গেছে আর পিঠে ও কেটেছে।। রক্ত পড়ছে অনেক।।
হাতে ব্যান্ডেজ করে রিকশায় করে বাসায় এলাম ঘন্টা খানেক পর। আম্মু আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি করে হলো এমন বললাম।
> রিকশায় এক্সিডেন্ট করেছি পড়ে হাত আর পিঠে কেটে গেছে।
তাড়াতাড়ি বিছানায় শুইয়ে দিলো আম্মু। আর কিছু বললাম না।।। যতটা ব্যাথা শরীরে না পেয়েছি তার থেকেও কয়েকগুণ বেথা মনে পেয়েছি অপির কথায়। এভাবে না করলেও পারতো সবার সামনে।। তবুও ভালো আমার অবস্থান টা ভালো করে বুঝিয়ে দিলো।।
ঠিক করলাম ওর সাথে কোন কথাই আর বলব না… ওর সাথে দুষ্টামির ফল পেয়ে গেছি আমি।।। আর নয়…..
চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে