নেশা তুই আমার Part:1

0
5986

নেশা_তুই_আমার
Part:1
Mst.Mitu Rahman

থুতনিতে কামড়ের অনুভব হতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে থুতনিতে হাত দিতেই সামনে থাকা লোকটি থুতনি থেকে আমার হাত সরিয়ে বিছানায় চেপে ধরে আমার ঠোঁটের ওপর হামলা চালালো।যেন কোনো এক জন্মে আমার এই ঠোঁট লোকটির শত্রুর ভূমিকা পালন করেছিল তাই এই জন্মে সামনে পেয়ে এই ঠোঁটের ওপর অত্যাচারে তা সুদে আসলে মিটিয়ে নিচ্ছে।অন্ধকারে লোকটার চেহারা দেখতে না পারলেও বুঝতে বাকি রইল না লোকটা কে।নিজেকে ছাড়ানোর
কোনো উপায় নেই তবুও হাত মোচড়ানো শুরু করলাম লোকটার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।কিন্তু শেষ রক্ষে যখন হলো না।তখন কান্না ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই অবশেষ রইল না।ব্যথার চোটে দুই চোখের জল ছেড়ে কাঁদতে লাগলাম।অন্ধকারে আমার চোখের জল গড়ানো বুঝতে পেরে আরমান ভাই এবার আমার ঠোঁট ছেড়ে চোখের দিকে তাকালো।
“”কি রে এই ভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেন?””
“”তুমি এমন কেন আরমান ভাই? সবসময় আমায় ব্যথা দাও খালি।চুমু যদি দেবে তো একটু ভালোবেসেই তো দিতে পারো।””
আমার কথায় এবার আরমান ভাই আমার উপর থেকে উঠে বসল।
“”আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়?ভালোবেসে চুমু খাবো?তাও আবার তোকে?মিতু নিজেকে কি তুই খুব বড় হিরোইন ভাবিস?যে তোকে ভালোবেসে চুমু খাবো।””
ভাইয়া ওঠার সাথে আমি ও উঠে বসে টেবিল ল্যাম্প টা জালিয়ে দিলাম।তার পর মিনমিন করে বললাম
“”যদি ভালোই না বাসো তাহলে বারবার কেন এতো কাছে আসো যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য?””
“”কারণ তোর মতো হ্যাংলা মেয়েকে শুধু যন্ত্রণা দেওয়ার ই ইচ্ছে করে।ভালোবাসতে নয়।””
কথাটা বলতে বলতেই উনার নজর পরে আমার টেবিলে থাকা দুধের গ্লাসটায়।
“”আরে তুই তো দেখি দুধ টাও খাসনি।তাই তো বলি তোকে দিন দিন আমার এতো পিচ্চি পিচ্চি কেন লাগে?দুধ না খেলে কি আর কেউ বড় হয়?””
কথাটা বলেই উনি দুধের গ্লাসটা নিজের হাতে নিলেন।দুধ দেখতেই আমার নাক মুখ কুচকে এলো। আমি নাক ছিটকে বললাম।
“”ইয়াক আমি খাই না।গন্ধ লাগে।””
“”আচ্ছা দেখি কেমন গন্ধ লাগে?””
বলেই আরমান ভাই উনার একহাতের আঙুলগুলো দিয়ে আমার দুই গাল খুব শক্ত করে চেপে ধরে জোর করে গ্লাসের দুধ টুকু খাওয়াতে লাগল।গ্লাসে থাকা দুধের শেষ বিন্দু টুকু ফুরোতেই ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিল।ছাড়া পেয়েই আমি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম।সাথে বমি বমি ভাবটাও চলে এলো।ইস কি গন্ধ ইয়াকক।
“”ওমা মাত্র চুমুতেই তোর এই অবস্থা?এখনো তো কিছুই করলাম না।””
ভাইয়ার কথার আগাগোড়া কিছু বুঝতে না পেরে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।কিন্তু ভাইয়া আমার চাহনিকে কোনো পাত্তা না দিয়েই বিছানা ছেড়ে উঠে চলে যেতে যেতে বলল
“”মাঝ রাতে দরজা এইভাবে হা করে রাখলে শুধু আমি কেন?যে কোনো ছেলেই নিজের কামুকতা মেটাতে তোর ঘরে চলে আসবে।””
কথাটা বলেই খুব জোরে দরজাটা লাগিয়ে চলে গেল।আর আমি বোকার মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সামান্য দরজা খোলা রেখেছি বলে ভাই আমার সাথে এমন করল।
?
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেল আমার।এই রোদটা সবসময়ই আমার সাথে শত্রুতা পালন করে।সকাল হতে না হতেই ঘুম ভাঙিয়ে দেয় অসহ্য।কোনো রকম নিজেই নিজের শরীর কে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমে চললাম
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়াতেই কাল রাতে ভাইয়ার করা অত্যাচারের ফলাফল বুঝতে পারলাম।ঠোঁট ফুলে মৌচাক হয়ে গেছে।অনেকটা জায়গা কেটে রক্তও জমে গেছে।ইসস রাক্ষস একটা।আমার সুন্দর ঠোঁটটা কি অবস্থা করে দিল।এখন আমি এই নিয়ে বাইরে কি করে যাবো।কান্না পাচ্ছে ভীষন কান্না পাচ্ছে।কোনো রকম কান্না আটকে টেবিলের ওপর ধপ করে বসলাম।কিছু একটা করতে হবে।সকাল থেকে ঘর থেকে বের হইনি।একেবারে কলেজের জন্য রেডী হয়ে বেরোলাম।ঠোঁটের অবস্থা সবার থেকে আড়াল করার জন্য আজ ঠোঁটে ডার্ক লিপস্টিক দিয়েছি।ফ্যাকাশে মুখে তো আর ডার্ক লিপস্টিক মানায়না তাই চোখেও গাঢ় কাজল এঁকেছে।সবদিক দিয়ে একদম ফিট হয়েই ঘর থেকে বেরিয়েছি।বসার ঘরে আসতেই মনে হলো হ্যা আমি আমাদের বাড়িতেই আছি।যেই বাড়িটা শুধু একটা বাড়ি নয় আস্ত চিড়িয়াখানা।আমার বাবারা চার ভাই।যৌথ পরিবার হওয়ায় বাড়িতে সদস্য এত এত বেশি যে যেকোনো সময় সরকারি লোক এসে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে পারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অপরাধে।আমার বড় আব্বুর ছেলে আরমান ভাই আমাদের সব কাজিনদের থেকে বড়।আর আমার থেকে প্রায় আট বছরের বড়।তার ছোট বোন লিজা আপু আমার থেকে পাঁচ বছরের বড়।এই মূহুর্তে সে শশুর বাড়ি বাচ্চা কাচ্চা সামলাচ্ছে।আমি টেবিলের সামনে আসতেই থমকে গেলাম।সামনেই ভাইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে পাউরুটি খাচ্ছে।ইসস প্রতিবারের মতো আজ ও একশো ভোল্টের ক্রাশ খেলাম।সাদা শার্ট টা যেন তার সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।গালের খোচা খোচা দাড়ি গুলো দেখলে মনে হয় যেন উনার গালের জন্যই এই দাড়ি।আর চুল গুলো উফফ!দেখলেই ছুয়ে দেওয়ার ইচ্ছে করে।একটা লোক এতটা সুন্দর কি করে হয়?একটু কম সুন্দর হলে কি হতো?।আহা কি এটিটিউড!পরিবারের বড় ছেলে যেমন এটিটিউট তেমনি হ্যান্ডসাম তেমনি দায়িত্ববোধ সম্পন্ন।এই চিড়িয়াখানার মতো বাড়িতে বড় হওয়া সত্তেও যে মানুষ এতটা গম্ভীর হতে পারে তা ভাইয়াকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।
ভাইয়াকে পর্যবেক্ষন করতে করতেই তার সামনে চেয়ার টেনে বসলাম।আমার পাশে আমার সেজো কাকুর মেয়ে ছায়া।আমার থেকে এক বছরের ছোট।তার পাশে তার বড় ভাই আরিফ আমার থেকে দুই বছরের বড়।আর টেবিলের একপাশে বসেছে নিজেদের মতো আমার ছোট কাকুর দশ বছরের দুই জমজ মেয়ে আর আট বছরে এক ছেলে।এই তিনজনে সবসময় খুঁটিনাটি লেগেই থাকে।এই মূহুর্তেও তাঁদের মধ্যে কাড়াকাড়ি চলছে।এ বলছে ওর পাউরুটি বেশি বড় আর আরেকজন বলছে অন্যজনেরটা বেশি বড়।এই নিয়ে একজন আরেকজনের প্লেট থেকে পাউরুটি উঠিয়ে চলেছে।কিন্তু আমি এত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ও আমার দুটো পাউরুটির মধ্য পার্থক্য বের করতে পারলাম না?।
খাওয়া শেষ হতেই ছায়া আর আমি একসাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।দুজনে একই কলেজে পরি।শুধু ইয়ার আলাদা।আমরা দুজনে আমাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে ভাইয়া ডেকে উঠল।
“”মিতু স্টপ দেয়ার।””
তার ডাকে আমরা দুজনেই দাঁড়িয়ে পরলাম।ভাইয়া আমাদের কাছে এসে ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
“”তুই গিয়ে গাড়িতে বস আমরা আসছি””
ভাইয়ার কথা শুনে ছায়া কিছু না বলে মাথা নিচু করে গাড়িতে গিয়ে বসল।ভাইয়ার মুখের ওপর কথা বলার সাহস কারোর ই নেই।আমিও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।ভাইয়া আমার দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল
“”ঠোঁটের লিপস্টিক টা মুছে নে।তোর ঠোঁটে এই লিপস্টিক মানান সই নয়। বিশ্রি দেখাচ্ছে।””
কথাটা বলেই রুমাল আমার হাতে দিয়ে ভাইয়া গিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসল।কিন্তু আমি পরলাম মহা বিপদে।এই লিপস্টিক তো আমি মুছতে পারবো না।লিপস্টিক মুছলেই আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক হবে।আর আমার যা ফ্রেন্ড আমার ঠোঁট কাটা দেখলে আমাকে পচাতে পচাতে শেষ করবে ওরা।কিন্তু ভাইয়ার কথা না শুনলে যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।ধুর সব চিন্তা ভাবনা দূরে ঠেলে লিপস্টিক না মুছেই গাড়ির পেছনের সিটে ছায়ার পাশে গিয়ে বসলাম।গাড়ি চলতেই ছায়ার বকবকানি শুরু হলো।আজ ডার্ক লিপস্টিক কারন কি?এতো সাজার কারন কি?আমার চেহারার তারিফ করতে করতে শেষ।কিন্তু আমার সেদিকে মনোযোগ নেই।আমি তো সামনের লুকিং গ্লাসে ভাইয়াকে দেখছি।ভাইয়া বারবার লুকিং গ্লাসে আমাকেই দেখছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা রেগে গেছে তার কথা না শোনার কারনে।যেন এই চোখ থেকে আগুনের গোলা বের করে আমার দিকে ছুড়ছে।আর আমি সেই গোলক টা হাতে নিয়ে আরো ভালো ভাবে গোলক বানিয়ে অন্য দিকে ছুড়ে দিয়ে ছায়ার সাথে গল্পে মেতে উঠলাম।কারণ আমি জানি এখন আর পরে হোক শাস্তি আমাকে পেতেই হবে…..

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
Part:1

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে