প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৮

0
365

#প্রণয়ের_রংধনু🖤
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
স্টোর রুমে কোন অপরিচিত ছেলের উপস্হিতি টের পেয়ে কিছুটা ভিতু গলায় শুধায় অনন্যা, ‘ কে? কে ওখানে?’ অনন্যার গলার আওয়াজ পেয়ে, স্টোর রুমের শেষ প্রান্ত থেকে অতি সুদর্শন এক যুবক বেড়িয়ে আসে। পরিষ্কার মুখস্রী, মুখে নেই কোন চাপ দাড়ি। উচ্চতা ফারিশের থেকে কিছুটা কম হবে। পড়নে কালো শার্ট গাঁয়ে এবং একটা সাদা ট্রাউজার। বয়স ২৩-২৪ হবে। ছেলেটির মুখস্রী দেখে,
যে কেউ আন্দাজ করতে পারবে, সে ফারিশের ভাই। ফারিশের মতো গাঁয়ের রং। তার চোখে নেই কোন মোটা ফ্রেমের চশমা। যুবকটি ধীর পায়ে এগিয়ে, অনন্যাকে পা থেকে মা অব্দি পর্যবেক্ষন করে, হেঁসে বললো,

‘ নীচ থেকে শুনছিলাম, কোন এক বড় বিসনেজনম্যানের একমাত্র মেয়ে, ফারিশ ভাইয়ের পার্সোনাল কাজের লোক হয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো, তাই চট করে আপনাকে দেখতে এলাম। ভাবলাম ইন্টারেস্টিং কিছু দেখতে চাচ্ছি, কিছুটা ইন্টারেস্টিং ভাবে আপনার সামনে এন্ট্রি নিলে, বিষয়টি বেশ মজাদার হবে। তাই বাগানের পথ ধরে, স্টোর রুমের পিছনের দরজা দিয়ে, স্টোর রুমে ঢুকলাম। উদ্দেশ্য আপনাকে ভয় দেখানো। আপনি কিচ্ছুক্ষন জন্যে ভয় পেয়েছেন,তাই না?’

‘ না, আমি ভয় পায় নি। ‘

অনন্যার থেকে এমন উত্তর পেয়ে, তার সামনে থাকা যুবকটি বেশ হতাশ হলো। হতাশ গলায় শুধালো,

‘ মিথ্যে বলবেন না, আপনি ভয় পেয়েছেন।আপনার গলায় তা স্পষ্ট! বাই দ্যা ওয়ে, আমি আরশ খান, ফারিশ খানের একমাত্র ছোট ভাই। নাইস টু মিট ইউ।’

আরশ হাত বাড়িয়ে দিলো, অনন্যার দিকে। অনন্যা স্বাভাবিক ভাবেই আরশের সাথে হাত বাড়িতে দিতেই, আরশ অদ্ভুদ ভাবে স্পর্শ করলো অনন্যার হাত। তৎক্ষনাৎ আরশের থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেললো অনন্যা। তা দেখে ক্ষীন্ন হাসলো আরশ। অনন্যার বেশ অস্বস্হি লাগছিলো আরশের আচার- আচরণে। আরশ হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু করিমা ঝাড়ু হাতে নিয়ে চলে আসায় সে দমে যায়। করিমা আরশকে দেখে মাথা নিচু করে বলে,

‘ ছোড ভাইজান, আপনে এখানে কি করতাছেন? আপনে তো দুপুর ১টার আগে উঠেন না। আইজ হঠাৎ কি হইলো?’

আরশ করিমার প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হয়ে, ধমকে বলে, ‘ ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি, তোকে কি তার জন্যে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? ‘

করিমা আরশের কথা শুনে, মাথা নিচু করে ভেংচি কাটে। আরশ চলে যেতে নিলে, পুনরায় অনন্যার কাছে ফিরে এসে, কিছুটা বিদ্রোপ ভঙ্গিতে অনুরোধ করে বলে, ‘ মিস অনন্যা, কাইন্ডলি আমার ঘরে এক কাপ, কফি নিয়ে আসুন। আজকের সকালটি আপনার হাতের সুস্বাদু কফি দিয়ে শুরু করতে চাই।’

আরশ কথাটি বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। আরশ চলে যেতেই করিমা মাথা উঁচিয়ে, মুখ বেকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে, নতুন বেডির গ্রেরান পাইলেই, শয়তানডার মাথা নষ্ট হইয়া যায়। ‘

করিমার কথা শুনে, অনন্যা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ কিছু বললে করিমা আপু? ‘

করিমা চট করে মাথা নাড়িয়ে বলতে থাকে,’ না, না। কেবল তো নতুন আইছেন আফা। আস্তে আস্তে সবকিছুই বুঝে যাবেন, কে আসলে কেমন। ‘

করিমার কথায় ততটা মাথা না ঘামিয়ে, করিমার নিয়ে আসা ঝাড়ু অনন্যা হাতে নিয়ে, কি যেন ভেবে পুনরায় রেখে দিয়ে, করিমার দিকে তাঁকিয়ে বললো,

‘ আচ্ছা করিমা আপু, আপনাদের রান্নাঘরে আমায় নিয়ে যাবেন? একটু দেখিয়ে দিবেন, কোথায় কি আছে। ‘

‘ এখন রান্নাঘরে গিয়ে কি করবেন আফা?’

‘ কফি করবো। কাজের লোক বলে কথা, এখন তো সকলের ফয়-ফরমাশ খাটতে হবে। ‘

___________________

ফারিশ বেশ বিরক্ত হয়েই, অফিসে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে। কেন যেন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অনন্যার প্রতি। আসতে না আসতেই, তার থেকে তার মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। মেয়ে এখন মা -মা বলতে অজ্ঞান। এতো জোড় করার পরেও তার হাতে খেতে চাইলো না মিষ্টি, কিন্তু যাই হোক মিষ্টির অন্যায় আবদার সে মেনে নিবে না। তাকে বুঝতে হবে, মিষ্টি তার মা নয়। ফারিশ ড্রেসিং টেবিলে থাকা ফাইলটা হাতে নিয়ে, নীচে নামতে নামতে খেয়াল করে, রান্নাঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে কফি তৈরি করছে অনন্যা। করিমা উপরে যাচ্ছিলো, ফারিশ করিমাকে দেখে প্রশ্ন করে, ‘ কার জন্যে কফি তৈরি করছেন উনি?’

করিমা ফারিশের প্রশ্ন শুনে, দাঁড়িয়ে গিয়ে উত্তর দেয়, ‘ আসলে, ছোড ভাইজান আফা মনিরে কইছে, আফামনি যেন নিজ হাতে কফি বানায় ছোড বাইজাইনের লেইগা। ‘

করিমার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায় ফারিশ। অনন্যাকে নিয়ে আসা হয়েছে ফারিশের পার্সোনাল সার্ভেন্ট হিসাবে, সেখানে তার অনুমতি ব্যাতীত বাড়ির অন্য কারো কাজ কোন সাহসে করছে অনন্যা? ফারিশ রান্নাঘরে গিয়ে পকেটে হাত গুজে বলে, ‘ মিস অনন্যা, আমার বাড়িতে আমার অনুমতি ব্যাতীত, কফি করার সাহস কে দিয়েছে?’

অনন্যা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো, ‘ সামান্য কফি করার জন্যেও বুঝি আপনার অনুমতি লাগবে?’

‘ অবশ্যই লাগবে। আপনি ভুলে যাবেন না, আপনি শুধুমাত্র আমার পার্সোনাল সার্ভেন্ট। যার-তার ফরমাশ খাটতে আপনাকে নিয়ে আসা হয়নি। ‘

আরশ নীচে নামছিলো, তাকে উদ্দেশ্য করেই যে ফারিশ কথাটি বলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না তার। রেশমি খান ড্রাইনিং টেবিলে বসে ছিলেন। ফারিশের কথা শুনে তিনি উচু গলায় বললেন,

‘ তা বাবা ফারিশ! তোমার পার্সোনাল সার্ভেন্ট, আমার ছেলের জন্যে একটু কফি বানালে, তার হাতে ফসকা পরে যাবে নাকি? ‘

‘ আপনি খুব ভালো করেই জানেন, মিসেস রেশমি খান বাড়তি কথা আমার মোটেও পছন্দ নয়। আমি যখন বলেছি, উনি এই বাড়ির অন্য কারো কোন কাজ করবে না, তার মানে করবে না। ‘

ফারিশ কথাটি বলেই, অনন্যার হাত থেকে কফির মগটা ছুড়ে ফেলো দিলো । চুলা থেকে নামানো সদ্য কফি কিছুটা ছিটিয়ে আসলো অনন্যার পায়ে। অনন্যা ব্যাথায় টু শব্দ অব্দি করলো না। শুধু দেখতে থাকলো ফারিশের অদ্ভুদ কান্ড। মানুষটা এমন কেন? আরশের জন্যে বানানো কফি এইভাবে ফেলে দেওয়ায় বেশ রাগ হলো আরশের তবুও ফারিশের সামনে কথা বলার সাহস নেই তার। ফারিশ গম্ভীর হয়ে, বেশ বড় এক লিস্ট অনন্যার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

‘ মিস অনন্যা! আজ আমার অনেক গুলো ক্লাইন্ট আসবে ডিনারে। লিস্ট অনুযায়ী, প্রতিটা মেন্যু আমার রেডি চায়। কারো সাহায্য ভুলেও নিবেন না আপনি। মাইন্ট ইট। ‘

ফারিশের দেওয়া এতো বড় লিস্ট দেখে থ হয়ে যায়
অনন্যা। এতো পদ রান্না করতে করতে, দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যাবে। তার থেকেও বড় কথা, সে এতো পদ রান্না করতে পারে না। বাবা- মায়ের বড্ড আদরের ছিলো অনন্যা। তার বাবা কখনো তাকে রান্নাঘরের আশে পাশেও ঘেষতে দেইনি। যতটুকুই সে রান্না শিখেছে, কলেজ- ভার্সিটির পিকনিকে। মনে মনে বেশ কয়েকদফা ইচ্ছেমতো গালি দিচ্ছে অনন্যা,ফারিশকে। অনন্যার মনের অবস্হস বুঝতে পেরে, ফারিশ বাঁকা হেসে অন্যন্যার দিকে ঝুঁকে বলে,

‘ কাজ বাদ দিয়ে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করবেন না মিস। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ, সো প্লিয স্টার্ট, নাহলে এর পরিনতি খুবই করুন হবে আপনার জন্যে। আই থিংক আপনি বুঝতে পারছেন। ‘

______________________

মিষ্টি তার ময়না পাখির সামনে দাঁড়িয়ে, শুকনো মুখে বলে, ‘ ময়না জানিস? আমার মা এসেছে, কিন্তু বাপি বলছে উনি নাকি আমার মা নয়, কিন্তু আমি জানিই উনিই আমার মা। ‘

অপরদিকে অনন্যা করিমার থেকে শুনেছে মিষ্টি কিচ্ছু খায় নি। সকালে মেয়েটি দেখেই বেশ মায়া জন্মে গিয়েছিলো অনন্যার। সে ঠিক করেছে নিজ হাতে মেয়েটিকে খাওয়িয়ে দিয়ে আসবে। ফারিশ অফিসে। এই সুযোগে মিষ্টির কাছে সে যেতে পারবে।তাই সে নিজেই ব্রেকফাস্ট নিয়ে, মিষ্টির রুমে নক করে বলে,

‘ আসবো মিষ্টি মা?’

মিষ্টি অনন্যাকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে ঝাপ্টে ধরে খুশি হয়ে বলে, ‘ মিষ্টির মা, তুমি এসেছো?’

অনন্যা মিষ্টির গালে হাত রেখে বলে, ‘ তুমি না খেয়ে, আছো কেন মিষ্টি? না খেয়ে থাকলে কিন্তু অসুস্হ হয়ে পরবে । ‘

মিষ্টি তার ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বললো,

‘ আমি শুনেছি সন্তান না খেয়ে থাকলে, তার মা ঠিক আসে। আমি জানতাম আমি না খেয়ে থাকলে, তুমি ঠিক আসবে আমাকে খায়িয়ে দিতে। যে যাই বলুক, আমি জানি তুমিই মিষ্টির মা। ‘

মিষ্টি কথাটি বলেই, অনন্যাকে জড়িয়ে ধরলো। অনন্যাও মিষ্টিকে বুকের সাথে মিশিয়ে আদর করতে থাকে। বড্ড মিষ্টি বাচ্চাটা। তাকে কেমন সহজেই আপন করে নিয়েছে, কিন্তু মিষ্টি তাকে বার বার মা বলছে কেন?মিষ্টির আসল মা কোথায়?

অনন্যার ভাবনার মাঝেই, রুমা খান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,’ আমি জানি অনন্যা তুমি কী ভাবছো। আসলে আমার জন্যে, মিষ্টি তোমায় নিজের মা ভাবছে।’

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে