তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১৫+১৬

0
339

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৫

আমি ইয়ানাকে বিয়ে করতে চাই আর সেটা আজকের ভিতরেই।

পারফির এ কথা শুনে সবাই চমকে তাকালো পারফির দিকে।

সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে পারফি ফের বললো এটাই এখন একমাত্র রাস্তা ওকে রক্ষা করার। আজ আমাদের জন্য ওই নিস্পাপ মেয়েটার কলঙ্কে দাগ লাগুক এটা কখনো চাই না। আজ ওর পাশে আমরা না দাঁড়ালে এ সমাজ ওকে বাঁচতে দিবে না। আমাদের জন্য নিষ্পাপ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক সেটা নিশ্চয়ই কেউ চাও না। তাই আশা করি এ ব্যপারে কারো আপত্তি থাকবে না। এবার তোমরা কি করবে সেটা জানাও আমাকে। হাতে সময় কম যা করার আজকের ভিতরেই করতে হবে।

পিয়াস বেগম সাথে সাথে বললেন আমিও এই কথাটাই ভেবেছি। এটাই এখন একমাত্র রাস্তা ওকে রক্ষা করা। আর ইয়ানা কতোটা ভদ্রমেয়ে তোমরা সবাই জানো। এখানে কারো আপত্তি থাকার কথা না।
তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো কি বলো ভাবি তুমি?

শাহানা বেগম বললে আমারও তাই মনে হয়। মেয়েটা নম্র ভদ্র খুব সহজসরল। এখন ওর পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো উচিৎ। তাছাড়া আমাদের পারফি নিজ থেকেই যেহেতু রাজি সেহেতু আমাদের এ দিকে আগাতে কোনো সমস্যা নেই এবার।

পিয়াসা এবার পাভেল চৌধুরীর দিকে তকিয়ে বললো তোমরা কি বলো?

পাভেল চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো তোমরা সবাই যেহেতু রাজি সেহেতু আমরা আর কি বলবো। ইয়ানা মামনীকে আমার পুত্রবধূ করে আনতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো ইসহাক আহমেদ কি রাজি হবে?

শরীফ আহমেদ বললো ইসহাক আহমেদ খুব নম্র ভদ্র একটা লোক। আশা করি উনি মানবেন, মেয়ের দিকে তাকিয়ে হলেও মানবেন।

সবার কথা শুনে প্রীতির খুশি দেখে কে। ওর অনেক ইচ্ছে ছিলো পারফির বউ করে ইয়ানাকে আনার কিন্তু কখনো কাউকে বলা হয় নি। অবশেষে ওর ইচ্ছে পুরোন হতে চলেছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?

পিয়াস বেগম বললো তাহলে আর সমস্যা কোথায় তুমি এখনি ইসহাক ভাইর কাছে ফোন করে বিষয়টা খুলে বলো।

পাভেল চৌধুরী সম্মতি দিয়ে ফোন নিয়ে ইসহাক আহমেদ এর কাছে ফোন করতে করতে বাহিরে চলে গেলো শরীফ আহমেদকে নিয়ে।

তখন শাফিন বললো যা বাবা আমাকে কেউ গোনায় এই ধড়লো না। আমার কাছ থেকে কেউ অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করলো না।

শাফিনের কথায় সবাই হেসে দিলো।

পারফি খোচা মেরে বললে তুই ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না যে তোর থেকে অনুমতি নেওয়া লাগবে।

শাফিন বললো এতো বড় কথা? আমার বোনকে বিয়ে করবি আর আমাকে বলছিস আমি ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না? যা তোর কাছে আমার বোন বিয়ে দিবো না।

পারফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো তোর দেওয়া লাগবে না আমি নিজেই তুলে আনতে পারবো।

পারফি আর শাফিনের কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলে।
পিয়াসা বেগম হেঁসে বললে দুটোয় আর বড় হলি না এখনো ছোট বেলার মতো এক জনের পিছে আরেকজন লেগে থাকিস।

কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলো পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার। তাদের আসতে দেখে পিয়াসা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো ইয়ানার বাবা কি বলেছে।

পাভেল চৌধুরী বললো তার কোনো সমস্যা নেই এখন সব কিছু ইয়ানা মামনীর উপরে। ইসহাক আহমেদ বলেছেন ইয়ানা রাজি হলে তার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু ইয়ানা রাজি না হলে তার কিছু করার নেই। তিনি বললেন কিছুক্ষণ পর জানাবেন ইয়ানা কি চায়।

সবাই এবার কিছুটা টেনশনে পড়ে গেলো। ইয়ানা রাজি হবে তো?
—————————–

ইয়ানা চুপচাপ শুয়ে আছে। মাথার কাছে ইমা বসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন কথা বলছে কিন্তু ইয়ানার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারলো না। জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটা কথাও বলে নি চুপচাপ সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তখন রুমে প্রবেশ করলো ইসহাক আহমেদ। আস্তে ধীরে ইয়ানার পাশে বসে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো মামনী কিছু কথা বলতে চাই তোমাকে।

ইয়ানা তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

ইসহাক আহমেদ বলতে লাগলো চৌধুরী বাড়ি থেকে ফোন করেছে। তারা তোমাকে তাদের পুত্রবধূ করে নিতে চায় তাও আজকের ভিতরে। মিডিয়া তোমাকে আর পারফিকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলেছে। তারা মিডিয়ার মুখ বন্ধ করেছে কিন্তু মামনী এই সমাজের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? পারফি একটা ছেলে মানুষ তাই ওর দিকে কেউ আঙুল তুলবে না কিন্তু তুৃমি একটা মেয়ে মামনী। তোমাকে এ সমাজের মানুষ সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিবে না। সবাই তোমার দিকে আঙুল তুলবে। তোমাদের সাথে কি ঘটেছে সেটা আমরা জানি কিন্তু সমাজ জানে না। সমাজ জানলেও তারা উল্টোটাই ঠেলবে সব সময়। সবাই তোমাকে দোষারোপ করবে সেগুলো একজন বাবা হয়ে কি করে সহ্য করবো আমি? তুৃমি নিজেও পারবে সমাজের ওই ধারালো কথা সহ্য করতে?

এখন তুমি বলতে পারো চৌধুরী পরিবার তোমাকে করুণা করে লোকের মুখ বন্ধ করার জন্য পুত্রবধূ করতে চায়। তুমি কারো করুণার পাত্রী হতে চাও না। সত্যি বলতে তারা যদি করুণা করতো তাহলে আমি নিজেও কোনো দিন তাদের হাতে তোমাকে তুলে দিতে রাজি হতাম না।
কিন্তু সত্যি বলতে তারা তোমাকে করুণা করছে না মামনী। তারা তোনাকে ভালোবেসে নিতে চায়।
আমার থেকে তুমি চৌধুরী পরিবারকে ভালো করে চেনো। তুমি জানো তারা কেমন মানুষ। তারা ক্ষমতশীল মানুষ তারা কয়েক ঘন্টার ভিতরে মিডিয়ার মুখ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি রইলো সমাজের মানুষ, তারা কখনো সাহস ও করতে পারবে না তাদের নিয়ে কটু কথা বলতে। কিন্তু আমাদের দেখো আমরা তাদের মতো ক্ষমতাবান লোক না। আমরা চাইলেও পারবো না সমাজের মুখ বন্ধ করতে। তারা তোমার দিকে আঙুল তুলবেই।
এখন কথা হলো চৌধুরী পরিবার এতো ক্ষমতাবান হওয়ার পর ও তারা মানুষের কথার ভয়ে তোমাকে নিতে চায়? সেটা কিন্তু না মামনী তারা তোমাকে ভালোবেসে তাঁদের ঘরে নিতে চায়। তুৃমি সমাজের কাছে ছোট হও এটা তারা চায় না। এটা তোমার জন্য তাদের করুণা না মামনী এটা তোমার জন্য তাদের ভালোবাসা। আমি এই কয়দিনে তাদের যতটুকু চিনেছি মামনী তাতে বুঝেছি তারা খুবি ভালো মানুষ, তোমাকেও খুব ভালোবাসে। তোমরা নিখোঁজ হওয়ার পর তারা পারতো শুধু তাদের ছেলের কথা চিন্তা করতে কিন্তু তারা সমান পরিমাণ তোমার জন্য ও চিন্তিত ছিলো।

তুমি পারফিকে দেখো যে ওই বিপদে তোমাকে ফেলে রেখেও আসতে পারতে কিন্তু ও তোমাকে অক্ষত অবস্থা নিজের সবটা দিয়ে আগলে নিয়ে এসেছে। সব শেষে বলবো ওই পরিবারকে আমার থেকে তুমি আরো ভালো করে চেনো তারা কেমন মানুষ। এখন সবটা তোমার উপরে মামনী এখানে কোনো জোর নেই। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তাদের আসতে বলি আর তুমি যদি রাজি না থাকো তাহলে আমি তাদের না করে দিবো। আমার কাছে তোমার মতামতটাই মেইন তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে। এখন তুমি বলো তুমি কি চাও?

ইয়ানা এতক্ষণ চুপচাপ ইসহাক আহমেদের কথা শুনে গেলো। তার একটা কথাও মিথ্যে না সবটাই সত্যি। ওই পরিবারের প্রতিটা মানুষ কতোটা ভালো সেটা ওর চেয়ে ভালো আর কে জানে? মনে পড়লো পারফির কথা যখন বন্দী ছিলো তখন নিজের দিকে একবার না তাকিয়ে ওকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলো। পারফিকে ও মন থেকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু বর্তমানে ইয়ানা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। মনটা কেমন পাথর হয়ে গেছে, না লাগছে আনন্দ না লাগছে কষ্ট। মানুষের কথা বাদেই দিলো নিজের মায়ের মুখে তখন এর কথা গুলো শুনে একবার ও ইচ্ছে হলো না বেঁচে থাকার। ভিতরটা পাথরে রুপ নিয়েছে। সবটা সহ্য করে নেওয়া ক্ষমতা থাকলেও নিজের মায়ের মুখে ওসব কথা শোনার কোন সন্তানের ক্ষমতা আছে?

তাচ্ছিল্য হাসলো ইয়ানা। ইয়ানা জানে ওর উপরে ইতি বেগম সবসময় বিরক্ত কিন্তু এতোটা বিরক্ত তা কখনো ভাবে ও নি ও। ঠিক করলো ইতি বেগমকে মুক্তি দিয়ে দিবে। হ্যা মুক্তি, এখান থেকে চলে গিয়ে তাকে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে দিবে। আর ওকে দেখে তার বিরক্ত হতে হবে না। মায়ের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেউ আকাঙ্খা নিয়ে বসে থাকবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো কয়েকফোটা। কলিজাটা কেমন যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।

ইয়ানাকে কান্না করতে দেখে ইসহাক আহমেদ বিচলিত হয়ে বললো তুমি এ বিয়েতে রাজি না মামনী? আমি এখনি তাদের ফোন করে না করে দিচ্ছি তবুও তুমি কান্না করো না। তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না মামনী আমি এখনি তাদের না করে দিচ্ছি এ বলে উঠে চলে যেতে নিবে তখন ইয়ানা হাত ধরে ফেললো।

ইয়ানা হাত ধরাতে তিনি কোমন গলায় বললো কিছু বলবে মামনী?

ইয়ানা অনেক কষ্টে মুখ থেকে বের করলো তাদের আসতে বলো বাবা।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো তুমি মন থেকে বলছো তো এই কথা মামনী? তুমি মনের বিরুদ্ধে কিছু করো না, তোমার মন যেটা বলছে তুমি সেটা করো। তোমার সব কথার পাশে আমি আছি।

ইয়ানা অসহাক আহমেদের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললে আমি মন থেকে বলছি বাবা তুমি তাদের আসতে বলো।

ইসহাক আহমেদ খুশি হলেন ইয়ানার কথায়। ইয়ানার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তিনি চলে গেলেন বাহিরে চৌধুরী পরিবারকে কথাটা জানাতে।

ইসহাক আহমেদ যেতে ইয়ানা ইমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে বলতে লাগলো আপু মাকে মুক্তি দিয়ে আমি চলে যাবো এবার নিশ্চিই মা খুব খুশি হবে তাইনা? আমি যাওয়ার পর মাকে বলো তার এই মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে।

ইমার চোখেও পানি কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আছে। এই নিস্পাপ মেয়েটাকে কিভাবে পারলো এতো অবহেলা করতে? এতো পাষাণ আমার মা? মা তো আগে এমন ছিলো না তাহলে কেনো এখন এমন হয়ে গেলো? কেনো আমার এই নিষ্পাপ বোনটাকে এতো কষ্ট দিলো?
ইমা নিজেকে সামলে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো কান্না করে না আমার কলিজার বোন। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই পাশে আছিতো সোনা। আমাদের মায়ের ভালোবাসা পাসনি এই জন্য দেখ আল্লাহ তোকে এতো ভালো একটা মা এনে দিচ্ছে। প্রীতির আম্মু তোকে মায়ের অভাবটা দেখবি মুছে দিবে। তিনি খুব ভালো একটা মানুষ। আমি খুব খুব খুশি তুই ওমন একটা পরিবার পাবি। এখন থেকে আর কান্না না নতুন জীবনে পা দিয়ে নতুন করে জীবনটা শুরু করবি। পুরোনো অতীত সব জীবন থেকে মুছে ফলবি। অনেক অনেক সুখী হ এই দোয়া করি বোন আমার।

ইয়ানা আর কিছু বললো না চুপটি করে ইমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।

এদিকে ইসহাক আহমেদ ফোন করে ইয়ানার মতামত জানাতে চৌধুরী পরিবারে খুশি উপচে পড়তে লাগলো। সবচেয়ে খুশি হয়েছে প্রীতি, খুশির কারনে নাচতে নাচতে পুরো ড্রয়িংরুম জুরে চক্কর দিতে লাগলো।

প্রীতি পাগলামো দেখে শাফিন প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে বললো ছাগলেরর মতো লাফালাফি করে পড়ে যেয়ে পা ভাঙলে তোকে রেখেই চলে যাবো আমরা।

প্রীতি ক্ষেপে বললো তুৃমি ছাগল। তোমাকে রেখে আমরা চলে যাবো। এহ আসছে আমাকে রেখে যেতে। আমার জানের বেস্টু আমার ভাবি হতে চলেছে আর আমাকে নাকি না নিয়ে যাবে।

প্রীতির কান্ডকলাপ দেখে সবাই হেঁসে উঠলো। তারপর পাভেল চৌধুরী বললে সব ব্যবস্থা করতে হবে তো সবাই রেডি হয়ে নেও।

প্রীতি খুশি হয়ে সবার আগে এক দৌড়ে উপরে উঠে গেলো রেডি হতে তারপর একে একে সবাই চলে গেলো রেডি হতে।

শাফিন যাওয়ার আগে পারফির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো তবে এই তাহলে তোমার সেই স্নিগ্ধ ফুল?

পারফি কিছু বললো না শুধু হাসলো তৃপ্তির হাসি।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৬

প্রীতিরা ইয়ানাদের বাসায় এসেই প্রীতি এক ছুটে ইয়ানার রুমে যেয়ে ইয়ানাকে ঝাপটে ধরলো।

ইয়ানা আর ইমা বসে বসে টুকিটাকি কথা বলছিলো তখন হঠাৎ এমন করে কেউ ঝাপটে ধরাতে ইয়ানা ভয় পেয়ে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে দেখলো প্রীতি। প্রীতিকে দেখে ইয়ানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো কিন্তু কিছু বললো না।

প্রীতি ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে উৎফুল্ল মেজাজে বললো জানু জানু জানু আজ আমি অনেক অনেক খুশি। তুই আমার ভাইর বউ হবি উফফ ভাবতেই কি যে ভালো লাগছে। আমরা এক সাথে থাকতে পারবো ঘুরতে পারবো। জানিস আমার কতো স্বপ্ন ছিলো তোকে পারফি ভাইয়ার বউ করে নিবো কিন্তু ভয়ে কাউকে বলি নি। এখন দেখ আল্লাহ আমার ইচ্ছেটা পূরণ করে দিয়েছে। আজ আমি অনেক অনেক হ্যাপি।

প্রীতি এক ধাপ বকবক করার পর ও ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইয়ানাকে ছেড়ে ওর দিকে তাকাতে দেখলো ইয়ানার ভিতর কোনো ভাবান্তর নেই। নির্বিকার ভাবে বসে আছে। হয়তো ইয়ানার মনের অবস্থাটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তাই ইয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ইয়ানার দু গালে হাত রেখে বললো জানু এমন করে থাকিস না প্লিজ। তোর মন খারাপ দেখলে আমার খুব কষ্ট লাগে। যা হয়েছে সব ভুলে যা আজ থেকে নতুন করে জীবনটা শুরু কর। দেখবি তোর এই নতুন জীবনটা আমরা সবাই মিলে রাঙিয়ে তুলবো। কোনো কষ্ট পেতে দিবো না আমরা সবাই তোর পাশে আছি।

ইয়ানা ছলছল চোখে তাকালো প্রীতির দিকে। কোনো কিছু না বলে প্রীতিকে ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে দিলো।

তা দেখে ইমা বলে উঠলো এই মেয়েটা আবার কান্না করছে। এতো সময় আমি কাকে কি বুঝালাম? প্রীতি এবার তুই সামলা এটাকে আমি যাই সবার সাথে দেখা করে আসি এ বলে চলে গেলো।

প্রীতি ইয়ানাকে বললো আর কাঁদিস না জানু এবার একটু হাস আর নাহলে কিন্তু আমিও কান্না করে দিবো। আর জানিস এইতো আমি কান্না শুরু করলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবো তখন নিজের কান্না ভুলে আমার পিছে পড়ে থাকবি তখন আমিও তোকে পাত্তা দিবো না হুহ।

প্রীতির কথায় ইয়ানা কান্নার মাঝেও হেসে ফেললো তা দেখে প্রীতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অবশেষে হাসাতে পাড়লো তো।

তখন রুমে প্রবেশ করলো পিয়াসা আর শাহানা বেগম। পিয়াসা বেগম রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো ইয়ানা মার চোখে পানি কেনো?

পিয়াসা আর শাহানা বেগমকে আসতে দেখে ইয়ানা নিজেকে সামলে প্রীতিকে ছেড়ে আস্তে করে সালাম দিলো।

তারা সালামের উত্তর দিয়ে দুজন দু পাশে বসলো ইয়ানার। শাহানা বেগম বললো দেখো মেয়ের কান্ড কান্না করতে করতে নিজের কি হাল করেছে।

পিয়াসা বেগম বললো কান্না করে না মামনী সব ঠিক হয়ে যাবে। আজকের পর থেকে তোর আর কোনো কষ্ট থাকবে না। আমি তোকে আমার পুত্রবধূর না নিজের মেয়ে করে নিতে এসেছি বুঝেছিস? তোর এই মা তোকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না এইটুকু ভরসা করতে পারিস।

ইয়ানা ছলছল চোখে তাকালো তাদের দিকে। এই মানুষ গুলো কতো ভালো কতটা আপনা ভাবে ওঁকে ভাবতেই চোখ ভোরে উঠছে।

ইয়ানার চোখের পানি মুছে দিয়ে শাহানা বেগম বললো হয়েছে আর কান্না করতে হবে না এবার একটু হাসো। তারপর সবাই মিলে ইয়ানাকে বিভিন্ন কথা বলে একটু নরমাল করার চেষ্টা করতে লাগলো।
——————————-
এদিকে ড্রয়িংরুমে বসে আছে ইসহাক আহমেদ, পাভেল চৌধুরী, শরীফ আহমেদ, শাফিন ও পারফি। সবাই টুকিটাকি কথা বলছে তখন ইমা এসে সবাইকে কিছু নাস্তা পানি দিয়ে ইয়ানার রুমে গেলো। সেখানে যেতে পিয়াসা আর শাহানা বেগম ছোটখাটো একটা ট্রলি ইমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো ইয়ানা মাকে রেডি করে দেও তুমি আর প্রীতি মিলে, ওদিকটা আমরা সামলাই।

ইমা সম্মতি দিতে তারা ড্রয়িংরুমের চলে গেলো।

ইমা আর প্রীতি মিলে ইয়ানাকে সাজাতে লাগলো আর বিভিন্ন কথা বলে ওর মন মানসিকতা ঠিক করতে লাগলো।
———
বদ্ধ রুমের মাঝে নীরবে শুয়ে আছে ইতি বেগম। জীবনের কিছু হিসেব কষতে ব্যস্ত তিনি। নিজেকে আজ বড্ড এলোমেলো লাগছে। ইসহাক আহমেদের হাতে চর খাওয়ার পর থেকে একদম নীরব হয়ে আছে। কখনো ভাবতে পারে নি প্রিয় স্বামী এভাবে গায়ে হাত তুলবে। সবচেয়ে আজব ব্যপার হলো ইয়ানার জন্য মার খেয়েছে কিন্তু আজ ইয়ানার উপর কোনো রাগ লাগছে না। উল্টো নিজের করা এতো বছরের ভুল গুলো চোখের সামনে ভাসছে। নিজের অপরাধ নিজেকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আজ। ওই নিস্পাপ মেয়েটার সাথে এতো বছর বড্ড অন্যায় করে ফেলেছেন যে। এতোদিন ইয়ানার কষ্ট না বুঝলেও আজ স্বামীর চোখে ঘৃণা দেখে খুব গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে আপনজনের অবহেলা, ঘৃণা কতটা কষ্টের। যেই কষ্ট ওই নিস্পাপ মেয়েটাকে এতোটা বছর ধরে দিয়ে আসছে ভাবতেই চোখজোড়া ভিজে উঠছে।

বেশ অনেক সময় ধরে বাহিরের মানুষজনের কথা শোনা যাচ্ছে তা কানে ভেসে আসছে ইতি বেগমর কিন্তু এতো সময় ভাবনায় বিভো ছিলো তাই অতোটা খেয়াল করে নি। এবার ভালো করে খেয়াল করতে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে ওয়াশরুমের যেয়ে চোখমুখে পানি দিয়ে আসলো। তারপর আস্তে ধীরে দরজা খুলে ড্রয়িংরুমে পা রাখলো। ড্রয়িংরুমের যেয়ে কতগুলো অচেনা মুখ ভেসে উঠলো। কারা এরা কিছুই বুঝতে পারলো না, তখন চোখে পড়লো পারফিকে। যে ছেলেটাকে তিনি চেনে, যেই ছেলেটাকে নিয়েই আজ তিনি ইয়ানাকে এতো জঘন্য কথা বলেছে। কিন্তু এই ছেলে এখানে কি করছে বুঝতে সক্ষম হলো না। তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে। ইসহাক আহমেদ একবার ও তার দিকে ফিরে তাকালো না তা দেখে তার ভিতর হাহাকার করে উঠলো। পিছু ঘুরে চলে যেতে নিবে তখন ইসহাক আহমেদ ইতি বেগমকে দাঁড়াতে বললেন তারপর এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। শতহলেও মেয়ের মা সবার সাথে পরিচয় না করিয়ে রাখেই বা কিভাবে?

ইতি বেগম সবার সাথে বিনয়ী ভাবে পরিচিত হলো। কথার মাঝে জানতে পারলো আজ ইয়ানার বিয়ে। নিজের মেয়ের বিয়ে আর সেটা ওনাকেই জানানো প্রয়োজন মনে করলো না কেউ। সবার সাথে কথা বলে আস্তে করে ইসহাক আহমেদকে বললো একটু কথা ছিলো রুমে আসবে?

ইসহাক আহমেদ কিছু বললো না ইতিকে। পাভেল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো ভাই আপনারা গল্প করুন আমি একটু আসছি ইয়ানা মামনীকে আমার কিছু দেওয়ার আছে সেটা দিয়ে আসি।

ইসহাক আহমেদ যেতে পিছু পিছু ইতি বেগম ও গেলো।

পারফি তাকিয়ে রইলো ইতি বেগমের যাওয়ার পানে। আজ যেই ভদ্রমহিলাকে দেখছে এর ব্যবহার ঠিক হজম হচ্ছে না। পাষাণ সেই লোক আজ এতো বিনয়ী হলো কিভাবে তাই ভাবছে পারফি।

ইসহাক আহমেদ রুমে এসে আলমারি খুলে দুটো বক্স বের করলেন। সেটা নিয়ে বের হতে যাবে তখন রুমে প্রবেশ করলো ইতি বেগম। ইসহাক আহমেদ একবার ও সেদিকে না তাকিয়ে চলে যেতে নিলে ইতি বেগম পিছ থেকে বলে উঠলো আমার মেয়ের বিয়ে আর আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলে না?

ইতির কথায় ইসহাক আহমেদ থামলেন। পিছু ঘুরে তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো তুৃমি কি আদো আমার মেয়ের মা হয়ে উঠতে পেরেছো?

কথাটা শুনে থমকালেন প্রীতি বেগম। নিজের মনের ভিতর উকি দিলো আসলেই কি ইয়ানার মা হয়ে উঠতে পেরেছি আমি?

ইসহাক আহমেদ একবার ইতির দিকে তাকিয়ে বললো তোমার মাথা থেকে বোঝা নামিয়ে দিলাম। আজ থেকে তুমি মুক্ত, কারো জন্য এখন আর তোমার বিরক্ত হওয়া লাগবে না৷ এবার খুশি?

ইতি বেগম ছলছল চোখে তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে। বলার মতো কোনো ভাসা খুঁজে পেলো না কিন্তু বুকের ভিতর এক অসহীন ব্যথা অনুভব করলো। যে ব্যথা না পারছে প্রকাশ করতে আর না পারছে চেপে রাখতে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে ক্রমশ।

ইসহাক আহমেদ আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

ইতি বেগম আস্তে আস্তে বেডের উপর যেয়ে বসলো। চোখগুলো ঝাপসা হয়ে উঠলো। আজ কি সত্যি তার খুশি হওয়ার দিন? হ্যা সত্যি তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তিনি খুশি হতে পারছে না। অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বুকের ভিতর। চোখের সামনে ভেসে আসছে এতো বছরের অন্যায় গুলো। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
———————-
ইসহাক আহমেদ ইয়ানার রুমে এসে নক করলো। ইমা এসে দরজা খুলে দিলো। বাহিরে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভিতরে নিয়ে গেলো। ইসহাক আহমেদ ভেতরে যেয়ে দেখলেন ড্রেসিংটেবিলের সামনে তার পরীর মতো মেয়েটা পরী সেজে বসে আছে। পরীর মতো মেয়েটা আজ অন্যের ঘরে চলে যাবে ভাবতেই বুকটা ভারী হয়ে উঠলো। বারবার চোখ জোড়া ভিজে উঠতে চাচ্ছে কিন্তু মেয়ের সামনে এখন দূর্বল হওয়া চলবে না তাহলে মেয়েটা আরো ভেঙে পড়বে।

ইসহাক আহমেদ নিজেকে সামলে আস্তে করে ইয়ানার কাছে এগিয়ে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো মা শা আল্লাহ আমার মেয়েটাকে পরীর মতো লাগছে।

ইয়ানা কোনো কথা না বলে ঝাপটে ধরলো ইসহাক আহমেদকে। কলিজাটা কষ্টে ছিড়ে যাচ্ছে আজ প্রিয় বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানাকে ছাড়িয়ে গালে হাত রেখে বললো আজ কোনো কান্না না মামনী। তুমি কান্না করলে বাবা কষ্ট পায় এখন যদি বাবাকে কষ্ট দিতে চাও তাহলে কান্না করতে পারো কিছু বলবো না।

ইয়ানা নিজের কান্না আটকে ইসহাক আহমেদকে ফের জড়িয়ে ধরলো। চুপটি করে বাবার বুকের মাঝে পড়ে রইলো। অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না কান্না গুলো দলাপাকিয়ে কথা গুলো গলায় আঁটকে আসছে।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটা বক্স খুলে একটা চেইন বের করে ইয়ানার গলায় পড়িয়ে দিলো। আরেকটা বক্স খুলে এক জোরা কানের দুল বের করে ইয়ানার হাতে দিয়ে বললো এগুলো আমার মায়ের জন্য বানিয়ে রেখেছি পছন্দ হয়েছে মামনী?

ইয়ানা অশ্রুসিক্ত নয়নে ইসহাক আহমেদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো খুব পছন্দ হয়েছে।

ইসহাক আহমেদ মেয়েকে ফের বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বুকটা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। এখানে আর বেশি সময় থাকলে নিজেকে সামলাতে পারবে না তাই ইয়ানাকে ছেড়ে ইয়ানাকে বুঝিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

ইয়ানা বাবার যাওয়ার পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো। বাবার মনের অবস্থাটা ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে কারণ ওর নিজের ও যে একি অবস্থা।

ইমা যেয়ে ইয়ানাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মন খারাপ করে না আমার কলিজার বোন। সারাজীবনের জন্য তো আর বাবাকে ছেড়ে যাচ্ছিস না, তোর যখন খুশি চলে আসবি।

প্রীতি বললো হয়েছে এবার ইমোশনাল কথা ছাড়ো আপু। আপু তুমি কি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?

ইমা ভ্রু কুঁচকে বললো কি?

ইয়ানাকে এই সিম্পল সাজেও কতোটা মারাত্মক লাগছে। এখন আমার ভাই যদি তার বিড়াল ছানার এই লুক দেখে স্ট্রোক মেস্ট্রোক করে বসে তখন কি হবে?

প্রীতির কথায় ইমা হেঁসে ফেললো আর ইয়ানা প্রীতির এমন লাগামহীন কথায় অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।
————————————-
ড্রয়িংরুমের সবাই বসে ছিলো আর কিছুক্ষণ এর ভিতরে বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে যাবে। তখন পারফি ফট করে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো বিয়ের আগে আমি একটু বিড়াল আই মিন ইয়ানার সাথে কথা বলতে চাই।

পারফির সবার সামনে এমন কথা বলায় সবাই থতমত খেয়ে গেলো। পাভেল চৌধুরী খুকখুক করে কেশে উঠে বিরবির করে বললো মুখে কিছু আটকায় না এই ছেলের। হবু শশুরের সামনে অন্তত একটু লজ্জা বোধ করা উচিত বজ্জাত ছেলে একটা।

পারফির কাজে ইমা আর প্রীতি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মুখ টিপে হাসছে।

সবাইকে এভাবে থতমত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পারফি বললো আজব সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

শাফিন পারফির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো শালা হবু শশুরের সামনে একটু মুখে লাগাম দিয়ে কথা বল।

ইসহাক আহমেদ এতোক্ষণ থতমত খেয়ে ছিলেন। নিজেকে সামনে বললো হ,,হ্যা যাও, ইমা মা পারফিকে ইয়ানার রুমে নিয়ে যাও।

ইমা মুখ টিপে হেসে পারফিকে নিয়ে ইয়ানার রুমে গেলো।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে