তোমার স্পর্শে পর্বঃ ০৩

0
3071

তোমার স্পর্শে পর্বঃ ০৩
– আবির খান

আমিও রাফির কথা শুনে চিন্তায় পরে গেলাম। আসলেইতো কিভাবে?? হঠাৎ মনে পরলো সেই কালো ব্যাগের কথা। আমি দৌড়ে গিয়ে সেই বড় কালো ব্যাগটা এনে রাফির সামনে রাখি আর বসতে বসতে বলি,

আমিঃ এই ব্যাগই আমাদের বলতে পারবে এই মেয়ে কে??

রাফিঃ এই ব্যাগ পেলি কই?? আশ্চর্য হয়ে।

আমিঃ এক্সিডেন্টের দিন ওর সাথেই এই ব্যাগটা ছিলো।

রাফিঃ খুলে দেখবি??

আমিঃ হ্যাঁ। এটা খুললেই বুঝা যাবে ও কে।

রাফিঃ তাহলে আর দেরি কেন তাড়াতাড়ি খুলে দেখ।

আমিঃ যদি বোমা টোমা থাকে। মজা করে।

রাফি কিছুটা ভয় পেয়ে বলল,

রাফিঃ থাক ভাই থাক তাহলে আর খুলিস না।

আমি হাসতে হাসতে বললাম,

আমিঃ আরে বেটা মজা করছিলাম। হাহা। আয় খুলে দেখি।

রাফিঃ তুই খুল।

আমিঃ আচ্ছা।

আমি আস্তে করে ব্যাগের চেইন খুললাম। আর..

রাফিঃ একি তুই এমন পাথরের মতো হয়ে গেলি কেন!! ভূত দেখলি নাকি ব্যাগের ভিতর??

আমি হা করে এখনো তাকিয়ে আছি ব্যাগের দিকে।

রাফি সোফা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,

রাফিঃ কিরে কি এমন দেখ…..

রাফিও হা করে আছে। সাথে আমিও। কারণ ব্যাগের চেইন খুলতেই আমরা যা দেখি, তা আমরা স্বপ্নেও ভাবি নি দেখবো। আমরা দেখি, অনেকগুলো গহনা।

রাফিঃ মামা, এই মেয়ে নির্ঘাত কোথাও থেকে চুরি করে এসেছে।

আমিঃ আরে দাঁড়া বেটা। অাগে পুরো ব্যাগে কি আছে সব দেখে নি।

আমি একে একে গহনাগুলো সব বের করে টেবিলে রাখলাম। গহনা সরাতেই দেখি একটা বয়ষ্ক মহিলার ছবি।

রাফিঃ এটা কে রে??

আমিঃ দোস্ত, মনে হয় মেয়েটার মা।

আমি ছবিটা পাশে যত্নসহকারে রেখে আবার ব্যাগের ভিতর দেখি। এবার একটা ছোট ব্যাগ পেলাম। আমি সেটা খুলে দেখি ৩০০০ টাকা। এরপর যা ছিলো সবই জামা কাপড়।

রাফিঃ গহনা, ছবি, টাকা আর জামা কাপড়। কি বুঝলি??

আমিঃ এই মেয়ে বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে তাইতো??

রাফিঃ অবশ্যই। অালবাদ এসেছে৷

আমিঃ না দোস্ত। আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম।

রাফি কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

রাফিঃ তাহলে??

আমিঃ শোন, যদি পালিয়ে আসতো তাহলে মায়ের ছবি কখনো সাথে থাকতো না। আর ফোনটাও ব্যাগে থাকতো। তার মানে ও বিয়ে থেকে অন্তত পালিয়ে আসে নি।

রাফিঃ বাহ। তুই দেখি ডিটেকটিভের মতো কথা বলছিস।

আমিঃ তবে দোস্ত, এই মেয়ে পালিয়ে অবশ্যই এসেছে কিন্তু কি কারণে??

রাফিঃ ওর ফোনটা থাকলেও লাভ হতো। কিছু হলেও বুঝতে পারতাম।

আমিঃ হুম।

রাফিঃ আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়??

আমিঃ কি বলতো??

রাফিঃ ওর ছবি পত্রিকায় দিয়ে দি। তাহলেই তো ওর পরিচয় পাওয়া যাবে।

আমিঃ না না দোস্ত। মেয়েটা হয়তো কোনো বিপদে আছে বলেই এভাবে পালিয়েছে। তাই ওর স্মৃতি না আসা পর্যন্ত ওকে আমি কারো হাতে দিতে পারবো না।

রাফিঃ সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম, তুই ওকে নিয়ে একটু বেশিই সিরিয়াস মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা কি হুম?? রসিকতার ঢংয়ে।

আমিঃ ধুর বেটা। হুদাই কি যে বলস। যা এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নে। অনেক কষ্ট করলি এই কয়দিন। অনেক থ্যাংকস দোস্ত তোকে।

রাফিঃ এই যে থ্যাংকস দিয়া দিলিতো পর কইরা।

আমিঃ আচ্ছা হইছে। তুই বাসায় গিয়ে এখন রেস্ট নে ভাই।

রাফিঃ খাওয়া দাওয়ার কি করবি।

আমিঃ আসলেইতো। আমিতো খালি আমার জন্য রান্না করি। কিন্তু এখন…

রাফিঃ এরজন্যই না করছিলাম।

আমিঃ আরে সমস্যা নাই। আমি ম্যানেজ করে নিবো নে।

রাফিঃ আচ্ছা। তারপরও আমি দেখছি কি করা যায়।

আমিঃ আচ্ছা।

এরপর রাফি ওর বাসায় চলে গেলো। রাফি গেলে আমি দরজা লাগিয়ে চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়াই। আর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ি। ছেড়ে মেয়েটার কাছে যাই। আমার রুমে ঢুকতেই আমি অবাক। মেয়েটা উঠে বসে আছে। আমি দ্রুত ওর কাছে এগিয়ে যাই।

আমিঃ কেমন আছো তুমি??

মেয়েঃ…. চুপ।

মেয়েটা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কিছু বলবে। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম,

আমিঃ কিছু বলবে??

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

আমিঃ আচ্ছা বলো।

মেয়েঃ তুমি কে??

এই প্রথম মেয়েটার কণ্ঠ আমি শুনলাম।”তুমি কে??” আহ! কি মধুর তার কণ্ঠ। আমি তার সামনে বসলাম। আর আস্তে করে তার চোখে চোখ রেখে বললাম,

আমিঃ আমি তোমার বন্ধু। আবির।

মেয়েঃ ওহহ। আচ্ছা আমি কে??

এই রে একি প্রশ্ন করলো আমাকে। এখন কি বলবো আমি। আমি নিজেইতো জানি না ও কে। ওকে আমি আবার কি বলবো। মেয়েটা মলিন নয়নে অধীর আগ্রহে আমার পানে চেয়ে আছে। আমি অবশেষে ভেবে বললাম,

আমিঃ তুমি আমার বান্ধবী।

মেয়েঃ আমার নাম কি??

ওর মায়া লাগানো এভাবে বুলি শুনে আমার মনে কেমন জানি করছে। ওর নয়নজোড়া মায়ায় ভরা। একদম মায়াবী সুন্দরী ও। কিন্তু ওর নামও তো আমার জানা নেই। কি বলবো?? হ্যাঁ পেয়েছি। এই মায়াবতীর নাম হবে,

আমিঃ তোমার নাম মায়া।

মেয়েঃ আমার নাম মায়া??

আমিঃ হ্যাঁ।

মায়াঃ কি মজা কি মজা আমার নাম মায়া। বাচ্চাদের মতো।

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,

আমিঃ তোমার পছন্দ হয়েছে??

মায়াঃ অনেক পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা তুমি আমার কেমন বন্ধু??

আমিঃ ভালো বন্ধু।

মায়াঃ ভালো বন্ধু কি??

আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। একি অবস্থা। মায়াতো বাচ্চাদের মতো কিছুটা আচরণ করছে। এখন কি হবে??

মায়াঃ কই বলো না। ভালো বন্ধু কি??

আমিঃ ভালো বন্ধু মানে, যে বন্ধুর সাথে সব কথা বলা যায়। থাকা যায়। আর বন্ধুর কথা শুনতে হয়।

মায়াঃ ওও…তাহলে আমি একটা কথা বলি??

আমিঃ হ্যাঁ বলো।

মায়াঃ তুমি দেখতে খুব সুন্দর। ওই দাড়িগুলো কি আসল??

আমি মায়ার কথা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। আমি হাসি কোনো ভাবে চেপে বললাম,

আমিঃ আসল দাড়ি। নকল হতে যাবে কেনো।

মায়াঃ সত্যিই?? আমি একটু ধরে দেখবো। প্লিজ..

আমি অবাকের পর অবাক হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে সামলে বললাম,

আমিঃ আচ্ছা নেও ধরো।

মায়া আমার কাছে এসে দু’হাত দিয়ে আমার চাপ দাড়িগুলো ধরছে। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ে মানুষের স্পর্শ আমি আজ পেলাম। মায়ার স্পর্শের আজ আমি মুগ্ধ। নরম হাত দুটো দিয়ে বাচ্চাদের মতো আমার দাড়ি ধরছে। আমি এখন ওকে খুব কাছ থেকে দেখছি। ওর রূপের বর্ননা আমি কতটুকু দিতে পারবো তা আমি জানি না। তাও বলছি,

” বেশ ফর্সা মুখে আছে, হরিণের মতো দুটো চোখ। সেখানে আছে শুধু মায়া আর মায়া। পাপড়ি গুলো কি সুন্দর বড় বড়। নাকটা একদম পারফেক্ট। ঠোঁটের কারুকার্যের কথা আর কি বলবো। গোলাপি ঠোঁটের উপর কালো ছোট তিলটাই যেন ওর ঠোঁটের সৌন্দর্য্য আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ঘন কালো তার কেশ। সব মিলিয়ে একদম মিষ্টি একটা মেয়ে।” ওকে দেখলে এখনো বাচ্চা বাচ্চা মনে হয়। একটা চঞ্চলতা আছে ওর মধ্যে। নাহলে দেখুন এখনো কিভাবে বাচ্চাদের মতো আমার দাড়ি নিয়ে খেলছে। আমি এবার বললাম,

আমিঃ আর কত ধরবে?? এবার একটু ফ্রেশ হবে চলো।

মায়াঃ তুমি হাত মুখ ধুয়ে দিবে আমার। নাহলে ফ্রেশ হবো না।

এ কেমন তার আবদার। আমি ওর কথা শুনে শুধু অবাকই হচ্ছি। ডাক্তারের সাথে একবার এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। আমি মায়াকে বললাম,

আমিঃ আচ্ছা আমিই তোমার হাত মুখ ধুয়ে দিবো চলো।

মায়াঃ আচ্ছা। চলো। আমিও ধুয়ে দিবো তোমাকে। হিহি।

আমার জীবনে কোনো দিন আমি এমন মেয়ে দেখিনি। অবশ্য মায়ার এই বাচ্চাদের মতো আচরণ আমার কেন যেন খুব ভালো লাগছে। একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে ওর প্রতি।

আমিঃ আচ্ছা ধুয়ে দিয়ো চলো।

এরপর মায়াকে ধরে আস্তে করে ওয়াশরুমে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে দিলাম। ও আমার সাথে মজা করলেও ও ভিতরে ভিতরে অনেক অসুস্থ। যাই হোক দুষ্ট মেয়েটা কিন্তু সেই আমারও হাত মুখ ধুয়ে দিলো। দিয়ে কি হাসি। আমি ওকে ওয়াশরুমে রেখে বাইরে অপেক্ষা করছি আর ভাবছি, মায়া কত মিষ্টি। এই কয়দিনেই ওর প্রতি কেমন দূর্বল হয়ে পরেছি আমি। কিন্তু ও বাচ্চাদের মতো আচরণ করছে কেনো?? বুঝতে পারছি না। ওতো ১৯/২০ বছরের একটা মেয়ে হবেই। তাহলে?? হঠাৎই কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি মায়া।

আমিঃ এসেছো, বসো। কিছু বলবে??

মায়াঃ অনেক ক্ষুধা লেগেছে আমার। কিছু খাবো। অসহায় ভাবে।

মায়া কথাটা এমনভাবে বলল যে, আমার চোখে পানি এসে পরেছে। কারো কথায়, চোখে এতোটা যে মায়া হতে পারে আমি আগে জানতাম না। আমি একলাফে দাঁড়িয়ে গেলাম। ওকে বললাম,

আমিঃ মায়া, তুমি একটু শোও এখানে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।

ও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। আমি ওকে শুয়ে দিয়ে দ্রুত রান্না ঘরে গেলাম। ওকে কোনো হেবি খাবার খাওয়ানো যাবে না। সব হালকা বা লিকুইড খাবার। দারোয়ান আঙ্কেলকে ফোন দিয়ে ইন্সট্যান্ট স্যুপ আর ফ্রুটস জুস আনতে বললাম। ৫ মিনিট পর স্যুপ আর ফ্রুটস জুস দিয়ে গেলো। স্যুপ রান্না করে আর সাথে জুস নিয়ে মায়ার কাছে গেলাম। আমাকে দেখেই মায়া আস্তে করে উঠে বসে। একদম বাচ্চা একটা মেয়ের মতো। আমি স্যুপটা নিয়ে মায়ার সামনে গিয়ে বসলাম।

মায়াঃ হলুদ হলুদ ওটা কি??

আমিঃ ওটা জুস, খাবে??

মায়াঃ হ্যাঁ খাবো। খুব খুশি হয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলল।

আমি মায়ার হাতে জুসের গ্লাসটা দিলাম। ও নিয়ে প্রথমে একটা চুমুক দিলো।

মায়াঃ বাহ!! খুব মজার। আরেকটু খাই??

আমিঃ পরে। আগে এই মজাদার স্যুপটা খাও।

মায়াঃ তুমি খাইয়ে দিবে??

আমিঃ হ্যাঁ।

মায়াঃ আচ্ছা। তাহলে খাবো। দেও।

এরপর আমি আস্তে আস্তে মায়াকে স্যুপ খাওয়াতে থাকি। কি সুন্দর যে ওকে লাগছে। ও যে একটা যুবতী মেয়ে এখন বুঝার কোনো উপায় নেই। স্যুপ খাচ্ছে আর খুশি হচ্ছে। হাসি দিচ্ছে। আহহ!! মায়ার হাসি। জীবনে অনেকের হাসি দেখেছি। কিন্তু ওর মতো হাসি আমি আর কারো দেখি নি। ও হাসলে মনে হয় গোটা দুনিয়াটাই হাসছে। ও হাসলে মনে হয় যেন মুক্তা ঝরে। কিন্তু ওর অসুস্থতা আমাকে পোড়াচ্ছে। যাক খাওয়া দাওয়া শেষ।

আমিঃ চলো মুখ ধুয়ে আসবে।

এরপর মায়াকে মুখ ধুয়ে দিয়ে এনে ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ গুলো ওকে খাওয়ালাম।

আমিঃ এখন তুমি একটু ঘুমাও। আমি পাশের রুমে আছি। কিছু লাগলে ডাক দিও।

মায়াঃ নাহ!! দিনের বেলা কেউ ঘুমায় নাকি। আমি তোমার সাথে গল্প কববো। প্লিজ..একদম বাবুদের মতো।

ওর এভাবে কথা শুনে আমার কেমন জানি সুরসুরি লাগছে মনে। আসলে এখন দুপুর ৩ টা বাজে। তাই ওকে ঘুমাতে বললাম। ডাক্তার এ সময় ওকে অবশ্যই ঘুমাতে বলেছেন।

আমিঃ না না গল্প পরে। এখন তুমি একটু ঘুমাও আমার কাজ আছে। বিকেলে গল্প করবো।

মায়া মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আমি এর কাছে গিয়ে ওকে ধরে শুয়ে দিলাম। আমি চলে যেতে নিলেই আমার হাত ধরে আটকায়। ইশারা করে ওর কাছে ডাকে। আমার হৃদস্পন্দন কেমন বেড়ে গিয়েছে মুহূর্তেই। আমি ওর কাছে যেতেই ও আবার আমার দাড়িতে হাত দেয়। আসলে আমার চাপ দাড়ি পছন্দ। তাই আমার গোচা গোচা দাড়িগুলো হয়তো ওর ভালো লাগছে। বাচ্চা একটা মেয়ে।

আমিঃ আচ্ছা হয়েছে। এখন ঘুমাও।

মায়াঃ না না। আমাকে একটা গল্প শুনাবে?? আমি গল্প না শুনে ঘুমাবো না। অভিমানী কণ্ঠে।

খাল কেটে কুমির যখন এনেছি তখন আর কি করার। মায়ার এখন যেভাবে হোক ঘুমাতেই হবে। ঘুমই ওর জন্য সবচেয়ে ভালো ঔষধ। তাই আর কিছু না ভেবে গল্প বলা শুরু করি। গল্প শুনতে শুনতে মায়া একসময় ঘুমিয়ে পরে। আমি ওর গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে বাইরে সোফায় গিয়ে বসি।

মায়া এমন বাচ্চাদের মতো আচরণ কেন করছে?? না একবার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতেই হবে। তাই দিলাম ডাক্তারকে ফোন।

ডাক্তারঃ জ্বি আবির সাহেব, আপনারা ঠিক ভাবে পৌঁছেছেন তো?? উনি ভালো আছে??

আমিঃ জ্বি স্যার। তবে একটা আশ্চর্য ব্যাপার খেয়াল করলাম।

ডাক্তারঃ কি বলুন তো।

আমিঃ স্যার, ওতো বাচ্চাদের মতো কিছুটা আচরণ করছে। কথাও বলে বাচ্চাদের মতো। কিন্তু সব বুঝে।

ডাক্তারঃ ওহহ। এটা কিন্তু একটা ভালো খবর আবির সাহেব।

আমিঃ কিভাবে??

ডাক্তারঃ দেখুন, উনি ওনার স্মৃতি শক্তি হারায় নি। ওনি বর্তমানের স্মৃতি ভুলে অতীতে চলে গিয়েছেন। উনি মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার ফলে ব্রেনের একটা অংশ হয়তো ওনাকে সিগ্ন্যাল দিচ্ছে যে, উনি একজন ছোট মেয়ে। তাই উনি নিজেকে ছোট মেয়ে ভাবছেন। কিন্তু উনার বুঝার ক্ষমতা বড়দের মতোই হবে। সব বুঝবেন উনি। কিন্তু আচরণ ছোট মেয়েদের মতোই করবেন।

আমিঃ তাহলে এখন কি করবো স্যার??

ডাক্তারঃ চিন্তার কোনো কারণ নেই। উনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে৷ তবে তাকে তার বর্তমানে আনতে তার দেখা বর্তমানের কিছু মুহূর্ত তার সামনে তুলে ধরতে হবে। তাহলে হয়তো তার সব মনে পরে যেতে পারে। আর সে ভালো হয়ে যাবে। কাল একবার উনাকে নিয়ে আমার কাছে এসেন। কিছু টেস্ট করতে হবে।

আমিঃ ওকে স্যার ধন্যবাদ।

ফোনটা রেখে দিয়ে আমি গভীর চিন্তায় পরে গেলাম। ওর বর্তমানের সম্পর্কে আমি কিচ্ছু জানি না। কিভাবে অামি অাবার তা ওকে দেখাবো। ওতো আমার কাছে পুরো নতুন। কিভাবে কি করবো?? চিন্তায় আমার মাথাটা ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠে। রাফির ফোন।

আমিঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।

রাফিঃ তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে।

আমিঃ কি??

রাফিঃ আমি একটা বিশ্বস্ত সার্ভেন্ট পেয়েছি। বয়ষ্ক একজন মহিলা। খুব ভালো। সব রান্না করতে পারে। কাল সকালে নিয়ে আসবো।

আমিঃ ভাই বাঁচাইলি আমাকে।

রাফিঃ ওনাকে কিন্তু বলছি তোরা বিবাহিত।

আমিঃ এখানেও!!

রাফিঃ বেটা না বললে উনি জীবনেও রাজি হতেন না কাজ করার জন্য।

আমিঃ ভালো, বিনা বিয়েতেই স্বামী হয়ে গেলাম। অবশ্য মায়ার স্বামী হওয়াতো স্বপ্নেরই ব্যাপার।

রাফিঃ কি রে একা একা কি বলিস??

আমিঃ আরে কিছু না। তাড়াতাড়ি আসিস।

রাফিঃ আচ্ছা।

রাফির কল রেখে দিয়ে জহির সাহেবকে কল দি।

জহিরঃ স্যার আপনি কোথায়??

আমিঃ আছি একটু ঝামেলায়। আপনি বড় স্যারকে বলে দিয়েন, আমি একটা ইমার্জেন্সিতে আছি। ঝামেলা শেষ হলেই চলে আসবো।

জহিরঃ স্যার, সব ঠিক আছেতো??

আমিঃ আছে। আপনাকে যা বলছি তাই করেন।

জহিরঃ জ্বি জ্বি স্যার অবশ্যই।

ফোন রেখে দেই। খুব ক্লান্ত লাগছে। এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে চলে গেলাম আবার রান্না ঘরে। শুরু করলাম রান্না। নিজের জন্য আর রাতে মায়ার জন্য। রান্না করতে করতে বিকেল ৫ টা বেজে গেলো। খাবারটা খেয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। মায়া খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। কারণ ওকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। আমিও পাশে যে সোফাটা আছে সেখানে শুয়ে পরি। জানি না কতক্ষণ ঘুমালাম। চোখ খুলে আমার বিছানায় তাকিয়ে দেখি মায়া নেই। ওয়াশরুম ও লক করা। চিন্তায় আর ভয়ে আমার ঘাম দিয়ে গেছে পুরো শরীর। তাহলে মায়া কোথায়??

চলবে…

সবাই সাথে থাকুন। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে