তুই শুধু আমার পর্ব-১৩+১৪

0
1658

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 13+14

ড্রইংরুমে জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, মি. আশরাফ ( আমানের বাবা ), মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, মিসেস. আখি ( আমানের আম্মু), আরসাল, আমান, আশিকা ( আমানের বোন ), আশফি, সাথী সবাই উপস্থিত রয়েছে।
গেস্টদের মাঝে রয়েছে সাইফ ( যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ), সিরাজ রহমান ( সাইফের বাবা ), সিমা রহমান ( সাইফের মা ), সিফা ( সাইফের বোন )।
সবাই গল্প করছেন। আমানের কেনো জানি সাইফকে দেখলেই রাগ হচ্ছে। তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে আমান। হঠাৎ জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” সাথী, তোমার সেহের আপুকে বলো আশাকে নিয়ে আসতে।”

–” ঠিক আছে বড় আব্বু।”
সাথী চলে যায় উপরে বলতে। এইদিকে আমানের অস্থিরতা বেড়ে গেছে। আমান কিছুতেই যেনো ব্যাপার টাহ মেনে নিতে পারছে নাহ। আমানকে একটু অন্যরকম হতে দেখে আরসাল বলে ওঠে,
–” কিরে তুই ঠিক আছিস? এমন অস্থির অস্থির করছিস কেনো?”

–” নাহ ঠিক আছি। একটু গরম লাগছে।”

–” মানে। ওয়েদার তোহ ঠান্ডায় আছে, আবার এসিও চলছে। তাও তোর গরম লাগছে।”

–” নাহ, সেরকম কিছু নাহ বাদ দে।”

আরসালের কাছে আমানকে মোটেও ঠিক লাগছে নাহ। কিন্তু এখানে অনেক মানুষের জন্য বেশি কিছু জিজ্ঞাসা ও করতে পারছে নাহ। তাই পরে জিজ্ঞাসা করবে ভেবে আর কিছু বললো নাহ। হঠাৎ মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঐ তোহ, আশাকে নিয়ে চলে এসেছে সেহের।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকায়। আমানও সাথে সাথে সিড়ির দিকে তাকায়, আর সিড়ির দিকে তাকিয়ে যেনো চোখটাহ সেখানেই স্থির হয়ে যায়। আশাকে কোনো পরির থেকে কম লাগছে নাহ। একটা পারপেল কালারের শাড়ি পরানো হয়েছে আশাকে, সাথে চোখ ভর্তি কাজল, হালকা মেকাপ, ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, কানে পারপেল স্টোনের কানের দুল, হাতে পার্পেল কালারের চুড়ি, গলায় একটা লকেট সহ চেইন, সব মিলিয়ে আশাকে পুরো পরির মতো দেখাচ্ছে আশাকে। আশাকে এনে সোফায় বসানো হলো। আশা একবার আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে, আমান তার দিকে হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। সিমা রহমান ( সাইফের আম্মু ) নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন। আশা উত্তর দিতে গেলেও কথা কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে। তাই পাশে থেকে আহিয়া চৌধুরী উত্তর দিয়ে দিচ্ছে।
সেহের মুচকি হাসি দিয়ে সব দেখছে, হঠাৎ সেহেরের চোখ যায় আরসালের উপর। সেহের আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল চোখ সরিয়ে নেয়। যেইটা সেহের খেয়াল করে ফেলে। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ভাইয়া তোহ মনে হলো এই মাত্র চোখ সরালো। তাহলে কি, ভাইয়া এতোক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো?”

এরপর সেহের মাঝে মাঝেই আরসালের দিকে তাকাচ্ছে। যেইটা আরসাল খেয়াল করে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে কেনো? তাহলে কি সেহের সন্দেহ করছে যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম? উফ! কি করবো আমি? সেহের সামনে থাকলে তোহ বেহায়া চোখ দুইটা শুধু ওর দিকেই যায়।”

হঠাৎ সিমা রহমান বলে ওঠে,
–” বলছিলাম যে, আমরা সবাই তোহ কথা বলছি। কিন্তু আশা আর সাইফকেও একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত।”

কথাটা শুনেই আমানের মাথায় মনে হচ্ছে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিলো। নাহ পারছে কাউকে কিছু বলতে নাহ পারছে সহ্য করতে। রাগী চোখে আশার দিকে তাকিয়ে আছে আমান। আশা কোনা চোখ দিয়ে আমানের দিকে তাকাতেই মনে হলো তাকে যেনো চোখ দিয়েই পুড়িয়ে দিচ্ছে। আশার নিজেরই ভয় লাগছে আমানের মুখের রাগী ভাব দেখে। কিন্তু আমান এতো রেগে কেনো যাচ্ছে এইটায় বুঝছে নাহ আশা।
সিমা রহমানের কথা শুনে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঠিক বলেছেন ভাবি। আশা, যাও তোহ মা সাইফ কে তোমার রুম টাহ দেখিয়ে নিয়ে আসো।”

–” জি, বড় আব্বু।”
বলেই আশা উপরের দিকে যেতে শুরু করে। যাওয়ার সময় আমানের সামনে হালকা একটু তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

★★★
আশা নিজের রুমে দাড়িয়ে আছে। সাইফও দাড়িয়ে আছে৷ আশা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। কিন্তু কিছু তোহ বলা দরকার। আশা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” বসুন।”

–” নাহ, ঠিক আছে। প্রব্লেম নেই। বলছি একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?”

–” জি, বলুন।”

–” আপনার কোনো সমস্যা নেই তোহ এই বিয়েতে।”

আশা কিছু সময় নিয়ে বলে ওঠে,
–” বড়রা যেইটা বলবে সেইটায়।”

–” ওহ। একটা সত্যি কথা বলি আমার কিন্তু আপনাকে ভালো লেগেছে।”

আশা একবার সাইফের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কি বলবে আশা বুঝে উঠতে পারছে নাহ।

★★★
আমানের বার বার শুধু মনে হচ্ছে ওরা এতো সময় নিয়ে কি কথা বলছে। বার বার শুধু উপরের দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ দেখে সাইফ নামছে সিড়ি দিয়ে আর পেছন পেছন আশা নামছে। আশা এবং সাইফ তারা তাদের নিজেদের জায়গায় বসলে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আশা, মা তুমি কি সময় চাও নাকি এখনই কিছু বলতে চাও। তুমি চাইলে বলার জন্য সময় নিতে পারো সমস্যা নেই।”

আশা একবার আমানের দিকে তাকায়। আমান আশার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” তুমি তোহ এইটায় চাও আমান, যে আমি অন্য একজন কে বিয়ে করে নিই। তোমার মনের কথাই পূর্ণ হোক তাহলে।”

আশা জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি রাজি এই বিয়েতে।”

আশার কথায় সবাই প্রশান্তির হাসি দিলেও আমানের মনে হচ্ছে তার বুকের মাঝে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। আমানের চোখে পানি জমা হচ্ছে। কিন্তু আমান বার বার চোখের পলক ফেলে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। জিহাদ চৌধুরী সাইফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাইফ তুমি?”

–” আংকেল আমিও রাজি।”
সাইফের কথা শুনে সিরাজ রহমান বলে ওঠে,
–” আলহামদুলিল্লাহ, জিহাদ আসলে আমাদের হাতে সময় কম। মানে কিছুদিন পরেই বিজনেসের কিছু কাজে লং টাইমের জন্য আমাকে দেশের বাইরে যেতে হবে। তাই, আমি চাচ্ছি তার আগেই যেনো সাইফ আর আশার বিয়েটা হয়ে যায়।”

–” কতদিনের মাঝে চাচ্ছিস?”

–” আগামী সপ্তাহের মধ্যে।”

–” সে কি তাহলে তোহ হাতে সময়ই নেই।”

–” হ্যা, সময় খুব কম। আসলে আমি চাচ্ছি যে পরশু দিন আমরা ঘরোয়া ভাবে আশা আর সাইফের এইংগেজমেন্ট করিয়ে দিই। আর ঐদিন বিয়ের সবকিছু ফিক্সড করে ফেলি।”

–” হুম, এইটাও খারাপ নাহ। তাহলে পরশু দিন সন্ধ্যায় এখানে ঘরোয়া ভাবে ওদের এইংগেজমেন্ট আর ঐদিনই সব ঠিক করা হোক।”

–” হুম, সেইটায় বেটার হবে।”

ওনাদের কথা শেষ হতেই সিমা রহমান এগিয়ে এসে আশার গলায় একটা সোনার চেইন পরিয়ে দেয়। সিফা এগিয়ে এসে আশার পাশে বসে বলে ওঠে,
–” ভাবি, আমি কিন্তু তোমার একমাত্র ননদ।”

আশা কিছু বলে নাহ। মাথা নিচু করে থাকে। আমান এইসব আর সহ্য করতে নাহ পেরে উপরে আরসালের রুমের দিকে চলে যায়। আরসালের কাছে আমানকে স্বাভাবিক লাগছে নাহ, তাই আরসালও আমানের পিছন পিছন চলে যায়।
রুমে এসে আরসাল দেখে আমান বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল আমানের পিছনে এসে বলে ওঠে,
–” আমান, কি হয়েছে তোর?”

–” কিছু নাহ।”

–” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো কিছু হয় নি।”

–” আরসাল কি শুরু করেছিস বলতো?”

–” কি হয়েছে তোর, এতো আপাসেট কেনো তুই? গতকাল রাতে স্মোক কেনো করেছিস? এমন অস্থির অস্থির কেনো তুই?”

আমান আরসালের দিকে ফিরে তাকায়। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে আমানের চোখে পানি জমা হয়ে আছে। পলক ফেলতেই পানি গড়িয়ে পড়ে আমানের গাল বেয়ে। আমান তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে ফিরে পানি মুছে নেয়। আরসাল আমানকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান কি হয়েছে? কেনো এতো কষ্ট পাচ্ছিস তুই?”

–” আমি জানি নাহ। আমার কি হয়েছে।?”

–” মানে।”

এতোদিন আশার বিষয়ে সন্দেহ করা, সেদিন কফি শপে ঘটে যাওয়া কাহিনি, এই কয়েকদিন নিজের অবস্থা সব বলে দেয় আরসালকে। আরসাল সব শুনে যেনো হতভম্ব হয়ে যায়। সরাসরি আমানকে জিজ্ঞাসা করে,
–” তুই কি আশাকে ভালোবাসিস?”

–” আমি জানি নাহ। আমি আজও জেরিনকে ভুলতে পারি নাহ। আজও ভাবি ওর কথা। আশাকেও মেনে নিতে পারছি নাহ আবার আশাকে অন্য কারো সাথে সহ্যও করতে পারছি নাহ। আমি নিজে কি চাচ্ছি সেইটাও বুঝতে পারছি নাহ।”

–” তোকে আর বুঝতে হবে নাহ। বিয়ের টাইমেই তোর সব কষ্ট আমি দুর করে দিবো। প্রমিস! এইবার বিয়ের অনুষ্ঠান টাহ এনজয় কর।”

–” মানে!”

–” মানে, পার্ফেক্ট টাইম।”

আমান আরসালের কথা কিছুই বুঝতে নাহ পারলেও, আরসালের ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি দেখতে পায়।

সেহের সকালে ঘুম থেকে উঠেই আশার রুমে এসে দেখে আশা কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। সেহের আশার পেছনে এসে বলতে শুরু করে,
–” এই তুই কই যাবি? রেডি হচ্ছিস কেনো?”

–” ভার্সিটি যাবো।”

–” ভার্সিটি যাবি মানে! আজ আমরা শপিংমলে যাবো।”

–” শপিং এ আজ কেনো? কালকের পরে যাওয়ার কথাতো।”

–” আরে, সেতো বিয়ের শপিংএর জন্য যাবো। আগামীকাল তোর এইংগেজমেন্ট। তার জন্য শপিং করতে যাবো আজ।”

–” ঘরোয়া ভাবে এইংগেজমেন্ট হবে। এতে শপিং করার কি আছে?”

–” মানে কি? এইংগেজমেন্ট ঘরোয়া ভাবে হোক আর বড় করে হোক, এইংগেজমেন্ট তোহ। তাই শপিং করা টাহ ইমপর্টেন্ট। বাড়ির সবাই এইংগেজমেন্টের জন্য শপিং করতে যেতে বলেছে। আর সাইফ ভাইয়াও আসছে।”

কি আর বলবে আশা। নিজের সুখ তোহ বিলিয়েই দিচ্ছে। তাই বিয়েটা পরিবারের মানুষেরা যেমন ভাবে চাচ্ছে, সেরকম ভাবেই হোক। আশা মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জানিয়ে দেয় সেহের কে। সেহের খুশি হয়ে আনন্দে নিচে চলে যায়। আশা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। মেয়েটা যেনো আর বড় হলো নাহ, এতো শপিং করে তাও শপিং করার কথা শুনলে সে সবার আগে।

★★★
আরসাল অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। মায়া চৌধুরী আরসাল কে দেখে কাছে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

–” কোথায় আবার, অফিস যাবো।”

–” আজ সাইফ আসবে। ওদের নিয়ে কালকের জন্য শপিং এ যাবে। আমাদের এখান থেকেও ছেলেদের কারও যাওয়া উচিত। আশফি একটু কাজে বাইরে গেছে তুই তোহ জানিসই, আশফির আসতে নাকি রাত হয়ে যাবে। আমান আর তুুই যদি যেতি। তাহলে ভালো হতো।”

–” আমার এইসব ভালোলাগে নাহ তুমি যানো।”

–” হুম। কিন্তু তারপরও যাওয়া উচিত। সেহের আর আশা যাচ্ছে। তুই আর আমানও যা।”
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল মনে মনে বলে ওঠে,
–” সেহের তোহ যাবেই, ও তোহ শপিং এর কথা শুনলে আগে লাফাই। কি এতো মজা পায় শপিং করে কে যানে। অযথা হাটাহাটি। এইসব নাহ করে বাসা থেকে অনলাইনে অর্ডার করলে হয়ে যায়। তাহ নাহ, ওখানে গিয়ে এই শপ ঐ শপ করে কেনাকাটা। অসহ্য।”

মায়া চৌধুরী আরসাল কে কিছু ভাবতে দেখে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

–” হুম।”

–” কি ভাবছিস বাবা?”

–” কিছু নাহ। বলছিলাম যে শপিং এর জন্য বাইরে যাওয়ার কি দরকার। বাসায় বসে অনলাইনে অর্ডার দিলেই তোহ হয়।”

–” একদম নাহ।”
করো কথার আওয়াজে আরসাল আর মায়া চৌধুরী সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের নেমে আসছে। সেহের নিচে নেমে এসে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” একদম নাহ। আমারা মার্কেটে গিয়েই শপিং করবো। অনলাইনে শপিং করে কোনো মজা নাই। বড় আম্মু প্লিজ, মার্কেটে গিয়ে শপিং করবো।”

মায়া চৌধুরী সেহেরের মুখে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম, ঠিক আছে। মার্কেটে গিয়েই শপিং করবি। কেমন! আর হ্যা, আরসাল, অফিস যাচ্ছিস যাহ, কিন্তু বিকালের মধ্যে আমান কে নিয়ে ফিরে আসিস। আর ওদের শপিংমলে নিয়ে যাস। আর এখন আই ব্রেকফাস্ট করে নে।”

মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে ডাইনিং টেবিলের দিকে চলে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে হালকা রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের রাগ কে উপেক্ষা করে একবার মুখ ভেঙিয়ে মায়া চৌধুরীর পেছন পেছন চলে যায়। আরসাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে।

★★★
বিকালে আরসাল অফিস থেকে বেরিয়ে আমানকে ফোন দেয়। আমান ফোন রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যা, আরসাল বল।”

–” কই তুই?”

–” এই তোহ বাসায়।”

–” বাসায়, আজ অফিস যাস নি?”

–” নাহ।”

–” কেনো?”

–” এমনি, যেতে ইচ্ছে করছিলো নাহ তাই।”

–” ওহ, আচ্ছা রেডি হ। আমি তোকে বাসা থেকে পিক করে নিবো।”

–” কিসের জন্য রেডি হবো?”

–” আগামীকাল আশার এইংগেজমেন্টের জন্য শপিং এ যেতে হবে।”

–” Are you mad, Arsal? আমি আশার এইংগেজমেন্টের জন্য শপিং করতে যাবো?”

–” হুম, যাবি। আর কোনো কথা নাহ আমি আসছি।”

–” আরসাল, হ্যালো! হ্যালো!”

আরসাল ফোন কেটে দিয়েছে। আমান ফোনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই আরসাল করতে চাচ্ছে টাহ কি? কিছুই মাথাই ঢুকছে নাহ। আবার সেদিন যাহ বললো। কি করবে এই ছেলে? ধুর, কি আর করবো রেডি হয়ে নি। নাহলে এসে নিজেই আবার রেডি করিয়ে নিয়ে যাবে। যাহ যেদি রে বাবা, যাহ বলবে তাই।”

★★★
আরসাল রেডি হয়ে নিচে দাড়িয়ে আছে। সেহের আর আশার নাম গন্ধও নাই। মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী ও আরসালের পাশে দাড়িয়ে আছে। আরসাল তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এই কারনে মেয়েদের সাথে আমার বেরোতে ইচ্ছে করে নাহ। অলওয়েজ লেট করে।”

আহিয়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” চলে আসবে বাবা। ঐ তোহ চলে এসেছে।”

আরসাল সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের আর আশা নেমে আসছে। আরসাল ওদের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু নাহ বলে বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কেয়া চৌধুরী আশা আর সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোরা এতো লেট করলি কেনো? আরসাল কতো রেগে গেছে জানিস।”

কেয়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহের হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
–” আহা মেঝো আম্মু তোমারদের এই ছেলে তোহ অলটাইম পেচার মতো থাকে।”

সেহেরের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। এর ভিতর গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে সেহের আর আশা দেরি নাহ করে বাসা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে।

In shopping mall……..

আরসাল, আমান, সেহের, আশা গাড়ি থেকে নামতেই সাইফ তাদের দিকে এগিয়ে আসে। সাইফকে দেখেই আমানের মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগী চোখে একবার আরসালের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকায় আমান। সাইফ আরসালের সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যালো, ভাইয়া!”

আরসালও সাইফের সাথে হাত মিলিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” হাই! কেমন আছো?”

–” জি, ভালো। আপনি?”

–” ভালো। চলো ভেতরে যাওয়া যাক।”

–” জি, ভাইয়া। আশা এসো।”

আশা একবার আমানের দিকে তাকিয়ে আবার সাইফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি!”

সবাই ভেতরে চলে যায়। ওরা একটা লেহেঙ্গার শপে যায়। দোকানদার অনেক রকম লেহেঙ্গা দেখাচ্ছে আশাকে। সাইফ আশার পাশে দাড়িয়ে লেহেঙ্গা দেখছে আর কথা বলছে। আশার যেনো এইসবে মন নেই। আশা মাঝে মাঝে আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে, আমান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সাইফ একটা লেহেঙ্গা তুলে আশার হাতে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আশা দেখো তোহ, এইটা কেমন লাগে?”

–” হুম।”
আশা লেহেঙ্গা টাহ হাতে নিয়ে আয়নার সামনে যেয়ে নিজের উপর ধরে। আয়নায় আমানকে দেখা যাচ্ছে। আমান আয়নার ভেতর দিয়েও আশার দিকে তাকিয়ে আছে। আশা আয়না দিয়ে আমানের দিকে তাকালে। আমান মাথা নাড়িয়ে নাহ জানিয়ে দেয়। আশা লেহেঙ্গাটাহ নিজের উপরের থেকে নামিয়ে নেয়। আমান আশাকে দেখিয়ে টেবিলের উপর একটা লেহেঙ্গা রেখে ওখান থেকে সরে যায়। আশা পিছন ফিরে দেখে আমান লেহেঙ্গা টাহ রেখে সরে গেছে ওখান থেকে। আশা হাতের লেহেঙ্গাটাহ রেখে, টেবিলের উপর আমানের রেখে যাওয়া লেহেঙ্গা টাহ হাতে নিয়ে নেয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে আমানের রেখে যাওয়া লেহেঙ্গা টাহ নিজের উপর ধরতেই আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে আমান আবার সেই জায়গায় এসে দাড়িয়ে আয়নায় তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমান এবার আয়নায় আশার দিকে তাকিয়ে, মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জানিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ওখান থেকে সরে যায়। আশা লেহেঙ্গাটাহ হাতে নিয়ে দোকানদারের কাছে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি এই লেহেঙ্গা টাহ নিতে চায়।”

সাইফ আশার হাতে অন্য একটা লেহেঙ্গা দেখে বলে ওঠে,
–” এইটা তোহ অন্য একটা মনে হচ্ছে।”

–” হ্যা, আসলে এই কালার টাহ আমার খুব পছন্দের। তাই এইটায় নিলাম।”

–” ওকে।”

এইদিকে,
সেহের অনেকগুলো লেহেঙ্গা দেখে ফেলেছে। কিন্তু একটাও যেনো তার মন মতো হচ্ছে নাহ। খুব রাগ হচ্ছে সেহেরের। হঠাৎ একজন লোক সেহেরের কাছে এসে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ম্যাম, এইটা আপনার। গায়ে উপর ধরে দেখেন কেমন লাগে!”

–” কিন্তু এইটা কে দিয়েছে?”

–” ঐ স্যার পাঠিয়েছেন।”
সেহের লোকটার দেখানো ইশারায় তাকিয়ে দেখে আরসাল ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। সেহের বুঝলো যে, আরসালই পাঠিয়েছে। সেহের মুচকি হেসে প্যাকেট থেকে লেহেঙ্গা বের করে দেখে আসলেই অনেক সুন্দর লেহেঙ্গাটা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে লেহেঙ্গাটা নিজের উপর মেলে ধরে সেহের। সেহেরের লেহেঙ্গা টাহ অনেক পছন্দ হয়। সেহের লেহেঙ্গা টাহ সেইভাবেই ধরে রেখে আরসালের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল এগিয়ে এসে সেহেরের হাতের থেকে লেহেঙ্গা টাহ নিয়ে টেবিলের উপর রেখে শুধু দোপাট্টা টাহ হাতে নেয়। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল দোপাট্টা টাহ সেহেরের মাথার উপর দিয়ে দেয়। সেহের অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বের হয়ে যায় ঐ দোকান থেকে। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, আরসাল চলে গেলে সেহের মাথার উপর থেকে দোপাট্টা টাহ নামিয়ে নিয়ে, দোকানির দিকে লেহেঙ্গা টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এইটাহ প্যাকেট করে দিন।”

★★★
কেনাকাটা করতে করতে রাত ১০ টাহ বেজে যায়। এখন সবাই ডিনার করতে যাবে। কিন্তু আরসাল একবার আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে আমান চুপচাপ তার পাশে হেটে যাচ্ছে, আবার আশা আর সাইফের দিকে তাকিয়ে দেখে আশা চুপ করে হেটে যাচ্ছে কিন্তু সাইফ কি কি যেনো আশাকে বলছে। আরসাল কি মনে করে যেনো বলে ওঠে,
–” সাইফ।”

–” জি ভাইয়া!”

–” বলছিলাম যে তুমি এইদিকে এসো। তোমার সাথে কিছু কাজ আছে।”

–” কি কাজ ভাইয়া?”

–” আসলে, তোমার রিং টাহ এখান থেকে নিতে চাচ্ছিলাম।”

–” বাট আমার রিং তোহ কেনা হয়ে গেছে।”

–” হ্যা, কিন্তু আম্মু আরও একটা রিং কেনার কথা বলেছিলো৷ হয়তো কোনো দরকার আছে তাই। বাট, রিং টাহ আশাকে দেখাতে নিষেধ করেছে। তাই আমি, তুমি আর সেহের গিয়ে কিনে নিয়ে আসি। আর আশা তুই আমানের সাথে গিয়ে খাবার অর্ডার দে।”

আমান আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল আমানকে বলে ওঠে,
–” তোরা গিয়ে ওয়েট কর আমরা আসছি।”

–” কিন্তু। ”

–” কোনো কিন্তু নাহ। যাহ আসছি।”

–” হুম। চল আশা।”

আশা আর আমান এগিয়ে গেলে সেহের, আরসাল আর সাইফ রিং শপের দিকে এগিয়ে যায়।
আশা আর আমান পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে নাহ। কিছুক্ষণ পর আমান বলে ওঠে,
–” Congratulations.”

–” Thank you.”

–” তোদের দুইজন কে ভালো মানাবে।”

–” তাই! থ্যাংক্স। আচ্ছা আমাকে বিয়েতে গিফট করবা নাহ কিছু?”

–” কি গিফট চাস?”

–” বলছি, বসো আগে। আর অর্ডার টাহ দিয়ে দাও। ওরা চলে আসবে।”

–” হুম, তুই বোস, আমি অর্ডার দিয়ে আসি।”

–” হুম।”

আমান গিয়ে অর্ডার দিয়ে এসে আশার অপোজিট চেয়ারে বসে বলে ওঠে,
–” বল, কি গিফট চাস তুই?”

–” আমি চাই, তুৃমি আমার বিয়ের সব ফাংশনে এটেন্ড করো।”

–” মানে!”

–” মানে, আমার বিয়ের প্রত্যেকটা ফাংশনে তুমি থাকবে। আমি আর সাইফ যখন একে অপরকে রিং পরাবো, কবুল বলবো এজ ইউজুয়াল বিয়ের সব ফাংশনে আমি তোমকে দেখতে চাই। তুমি নিজেকে আমাকে সাইফের গাড়িতে তুলে দিবে। এইটা আমার কাছে তোমার থেকে পাওয়া বিয়ের গিফট।”

আশার কথা শুনে আমান অবাক হয়ে আশার দিকে তাকায়। আমান ভেবেছিলাে আশার বিয়ের কয়েকদিন কোথাও চলে যাবে। কিন্তু আশা এখন যে কথাগুলো বলছে, তাতে তোহ আমান পুরো বেধে গেলো। আমান মুচকি হেসে আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বেশ, তুই যাহ চাইছিস তাই হবে। আমি তোর বিয়ের সব ফাংশনে থাকবো। প্রমিস!”

কিছুক্ষণের মাঝেই আরসাল, সাইফ আর সেহের চলে আসে। ওরা ডিনার করে বেরিয়ে আসে। তারপর সাইফ নিজের গাড়িতে এবং আরসাল, সেহের, আমান, আশা এক গাড়িতে উঠে চলে আসে।

চলবে………….🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে