নেশা তুই আমার Part:5

0
3130

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:5

দরজা খুলে বড় মা ঘরের ভেতরে আসতেই দরজার সামনে আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েই প্রশ্ন করল।
“”কি রে মিতু তুই এখানে কি করছিস?””
বড় মার প্রশ্নের উত্তর কি দেব ভেবে না পেয়ে মাথা চুলকাতে লাগলাম
“”আব আসলে ববড়মা আমি..আমি আরমান ভাই কে খেতে যাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলাম।””
“”ওহহ ডাকা হয়ে গেছে।এবার যা এখান থেকে।আর শোন,আরমান খেতে ডাকার জন্য আমি আছি তোকে এতো কষ্ট করতে হবে না বুঝেছিস?””
“”জ্বী বড় মা””
মাথা নিচু করে কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।যাক বাবা বেঁচে গেছি।তবে ছোট বেলা একটা জিনিস খুব ভালো ভাবেই লক্ষ করেছি আমি।কেন জানি বড় মা সবসময় আমায় এড়িয়ে চলে।বেশি কথাই বলে না।আর যদিও এক আধটু কথা তাও সবসময় খিচখিচ করে।ধুর এসব কথা আমি কেন ভাবছি?বড় মার স্বভাব ই তো খিচখিচ করা।সবার সাথেই করে।তবে আমার টেনশন হচ্ছে আরমান ভাই কে নিয়ে।ভাইয়া আজকেও ভার্সিটিতে টিপটিপ হয়ে যাবে।আর ভার্সিটির মেয়েরা চকোলেটের মতো চিবিয়ি চিবিয়ে খাবে।ধুর অসহ্য।
.
.
.
.
?
ভার্সিটির জন্য রেডী হয়ে বসার ঘরে আসতেই আমার চোখ ছানাবড়া।এ কি দেখছি আমি।এ যে ভাইয়া।আমার দেওয়া শার্ট টা পড়েই আছে।এই মূহুর্তে আমার লুঙ্গি ডান্স দেওয়া উচিৎ এটা ভেবে যে উনি আমার পছন্দের শার্টটা পরেছেন সেটা যতই খারাপ হোক না কেন।কিন্তু এই মূহুর্তে আমার রাগ হচ্ছে ভীষন রাগ হচ্ছে।বেছে বেছে একটা ফ্যাকাশে রঙের শার্ট বের করেছিলাম যাতে ভাইয়াকে প্রতিদিনের মতো হ্যান্ডসাম না দেখায়।কিন্তু এখন তো দেখছি ভাইয়াকে এই রঙ টা এমন ভাবে খাপ খেয়েছে যেন কোনো ফিল্মের হিরো।ধুর বাবা সব মেহনত পানি হয়ে গেল।রাগে গজগজ করতে করতে খেতে বসলাম।কিন্তু খাবার গলা দিয়ে কিছুেতেই নামল না।বারবার ভাইয়ার দিকেই চোখ যাচ্ছে।আর তার চোখে চোখ পরতেই সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিচ্ছি।খাওয়া শেষ হতেই ভাইয়া বেরিয়ে গেল।তার পিছু পিছু আমি আর ছায়াও বেরোলাম।
.
.
.
.
?
ভার্সিটিতে পৌছেই গাড়ি থেকে নেমে চলে আসব তখনই ভাইয়া পেছন ডাকলেন।আমি পিছু ফিরে দেখি আরমান ভাই গাড়িতে হেলান দিয়ে দুই হাত বুকে ভাঁজ করে আমার দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে।
“”তোর পছন্দ আছে বলতে হবে।সত্যিই শার্ট টা একদম ই পারফেক্ট আমার জন্য… তাই না?””
খুব বুঝলাম।ভাইয়া যে আমাকে পচাচ্ছে তা খুব ভালো করেই বুঝলাম।তাই নে জের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে ছিড়তে ভার্সিটির ভেতরে চললাম।নিজের ওপর এ রাগ হচ্ছে।কেন যে ওই শার্টটা বের করতে গেলাম কে জানি?
ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই চোখ গেল সামনের মাঠে।খোকন তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে।হারামজাদা আমার উপর বাজে নজরে তাকায়।এর তো আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো।এর জন্যই কাল আমায় ভাইয়া সবার সামনে এত এত অপমান করেছিল।নিজের গলার ওড়নাটা ঠিক করতে করতে তার দিকে এগোলাম।বলা যায় না এই ছেলে আবার আমার দিকে নজর নিক্ষেপ করতে পারে।ভালো করে ওড়না কোমড়ে বেধে খোকনের কাছে গিয়ে কোনো কথা ছাড়া উড়াধুড়া পিটুনে শুরু করে দিলাম।
“”হতচ্ছাড়া শয়তান কোথাকার।মেয়েদের দিকে বাজে নজরে তাকানো তাই না।আজ দেখাচ্ছি মজা তোকে।আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।এই নে এই নে এটাও নে ওটাও নে।সাথে আর একটা নে।বোনাস আর একটা নে আবারো নে।””
মুখে যা আসছিল তাই প্রলাপ বকতে বকতে বেদম পিটিয়ে যাচ্ছি তাঁকে।শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে পিটোচ্ছি।সবাই আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি?আমার হাত ধরলে পা দিয়ে মারা শুরু করছি।কিছুতেই আজ ছাড়বো না ওকে।মেয়েদের দিকে বাজে নজরে তাকানো সারাজীবন এর জন্য ঘুচিয়ে দেব আজ।নিকৃষ্ট প্রাণী কোথাকার।
আমি খুব তৃপ্তি নিয়েই খোকনকে পিটিয়ে যাচ্ছি এমন সময় আমার হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম।টাল সামলাতে না পেরে কিছু একটা ওপর হুমড়ি খেয়ে পরলাম।নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই দেখি আমি আরমান ভাইয়ের বুকে পরে রয়েছি।ভাইয়া দাঁতে দাঁত পিষে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“”মন ভরেছে?””
“”না ভরেনি আমি ওকে আরো কয়েকঘা মারবো।””
বলেই ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ভাইয়া আরো জোড়ে আমার হাত চেপে ধরে।
“”কিন্তু ওর ভরে গেছে।””
ভাইয়ার কথার আগাগোড়া কিছু না বুঝেই তার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালাম।
“”স্টুপিট কোথাকার যখন শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই তখন এই শরীর নিয়ে একটা ছেলেকে মারতে এসেছো কি তাঁর মনের তৃপ্তি মেটানোর জন্য।””
ভাইয়া কথাটা একটু আস্তে বলায় সবার কানে কথাটা না গেলেও আমার কাছে কথাটা একটা কারেন্টের শকের মতো লাগল।অবাক হয়ে খোকনের দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠল।এই ছেলে কে আমি এক্ষুনি মেরে মেরে আধমরা করলাম।সে এই ভাবে ফিট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি করে?তাও আবার ঠোঁটের ওপর হাত বোলাচ্ছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও আমার মার নয় ছোঁয়া গুলোই অনুভব করেছে।ছোটবেলা নিশ্চয়ই হরলিক্স খাইনি তাই আজ এই অবস্থা।আমি খুবই ইনোসেন্ট মার্কা চেহারা বানিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।যেন এবারের মতো আর আমায় কোনো শাস্তি না দেয়।কিন্তু ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল “”তোকে আমি বাড়ি গিয়ে দেখবো।অনেক হিসেব বাকি তোর সাথে।””
বলেই গটগট করে চলে গেল।আর আমি অসহায়ের মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।না জানি বাড়িতে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে…
চলবে❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে