তুই শুধু আমার পর্ব-১৫+১৬

0
1622

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 15+16

আজ আশার এইংগেজমেন্ট। ঘরোয়া ভাবে এইংগেজমেন্ট হলেও কাজ তোহ আর কম নাহ। তাই সবাই ব্যাস্ত। বাড়ি সাজানোর লোকজন এসে বাড়ি সাজানোর কাজে ব্যাস্ত। বাইরে থেকে শেফ আনা হয়েছে। তারা রান্নাবান্না করছে।
আশা জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
–” আজ থেকে এক একটা দিন যাবে আর আমি তোমার কাছের থেকে দুরে সরে যাবো আমান। অনেক দুরে সরে যাবো আমি। কয়েকদিনের মাঝেই অন্য কারো নামে লেখা হয়ে যাবো আমি। আমার উপর শুধু তার অধিকার থাকবে। একে বারের জন্য হারিয়ে যাবো আমি তোমার জীবন থেকে।”

সেহের নিচে ঘুরে ঘুরে ঘর সাজানো দেখছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায় সেহের। ধাক্কা খেয়ে কয়েক পা পিছে চলে যায় সেহের। কার সাথে ধাক্কা খেয়েছে নাহ দেখে বলে ওঠে,
–” কোন দেশের জিরাফরে, একদম আমার সামনে এসে খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছে। উফ!”

সেহের কথাগুলো বলেই সামনে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরসালকে দেখেই সেহেরের গলা শুকিয়ে আসে। সেহের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ভা ভা ভা ভাইয়া তু তু তু তুমি।”

–” কি যেনো বলছিলি তুই আমাকে?”

–” আ আ আমি, ক ক কই নাহ তোহ।”

–” আমি জিরাফ, আমি খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছি।”

–” ওমা এগুলো কি আমি তোমাকে বললাম নাকি?”

–” তাহলে কাকে বললি।”

–” আমাকে!”

–” অনেক চালাক মনে করিস নিজেকে তাই নাহ?”

সেহের কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ। এমন সময় মায়া চৌধুরী তাদের দিকে এগিয়ে এসে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, মা কি হয়েছে? এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

–” কিছু নাহ বড় আম্মু।”

–” আরসাল তুই কি সেহের কে বকা দিয়েছিস নাকি?”

আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে, মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নাহ।”

–” আচ্ছা, ওহ হ্যা ভালো কথা। নেহাকে বলেছিস আরসাল আজ আসার কথা।”

–” হুম, বলেছি।”
কথাটা বলেই আরসাল উপরে নিজের রুমে চলে যায়। আর সেহের মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” হুমমমম, নেহাকে বলবে নাহ আবার। ঐ নেকা নাহ আসলে মি. আরসালের তোহ আবার কিছুই ভালো লাগবে নাহ। নেহা এসে ওনার সাথে চিপকে থাকবে এইটায় তোহ ওনি চায়। অসহ্য।”
সেহের রেগে নিজের রুমে চলে যায়।

In evening………

ঘরোয়া ভাবে করার কথা থাকলেও, চৌধুরী বাড়ির কোনো কিছু কম আয়োজন করতে গেলেও ভালোই আয়োজন হয়ে যায়। যেমন আশার এইংগেজমেন্ট। ঘরোয়া ভাবে করতে চায়লেও বেশ কিছু মানুষকে ইনভাইট নাহ করলেই নয়, এমোন মানুষ এসেছেন। আরসাল, আশা, সেহের, আশফি, সাইফের কিছু ফ্রেন্ড সারকেল, এবং দুই বাড়ির অর্থাৎ আরসাল এবং সাইফদের কিছু নিকট আত্নীয় দিয়ে, জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী এবং আজিজ চৌধুরী, সিরাজ রহমানের কিছু বন্ধু মহল দিয়ে মোটামুটি বেশ একটা আয়োজন হয়েছে।
আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো। আরসাল নিচে আসতেই নেহা আরসালের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” Wow, Arsal. You looking so handsome.”

–” Thanks Neha. তোমাকেও সুন্দর লাগছে।”

–” Thank you dear.”
আরসাল আর কিছু নাহ বলে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। আরসালকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে নেহা বলে ওঠে,
–” আরসাল কাউকে খুজছো নাকি?”

–” হুম, আমানকে দেখছি নাহ।”

–” হেই ব্রো!”
কারো আওয়াজে আরসাল আর নেহা পাশ ফিরে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। আরসালের কাছে আমানকে মনে হচ্ছে, চোখে হতাশা, মুখে কৃত্রিম হাসি ফোটানো। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” আর কিছুদিন ওয়েট কর দোস্ত। বিয়ের দিন পর্যন্ত এই কষ্ট মেনে নে। তারপর আমি সব ঠিক করে দিবো। প্রমিস করেছি নাহ তোকে, তোর লাইফের সব কষ্ট আমি দুর করে দিবো। Just wait and watch.”

আমান আরসালের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কিরে, কি ভাবছিস?”

–” কিছু নাহ।”
হঠাৎ মায়া চৌধুরী জোরে বলে ওঠে,
–” ঐতোহ সেহের আশাকে নিয়ে এসেছে।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকায়। আমানও আস্তে আস্তে সিড়ির দিকে তাকাতেই যেনো মনে হয় কোনো পরি নেমে আসছে। আশা আমানের পছন্দ করা লেহেঙ্গা টাহ পরেছে। লেহেঙ্গার ঘাগরা চকলেট কালারের, সাদা কালারের টপ, চকলেট কালারের দোপাট্টা, মুখে একটু মেকাপ, চুলগুলো সামনে পাফ করে খোপা করে স্টোনের ক্লিপ লাগানো, কানে ঝুমকা, হাত ভর্তি চুড়ি, কপালে টিকলি, গলায় হালকা গহনা, সব মিলিয়ে আশাকে পরির মতো লাগছে। আমান যেনো আশার দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছে নাহ। আশাকে নিয়ে সাইফের পাশে বসানো হলো।
শুধু আমান নয়, আরও এক জোড়া চোখ আরও একজনকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে ব্যাস্ত। সে আর কেউ নয়, সে হলো আরসাল, আর দেখছে সেহেরকে। সেহের আরসালের পছন্দ করা লেহেঙ্গা পরেছে। যার ঘাগরা ব্লু কালারের, টপ পিংক কালারের, দোপাট্টা হোয়াইট কালারের, সেহের একদম হালকা মেকাপ করেছে, চোখ ভর্তি কাজল, ঠোঁটে পিংক লিপস্টিক, চুল গুলো সামনে হালকা পাফ করে ছেড়ে দেওয়া, কানে সিলভার কালারের ঝুমকো, হাতে চুড়ি, গলাই একটা লকেট সহ চেইন এতেই যেনো সেহেরকে কোনো পরির থেকে কম লাগছে নাহ। আরসাল কোনোভাবেই যেনো সেহেরের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে নাহ।
সেহের আশার পাশে বসে কথা বলতে বলতে আরসালের দিকে চোখ যায়। আর আরসালকে দেখেই সেহের মনে মনে বলে ওঠে,
–” ক্রাস এগেইন।”

আরসাল আজ হোয়াইট শার্ট যার ওপরের দুইটা বাটন খোলা, ব্লাক ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি আর কপালে কয়েকটি পড়ে আছে, পায়ে ব্লাক লোফার, আরসালকেও দেখে সব মেয়েরা ফিদা হয়ে গেছে।
আরসাল আর সেহের একে অপরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা নেহার নজরে পড়তেই আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

নেহার কথায় আরসালের ধ্যান ভাঙে। সেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম, বলো।”

–” এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? চলো ওদিকে যায়।”

–” ওকে চলো।”
সেহের দেখে আরসাল নেহার সাথে কোথায় যেনো যাচ্ছে। দেখেই সেহেরের মেজাজ গরম হয়ে যায়। সেহেরেরও ওদের পিছন পিছন যেতে শুরু করে কোথায় যায় দেখার জন্য। আরসাল কিছুদুর গিয়ে সাইডে একটা মিররে দেখতে পায় সেহের তাদের দিকে উকি দিয়ে দিয়ে পিছন পিছন লুকিয়ে আসছে। দেখেই আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের এইভাবে উকি দিয়ে পিছন পিছন লুকিয়ে কেনো আসছে? তাহলে কি সেহের আমাকে আর নেহাকে ফলো করছে?”

আরসাল নেহাকে নিয়ে রুফটপের দিকে গিয়ে কায়দা করে সেহেরের চোখের আড়ালে গিয়ে নেহাকে বলে ওঠে,
–” নেহা, আমাকে একটা ফোন করতে হবে। তুমি পার্টির ওখানে যাও। আমি কলটাহ শেষ করেই আসছি।”

–” ওকে।”

–” শোনো এইদিক দিয়ে যাও, ঘোরা কম লাগবে।”

–” ওকে।”
নেহা চলে যায়। আরসাল এবার লুকিয়ে সেহেরের কান্ড দেখতে থাকে। সেহের দেখে হঠাৎ করেই দুইজন উধাও হয়ে গেছে। সেহের মাজায় হাত দিয়ে জোরে জোরে বলতে শুরু করে,
–” এমা! দুনোটা গেলো কই? রুফটপে যায় নিহ তোহ আবার। সবাই নিচে পার্টির ওখানে আর এই দুইটা রুফটপে কেনো আসবে? নিশ্চয় কোনো কু মতলব আছে। ঐ নেহার সাথে মি. আরসাল চৌধুরী নিশ্চয় কোনো কুমতলবে রুফটপে এসেছে। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

সেহেরের কথা শুনে আরসালের প্রচন্ড রাগ উঠতে থাকে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের, ফাজিল একটা। এইসব ভাবে আমাকে নিয়ে। আমি নেহাকে নিয়ে কুমতলবে রুফটপে এসেছি। তুই কি মজা দেখাবি আমাকে, মজা তোহ আমি তোকে দেখাবো।”

সেহের রুফটপে এসে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে নাহ পেয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” রুফটপে তোহ কেউ নাই। তাহলে কোথায় গেলো ওরা?”

সেহের ভাবতে ভাবতে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কোনো একজোড়া হাত তাকে টান দেয়। সেহের গিয়ে সেই লোকটার বুকের মাঝে গিয়ে পড়ে। সেহের ভয় পেয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই দেখে আরসাল। এতোসময় এসির নিচে থাকায় আরসালের হাত মারাত্মক ঠান্ডা হয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দোপাট্টার নিচ দিয়ে এক হাত দিয়ে সেহেরের কোমর জড়িয়ে রেখেছে। আরসালের ঠান্ডা হাত সেহেরের কোমরে লাগতেই সেহের শিউরে উঠে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই আমাকে ফলো করেছিলি কেনো?”

আরসালের কথা শুনে সেহের অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নিজেকে সামলে সেহের বলে ওঠে,
–” কখন?”

–” তুই আমাকে ফলো করেছিলি। তারপরে কি যেনো বলছিলি, আমি নেহার সাথে কুমতলবে রুফটপে আসছি।”

–” নাহ মানে।”

–” কু মতলবে যখন এসেছি, তাহলে কাজ সেরেই যাবো।”

–” নেহা কই?”

–” নিচে, নেহার সাথে নয় তোর সাথে।”

–” মানে!”

–” মানে, বোঝাচ্ছি।”
আরসাল আর কিছু নাহ বলে সেহেরের মুখের দিকে মুখ এগিয়ে আনতেই সেহের চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে, আরসালের কলার্ট চেপে ধরে এক হাত দিয়ে, আর এক হাত দিয়ে নিজের ঘাগরা চেপে ধরে। আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর দুই গালে চুমু একে দেয়। সেহেরের যেনো পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করে আরসালের ছোয়ায়। আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। সেহেরকে নিজের দিকে আরও মিশিয়ে নেয় আরসাল। আরসাল সেহেরের মাথার পিছনে আর এক হাত দিয়ে সেহেরের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কি মনে করে আরসাল সেহেরকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দিয়ে আরসাল নিচে চলে যায়। সেহের অবাক হয়ে আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বুঝতে পারছে নাহ সেহের। আরসাল নিজেই তার কাছে এলো, আবার নিজেই তাকে দুরে সরিয়ে দিলো। সেহের আর কিছু নাহ ভেবে নিচে চলে আসে।
জিহাদ চৌধুরী স্টেজে উঠে বলতে শুরু করে,
–” গুড ইভিনিং লেডিস এন্ড জেন্টেল ম্যান। সবাইকে জানায় আজ এই এইংগেজমেন্ট পার্টিতে আসার জন্য হাজারো ধন্যবাদ। আজ চৌধুরী বাড়ির আদরের মেয়ে আশা চৌধুরীর এনগেজমেন্ট আমার বন্ধু সিরাজ রহমানের ছেলে সাইফ রহমানের সাথে। আগামী কয়েকদিনের মাঝেই তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন করা হবে। আপনারা সবাই ওদের সুখী জীবনের জন্য দোয়া করবেন।”

জিহাদ চৌধুরী কথাগুলো বলে আশা আর সাইফ কে হাতের ইশারা করে তার কাছে আসতে বলে। সবাই এগিয়ে আসে স্টেজের দিকে। আশা এবং সাইফও গিয়ে জিহাদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে দাড়ায়। সিমা রহমান একটা বক্স থেকে একটি আংটি বের করে সাইফের দিকে এগিয়ে দেয়। কেয়া চৌধুরী আশার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আশা হাতটাহ এগিয়ে দে মা, সাইফ আংটি টাহ পরিয়ে দিক।”

আশা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একপাশে আমান দাড়িয়ে আছে তার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে। আশার হাতটি কেয়া চৌধুরী তুলে দেন সাইফের বাম হাতের উপর। আমান তাকিয়ে আছে সাইফের উপর রাখা আশার হাতের দিকে। আশা মাথা নিচু করে চোখের পানি সামলানোর চেষ্টা করছে। সাইফ আশাকে আংটি পরিয়ে দেয়। আশাও কাঁপা হাতে সাইফ কে আংটি পরিয়ে দেয়। দৃশ্যটি দেখার সাথে সাথে আমান চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমানের এমোন মনে হচ্ছিল যে তার দম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরসাল এগিয়ে এসে আমানের কাঁধে হাত রাখে। আমান পাশে আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল আমানের দিকে তাকাতেই আরসাল বুঝতে পারে আমান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এনজয় আমান। বিয়ের আগের মুহুর্ত পর্যন্ত। রেডি থাক, নতুন কাউকে পাওয়ার জন্য।”

–” মানে!”

আরসাল আর কিছু নাহ বলে আমানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়।

পার্টিতে যে যার মতো আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, মজা করছে। আশফি নেহার সাথে কথা বলছে। আশফি কি মনে করে যেনো স্টেজে উঠে স্পিকার ঠিক করে বলতে শুরু করে,
–” হ্যালো এভ্রিওয়ান। আজ আমার আদরের ছোট বোনের এইংগেজমেন্ট। আপনারা সবাই যে অনুষ্ঠানে এসেছেন তার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ এই অনুষ্ঠান কে আরও রঙিন করে তোলার জন্য, আমি দুইজন মানুষের কাছে একটা রিকুয়েষ্ট করবো। আচ্ছা, আরসাল ভাইয়া আর আমান ভাইয়া তোমাদের মনে আছে, আগে তোমরা কত সুন্দর ডুয়েট গান করতে। অনেক দিন তোমাদের ডুয়েট পার্ফমেন্স দেখি নাহ। কিন্তু আজ খুব ইচ্ছা করছে। প্লিজ দুইজনে মিলে একটা গান শোনাও।”

আশফির কথা শেষ হলে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আশফি স্টেজ থেকে নেমে এসে একটা গিটার নিয়ে আরসালের সামনে দাড়ায়। আরসাল গিটারটাহ হাতে নিয়ে মুচকি হেসে আশফির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আশফিও হেসে দেয়। আরসাল গিটার নিয়ে স্টেজে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে। আমান স্টেজে উঠে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাড়ায়। বেজে ওঠে আরসালের গিটার। সবাই তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে।

আরসাল ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,এই অবেলায়,
তোমারই আকাশে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,, নীরব আপোষে, ভেসে যায়,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,সেই ভীষন, শীতল ভেজা চোখ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,, কখনো দেখাইনি তোমায়,,,,,,,,,,,

আমান ঃ ( আশার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,,,,,,,কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই,,,,,,,,,
,,,,,,,,,কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়,,,,,,,,
,,,,,,কতকাল আর ভুল অবসন্ন বিকেলে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়,,,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,সেই কবেকার ভায়োলিন,,,,,,,,,
,,,,,,,,,বেজে যায় কতদিন,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,প্রানে চাপা ঢেউ,,,,,,,,
,,,,,,,,,,দেখেনি আর কেউ,,,,,,,,,

আরসাল + আমান ঃ ( একে অপরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,কখনো অভিমান,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,অবাধ্য পিছুটান,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,জানি নাহ কি কষ্টে এই অবেলায়,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তবুও নির্বাসন বাসর সাজিয়ে,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,ঠোঁটে চেপে ধরা থাক ভালোবাসায়,,,,,,,,

সেহের একভাবে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। সেহেরের ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে আরসাল কে টাইট করে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে নাহ। আবার জানেও নাহ এমোন ইচ্ছে করার কারন কি? চোখ ছল ছল করছে সেহেরের। আশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছে একভাবে। আশার কেনো জানি নাহ মনে হচ্ছে আমান ভালো নেই। আমানের লাইফে তার নিজেকে খুব দরকার।

আরসাল ঃ ( সেহেরে দিকে আবেগী চোখে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,,ঘুনে খাওয়া মেঘে কালো হয়ে যায়
হৃদয় যখন,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,একা একা শুধু অকারণেই ঝরে বৃষ্টি এমোন,,,,
,,,,,,,,,,,আজো তাই,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,অবাক রঙে একে যায়,,,,,,
,,,,,,,সাদা কালো রং মাখা ফানুসের মুহুর্ত রাঙায়,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,ভীষণ কালো মেঘ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,পুড়ে ছাই আবেগে আজো তাই,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,অবাক জোছনায় পোড়া চোখ,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,তবুও সাজাই,,,,,,,

আমান ঃ ( আশার দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,,,,এই সন্ধ্যায়,,,,,,,,
,,,,,,দুচোখ সাগরে,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বুকের পাজড়ে ভেসে যায়,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,অবাক জোছনায় লুকিয়ে রেখেছি,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়,,,,,,,,

আরসাল ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,এই অবেলায়,
তোমারই আকাশে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,, নীরব আপোষে, ভেসে যায়,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,সেই ভীষন, শীতল ভেজা চোখ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,, কখনো দেখাইনি তোমায়,,,,,,,,,,,

আরসাল + আমান ঃ ( দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে )
,,,,,,,,,,,,,,,,কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই,,,,,,,,,
,,,,,,,,,কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়,,,,,,,,
,,,,,,কতকাল আর ভুল অবসন্ন বিকেলে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়,,,,,,,

আরসাল আর আমানের গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আমান আর আরসাল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল স্টেজ থেকে নিচে নেমে এসে, সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহেরের চোখ পানিতে ছল ছল করছে। সেহেরের চোখে পানি দেখে আরসালের বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। আরসাল সেহেরের দিকে এগিয়ে আসতেই সেহেরের উপরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আরসাল সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

★★★
আশা নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। অনুষ্ঠান অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। চারপাশে গাঢ় অন্ধকার হলেও রাতের এই বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোই লাগছে আশার। আশা মনে মনে ভাবছে,
–” বিয়ের দিন ফিক্সড হয়ে গেলো আমান। সামনে সপ্তাহেই আমার বিয়ে। আর আমিও তোমার থেকে একেবারের জন্য দুরে চলে যাচ্ছি। অন্য একজনকে নিজেকে লিখে দিবো। তার ছোয়া, চাওয়া দেখতে হবে আমাকে। হারিয়ে ফেললাম তোমাকে আমান।”

কাঁদতে কাঁদতে বারান্দার রেলিং ঘেসে বসে পড়ে আশা।

★★★
কেটে যায় দিন। এগিয়ে আসে নতুন সময়। ঠিক সেরকমই দেখতে দেখতে আশার বিয়ের সময় চলে আসে। একটা রিসোর্টে আশার বিয়ের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। রিসোর্ট টাহ বেশ ভালোই দুর। সেখান থেকেই বিয়ের সব ফাংশন করা হবে। প্রথম দিন সকালে রং খেলা, বিকালে সংগীত মেহেন্দি, ২য় দিন গায়ে হলুদ, তার পরের দিন বিয়ে।
সবাই রেডি হচ্ছে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য। সবার ব্যাগ, লাগেজ আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রিসোর্টে। এখন শুধু মানুষ গুলোর যাওয়া বাকি।
আরসাল নিজের রুমে রেডি হচ্ছে এমন সময় একটা কল আসে। আরসাল ফোন টাহ তুলে দেখে নেহা ফোন দিছে। আরসাল কল রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যা, নেহা বলো।”

–” আরসাল, একটা প্রব্লেম হয়েছে। আমি তোদের বাসায় এসে তোদের মিট করতে পারছি নাহ। এদিকে তোহ আমি বাংলাদেশে অনেক দিন পর, রিসোর্ট টাও ঠিক মতো চিনি নাহ। কি হবে?”

–” ওকে ওকে, ডোন্ট ওয়ারি। তুমি চিন্তা করো নাহ। আমি আশফি কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও তোমাকে রিসোর্টে নিয়ে আসবে৷ ওকে!”

–” হুম।”

–” বাই।”
আরসাল ফোন কেটে দিয়ে আশফিকে ফোন করে বলে তার রুমে আসার জন্য। কিছুক্ষণ পর আশফি আরসালের রুমের দরজা হালকা খুলে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া।”

–” ওহ, আশফি এসেছিস। এদিকে আয়। শোন, নেহা কিছু প্রব্লেমের জন্য এখানে আসতে পারছে নাহ। তোর কাজ হলো নেহার বাসায় গিয়ে ওকে নিয়ে রিসোর্টে আসা। ওকে।”

–” ডান ভাইয়া!”
আশফি আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে খুশিতে লাফাতে থাকে। আর দেরি নাহ করে নেহার বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে আশফি।
আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

–” আম্মু, তুমি এখনো যাও নি? আর কে কে বাদ আছে যেতে?”

–” হ্যা, আমি এখুনি বেরিয়ে যাবো। তুই, আমান, আশা, আর সেহের একসাথে আই।”

–” সেহের, আশা এখনো যায় নি।”

–” নাহ, ওদের নিয়ে তোরা আই। আমি গেলাম।”

–” হুম, যাও। সাবধানে যেও।”

–” তোরাও সাবধানে আসিস।”
বলেই মায়া চৌধুরী বেরিয়ে যায়। আরসাল কিছুসময় দাড়িয়ে থেকে উপরে দেখতে যায় ওদের কত দুর হলো। আরসাল সেহেরের রুমের দরজা হালকা নক করতেই ভেতর থেকে সেহের বলে ওঠে,
–” আশা এসেছিস, ভেতরে আই। দেখ আমার জামার চেইন টাহ কিছুতেই আটকাতে পারছি নাহ। একটু লাগিয়ে দে তোহ।”

সেহের চেইন লাগাতেই পিছন ফিরে লোকটাকে দেখে চেচিয়ে উঠে। আসলে আরসালই সেহেরের চেইন লাগিয়ে দিয়েছে। সেহের চেচিয়ে উঠতেই আরসাল এক হাত দিয়ে সেহেরের মুখ চেপে ধরে আর এক হাত দিয়ে সেহেরের কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আরসাল রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” চেচাচ্ছিস কেনো ইডিয়েট?”

সেহের উম উম করতে থাকে। আরসাল সেহেরের মুখের থেকে হাত সরিয়ে নিজেও সরে দাড়ায়। সেহের হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে,
–” তুমি আমার জামার জিপার লাগিয়েছো?”

–” তুই তোহ বললি, লাগিয়ে দিতে।”

–” আমি তোমাকে বলেছি, আমি তোহ আশাকে বলেছি।”

–” এখানে আমি ছাড়া তোহ আর কাউকে দেখতে পারছি নাহ।”
এমন সময় আশা সেহেরের রুমে এসে বলে ওঠে,
–” কিরে তুই রেডি? আরে ভাইয়া তুমি এখানে?”

–” হুম। তোদের হয়ে গেলে নিচে আই।”
আরসাল কথাটাহ বলেই নিচে এসে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। কিছু সময় পর আশা আর সেহের নেমে আসলে ওরা গাড়িতে উঠে বসে এবং রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

★★★
আশার বিয়ে যে রিসোর্টে ঠিক করা হয়েছে, রিসোর্ট টাহ অনেক বড়। রিসোর্টে তিনটি বাংলো আছে। সবাই মিলে ঠিক করেছে, একটা বাংলোতে অবিবাহিত ছেলেরা, আর একটা বাংলোতে অবিবাহিত মেয়েরা, আর একটা বাংলোতে বিবাহিতরা থাকবে। রিসোর্টের এক পাশে বড় গার্ডেন আছে, একপাশে বড় সুইমিংপুল আছে, বলতে গেলে এক কথায় অনেক সুন্দর পরিবেশ।
আরসালদের গাড়ি রিসোর্টে এসে থামে। সেহের গাড়ি থেকে নেমেই বলে ওঠে,
–” Wow! Nice! আশা দেখ কত সুন্দর রিসোর্ট টাহ।”

–” হুম! অনেক সুন্দর।”
আরসাল ওদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখনো অনেক সময় আছে পরে দেখিস। অনেক রাস্তা জার্নি করে এসেছিস, ভেতরে গিয়ে রেস্ট নে।”

কথা টাহ বলেই আরসাল আর আমান ভেতরে চলে যায়। সেহের আর আশাও ভেতরে চলে যায়।

★★★
সেহের নিজের রুমে এসে দেখতে থাকে। জায়গাটা সেহেরের খুব পছন্দ হয়েছে। সেহের বারান্দায় এসে দাড়িয়ে চারপাশে দেখতে থাকে। সেহেরের বারান্দার পাশেই ছেলেদের বাংলো আর সেহেরের বারান্দার সাথেই প্রায় লাগানো একটা বারান্দা আছে। সেহের চারপাশে দেখতে ব্যাস্ত। এমন সময় পাশের বারান্দায় তাকাতেই সেহেরের চোখ যেনো সেখানেই স্থির হয়ে যায়। আরসাল মাত্র শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে। আরসালের গায়ে একটা ব্লাক ট্রাউজার আর সাদা টিশার্ট, টিশার্ট টি যেনো বডির সাথে চেপে ধরে আছে যার জন্য জিম ওয়ালা বডি পুরো বুঝা যাচ্ছে, কাধে একটা সাদা টাওয়াল রেখে চুল গুলো হাত দিয়ে ঝাড়তেছে। মাত্র গোসল করে আসার জন্য আরসালের ঠোঁট আরও গোলাপি দেখাচ্ছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই ছেলে এতো সুন্দর কেনো? মেয়ে হলে এতোদিনে নির্ঘাত কিডন্যাপ হয়ে যেতো। ছেলে মানুষকেও এতো সুন্দর হতে হয়। ঠোঁট গুলো ঠিক বাচ্চাদের মতো গোলাপি। মাশাআল্লাহ!”

আরসাল হঠাৎ পাশে তাকাতেই সেহের কে দেখে হালকা চমকে উঠে। আরসাল সেহেরে দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি দেখছিস এভাবে? আর এখানে কেনো তুই?”

আরসালের কথায় সেহেরের ধ্যান ভাঙে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখছিলাম, আমার মতো সুন্দর হতে তোমার এখনো অনেক দেরি। আর শোনো, এখানে আমি, কারন এইটা আমার রুম। বুঝলে, মিস্টার।”

বলেই সেহের চুলগুলো একটু ভাব নিয়ে সরিয়ে ভেতরে চলে যায়। আরসাল সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে রুমের ভেতরে চলে যায়।

চলবে……………🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে