তুই শুধু আমার পর্ব-০৩+০৪

0
1890

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 3+4

[ অনেকেই জান্নাত চৌধুরী মেয়েদের নাম বলছো। তাদের বলছি এই নামটাহ ছেলেদেরও হয় আবার মেয়েদেরও হয়। তারপরও যখন তোমাদের সমস্যা হচ্ছে এই নাম নিয়ে তাই আমি নাম টাহ পাল্টায় দিচ্ছি। জান্নাত চৌধুরী থেকে জিহাদ চৌধুরী নাম দিলাম। এইবার মনে হয় আর কোনো সমস্যা নেই। তাও যারা এই সমস্যা তুলে ধরেছো তাদের ধন্যবাদ জানাই ]

আরসাল আজ অফিস যাবে। কিছু কাজ আছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে আরসাল। আজ আরসালকে দেখলে যে কেউ ক্রাশ খাবে। আরসাল আজ হোয়াইট ডেনিম শার্ট এবং উপরের ২ টা বাটন খোলা, ব্লাক ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, ব্লাক শু, বাম কানে ব্লাক টপ, হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি এবং কপালে কয়েকটা পড়ে আছে। যে কোনো মেয়ে আজ আরসাল কে দেখে ফিদা হয়ে যাবে। আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে তার আম্মু মায়া চৌধুরী টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। এমন সময় পেছন থেকে কারো আরসাল ডাকার আওয়াজে পেছনে তাকিয়ে দেখে আহিয়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। আরসাল ডাক শুনে মায়া চৌধুরীও এইদিকে তাকিয়ে দেখে আরসাল অফিসে যাবার জন্য রেডি হয়েছে। আহিয়া চৌধুরী আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” কোথাও যাচ্ছিস বাবা।”

–” হুম, অফিসে কিছু কাজ আছে তাই অফিস যাচ্ছি। ”
–” ওহ, তাহ আজ আমার বাবাটাকে তোহ অনেক সুন্দর লাগছে।” আহিয়া চৌধুরী কথাটা বলে নিজের চোখ থেকে কাজল নিয়ে আরসালের কানের নিচে লাগিয়ে দেয়। আরসালের চোখে পানি ভরে আসার মতো অবস্থা। কারন আগে রেডি হয়ে কোথাও বেরোনোর সময় আহিয়া চৌধুরী এই কাজ টাহ করতো। আজ অনেকদিন পর আবার সেই একই কাজ। এইসব দেখে মায়া চৌধুরীর চোখেও পানি চলে আসে। তিনি কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” অফিস যাবি, ঠিক আছে। কিন্তু আগে ব্রেকফাস্ট করে নে।”

–” আল্লাহ গো, আজ আবার দেরি হয়ে গেলো। আমি কি কোনোদিন একটু সময় মতো উঠতে পারি নাহ নাকি। আল্লাহ আজ তোহ ওরা আমাকে মেরেই ফেলবে। আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।” কথাগুলো বলতে বলতে নিচে নেমে আসতেছে কেউ একজন। যার কথা শুনে আরসাল তার মাকে উত্তরই দিতে পারে নাহ। পিছন ফিরে দেখে সেহের বক বক করতে করতে দৌড়ে নিচে নেমে আসছে। হঠাৎ আরসালের আগের কথা মনে পড়ে যায়। মেয়েটা সবসময়ই দেরি করে। এখনো এই অভ্যাস গেলো নাহ মেয়েটার।
সেহের নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে বলতে আসছে। নিচে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরসালকে দেখে সেহের একদম সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ে। এমনিই আরসাল কে মারাত্মক ভয় পায় সেহের, তার উপর গতরাতে যা শুনেছে এখন ভয় হাজার গুন বেড়ে গেছে। আরসাল নাকি তাকে ভালোবাসতো, এইটা যেনো কোনোভাবেই মানতে পারছে নাহ সেহের। এই জন্যই নাকি তাকে কারো সাথে মিশতে দিতো নাহ আরসাল। এখন আরসালের সামনে আসতেও অসস্তি লাগছে তার। তাও সকাল হতেই তার সামনে চলে এলো সেহের। আরসাল সেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আমি অফিস থেকে ব্রেকফাস্ট করে নিবো।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। সেহেরে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। কোথাও এক জায়গায় খারাপ লেগে ওঠে সেহেরের। সেহেরের মনে হলো আরসাল হয়তো ব্রেকফাস্ট টাহ বাসা থেকেই করে যেতো, শুধু সেহেরের জন্যই করলো নাহ। তাই সেহেরের মন টাহ আরও বেশি খারাপ হতে শুরু করলো। সেহের আহিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আম্মু আমি ভার্সিটি গেলাম।”

–” সে কি, ব্রেকফাস্ট করে যা।”

–” নাহ আম্মু খাইতে ইচ্ছে করতেছে নাহ। একটু পরে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো। আসি আম্মু, আসি বড় আম্মু।”
কথাটাহ বলেই চলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায় সেহের। আহিয়া চৌধুরী এবং মায়া চৌধুরী একে অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

আজ আরসালের প্রথম দিন অফিসে। অফিসের সবাই জানে তাদের ভবিষ্যৎ মালিক আসবে আজ অফিসে। আজ অফিসে নিজের ছেলে প্রথম পা রাখবে তাই জিহাদ চৌধুরী নিজে সবকিছুর এ্যারেজমেন্ট করছেন। জিহাদ চৌধুরী কে কবির চৌধুরী ( আরসালের মেঝো চাচ্চু ) এবং আজিজ চৌধুরী ও সাহায্য করছেন। অফিসের মেইন গেটে সবাই দাড়িয়ে আছে আরসালকে ওয়েলকাম করার জন্য৷ আশফিও দাড়িয়ে আছে ভাইকে ওয়েলকাম করার জন্য। আশফি আরসালের থেকে এক বছরের ছোট। আশফিও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পাশাপাশি বিজনেস জয়েন্ট হয়েছে। যদিও আশফির গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার আর কয়েকদিন বাকি মাত্র।

হঠাৎ অফিসের সামনে এসে একটা গাড়ি থামে। সবাই আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আরসাল গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। আরসাল কে দেখে সব লেডিস স্টাফরা যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। আশফি এগিয়ে এসে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে বলে,
–” ওয়েলকাম ভাই।”

আরসাল মুচকি হাসি দিয়ে আশফির দিকে তাকায়। আরসাল সবার সাথে ভালোভাবে কথা নাহ বললেও আশফি, আশা এবং সাথীর সাথে কথা বলে। একজন লেডিস স্টাফ এসে আরসাল কে ফুলের মালা পরিয়ে ওয়েলকাম জানায়। আর বাকি সব স্টাফ রা ফুলের বুকে দিয়ে ওয়েলকাম জানায়। আরসাল সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটু এগোতেই জিহাদ চৌধুরী সামনে এসে দাড়ায়। আরসাল বাবার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। জিহাদ চৌধুরী আরসালের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে। জিহাদ চৌধুরীও এই সুযোগে ছিলো কখন নিজের ছেলেকে জড়িয়ে ধরবে। আরসাল কে জড়িয়ে ধরে বলেন,
–” welcome my champ.”

জিহাদ চৌধুরী সরে আসতেই আরসাল অফিসের ভিতর চলে যায়। আরসালকে আশফি তার কেবিনে দিয়ে আসে। আরসাল কেবিনে এসে দেখে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আশফি আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” ভাই কেবিন পছন্দ হয়েছে।”

–” হুম, অনেক সুন্দর হয়েছে।”

–” বড় আব্বু নিজের হাতে তোর কেবিন গুছিয়েছে।”

আরসাল আর কিছু বলে নাহ। আশফিও আর কিছু নাহ বলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আরসাল চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। টেবিলের উপর একটা ব্লাক নিউ এ্যাপল ব্রান্ডেড ল্যাপটপ রাখা। আরসাল ল্যাপটপ টাহ ওপেন করে কাজ করা শুরু করে দেয়।

এইদিকে,
সেহের ভার্সিটি তে চলে আসে। ভার্সিটির ভেতর ঢুকতেই কেউ একজন তার সামনে এসে দাড়ায়। সেহের সামনে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ দাড়িয়ে আছে তার সামনে।
( ইয়াশ, ইয়াশ খান। ভার্সিটির ক্রাশ এন্ড চকলেট বয়। এইবার অনার্স চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন্ট। ইয়াশ শুধু ক্রাশ বয় তাহ নয়, একজন প্লে বয়ও বটে। ইয়াশের কাজ হলো কোনো মেয়েকে পটিয়ে তার সাথে ডেট করা। কিন্তু ইয়াশ প্রথম দিনই সেহের কে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। এই প্রথম ইয়াশ কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু সেহেরের এইসব ভালো লাগে নাহ। তাই কোনোদিন রাজি হয় নি, তাছাড়া ইয়াশ কেমন ছেলে সেহেরের ভালো করেই জানা আছে। সেহের সবসময় ইয়াশ কে ইগনোর করে তাও ইয়াশ পিছন ছাড়ছে নাহ সেহেরের……)
ইয়াশ সানগ্লাস টাহ নামিয়ে সেহেরের সামনে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে,
–” কেমন আছো? সেহের।”

–” জি, ভালো।”

–” আমাকে জিজ্ঞাসা করবানা আমি কেমন আছি?”

–” আসলে আপনাকে তোহ সুস্থই দেখছি। সুস্থ নাহ থাকলে তোহ আর মানুষ ভার্সিটি আসে নাহ তাই নাহ।”

–” ইন্টেলিজেন্ট, এই কারনেই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে।”

–” আমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, পরে কথা হবে, আসি।”
সেহের কথাট বলে আর এক মিনিটও দেরি নাহ করে ক্লাসের দিকে চলে যায়। আর ইয়াশ সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” সেহের, তুমিই প্রথম একজন। যাকে টেস্ট নয়, সংসার বাঁধতে চেয়েছি। তোমার উপর আমার নজর সবসময় থাকে। চেষ্টা করে যাবো তোমার রাজি হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু কখনো যদি কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াতে দেখি তাহলে তুমি আমার ভোগের সামগ্রী হয়ে যাবে। কারন আমার লাইফে তোমাকে চাই, এক ঘন্টার জন্য হলেও চাই।”

এইদিকে,
আমান আরসালের সাথে দেখা করতে আসে। দরজায় বেল দিতে কেউ একজন দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখে আশা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আশাকে দেখে আমান বলে ওঠে,
–” কিরে তুই এখন বাসায়, ভার্সিটি যাস নি।”

–” নাহ, আসলে আজ শরীর টাহ ভালো লাগছে নাহ। তাই যায় নি।”

–” ওহ, কি হয়েছে তোর। শরীর কেনো ভালো লাগছে নাহ।”

–” তেমন কিছু নাহ। ঐ একটু মাথা ব্যাথা করছে।”

–” হুম, মেডিসিন নিয়েছিস।”

–” হুম, নিয়েছি।”

–” আচ্ছা, আরসাল তোহ রুমে মনে হয়। আমি যায় আরসালের কাছে। তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে।”

–” নাহ, আরসাল ভাইয়া আজ বাসায় নেই। অফিস গেছে।”

–” ওহ নো, আমি তোহ ভুলেই গেছি। আজ তোহ আরসালের অফিস যাওয়ার কথা ছিলো। মাথা থেকে বেরই হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি যাই, তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে।”
আমান কথাটা বলেই বের হয়ে যায়। আশা এখনো আমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে, আমান কি কখনো তার ভালোবাসার কথা বুঝবে কি নাহ। নাকি সারাজীবন তার ভালোবাসা একতরফাই থেকে যাবে। আশা মাঝে মাঝে ভাবে, বলে দিবে আমানকে তার ভালোবাসার কথা, কিন্তু সাহসে পেরে ওঠে নাহ। কি জানি কি হবে আমান আর আশার জীবনে। পূর্ণতা কি পাবে আশার ভালোবাসা, নাকি সারাজীবন একতরফাই থেকে যাবে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আরসাল এখনো কাজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ কেবিনের দরজায় টোকা পড়তেই আরসাল বলে উঠে,
–” Come in. ”

কেউ একজন ভেতরে আসলে আরসাল তাকিয়ে দেখে কবির চৌধুরী এসেছেন। আরসাল কিছু নাহ বলে আবার ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করে। কবির চৌধুরী আরসালের অপোজিট চেয়ারে বসে পড়ে। আর আরসালের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতে আরসাল অস্বস্তি বোধ করে। আরসাল কবির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিছু কি বলবে?”

–” হুম, কেমন লাগলো প্রথমদিন অফিসে?”

–” খারাপ লাগার কি আছে?”

–” হুম, তাও ঠিক। আচ্ছা আজ তোহ প্রথম এলি অফিসে। বলছিলাম কি আজ নাহ হয় থাক, বাকি কাজ কাল করিস।”

–” তোমাদের বিডি অফিস আমার দায়িত্বে নাহ। এইটা তোমাদের। আমার লন্ডনের অফিসের কিছু কাজে আমি এখানে এসেছি। আরও কিছুদিন আমাকে অফিসে আসতে হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে আমার জন্যই ভালো।”

–” কিন্তু বাবা, এই অফিসটাও তোহ তোর। আর এইটাই তোহ মূল অফিস। লন্ডনের ঐটাহ তোহ শুধু একটা শাখা মাত্র।”

–” ইয়াহ, i know, কিন্তু তাও আমি ঐটার কাজই করবো। এই অফিসের কাজ তোমরাই করো। আর আমার এখনো যেতে অনেক লেট হবে। তোমরা চলে যাও।”

–” আরসাল।”

–” প্লিজ মেঝো আব্বু, তোমরা চলে যাও।”

কবির চৌধুরী আর কিছু নাহ বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসেন। কবির চৌধুরী বের হতেই জিহাদ চৌধুরী এবং আজিজ চৌধুরী এগিয়ে আসেন। জিহাদ চৌধুরী বলা শুরু করেন,
–” এখনো কাজ করছে নাকি?”

–” হুম, বললাম আজকের মতো কাজ রাখতে। শুনলো নাহ, আমাদের বাসায় চলে যেতে বললো।”

–” কি করবো এই ছেলেকে নিয়ে আমি। এতো যেদি ছেলেকে সামলাবো কিভাবে আমি?”

আজিজ চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর কাছে এসে দাড়িয়ে বলে,
–” আসবে দাভাই, চিন্তা করো নাহ। আরসালকে সামলানোর জন্য সেহের কেই আসতে হবে।”

আজিজ চৌধুরীর কথা শুনে জিহাদ চৌধুরী অবাক হয়ে তাকাই। আজিজ চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর তাকানো দেখে বলতে শুরু করে,
–” হ্যা, দাভাই। তোমার কি মনে হয় সেহেরের প্রতি আরসালের কোনো অনুভূতি নেই? আছে, দাভাই। অনুভুতি এতো সহজে চলে যায় নাহ। আরসালের অনুভূতি রাগের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে। কিন্তু সেহেরই সেই চাদর সরিয়ে আবার সেই আগের অনুভূতি ফিরিয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস। আরসাল কে নিজের মেয়ের জামাই বানাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তখন যদি আরসালের পাগলামো মেনে নিতাম তাহলে ওদের দুইজনেরই ক্ষতি হতো। কিন্তু এখন সেই চিন্তা নাই।”

–” আমাদেরও ভুল হয়েছে তখন। তখন বুঝিয়ে এইংগেজমেন্ট করে রেখে পরে বিয়ের কথা বললে হয়তো ছেলেটা শান্ত হয়ে যেতো।” হতাশ কন্ঠে বলে ওঠেন কবির চৌধুরী।
কবির চৌধুরীর কথা শুনে জিহাদ চৌধুরী বলে উঠে,
–” নাহ, শান্ত হতো নাহ আরসাল। কারন আরসাল অনেক যেদি। ছোটবেলা থেকে যাহ চেয়েছে তাই দেওয়া হয়েছে, নাহ দিতে চাইলে কেড়ে নিয়েছে। ও যখন বলেছিলো বিয়ে দিতে হবে তাহলে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুতেই শান্ত হতো নাহ। এতে সেহেরের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো।”

–” হয়তো হতো। কিন্তু দাভাই, যে সেহেরকে ঘিরে আজ এই হয়েছে। সেই সেহেরই ঠিক করবে সবকিছু। দেখে নিও। চলো আমরা চলে যাই। আরসাল ওর মন মতো আসুক।” কথা গুলো বলে আজিজ চৌধুরী জিহাদ চৌধুরী এবং কবির চৌধুরী কে নিয়ে বেরিয়ে আসে।

এইদিকে,
সেহের নিজের রুমে বসে বই পড়ছে। এমন সময় সাথী ( সেহেরের ছোট বোন ) আসে সেহেরের রুমে। সেহেরের পাশে বসে। সেহের সাথীর দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা কিছু বলার জন্য এসেছে বলে মনে হচ্ছে। সেহের বলে ওঠে,
–” কিরে কিছু বলবি?”

–” হুম, আচ্ছা আপু আমি আরসাল ভাইয়া তোহ ভালো গান গায়। কত দিন হয়ে গেলো আরসাল ভাইয়ার গান শুনি নাহ। আজ আরসাল ভাইয়া বাসায় ফিরলে আমি আর তুমি ভাইয়াকে গানের রিকোয়েস্ট করবো ঠিক আছে,।”

সাথীর কথা শুনে সেহেরের অতীতের কিছু কথা মনে পড়ে যায়।
সেহের আরসাল কে ভয় পেলেও আরসালের গান খুব পছন্দ করতো। আরসাল খুব সুন্দর গিটার বাজিয়ে গান করতো। আরসাল যখন গান করতো সেহের দরজার পাশে দাড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গান শুনতো। কোনো শব্দ করতো নাহ, যদি আরসাল জানতে পেরে বকা দেয়।
সেহেরকে কিছু ভাবতে দেখে সাথী সেহেরের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে,
–” আপু, কি ভাবছো তুমি।”

–” নাহ কিছু নাহ। আসলে সাথী শোন প্লিজ, আরসাল ভাইয়ার আজ কতো দেরি হচ্ছে বাসায় আসতে। অনেক কাজ কমপ্লিট করে আসছে মনে হয়। বাসায় আসলে নিশ্চয় অনেক ক্লান্ত থাকবে। তাই আজ থাক। আমরা অন্য কোনো একদিন রিকোয়েস্ট করবো। ঠিক আছে।”

–” হুম, তুমি ঠিক বলছো। আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম।”
সাথী চলে গেলো। সাথী এখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। তাই এখনো এইসব কোনো ব্যাপার সে জানেও নাহ। আর তাকে জানানো হয়ও নি।
সেহের পড়া ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” আরসাল ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। আর আমি কখনো বুঝতেই পারি নি। ছোট ছিলাম ঠিকই। কিন্তু এতোটাও কি ছোট ছিলাম, যে কিছুই বুঝবো নাহ। নাকি খেয়ালই করি নি কখনো। মনে হয় কখনো খেয়ালই করি নি। এখন জানলাম যে কেনো আমাকে হঠাৎ নানু বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, আরসাল ভাইয়া কে কেনো জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যদিও এতে আমার কোনো দোষ নেই, তাও কোনো নাহ কোনো একদিক দিয়ে আমি জড়িত। বড় আম্মু আব্বু কারো সাথেই আরসাল ভাইয়া ভালো করে কথা বলছে নাহ। এই ৩ বছর বড় আম্মু আব্বু কত কষ্ট পেয়েছে নিজের ছেলেকে দুরে রেখে। আর আজ এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়েও একটু আদরও করতে পারছে নাহ। নাহ, এইটা হতে পারে নাহ। আরসাল ভাইয়া এমন করতে পারে নাহ। তোমাকে তোহ ঠিক হতেই হবে। আমাকে ঘৃনা করো সমস্যা নাই। কিন্তু বড় আম্মু আব্বুর সাথে এরকম করতে তোমাকে আমি দিবো নাহ। তোমাকে ঠিক তোহ আমিই করবো। দেখো কি করি তোমাকে।”

এইসব ভাবছে সেহের তখনই দেখতে পায় বাড়ির গেট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকছে। সেহের বুঝে যায় যে আরসাল এসেছে। সেহের কিছু একটা চিন্তা করে নিচে নেমে আসে। নিচে নেমে আসতেই দরজায় কলিংবেল বেজে ওঠে। সেহের দরজার কাছে এগিয়ে যায়। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে মায়া চৌধুরী রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে সেহের দরজার কাছে গেছে খুলতে। তাই তিনি আর কোনো আওয়াজ নাহ করে দাড়িয়ে থাকে।
সেহের দরজা খুলে দেয়। আরসাল দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সেই মায়া ভরা মুখ টাহ দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আরসাল মুখ দিয়ে যতই বলুক সেহেরকে ঘৃনা করে, আসলে তোহ আরসাল সেহের কে ভালোবাসে। এই ৩ বছরে ভালোবাসা কমার বদলে যে আরও বেড়ে গেছে। সেই সাথে রাগ আর যেদ টাও যে বেড়ে গেছে। তাই ভালোবাসা ঢাকা পড়ে আছে রাগ আর যেদের কাছে।
আরসাল কিছু নাহ বলে ভেতরে চলে যেতে যায়। তখনই সেহের বলে ওঠে,
–” আমার চকলেট আনোনি। নাকি এই ৩ বছরে ভুলে গেছো আমার চকলেটের কথা।”

সেহেরের কথা শুনে পা থেমে যায় আরসালের। মনে পড়ে যায় আগের কথা। আরসাল যখনই বাসায় আসতো সেহের এসেই এই কথা বলতো’ আমার চকলেট আনোনি, নাকি ভুলে গেছো আমার চকলেট আনার কথা। আরসাল প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে অনুভব করে চকলেটের প্যাকেট। এই ৩ বছরে এমন কোনোদিন যায় নি যে আরসাল চকলেট কিনে আনে নি। প্রতিদিন চকলেট কিনে এনেছে আর নিজের একটা বক্সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। আজও এনেছে, কিন্তু ভাবে নি আজ সেহের সেই আগের মতো তার কাছে চকলেট চেয়ে বসবে।
আরসাল সেহেরের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখে সেহের তার দিকে হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে আছে। আরসাল কি করবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। ঘুরে যায় আরসাল, চলে যেতে যায় নিজের রুমের দিকে। কিন্তু আবার কি মনে করে যেনো প্যান্টের পকেট থেকে চকলেট বের করে সেহেরের হাতে দেয়। চকলেট টাহ দিয়ে আরসাল আর এক মিনিটও দাড়ায় নাহ, চলে যায় নিজের রুমে। সেহের চকলেট টাহ নিয়ে মুচকি হাসে। উপরে যেতে গিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। মায়া চৌধুরী এসে সেহেরের সামনে এসে দাড়ায় এবং বলে ওঠে,
–” পারবি আমার এই যেদি, রাগী ছেলেকে সামলাতে? কিরে বল পারবি নাহ?”

–” বড় আম্মু, কি বলছো এইসব?”

–” ঠিকই বলছে তোর বড় আম্মু। ”

সেহের আর মায়া চৌধুরী কারো গলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে জিহাদ চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। জিহাদ চৌধুরী সেহেরের সামনে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–” আমার তোর উপর বিশ্বাস আছে মা। আমি জানি তুই পারবি, আমার এই অশান্ত ছেলেকে শান্ত করতে। আমার এই ছেলেকে একটু সামলিয়ে দে নাহ মা। অনুরোধ করছি আমি তোর কাছে। ”

–” বড় আব্বু, কি করছো তুমি এইগুলো। আমি জানি নাহ আমি পারবো কি নাহ। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো। তোমাদের ছেলেকে তোমাদের কাছে আগের মতো করে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। ”
সেহের কথাগুলো বলেই তার রুমে চলে যায়। মায়া চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সব ঠিক হয়ে যাবে তাই নাহ?”

–” তুমি একদম চিন্তা করো নাহ মায়া। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এইদিকে,
আরসাল শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ভাবছে তখন সেহেরের চকলেট চাওয়ার কথা। কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল আগের সেই দিনে ফিরে গেছে আরসাল। লং টাইম শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে আরসাল। সোজা বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আরসাল।

চলবে………….🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে