নেশা তুই আমার Part:2+3

0
4082

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
Part:2+3
?
একের পর এক অনবরত বেতের আঘাতে আমার হাতের সাদা তালু লাল রক্ত বর্নে পরিণত হয়েছে।দুই চোখ খিচে ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করা চেষ্টা করলাম।কিন্তু তা সহ্য সহ্য করার ধৈর্য বা ক্ষমতা কোনোটাই আমার নেই।আঘাতের অংশের অংশ আরো বেশি আঘাত পেতে পেতে হাত অবশ হয়ে আসছে।চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে।কিন্তু ভাইয়া কিছুতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না।একের পর এক আঘাত করেই চলেছে।হঠাৎই মনে হলো।আঘাত করা বন্ধ হয়ে গেছে।সাথে সাথেই কিছু একটার শব্দ আমার কান আসতেই আমি চমকে উঠলাম।কাপতে কাপতে জল ভর্তি চোখ পিটপিট করে খুলে সামনে তাকাতেই দেখি ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি বর্ষণ করছে।তার পাশে দৃষ্টি যেতেই দেখলাম বেতের কিছু ভাঙা অংশ নিচে পরে আছে।বুঝলাম,আমার হাতেই ভাইয়া বেত ভেঙেছে।তারপরো রাগ কমে নি যার কারনে বেত ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।রাগ কমেনি তারমানে শাস্তি এখনো বাকি আছে।
“”ভার্সিটিতে কি হাডুডু খেলার জন্য এসেছ?ক্লাসের মাঝে মন নেই,পড়ার সময় পড়া নেই।বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিংয়ের জন্য এসেছ নাকি এখানে?”
ভাইয়ার ভয়ঙ্কর গর্জন শুনে ভয়ে নিজেকে তার থেকে একটু দূরে সরিয়ে নিলাম।তারপর কান্না জড়িত কন্ঠে ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে বললাম।
“”স..স..সরি স.স্যার।এ.র.পর থেকে পড়া করে আসব।””
“”নো এক্সকিউজ।এখানে তোমাদের এসব লো ক্লাস এক্সকিউজ শোনার জন্য আমি বসে নেই।এই মূহুর্তে তুমি মাঠে যাবে।মাঠের মাঝখানে কড়া রোদের মধ্যে দুই হাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।এটাই তোমার ক্লাসে অমনোযোগী হওয়ার শাস্তি।””
ভাইয়ার কথা শুনে অবাক চোখে তার দিকে তাকালাম।ক্লাস ফাকি দেওয়ার শাস্তি যদি মাঠে কান ধরে দাড়িয়ে থাকা হয় তবে এতক্ষণ ধরে যে গরুর মতো মারল সেটা কি ছিল?
আমি মিটমিট চোখে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম।ক্লাসের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে।সবার চোখে ভয় স্পষ্ট।এর আগে কখনোই তাঁদের স্যারকে এতটা হাইপার হতে দেখেনি কেউ।তার থেকে ত বড় কথা একজন অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট কে যে কেউ পড়া না পারার অপরাধে এরকম শাস্তি দেয়।তা হয়তো তাঁদের অজানা ছিল।আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।এখানেই কি কম অপমানিত হলাম যে মাঠে গিয়ে নিজেকে আরো বেশি ধুয়ে ধুয়ে অপমানিত করাতে হবে।আড়চোখে একবার আমার পাশে বসে থাকা খোকনের দিকে তাকালাম।ছেলেটার যেন আজ গল্প শেষ ই হচ্ছিল না।ছাগল একটা।ওর জন্যই মার খেতে হলো আমায়।একবার সুযোগ পেলে আছাড় মারবো ধরে হারামি কোথাকার।
“”কি হলো আমার তোমার কানে যায়নি?গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস।””
আর কোনো কথা না বলেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম।
প্রায় আধঘন্টা যাবৎ মাঠের মাঝখানে কড়া রোদে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি।সিনিয়র জুনিয়র সবাই আমার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হয়তো ভার্সিটিতে এই প্রথম কাউকে এমন শাস্তি পেতে দেখল।হাত অসম্ভব রকম ফুলে গেছে।যার যন্ত্রণায় ভালোভাবে কানটাও ধরতে পারছি না।তবে আজ এই যন্ত্রণার থেকে বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে।ভাইয়া যে আমায় মারে না তা নয়। কোনো ভুল করলেই ঠাস ঠাস করে গালের মধ্যে পরে।কিন্তু এইভাবে কখনোই মারেনি।খুব কষ্ট হচ্ছে।ভাইয়া কিভাবে পারলো আমায় এই ভাবে মারতে।একটুও কষ্ট হলো না বুঝি।
ভাইয়া এই ভার্সিটিরই ইংলিশ প্রফেসর।আমাদের দুই ক্লাস পরেই তার ক্লাস।দুটো ক্লাস শেষ হতেই খোকনের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছিলাম।এই ফাঁকে কখন যে ভাইয়া ক্লাসে এসে পরে বুঝতেই পারিনি।যখন বুঝলাম তখন অলরেডী ভাইয়ার দৃষ্টি আমার ওপর পরেছে।তার কিছুক্ষণ পরেই পড়ার বাহানা দিয়ে আমার কাছে এসে বেদম পেটানো শুরু করলেন।
ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।আমার ফ্রেন্ড রা এসে আমায় কোথাও বসতে বললে আমি মানা করে দেই।ভাইয়া যখন কান ধরে থাকতে বলেছে তখন ভাইয়া না বলা অবধি আমি এই কান ছাড়ছি না।আমিও একরোখা টাইপের মেয়ে।দেখি কতক্ষণ আমায় এই রোদের মাঝে দাড় করিয়ে রাখতে পারে।আমার কথার সাথে হার মেনে সবাই চলে গেল।আর দাঁড়িয়ে রইলাম এই রোদের মাঝে।ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি।কিছুক্ষণ পর পর মাথা ঘুরিয়ে উঠছে।কিন্তু আমি আমার ছেদ কিছুতেই ছাড়ছি না।যতক্ষন না ভাইয়া নিজের থেকে আমায় রোদ থেকে সরে যাওয়ার কথা বলছে।ততক্ষণে পর্যন্ত আমি এখান থেকে সরবো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।তৃষ্ণা পেয়েছে।ভীষন তৃষ্ণা পেয়েছে।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম।তখনই কোথা থেকে ছায়া দৌড়ে এসে আমার সামনে দাড়ালো।
“”মিতু এই নে পানি টুকু খেয়ে নে।””
“”আমি পানি খাবো না।””
“‘উফফ এই পানি ভাইয়া পাঠিয়েছে।ভাইয়া তোকে পানি খেতে বলল।আর খুব তাড়াতাড়ি ছায়ায় গিয়ে বসতে বলল।চল তাড়াতাড়ি এখান থেকে।””
ছায়ার কথায় আমি কান ছেড়ে ভাইয়ার কেবিনের দিকে তাকালাম।ভাইয়া তার কেবিনের সামনে দুই হাত পকেটে রেখে আভার দিকেই তাকিয়ে আছে।তাঁকে দেখেই আমার চোখের বাঁধ ভাঙলো।হয়তো খুব বেশি অভিমান জন্মে গেছে মানুষটার ওপর।
গাছের নিচে বসে আছি।আগ চোখের জলেরা ভিষন অবাধ্য হয়ে গেছে।কিছুতেই আটকাতে পারছি না।আমার পাশে বসে আমার বন্ধু রা আমাকে শান্তনা দিয়েই চলেছে।তখনই খোকন আমার দিকে তার রুমাল এগিয়ে দিল চোখের পানি মুছে নেওয়ার জন্য।আমিও সুযোগ পেয়ে রুমালে চোখের পানি শুদ্ধ নাকের পানিটাও ঝেড়ে দিলাম।নাকটা অনেক্ষন ধরেই শিরশির করছিল…
চলবে❤
আমি নতুন লেখিকা।লেখালিখি তে আমি এখনো অনেকটাই কাঁচা।তাই এখন আমার আপনাদের সাপোর্টের প্রয়োজন।দয়া করে নেক্সট নাইস কমেন্টস না করে গঠন মূলক কমেন্টস করে গল্পে ভুল ত্রুটি ভালো খারাপ গুলো তুলে ধরুন।যাতে আমি গল্পটাকে আপনাদের মতো করে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে পারি।
হ্যাপি রিডিং❤

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
Part:3
ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে মেঘেদের লুকোচুরি খেলাটা দেখছি।কি অদ্ভুত এই আকাশ।মানুষের থেকে কত দূরের থেকেও তাঁদের সুখ কষ্ট আবেগ অনুভুতি কত সহজেই আপন করে নিতে পারে।কত সহজেই একটা মানুষ ওই আকাশটাকে নিজের থেকেও বেশি ভরসা করে ফেলে। যেই কষ্টটা সবার সাথে ভাগ করতে পারে ওই আকাশের সাথে তা ভাগ করে নেয়।আর ওই আকাশ নিঃস্বার্থ ভাবে সবকিছুর ভাগ নিয়ে থাকে।যেমন আজ আমার ভেতরের সকল অভিযোগ এই আকাশ একের পর এক শুনেই চলেছে।কখনো তো আরমান ভাইয়ে প্রতি থাকা অভিযোগ গুলো তাঁকে শোনাতে পারিনা।আজো পারিনি।তাই আজো এই অভিযোগ শোনার মতো এই আকাশ ছাড়া আর কেউই নেই।দুই চোখ বন্যায় ভাসছে।আজ ভাইয়া যেভাবে কলেজের সবার সামনে আমার অপমান করল সেটা না করলেও পারত।সামান্য তার কথা মানিনি বলে এইভাবে শাস্তি দিলেন আমায়।আসলেই কি এই শাস্তি টা আমার প্রাপ্য ছিল।ভাইয়া আমায় কখনো বুঝেনি।নাই বোঝার চেষ্টা করেছে।একবার ও ভাবল না কেন আমি তার কথাটা মানলাম না।ভাববে কেন?যখন ভালোইবাসে না তখন বুঝতে যাবে কেন?আমিই পাগলের মতো তার পেছনে ছুটছি।আর ছুটবো না।খুব অভিমান জন্মেছে খুব।কখনো কথা বলব না তার সাথে।কখনো না।
ছাদে রাতের আকাশ দেখতে দেখতেই আমি নিজের ভাবনায় বিলীন ছিলাম তখনই হঠাৎ মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি।ভয়ে আমি হাতের কাছে যাই পেলাম।সেটাই খামচে ধরলাম।মূহুর্তেই হাত ব্যথাটাও নাড়া দিয়ে উঠল।নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই দেখি ভাইয়া…আমি ভাইয়া কোলে।সাথে সাথে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।কোনো কথাই বলব না আজ তার সাথে।তবে আমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতে আরমান ভাইয়ের কোনো হেলদুল হলো বলে মনে হলো না।সে নিজের মতো সামনে তাকিয়ে আমার নিয়ে আমার রুমে নিয়ে এলো।আমাকে বিছানার ওপর বসিয়ে ভাইয়া আমার সামনে টুল টেনে বসে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।আমি সেটাকে না দেখার ভান করে উঠে চলে যেতে চাইলে আরমান ভাই আমার হাত ধরে নিজের সামনে বসিয়ে নিল।আমার হাত ধরায় আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম।কিন্তু ভাইয়া সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরল আমার হাত।এবার আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
“”কে যেন বলেছিল তোকে ভালোবাসার মানুষের দেওয়া ব্যথা যতটা গভীর হবে ভালোবাসাও ততটাই গভীর হবে।তাই তো হাতে এখন পর্যন্ত মলম লাগাস নি তাই না?””
“”আহহ ভাইয়া ছাড়ো লাগছে আমার।””
“”কেন ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা নেই?””
আমি এবার কোনো কথা বলার অবস্থাতেই রইলাম না।ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
“”এই চুপ একদম চুপ।এইসব ন্যাকামো করে তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের কাছে সিম্প্যাথি পাবি।আমার কাছে নয়।””
আরমান ভাইয়ের কথা শুনে এবার আমি ব্যথা ভুলে তার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালাম।আর ও আমার হাত ঝটকা মেরে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে মলম বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিল।
“”নে হাতে লাগিয়ে নে এটা।””
“”লাগাবো না….লাগাবো না লাগাবো না লাগাবো না শুনেছো তুমি লাগাবোনা আমি।””
বলেই বিছানা থেকে উঠে চলে আসতে চাইলে ভাইয়া পেছন থেকে উঠে আমার হাতে হেচকা টান দিতেই আমি টাল সামলাতে না পেরে ভাইয়ার বুকের ওপর পরলাম।এই সুযোগে ভাইয়া একহাতে আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।ভাইয়ার এত কাছে আসার কারনে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা।ভাইয়ার উষ্ণ শ্বাস আমার মুখের ওপর পরছে।যা আমার ভেতরে তোলপাড় শুরু করছে।আমি ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই ভাইয়া এবার আমাকে নিজের শরীরের সাথে গভীর ভাবে জড়িয়ে নিল।আমি আর ভাইয়ার চোখে চোখ মেলানোর অবস্থায় রইলাম না।ভাইয়ার এতো কাছে আসাতে অসস্থিতে আমার দম যায় যায় অবস্থা।
“”ভাইয়া প্লিজ দূরে যাও আমার অসস্থি হচ্ছে।””
“”আমি কাছে এলেই বুঝি তোর অসস্থি হয়।খোকন যখন তোর ক্লোজ হয় তখন অসস্থি হয়না।””
“”এখানে খোকন কোথা থেকে আসছে?””
“”আসছে…আসার কারন আছে বলেই আসছে।এই মেয়ে এতো বেখেয়ালি কেন তুই?কে তোর দিকে কোন নজরে তাকাচ্ছে সেটাও বুঝিস না।””
ভাইয়ার কথার সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।যার কারনে আমি তার চোখের দিকে অবাক চোখে তাকালাম।আমার চাহনি দেখে ভাইয়া একহাতে আমার পেছনের চুল আঁকড়ে ধরে আমার ঠোঁটের কাটা অংশে তার ঠোঁটের আলতো পরশ একে দিল।ভাইয়ার স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম।পুরো শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল।আবেশে চোখ করতেই অনুভব করলাম ভাইয়া আমার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে এবার যেন আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে।তার পর ও নিজেকে ভাইয়ার বাঁধন থেকে ছাড়ানোর জন্য তার বুকে মৃদু ধাক্কা দিচ্ছি।কিন্তু এতে করে ভাইয়া আরো বেশি আমাকে নিজের গভীরে ডুবিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।এবার আমি আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না।ডুবে গেলাম তার ভালোলাসার পরশের মাঝে।যতই অভিমান করিনা কেন?ভালো তো এই মানুষটাকেই বাসি।বেশ কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আমার ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে গেল।গলার নিচে থাকা আমার কালো তিলটাতে একটু জোড়ে কামড় বসাতেই আমি ব্যথায় কুকড়ে উঠলাম।ভাইয়া এবার আমার গলা থেকে মুখ তুলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মাতাল করা কন্ঠে বলল
“”আমি চাইনা আমার জিনিসে অন্য কারো বাজে নজর পরুক।নিজের জন্য নয় আমার জন্যেও তো নিজের খেয়াল রাখতে পারিস।””
ভাইয়ার কথা শুনে আমার বুক ধক করে উঠল।এই প্রথমবার ভাইয়া আমায় নিজের বলে সম্বোধন করল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে