বসন্তের আগমনে পর্ব-০৪

0
778

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৪

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান হাঁটতে হাঁটতে একটা চেয়ারে এসে বসলো।তারপরে মোবাইল বের করে টিপতে শুরু করলো।

ঈশা কোমরে হাত দিয়ে শশির পাশে গিয়ে বসলো।শশি অবাক হয়ে বললো,

“কি রে ঈশা তোর কোমরে কি হয়েছে?”

“আর বলিস না শাড়িতে প্যাঁচ লেগে পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছি।”

“শাড়িতে প্যাঁচ লাগলো কিভাবে?”

“আমি শাড়ি সামলাতে পারি নাহ্ তা কি জানিস নাহ্!”

“হ্যাঁ তা তো জানি।তবে এখন তো সামলানো শিখতে হবে।আমার মতো তোরও তো কয়দিন পরে বিয়ে হয়ে যাবে।”

“বিয়ে হলে ঠিকই শাড়ি সামলাতে পারবো।তোর ওতো ভাবতে হবে নাহ্!”

ঈশার কথায় সবাই হেসে দিলো।কিছুক্ষণ পরে কাজি আসলেন।শশির বিয়ে হয়ে গেলো।ঈশা আর শশি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেছে।বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা!

আরহান পাশে দাঁড়িয়ে সবটা দেখতেছে।তবে তার এইসব কান্নাকাটি বিরক্ত লাগে।তাই সে খানিকটা দূরে সরে আসলো।

শশিকে নিয়ে চলে গেলো।ঈশা একটা চেয়ারে বসে নখ কামড়াচ্ছে।

“আমি এখন কিভাবে বাসায় যাবো!দুই গাধী তো চলে গেলো হোস্টেল বন্ধ হয়ে যাবে বলে।কিন্তু আমাকে তো ওই শিশুর বাচ্চা যেতে দিলো না।নিজে তো বিয়ে করে চলে গেছে।আর আমাকে একটা ঝামেলায় ফেলে দিয়ে গেছে।”

আয়েশা বেগম আরহানকে খুঁজতে খুঁজতে তার চোখ আটকে গেলো চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটির দিকে।সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মেয়েটির দিকে।তারপরে শান্ত গলায় বললো,

“মা তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”

ঈশা মাথা তুলে উপরে তাকালো।আয়েশা বেগমকে চিনতে ঈশার সমস্যা হলো নাহ্।কারণ আয়েশা বেগম মির্জা সাহেবের সাথে তাদের বাসায় গিয়েছিলো।ঈশা হাসি দিয়ে আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আরে আন্টি আপনি এখানে?”

আয়েশা বেগম কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

“তুমি কি আমাকে চিনো মা?”

“হ্যাঁ আপনি তো মির্জা আঙ্কেলের স্ত্রী।আপনি হয়তো আমাকে চিনতেছেন না।কারণ আপনি আমাকে অনেক ছোটবেলায় দেখেছিলেন।আমি হলাম তৈয়ব সাহেবের মেয়ে।”

ঈশার কথায় আয়েশা বেগমের মুখে হাসি ফুটলো।সে ঈশার গালে হাত দিয়ে বললো,

“সেই ছোট্ট মেয়েটা এতো বড় হয়ে গিয়েছে!তা মা তুমি এমন একা একা বসে আছো যে?”

“আসলে আন্টি কালকে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম। তার জন্য আমি ঠিকভাবে হাঁটতে পারছি না।আর আব্বু-আম্মু কেউ আসেনি তো তার জন্য যাবো কিভাবে সেটা ভাবছি!”

“তা তোমার আব্বু আম্মু আসেনি কেন?”

“আব্বু আমাকে এখানে দিয়ে কুমিল্লায় গিয়েছে একটু কাজে। আর আম্মুর শরীরটা ঠিক ভালো নেই।”

“আচ্ছা এক কাজ করো তুমি আমাদের সাথে চলবো।আমি আরহান আর আরিশাকে ডেকে আনতেছি।”

আয়েশা বেগম কথাটা বলে চলে গেলেন।ঈশা চুপচাপ তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।আয়েশা বেগম একটু পরে আরহান আর আরিশাকে ডেকে আনলেন।আলভি আরিশার কোলে ছিলো।ঈশাকে দেখে আলভি আরিশার কোল থেকে নেমে ঈশার কাছে দৌড়ে আসলো।

“আন্টি কেমন আছো তুমি?”

ঈশা আলভির হাত ধরে বললো,

“এই তো আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো বাচ্চু?”

“আমিও অনেক ভালো আছি।”

আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন,

“ঈশা তুমি আলভিকে চিনো?”

আরহান ঈশাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললো,

“আম্মু আমি বলতেছি।উনি যা বকবক করতে পারেন।উনি যদি বলা শুরু করেন তাহলে আজকে আর বাসায় যাওয়া লাগবে নাহ্।”

আরহানের কথায় ঈশা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।আরহান আয়েশা বেগমকে সবটা বললো।আয়েশা বেগম সবটা শুনে বললো,

“তাহলে তো ভালোই হয়েছে।আরহান তুই তো ঈশাদের বাড়ি চিনিস তুই তাহলে ও-কে ওর বাড়িতে দিয়ে আয়।”

“আমাদের বাড়ি রেখে বেশ খানিকটা দূরে উনাদের বাড়ি।তোমরা আবার এতোখানি ঘুরবে?উনাকে বরং একটা ক্যাপে উঠিয়ে দেই।”

“এতোরাতে একটা মেয়েকে একা ছাড়া আমার কাছে ঠিক লাগছে নাহ্।আমরা বাড়িতে নেমে যাবো তুই ও-কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবি।”

আরহান আবার আয়েশা বেগমের কথা ফেলতে পারে নাহ্।তাই সে আর কিছু বললো নাহ্!ঈশা আরহানের মুখ দেখে বুঝলো আরহান কিছুটা বিরক্ত হয়েছে।তাই সে বললো,

“আন্টি আমাকে নিয়ে এতো ব্যস্ত হতে হবে নাহ্।আমি একা চলে যেতে পারবো।”

আরহান ঈশার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,

“এতো বেশি বুঝেন কেনো আপনি?আম্মু কি বললো শুনলেন নাহ্!আম্মু যা বলেছে সেটাই হবে।”

ঈশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে।সে মনে মনে বললো,

“আমি আরও উনার কথা ভেবে নিষেধ করলাম।আর উনি আমাকে বকতেছে!”

আয়েশা বেগম আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“আরহান ঈশার হাত ধরে নিয়ে ও-কে তোর পাশের সিটে বসা।আমরা পিছনে বসবো।”

“আম্মু আরিশা ধরে নিয়ে বসিয়ে দিলেই তো হয়!”

“দেখতে পারছিস না আলভি’ আরিশার কোলে ঘুমিয়ে গেছে।”

আরহান তাকিয়ে দেখলো আলভি আরিশার কোলে ঘুমাচ্ছে।তাই আরহান বাধ্য হয়ে ঈশার হাত ধরতে গেলে ঈশা বললো,

“আমি একাই যেতে পারবো।ধরতে হবে নাহ্।”

“আপনি একটু কম বুঝলেই ভালো হয়।”

কথাটা বলে আরহান ঈশার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো।আরহানের কান্ড দেখে আয়েশা বেগম মৃদু হাসলেন।আরিশা আয়েশা বেগমকে বিড়বিড় করে বললো,

“আম্মু তোমার মাথায় কি চলছে?”

“তোর ভাবি আনার প্ল্যানিং চলছে।”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“ইয়াহু।”

আরহান ঈশাকে নিয়ে গাড়িতে বসালো।সবাই গাড়িতে উঠলে আরহান গাড়ি স্টার্ট করলো।গাড়ি চলছে আপন গতিতে।হঠাৎ করে ঈশা বললো,

“আচ্ছা আন্টি মি.অভদ্র না মানে আরহান সাহেরের ওয়াইফ কোথায়?”

আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

“ওর তো বিয়েই হয়নি।বউ আসবে কোথা থেকে!”

“তাহলে আলভি?”

“আলভি হলো…..”

আরহান আয়েশা বেগমকে থামিয়ে বললো,

“আলভি আমার ছেলে।এটাই ওর একমাত্র পরিচয়।আর একজন বাইরের মানুষকে এতো কিছু জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই আম্মু।”

আরহানের কথায় ঈশার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।সে আর কোনো কথা না বলে চুপ করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।

আয়েশা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“আরহান কথাবার্তা ঠিকভাবে বলো।ইদানীং তুমি মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়ে কথা বলতেছো।আর ঈশা মা তুমি কিছু মনে করো নাহ্।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“ইট’স ওকে আন্টি।উনি তো ঠিকই বলেছেন।আসলেই তো আমি বাইরের মানুষ।”

আরহান ঈশার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।তার বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।আয়েশা বেগম আর আরিশা নেমে গেলো।

“আরিশা’ আলভিকে আমার রুমের বিছানায় শুইয়ে দিস।”

“ওকে ভাইয়া।”

আরহান আবার গাড়ি চালানো শুরু করলো।দুজনের মধ্যে নিরবতা।সারা রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলেনি।আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।ঈশা গাড়ি দিয়ে নামতে গেলে আরহান বললো,

“স্টপ।”

আরহান তারপরে গাড়ি থেকে নেমে যেই ঈশার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামাতে যাবে সেই ঈশা হাত সরিয়ে ফেললো।

“বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।আপনার আর কষ্ট করতে হবে নাহ্।”

ঈশা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে গেলে আরহান ধরে ফেললো।আরহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান ঈশাকে কোলে তুলে নিলো।ঈশা অবাক হয়ে বললো,

“কি করছেন আপনি?”

আরহান কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো।সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আরহান বললো,

“হাঁটতে পারেন না আবার ভাবের শেষ নেই।”

“আমি ঠিকই চলে যেতে পারতাম।”

“হয়েছে এতো কথা বলা লাগবে নাহ্।”

আরহান ঈশাকে নিয়ে তাদের বাড়ির দরজার সামনে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।

“আই এম সরি।তখন ওভাবে বলা ঠিক হয়নি।”

“বাহ্ মি.অভদ্র আবার সরিও বলতে পারে!”

আরহান আর কিছু বললো নাহ্।ঈশা কলিংবেল বাজাতে গেলে শাড়ির আঁচলে টান খেলো।সে ভেবেছে আরহান তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে।ঈশা চোখ রাঙিয়ে পিছনে ফিরে ঠাস করে আরহানের গালে একটা চড় মারলো।আরহান গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ঈশা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার শাড়ির আঁচল সিঁড়ির গ্রিলের সাথে আটকে গেছে।যা দেখে ঈশা জিহ্বায় কামড় দিলো।তারপরে আরহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরহান চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরহানের রাগে মাথা ঠিক নেই।সে ঈশাকে কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে গেলো।

ঈশা ভয়ে ভয়ে বললো,

“হায়রে!আমার কপালে শনি আছে।এরপরে দেখা হলে আমাকে আস্ত গিলে খাবে।”

ঈশা কলিংবেল বাজাতেই মাসুমা বেগম দরজা খুলে দিলেন।

#চলবে………………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে