বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে পর্ব-০২

0
1945

?বাড়িওয়ালার রাগি মেয়ে?
?পর্ব:২
লেখা :Sakib ণিসি

আমি একবার একসিড়ি নামি তো দু সিড়ি উঠে যাই।
তারপর সাহস নিয়ে নামলাম কিছু না জানার ভান করে ওর পাশ দিয়ে যাবার আগেই আমার কলার ধরে বললো……?
> এই রোহিঙ্গা দাড়ান এক পা নড়বেন না। ( ভীষণ রেগে ),
> ওই কটকটি কি বললে আমি রোহিঙ্গা??
> কাল এসেই আমার পিছনে কেন লেগেছেন?? খুব সাহস তাইনা?? এখনো তো চিনেন নি আমাকে তা হলে আর এমন সাহস হতো না। হুুুহহহহ!!
> সাহস???? দেখবা???
> কি???
ওর লম্বা চুল গুলো জোরে টেনে এক দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নেমে আমি হাওয়া হয়ে গেলাম।
আর অপি রাগে জ্বলতেছে। আমি শিওর, পরের বার আমার কপালে শনি আছে।
আমার ভার্সিটির পাশেই ওর স্কুল।
আমি বিকেলে ভার্সিটি থেকে ফিরার সময় খেয়াল করলাম অপির স্কুলের কিছু মেয়ে দুইটা এলাকার বখাটে ছেলেদের খুব পিটাচ্ছে। সে কি মাইর।??
রাস্তায় ফেলে। একজনকে দেখে বুঝেছি ও হয়তো ওদের দলপতি। চুলগুলো বাধা খোপা করে। ছেলেদুটির কলার দু’হাতে ধরে বলছে।
> আর যদি কোনদিন কোন মেয়ের দিকে কুনজরে তাকাস বিরক্ত করিস তাহলে……
> আপা আমাগো ভুল হইয়া গ্যাছে মাফ কইরা দেন।
আমি কিছুটা দুর থেকে অন্য সবার মত দাড়িয়ে দেখছি। বেপারটা আসলেই ইন্টারেস্টিং। আর ওদের ওই দলপতির ঠিক পেছনে আমি। তাই ওর ফেসটা দেখতে পারছি না। খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওকে দেখতে।?
> হুমমম নামটা শুধু মনে রাখিস….. অপি আমার নাম।
বলেই ওদের ছেড়ে দিয়ে খোপাটা খুলে মুখ ফিরিয়ে রাস্তায় হাটা শুরু করলো। আমি তো পুরাই অবাক। এতো সেই কটকটি মানে অপি। তাহলে এতক্ষণ ওই মেয়েটা ওদের কেলাচ্ছিলো। [OMG?]
আর আমি এমন গুন্ডী লিডার এর সাথে কাল থেকে ঝগড়া করছি। ওরে বিরক্ত করছি। সকালে তাহলে ও ঠিকই বলছিল। চিনলে এমন সাহস হতো না।??
এমন ভাবেই ফেঁসে গেলাম ওইরকম মাইর যদি আমাকে দেয় তাহলে তো আমি শেষ। এসব ভাবতে ভাবতে হটাত দেখি অপি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে চোখ পড়তেই আমি এক পা দুপা করে হাটা শুরু করলাম। দুনিয়ায় আমি এখন কাওকে চিনিনা। কারো ডাকে সাড়াও দিব না।??
ওদিকে অপি ওর ছেলাবেলাকে আমার দিকে দেখিয়ে দিলো। ওরা দৌড়ে আসছে বাধ্য হয়ে আমিও দে দৌড়।?
বেশিদুর যেতে পারলাম না। ওরা চার পাচ জন আমাকে চারপাশ থেকে আটকে নিলো। আমি কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে চোখ পিটপিট করে দেখছি অপির দিকে। খুব ভাব নিয়ে আসতেছে আমার দিকে। খোপার চুল গুলো ছেড়ে যে ভঙ্গিতে আসছে যে কোন ছেলে কিছু সময়ের জন্য ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য।?
আমার সামনে এসে নাকে একটু আঙ্গুল ঘসে খুব মুড নিয়ে বললো…..
> কি নয়া মিস্টার?? খুব তো কাল লাগলে অপির পিছনে,, আজ দেখলে তো আসল রুপ অপির??
> সরি আপা, কে অপি?? কোথাকার অপি?? আমিতো কোন অপিকে চিনিনা?? আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। আমিতো ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় যাচ্ছি। আমাকে কেন আটকালেন হুমমম???
কথাগুলো একবারে বলে হাঁপাচ্ছি ওর দিকে তাকিয়ে।
> হাহাহাহাহা আরে লে লে বাচ্চা ছেলেটা কিচ্ছু জানেনা।।
ওই আমার হকিস্টিক টা দে তো। ওর হাটুর বাটি ছুটালে সব কিছু চিনে যাবে।
> আরে আরে কি বলেন এসব। এমন গুন্ডি কেন আপনি?? আমি কিন্তু আপনার আব্বু কে সব বলে দিব তখন বুঝবেন মজা।
> তাই নাকি?? সে টা তো বাড়িতে যাবার পর আগে তো হাটু ভাঙ্গবো আপনার।
আমার সামনে এসে হকিস্টিক টা আমার পায়ে রেখে টোকা দিচ্ছে আর দুষ্ট হাসি হাসছে অপি ।?
> দেখো অপি ভাল হবে না কিন্তু।
অপি কিছু না শুনেই যেই আমাকে মারতে যাবে ঠিক তখন ওর হাত থেকে হকিস্টিক টা কেড়ে নিয়ে ওর হাত ধরে বললাম।??
> এত সুন্দর হাতে হকিস্টিক নয় বালিকা ফুল মানায়। তোমার চোখে রাগের ছাপটা সত্যি মনকাড়া। এভাবে তাকিও না প্রেমে পড়ে যাবো।?????
অপির রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো। এই প্রথম কোন ছেলে ওর হাত ধরে এমন কথা বলার সাহস পেলো।??
> তোর কপালে খুব দুঃখ আছে,
> এত রাগি মেয়েকে সামলাতে একটু কষ্ট তো হবেই।
> উফফফ অসহ্য।
অপির হাতে একটা চুমু দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। অপির বান্ধবী রা সব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর বলছে তুই কেন কিছু বললি না ওকে।
> আরে যাবে আর কই?? রাতে দিনে সবসময় ওরে পাবো আমার বাড়িতে। ওর জীবন তেজপাতা করে ছাড়ব বলে দিলাম।
বাসায় এসে গোসল করে খেয়ে নিলাম। আমার ভাতিজি দৌড়ে এসে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লো আমার সাথে। যত প্রকার দুষ্টামি আছে এক এক করে শুরু করলো। আমার ঘুমটা আর হলো না।
হটাত কে জানি এলো কলিং বেল বাজলো। ভাতিজি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। অপি রুমে ঢুকে মেহজাবিন কে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে সোফায় বসলো। আম্মু ভাবীও এসে গল্প শুরু করলো ওর সাথে। আমি বুঝলাম এমনি এমনি আসেনি। নিশ্চয়ই কোন ভাবে আমাকে জালাতে এসেছে। তাই আমি আর গেলাম না ওখানে।
আমি আমার গীটারটা বের করে বাজাচ্ছি আর গান গাইছি।
কিছু সময় পর মেহজাবিন অপির কোল থেকে নেমে আমার কাছে আসবে বলে দৌর দিল।
> আন্টি গীটার বাজায় কে?
> কেন আবির বাজাচ্ছে।
> ভাইয়া গীটার বাজাতে পারে।
> হুমম গান গীটার নিয়েই তো থাকে আর আমাদের কান ঝালাপালা করে।
> আমি যাব ভাইয়ার কাছে??
> যাও এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়।
> ওকে আন্টি।
তারপর রুমে ঢুকে চুপ করে দাড়িয়ে শুনছে অপি। আমি দেখেও না দেখার ভান করে গান গেয়ে যাচ্ছি। হটাৎ আমার পাশে বসে অপির বড় নখ দিয়ে আমাকে গোটা ৬ চিমটি দিলো।
>খুব গান গাওয়া হচ্ছে তাইনা?? গেয়ে নাও গেয়ে নাও পরে আর গান বের হবে না গলা দিয়ে।
> মানে কি হুমম?? এত রাগ কিন্তু ভালো না বুঝলে কটকটি।
> দেখো এবার কিন্তু আন্টিকে ডেকে বলব তুমি আমাকে মেরেছো তখন তোমার অবস্থা কি হয় বুঝবে।
> তুমি এত ফাজিল কেন? হুমমম।
> আমার পিছনে আর লাগতে এসো না ফল ভালো হবে না।
মেহজাবিন কে বললাম আম্মু আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসোতো। তোমার কটকটি আন্টির ক্ষুধা লেগেছে।
মেহজাবিন চলে গেলে অপির গালে দুই টা কিস করে বললাম।
> তোমার রাগী চেহারাটা খুব ভালো লেগেছে তাই আরও বেশি রাগাতে ইচ্ছে করে।
> কুত্তা হারামি শয়তান উল্লুক তোর এত সাহস আমাকে কিস করলি?? দাড়া আন্টিকে বলতেছি।
> যাও যাও ডেকে বলো আন্টি আবির আমাকে কিস দিছে যাও বলো।
অপির রাগ যেন থামছেই না কিছু বলতেও পারছে না।
> তোকে আমি দেখে নিব মনে রাখিস।
> মেকাপ করে আসব?? তারপর দেখবা??
> এমন হাল করব আয়নায় নিজেকে চিনতে পারবা না।
> দেখা যাক।
এভাবে প্রতিদিন টুকটাক ঝগড়া লেগেই থাকে আমাদের।
অপি অনেক প্ল্যান করছে আমাকে শায়েস্তা করার জন্য।
অপির সাথে প্রতিদিন সকালে রাতে খুনসুটি করতে করতে একসময় মনে হলো আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু ওকে জানাতে হবে……
চলবে…………T͟o͟ b͟e͟ c͟o͟n͟t͟i͟n͟u͟e

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে