প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০৪

0
261

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৪র্থ_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
ছোট মা আমার দিকে চা’য়ের কাপটা এগিয়ে দিলো – তুমি যে আরশের সাথে দেখা করতে আসছো সেটা কে কে জানে?
– আপনি আমি অবন্তী, চন্দ্রিমা, মায়া। কেন!
– এই বাসার কেউ জানে না?
– এখনো তো কারো সাথে কথাই হলো না।
– এ বাসার কাউকে জানানোর দরকার নেই কেমন!
– কেন! এই বাসার মানুষ জানলে সমস্যা কোথায়?
– এই বাসার সব মানুষ পাষাণ। কারো হৃদয়ে আমার ছেলের জন্য বিন্দু মাত্র ভালোবাসা নেই।
কথাগুলো বলতে বলতেই ছোট মা কেঁদে দিলো।
– আপনি কান্না করবেন না। আমি আগামী কাল আগে একা গিয়ে ওর সাথে দেখা করে আসবো। তারপর দেখা যাক কি করা যায়।
– আমায় সাথে নিয়ে যাবে?
– কাল আমি একাই যাবো। আপনাকে সাথে দেখলো যদি অভিমানে আমার সাথেই কথা না বলে তাহলে সমস্যা হবে।
– আচ্ছা, তুমি যেটা ভালো মনে করো।
ছোট মা চলে যাচ্ছে। আমি পিছনে থেকে ডাকলাম – আচ্ছা এই বাসার কেউ বাঁচাতে চেষ্টা করেনি সেটা বুঝলাম। কিন্তু আপনার যে ভাইয়া আপনার বিন্দু মাত্র কষ্ট দেখতে পারতো না সেই ভাইয়া কোথায়! উনার তো উচিত ছিলো আরশ কে কারাগার থেকে বের করা।
আমার কথায় ছোট মা’র মাথায় যেন বাজ পড়লো। উনি স্থির দাঁড়িয়ে রইলেন। কয়েক সেকেন্ডে পরে উনি আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন- কোন ভাই?
– অবন্তী যে বললো আপনার একজন বড় ভাইয়া আছে যে আপনার বিন্দু মাত্র কষ্ট সহ্য করতে পারে না। সে নাকি সব সময় আপনার সাথে সাথেই থাকছো ছোট বেলায়। উনি এখন কোথায়!
– আমার এমন কোনো বড় ভাই নেই। আমার বাবার আমরা দুজন সন্তান। আমি বড় এবং আমার ছোট একজন ভাই আছে।
– ওহ আচ্ছা।
ছোট মা কথাগুলো বলার সময় কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছিলেন। মনে হচ্ছে অনেক বড় কোনো অপরাধ করছেন। তাছাড়া ছোট মা’র যদি এমন কোনো বড় ভাইয়া না থাকো তবে অবন্তী কি আমায় মিথ্যা বললো! অবন্তী আমায় মিথ্যা বলবে কেন! এমন সব আকাশ পাতাল ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এখানে আবার অন্য একটা কথা হঠাৎই মস্তিষ্কে প্রবল আঘাত হানলো। যদি উনার কোনো বড় ভাই না থাকে আর যদি উনারা মাত্র দুই জন সন্তান হন তবে চন্দ্রিমা কে!
” তুমি কি আর কিছু বলবে! ” ছোট মা’র কথায় আবার কল্পনা থেকে বাস্তবে আসলাম।
– তেমন কিছু বলার নেই। তবে ভাবছিলাম আমি যেহেতু সবার অগোচরে বিয়ে করেই ফেলেছি তখন কাল সময় পেলে নয়তো পরশু শ্বশুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসবো।
– তোমার শ্বশুর বাড়ি কোথায় পাবে!
– কেন! আপনার বাবার বাড়ি তো আমার শ্বশুর বাড়ি।
– মানে! ( ছোট মা ছটফট করছেন) তোমায় কে বললো!
– কেন চন্দ্রিমা আপনার ভাইয়ার মেয়ে না?
– না।
– তাহলে ও কে?
– ওকে আমি এডপ্ট করেছিলাম।
– বাব্বাহ্। আপনার মেয়ে থাকতেও একই বয়সী আবার একটা মেয়ে এডপ্ট করলেন! যদি এডপ্ট এ করলেন তবে ও আপনাকে আন্টি ডাকতো কেন!
– না মানে, ওর আম্মু আমার পরিচিত ছিলো। অনেক দিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যুর আগে আগেই ওকে আমার হাতে তুলে দিয়ে যায়। তখন ও মোটামুটি বুঝতে পারে সব কিছু। এরপর ওকে বাসায় এনে অবন্তীর সাথে লালন পালন করি। বাসয় সবাই জিজ্ঞেস করায় ভাইয়ের মেয়ের পরিচয় দেই।
– আপনি সত্যিই অনেক মহান মনের মানুষ।

ছোট মা চলে গেলো। তবে ওনার চোখে তাকিয়ে যে কেউ খুব সহজেই বলে দিতে পারবে উনি এতক্ষণ যতগুলো কথা বললেন সেখানে অনেক সত্যি কথা লুকিয়ে আছে।

রাতে খাবার টেবিলে সবার সাথে দেখা হলো। তবে বড় ফুপি আর ছোট ফুপি নিজেদের বাসায় চলে গিয়েছে। আমি আসায় দাদু কিছুটা গম্ভীর হয়ে আছে।

রাতে প্রায় বারোটার দিকে আমি ছাদে পায়চারি করছি। হঠাৎই নজরে পড়লো একজন লোক চোরের লুকিয়ে মতো আমাদের বাসা বেরিয়ে যাচ্ছে। খুব সাবধানতা অবলম্বন করছে যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে। আমি ছাঁদে থেকে বললাম – এই কে রে ওখানে!
আমার কন্ঠ শুনে দৌড়ে পালাতে গিয়ে সামনে থাকা কিছু একটাতে হোঁচট খেয়ে পড়ে কিন্তু তৎক্ষনাৎ আবার উঠে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ততক্ষণে আমি ছাঁদ থেকে দৌড়ে নেমে আসি লোকটাকে ধরবো বলো কিন্তু তার আগেই পালিয়ে যায়। কিন্তু পুরো শরীর যে চাদরের আড়ালে ঢেকে রাখা ছিলো তাড়াহুড়োয় সেটা রেখেই দৌড় দেয়।
সেখানে থেকে আবার যখন বাসার ভিতরে এসে চাদর হাতে নিলাম সেখানে একটা গলার চেইন আটকে ছিলো আর চাদরে টা ডালিম গাছের একটা ভাঙা ডালে আটকে গিয়েছে তাই জন্য চাদরে খুলিয়ে নেওয়ার সময় পায়নি। চেইন টা খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে। খুব কাছে থেকে দেখেছি।
পরদিন সকালের খাওয়া শেষ করে আমি সেন্ট্রাল জেলে গেলাম। সেখানে গিয়ে জেলারের সাথে কথা বলে ডিরেক্ট আরশের সেলে চলে আসলাম।
সাথের পুলিশ অফিসার কে বললাম – যদি কিছু মনে না করেন তবে আমি একটু ওর সাথে একা কথা বলতে চাই।
– অবশ্যই স্যার।
আরশকে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু ও শুধু মাথা তুলে আমার দিকে দুই বার তাকালো।
– এদিকে আসবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
অদ্ভুতভাবে আরশ আমায় চিনতো। ও সেলে বসে ছিলো সেখানে থেকে উঠে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো- তুমি সুমন ভাইয়া না!
আরশের প্রশ্নে আমি থ হয়ে রইলাম। কিছু বলবাে কিন্তু মুখে কোনো শব্দ আসছে না। কিছুক্ষণ নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- তুমি আমায় কিভাবে চেনো?
– আমি জেলে আসার কিছু দিন আগে বড় মা’র সাথে দেখা করেছিলাম সেখানে তোমার ছবি দেখেছিলাম।
– কিন্তু এতোদিন পর তুমি আমায় চিনলে কিভাবে!
– তোমার গলার দাগটা দেখা যাচ্ছিলো ওখানে থেকে। প্রথম বার তাকিয়ে চোখ পড়েছিলো তারপর আবার তাকিয়ে সিউর হয়ে নিয়েছিলাম ওটা কাটা দাগ কি না । এরপর কিছুক্ষণ ভেবে খুঁজে পেলাম তোমার গলায় কাটা দাগ আছে। দাদু তোমার গলায় ছুরি ধরেছিলো তখন কেটে গিয়েছিলো।
– দাদু আমার গলায় ছুরি ধরবে কেন!
– সেটা তো জানি না। তবে শুধু এতটুকু জানি গলা খুব বাজে ভাবে কেটে গিয়েছিলো। যে কারণে তুমি অনেক দিন হাসপাতালে ছিলে।
– এগুলো তুমি জানলে কি করে!
– বড় মা বলেছিলো।
সব কিছু শুধু আমারই অজানা ছিলো। আম্মু শুধু আমার থেকেই সব কিছু লুকিয়েছে। কিন্তু কেন! এমন অনেক কেন এর উত্তর আমায় খুঁজতে হবে।
To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে