তুই শুধু আমার পর্ব-০১+০২

0
3048

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 1+2

–” সেহের, সেহের, ঘুম থেকে উঠ। বাসার সবাই আজ কত তাড়াতাড়ি উঠে গেছে, আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।”

ঘুম ঘুম চোখে সেহের তার মাকে বললো,” আহা মা, এতো তাড়াতাড়ি উঠতে পারবো নাহ। আর বাসায় আজ কি যে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।”

–” বাসায় আজ কিহ জানিস নাহ।” চোখ মুখ কুঁচকে সেহের কে তার মা বলে উঠলো।

–” নাহ জানি নাহ, কিহ আজ বাসায়।

–” আজ বাসায় আরসাল আসতেছে। আর একটু পরেই চলে আসবে। আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস।”

আরসাল এর নাম শুনে সেহরের ঘুম উড়ে গেলো। তোতলাতে তোতলাতে বলো” কে আসছে”

–” আরসাল, তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। আর কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসবে।” কথা গুলো বলেই সেহেরের আম্মু চলে গেলো।
আর সেহের সেইভাবেই বসে বসে ভাবছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্যারা চলে আসলো। সেহের তার জীবনে একজন মানুষকেই ভয় পায় আর সে হলো আরসাল।
(( সেহের চৌধুরী। চৌধুরী বাড়ির সবচেয়ে আদরের কণ্যা সেহের চৌধুরী। সেহের এইবার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। সেহেররা ২ বোন। সেহেরের ছোট একটি বোন আছে। সেহের দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী। টানা টানা চোখ, হলুদ ফর্সা গায়ের রং, গোলাপি ঠোঁট এবং ঠোঁটের উপর একটা গাঢ় ছোট্ট কালো তিল, যা সেহেরের সৌন্দর্যকে হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে, লম্বা চুল গুলো কোমরের নিচে এসে পড়েছে।
সেহেরেরা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকে। সেহেরের বাবা তিন ভাই। সেহেরের বাবা সবথেকে ছোট। সেহেরের বড় চাচা জান্নাত চৌধুরী এবং বড় চাচী মায়া চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আরসাল চৌধুরী। সেহেরের মেঝো চাচা কবির চৌধুরীর এবং কেয়া চৌধুরীর ২ ছেলেমেয়ে, বড় ছেলে আশফি চৌধুরি এবং ছোট মেয়ে আশা চৌধুরী। আর সেহের বাবা সবার ছোট আজিজ চৌধুরী এবং মা আহিয়া চৌধুরী, সেহেররা ২ বোন, সেহের বড় এবং ছোট বোন সাথি চৌধুরী….আস্তে আস্তে আরও জানা যাবে এখন গল্পে ফেরা যাক,,))
সেহের তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আর থাকবে নাই বা কেনো আজ ৩ বছর পর বাড়ির বড় ছেলে বাড়ি আসছে। যদিও সবাই চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে, কারন আরসাল বাড়িতে এসে শান্ত থাকলে হয়। কারন আরসালকে জোর করে বিদেশ পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু কেনো, কি কারনে আরসাল কে জোর করে বিদেশ পাঠানো হয়েছিলো তাহ এখনো সেহের জানে নাহ, আর জানার কখনো চেষ্টাও করে নি। আরসাল অনেক যেদি ছেলে তাই বাড়ির সবাই চিন্তিত আছে। আরসাল বিদেশ যাওয়ার পর হাতে গোনা কয়েকদিন বাড়ির সবার সাথে কথা বলেছে তাও ২ বা ৩ মিনিট।
সেহেরও চিন্তিত হয়ে আছে। কিন্তু সবার চিন্তা আর সেহেরের চিন্তা একদম আলাদা। সবার চিন্তা আরসাল বাসায় এসে সবার সাথে ভালো ব্যাবহার করবে কি নাহ আর সেহেরের চিন্তা তার লাইফের ডেভিল আবার তার লাইফে এসে হাজির।
হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে। সবাই চমকে বাসার দরজার দিকে তাকায়। তারপর আশফি গিয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুলে। দরজা খুলে দেখে আরসাল এবং আমান দাড়িয়ে আছে। সবাই আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে আসে। মায়া চৌধুরী ভেজা চোখ নিয়ে আরসাল এর সামনে দাড়ায়। আরসাল তার মায়ের দিকে সোজা দৃষ্টিতে তাকায়। এতে যেনো মায়া চৌধুরীর বুকের ভেতর টাহ খা খা করে ওঠে। কারন ওনার তোহ ঐ একটায় সন্তান। তার যে তাকে দুরে রাখতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। তাহ কি এই যেদি ছেলে বুঝবে। সেইদিন যদি তিনি আরসাল কে জোর নাহ করতেন তাহলে যে ২ টা জীবন যে নষ্ট হয়ে যেতো।

সবাই আরসাল কে ঘিরে ধরেছে। সেহের এতো সময় অন্যদিকে ফিরে ছিলো। এইবার আস্তে আস্তে একটু উঁকি দিয়ে আরসাল কে দেখলো। আর দেখেই যেনো বড়সড় একটা ক্রাশ খেলো সেহের।
(( আরসাল, দেখতে কোনো হিরোর থেকে কম নয়। দুধ ফর্সা গায়ের রং, চোখের মনি টাহ হালকা ব্রাউন কালার, যা সবচেয়ে বেশি এট্রাকটিভ, গাঢ় গোলাপি রং এর ঠোঁট, চুল গুলো খুব সিল্কি আর চার পাঁচ টাহ কপালে সবসময় পড়েই থাকে। আরসাল মারাত্নক যেদি ছেলে। ছোট বেলা থেকেই যেটা চেয়ে এসেছে সেটা নিয়েই ছেড়েছে। আর সেটা যেভাবে হোক। নিজের কোনো কথার বিরুদ্ধে কোনো কাজ হলে আরসাল সেইটা মেনে নিতে পারে নাহ।,,,, পরে আরসাল সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যাবে এখন এখন গল্পে ফেরা যাক,,))
আরসাল কে দেখে সেহের বড়সড় ক্রাশ খেয়ে গেলো। আরসাল এমনিতেই হিরোর মতো দেখতে, তারওপর আরসাল ব্লাক টিশার্ট এর উপর এ্যাশ কালরের জ্যাকেট পরা, ব্রাউন ডেনিম প্যান্ট, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, হাতে একটি ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ, পায়ে হোয়াইট কের্চ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি আর কপালে কয়েকটি পড়ে আছে, আাবার টি-শার্টে একটি সানগ্লাসও ঝুলানো আছে।

আরসাল সবার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা উপরের দিকে যেতে লাগলো। সবাই হতাশ চোখে আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কেউ কোনো কিছু বললো নাহ। আরসাল উপরের দিকে যেতে যেয়ে সেহেরের সামনে এসে দাড়ায়। সেহেররের দিকে লাল রাগী চোখ নিয়ে একবার তাকিয়ে চলে যায়। এতে সেহেরের ভয়ে ক্রাশ শব্দ টাহ উড়ে গিয়ে বাশ শব্দটা চলে আসলো। আবার আগের মতো যদি টর্চার করে তার উপর তাহলে সেহের কি করবে, এই ভয় পেতে থাকে।
আরসাল চলে গেলে সবাই আহত চোখে আমানের দিকে তাকায়। আমান আরসাল এর ছোট বেলার বন্ধু। আরসালের বাসা থেকে আমান এর বাসা ৫ মিনিটের হাটা পথ। আমানও আরসাল সাথে বিদেশে চলে গিয়েছিল। আমান খুব ভালো করেই জানে এইসবের কারন কি৷ কিন্তু এই মুহূর্তে আরসালকে এই ব্যাপারে কিছু বলা আর বাঘের মুখে লাফ দেওয়া একই কথা।
আমান সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান বুঝে উঠতে পারছে নাহ কাকে কি বলবে, আর কি বলা উচিত। কিছু সময় পর আমান মাথা নিচু করে আরসালের মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” আন্টি কিছু চিন্তা করবেন নাহ। ওর একটু সময় দরকার। আসলে ৩ বছর আগে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো কাজ হয়েছিল। তাছাড়া আপনিও ওর গায়ে হাত তুলেছিলেন। যা এখনো ওর যিদ কে বাড়িয়ে রাখছে। কিছুদিন সময় দেন, ঠিক হয়ে যাবে।”

–” জানি নাহ বাবা কি হবে। যেদি ছেলেটা বুঝবে কি নাহ। ” আরসালের আম্মু চোখে পানি নিয়ে বলেন।

আমান আর কিছু নাহ বলে বাসা থেকে বেরিয়ে এসে তার বাড়ির দিকে হাটা শুরু করে।
এইদিকে এতোদিন পর একজন আমানকে যেনো চোখ ভরে দেখে নিলো। আমানকে দেখলেই যেনো সে ডুবে যায় আমানের মায়া ভরা মুখে। তার ইচ্ছে করে আমানকে একটু ছুয়ে দিতে, আমানের মুখে ভালোবাসার পরশ দিতে। আর এই ব্যাক্তিটি হলো আশা, আশা চৌধুরী। হ্যা, আশা আমানকে ভালোবাসে। আরও অনেক আগে থেকেই, কিন্তু কখনো বলার সাহস করে নি। আমানের প্রতি আগে ভালোলাগা কাজ করতো। ধীরে ধীরে সেই ভালোলাগা ভালোবাসাতে পরিনত হয়। আশা জানে নাহ তার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে কি নাহ। তাও আশা ভালোবাসে আমানকে। কারন সব ভালোবাসা যে পূর্নতা পেতে হবে এমন কোনো মানে নেই। আমান, আরসালের সাথে বিদেশে গেলে আশা মাঝে মাঝে আমানকে ফোন দিতো আরসালের বিষয়ে জানার জন্য, কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য থাকতো আমানের কন্ঠ শোনা। কারন আরসালের খবর তোহ বাকি সবার কাছে পেয়ে যায়। তাও আমান কে ফোন দিতো ভালোবাসার টানে।

আরসাল তার রুমে এসে তার রুমের চারপাশে তাকিয়ে দেখে। ৩ বছর আগে চলে গিয়েছিল এই রুম, বাড়ি ছেড়ে। আজ আাবার এসেছে। রুমের সব কিছুই আগের মতো আছে, কোনো কিছু বদলায় নি। রুম টাহ দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক যত্ন নেওয়া হয় রুম টার। একপাশে তাকিয়ে দেখে তার ব্লাক গিটার টাও আছে। আরসাল আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় গিটারের কাছে। দেখে একদম আগের মতোই পরিস্কার আছে। আরসাল তার হাত বাড়িয়ে গিটার টাহ ছুয়ে দেখে। এই গিটার টাহ অনেক প্রিয় ছিলো আরসালের। আরসাল চোখ বন্ধ করে ভাবে, যখনই সে গিটার বাজিয়ে গান করতো তখনই কেউ একজন তার রুমের পাশে দাড়িয়ে সেই গান উপভোগ করতো। কিন্তু আরসালের ভয়ে কখনো কোনো শব্দ করে তার অস্তিত্বের জানান দিতে চাইতো নাহ। কিন্তু তাও আরসাল বুঝে যেতো সে এসেছে, কারন সে আশেপাশে থাকলেই আরসালের হার্টবিট বেড়ে যায়, বুঝতে পারে তার অস্তিত্ব। হঠাৎ সেই বাজে দিনটার কথা আরসালের মাথায় চলে আসে। এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া, তার গায়ে তার মায়ের হাত তোলা, তার বাবার বকা, বাড়ির মানুষের করা কথা অপমান, এইসব মনে পড়তেই আরসালের চোখ লাল হতে থাকে৷ আর কিছু নাহ ভেবেই ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার অন করে তার নিচে দাড়িয়ে পড়ে।

এইদিকে সেহের রুমে এসে মুখে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছে আরসালের এমন ব্যাবহারের কারন কি। আজ কতদিন পর আরসাল বাড়ির মানুষের দেখা পেলো, তার তোহ উচিত ছিলো সবাইকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে কথা বলা। সেহেরের মনে আছে ৩ বছর আগে সেহের কে হটাৎ করেই তার নানুদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর বাড়ি এসে জানতে পারে আরসালকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেনো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এইটা জানার আগ্রহই তখন আসে নি। কারন তার লাইফ থেকে ডেভিল টাহ চলে গেছে এইটায় বেশি ইমপর্টেন্ট ছিলো তার কাছে। কিন্তু এখন সেহের ভাবছে কি হয়েছিলো তখন, যে আরসাল এতো রেগে আছে। আর কেনোই বা আরসাল কে জোর করে বিদেশ পাঠানো হয়েছিলো। সেহের বসে বসে এইসব ভাবছে তখনই সেহেরের মা সেহেরে রুমে এসে রুমে থাকা টেবিলে টাহ একটু গুছিয়ে রাখছে। তখনই সেহের তার আম্মু কে বলে,
–” আচ্ছা আম্মু, ৩ বছর আগে কি হয়েছিল। আরসাল ভাইয়া কে কেনো তোমরা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলে। আর বড় চাচী আম্মা কেনো আরাসাল ভাইয়ার গায়ে হাত তুলেছিলো। কি করেছিলো আরসাল ভাইয়া।”

সেহেরের কথা শুনে সেহেরের আম্মু কাজ থামিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। যাহ সেহের খেয়াল করে আস্তে আস্তে তার আম্মুর কাছে এগিয়ে এসে কাধে হাত দেয়। কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে সেহেরের আম্মু আহিয়া চৌধুরী কেঁপে উঠে পাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সেহের আগ্রহী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহের কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহিয়া চৌধুরী রুম থেকে বেরিয়ে এসে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। সেহের অবাক হয়ে যায় তার মায়ের কাজে। তার আম্মু চলে গেলো কেনো তারে কিছু নাহ জানিয়ে তার মাথায়ই আসছে নাহ।
এইদিকে আহিয়া চৌধুরী নিজের রুমে এসে দেখেন আজিজ চৌধুরী ( সেহেরের বাবা ) খবরের কাগজ পড়ছেন। আহিয়া চৌধুরী এসে আজিজ চৌধুরী সামবে বসেন, এইটা দেখে আজিজ চৌধুরী খবরের কাগজ নামিয়ে আহিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখেন তাকে খুবই চিন্তিত মুখ নিয়ে আছেন। আজিজ চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই আহিয়া চৌধুরী বলে উঠেন,
–” মেয়ে যদি জিজ্ঞেস করে যে, ৩ বছর আগে আরসালের সাথে যাহ হয়েছে তার কারন কি? কি উত্তর দিবে তুমি? ”

–” হটাৎ এমন কথার কারন কী?” অবাক হয়ে যান আজিজ চৌধুরী।

–” কেনো করবো নাহ বলো। আজ নাহ হয় কাল মেয়ে তো জিজ্ঞাসা করতেই পারে। কি উত্তর দিবা তখন?”

–” জানি নাহ। কিন্তু আরসাল এখনো সেই আগের ফিলিংস নিয়ে আছে কি নাহ কে জানে। আবার সেই আগের মতো পাগলামি শুরু করলে তখন কি হবে। সেহের এইসব জানতে পারলে তার রিয়াকশন কি হবে, কিছুই জানি নাহ। কিন্তু জানবে তোহ, যে সেহেরের জন্যই এইসব হয়েছিল। যদিও সেহেরের কোনো দোষ নেই এতে। তখন সেহেরের বয়সও কম ছিলো, তাই আমরা এই বিষয় নিয়ে এগোই নি। কিন্তু এখন আরসাল যদি চায় তাহলে সেইটাই মেনে নেওয়া হবে।”

আজিজ চৌধুরীর কথা শুনে আহিয়া চৌধুরীও মনে মনে তাই ঠিক করে নেয়। কিন্তু সেহেরও কি তাই ঠিক করে নিচ্ছে। এই ৩ বছর যে অনেক সময় ছিলো সেহেরের জীবনের। এই ৩ বছর পর আরসাল, আজিজ চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী যাহ চাচ্ছে তাহ কি সেহেরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে।
এইদিকে মায়া চৌধুরী ( আরসালের আম্মু ) আরসালের জন্য ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে তার রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আরসালের রুমের ভেতরে গিয়ে দেখেন আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে। কারো রুমে আসার আওয়াজ পেয়ে আরসাল দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা খাবার হাতে দাড়িয়ে আছে। আরসাল ল্যাপটপ টাহ পাশে রেখে দাড়িয়ে যায়। আর অন্যদিকে ঘুরে দাড়ায়। মায়া চৌধুরীর বুকের ভেতর কেমন করে উঠে। মায়া চৌধুরী খাবারের প্লেট পাশে একটা ছোট্ট রাউন্ড টেবিলে রেখে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে আরসালের পেছনে এসে দাড়িয়ে আরসালের কাঁধে হাত দেয়। আরসাল এতো দিন পর মায়ের স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে কিন্তু তার মায়ের দিকে তাকায় নাহ। মায়া চৌধুরীর চোখে পানি এসে ভিড় করে। তিনি বলতে থাকেন,
–” মায়ের দিকে তাকাবি নাহ। মায়ের উপর এতো রাগ যে মায়ের দিকে তাকাচ্ছিসও নাহ।”

মায়ের কথা শুনে আরসালের চোখেও পানি চলে আসে কিন্তু পানি পড়তে দেয় নাহ। মায়ের দিকে নাহ তাকিয়েই আরসাল বলতে শুরু করে,
–” আমি কারোর উপর রেগে নেই। আমি এখন একা থাকতে চায়।”

আরসালের কতা শুনে মায়া চৌধুরী বুঝতে পারে তার ছেলে কতটা অভিমান নিয়ে আছে তার উপর। তিনি কোনরকম ভাবে কান্না চেপে রেখে বলে উঠে,
–” হুমম, চলে যাচ্ছি। তুই একা থাক। কিন্তু নাহ খেয়ে থাকিস নাহ বাবা। ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছি। আমি নিজে বানাইছি তোর জন্য। তোর প্রিয় আলুর পরটা আর গরুর মাংস। খাবার টাহ খেয়ে নে।”
কথা টাহ বলেই মায়া চৌধুরী তাড়াতাড়ি চলে যান রুম থেকে। মায়া চৌধুরী যেতেই আরসাল পিছন ফিরে মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের কোনা দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আরসালের। কি করবে ওর সেই দিন টাহ যেনো আরসালের মাথায় পুরো গেঁথে আছে। কোনো ভাবেই ভুলতে পারে নাহ। তাই কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছে নাহ আরসাল।
মায়া চৌধুরী কান্না করতে করতে রুমে এসে বিছানায় বসে পড়ে। তখনই জান্নাত চৌধুরী ( আরসালের বাবা ) রুমে এসে দেখেন মায়া চৌধুরী কান্না করছে।
তিনি মায়া চৌধুরী কে তার দিকে ফিরিয়ে বলেন,
–” মায়া, কি হয়েছে তোমার?”

–” জান্নাত, আমার ছেলে আমার উপর কত অভিমান নিয়ে আছে তুমি জানো নাহ। কি করবো বলো, তখন ও যেরকম পাগলামি শুরু করেছিলো, তাতে তোহ সেহেরের ক্ষতি হতো। সেহের যে তখন অনেক ছোট ছিলো। তাই আমি ওর গায়ে হাত তুলেছিলাম। ওরে জোর করে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এইটা তোহ ওদের দুইজনের জন্যই করেছি। আমার যেদি ছেলেটা কে এই কথা কে বুঝাবে। আমি আর এইগুলো নিতে পারছি নাহ। ”

–” তুমি শান্ত হও মায়া। এখন আরসাল যাহ চাইবে তাই হবে। সেহের তোহ এখন বড় হয়েই গেছে। এখন আরসালের কথামতো সব হবে। ছেলেটা কে একটু সময় দাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। ”
জান্নাত চৌধুরী কথা গুলো বলেই মায়া চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরেন। আর মায়া চৌধুরী জান্নাত চৌধুরীর বুকে কান্না করতে থাকেন। একটাই সন্তান ওনাদের। সবটুকু দিয়ে ভালোবাসেন। এতোগুলো দিন ওর ছেলেকে কাছে পেয়েও একটু আদর করতে পারছে নাহ। কথাও ঠিক মতো বলতে পারছে নাহ। কিভাবেই বা বলবে তাদের দিকে তোহ ছেলেটা ভালোভাবে তাকাচ্ছেই নাহ।

In night…

আরসাল বারান্দায় ডিভানের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সারাদিন আরসাল রুমেই ছিলো। কারো সাথে কথা বলে নি। নিজের মতো করে ল্যাপটপে কাজ করেছে। আরসাল অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই নিজেদের ফ্যামিলি বিজনেস এ জয়েন্ট আছে। তাই নিজের ল্যাপটপেই কাজ কমপ্লিট করে আরসাল। খুব প্রয়োজন নাহ হলে অফিস যায় নাহ। বিদেশের বিজনেস টাহ আরসালই হ্যান্ডেল করে। তাই আজ সারাদিন রুমে বসে অফিসের কাজ করেছে। কারো সাথে কথা বলে নি। বিকালে আমান এসেছিলো, হঠাৎ আমানের একটা ফোন আসায় তাড়াতাড়ি চলে যায়। আরসাল হঠাৎ দরজায় আওয়াজ পেয়ে রুমে এসে দেখে তার বাবা জান্নাত চৌধুরী এসেছেন। আরসাল হঠাৎ তার বাবাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আরসাল তার বাবার দিকে একবার তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। জান্নাত চৌধুরী আরসালের সামনে এসে দাড়ায়। আরসাল এতে আরও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আরসালের বাবা বলে উঠে,
–” এখন কি উল্টা দিকে ফিরে যাবা। কথা বলবা নাহ আমার সাথে।”

–” আমি কারো সাথে কথা বলতে চায় নাহ।”

–” আচ্ছা, তাহলে ৩ বছর পর বাংলাদেশে ফিরে আসার কারন কি? থেকে আসতে বিদেশে। আসলে কেনো?”

–” আমি তোমাদের জন্য আসিনি। অফিসের কাজে এসেছি।”

–” আরসাল” হঠাৎ একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসায় আরসাল এবং জান্নাত চৌধুরী পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী ভেজা চোখ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। তিনি আরসালের সামনে এসে ২হাত দিয়ে আরসালের মুখ ধরে বলে,
–” মাকে তোর দেখতে ইচ্ছে করেনি। এতো রাগ মায়ের উপর, যে মায়ের টানে নাহ অফিসের টানে চলে এলি। মাকে একটু দেখতেও ইচ্ছে করে নাহ। বল নাহ বাবা, মাকে কি একটুও দেখতে ইচ্ছে করে নাহ। ”

আরসাল তার মুখ থেকে নিজের মায়ের হাত সরিয়ে জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে ফিরে দাড়ায়। মায়া চৌধুরী আবার বলেন,
–” আরসাল, বাবা তুই যদি সেহেরের প্রতি ৩ বছর আগের সেই অনুভূতি রাখিস, তাহলে,”

–” কখনো নাহ। আমি সেহেরের প্রতি কোনো অনুভূতি রাখি নাহ। আমি সেহেরকে এখন শুধু ঘৃনা করি। হেট করি আমি ওরে।” আরসাল তার মাকে আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়েই এই কথা গুলো বলে ওঠে।আরসাল তার মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” যে মেয়ের জন্য আমাকে নিজের মায়ের হাতে চড় খেতে হয়েছিল, বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, বাবার বকা শুনতে হয়েছিল, সেই মেয়েকে আমি শুধুই ঘৃনা করি।”

–” কিন্তু এতে তোহ সেহেরের কোনো দোষ ছিলো নাহ আরসাল। পাগলামো তুমি করছিলে।” জান্নাত চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন।
আরসাল তার বাবার সামনে যেয়ে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে,
–” আমি পাগলামি করেছিলাম। কাকে নিয়ে করেছিলাম। ওরে নিয়ে করেছিলাম। ওরে নিয়ে করেছিলাম জন্যই তোহ এইসব হয়েছিল। যদি অন্য কাউকে নিয়ে করতাম তাহলে মনে হয় এমন হতো নাহ। এনিওয়ে, আমি একা থাকতে চাই। তোমরা যাও এখন।”

জান্নাত চৌধুরী এবং মায়া চৌধুরী একে অপরের দিকে হতাশ চোখে তাকায়। তারা আর কিছু নাহ বলে বেরিয়ে যায়। আরসালও বারান্দায় চলে যায়।
কিন্তু এখনো একজন আছে যে তাদের এইসব কথোপকথন শুনে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে দরজার অপর পাশে কর্নারে। সে আর কেউ নাহ, সে হলো সেহের নিজে। সেহেরের রুম আরসালের এক রুম পরেই। সেহের নিজের রুমের দিকে যেতে গিয়ে আরসালের রুমের থেকে নিজের নাম ভেসে আসলো এমন মনে হওয়ায় দরজাট পাশে দাড়িয়ে থাকে, এবং শুনতে থাকে। সেহেরের মাথায় যেনো কিছুই ঢুকছে নাহ। আরসাল তাকে ঘৃনা করে, তার জন্য আরসাল কে চড় মারা হয়েছিল, বকা শুনতে হয়েছিল, বাড়ি ছাড়তে হয়েছিলো, এইসবের মানে কি?
সেহের তার রুমে চলে আসে, গিয়ে বারান্দায় দাড়ায়। ভাবতে থাকে কিছু অতিতের কথা। সেহের যখন ক্লাস ওয়ানে পড়তো তখন আরসাল ক্লাস ফোরে পড়ে। একই স্কুলে ছিলো ওরা। কারো সাথে মিশতে দিতো নাহ আরসাল সেহেরকে। কোনো ছেলের সাথে সেহের কথা বললেই আরসাল সেহের কে বকা দিতো। অনেক সময় মাইর ও দিতো। আর যে ছেলের সাথে কথা বলতো তাকেও মারতো। হাই স্কুলে ও একই অবস্থা ছিলো। এই কারনে আরসালকে সেহের নিজের লাইফের ডেভিল মনে করতো। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে সেহের, আরসাল অনার্স ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট, তখন আরসাল কে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কেনো?
–” আরসাল ভাইয়া আমাকে ঘৃনা করে, আমার জন্য আরসাল ভাইয়াকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো। কি হয়েছিলো ৩ বছর আগে। আম্মুকে আজ যখন আমি জিজ্ঞেস করলাম আম্মু আমাাকে উত্তর কেনো দিলো নাহ? নাহ আমাকে সব জানতে হবে। যে করেই হোক। কি হয়েছিল ৩ বছর আগে, কি হয়েছিল। কিন্তু কে বলবে আমাকে এইসব। আচ্ছা সেই সময় তোহ আশা বাড়িতে ছিলো। তাহলে আশা নিশ্চয় জানে কি হয়েছিল। হ্যা, আশার কাছেই জানবো।” সেহের নিজে নিজেই কথাগুলো বলে আশার রুমের দিকে যেতে থাকে।

আশা নিজের রুমে বসে বসে বই পড়ছে। দরজার খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে সেহের এসেছে। সেহের কে দেখে আশা উঠে বসে। আর সেহের কে বলে,
–” কিরে তুই এতো রাতে এসেছিস। কোনো দরকার ছিলো? ”

–” হ্যা, দরকার আছে। আশা যা যা বলবো ঠিক ঠিক উত্তর দিবি বলে দিলাম।”

–” আরে বাবা কি হয়েছে। আর আমি আমার বেস্টুকে কখনো মিথ্যা বলেছি বলতো। বল কি হয়েছে?”

–” ৩ বছর আগে কি হয়েছিল। আরসাল ভাইয়াকে জোর করে বিদেশে কেনো পাঠানো হয়েছিলো। ”

সেহেরের কথা শুনে আশা ঘাবড়ে যায়। কি বলবে কিছুই বুঝতে পরছে নাহ। কি বলবে এখন সেহেরকে। সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের অনেক আগ্রোহী চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আশা আমতা আমতা করে বলতে শুরু করে,
–” আসলে সেহের, হয়েছে কি”

–” কি হয়েছিল, আমি বলছি।”
কারো আওয়াজ শুনে সেহের আর আশা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আহিয়া চৌধুরী এবং মায়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছেন।
–” আম্মু, বড় আম্মু তোমরা।” সেহের অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে।
মায়া চৌধুরী সেহেরের সামনে এসে দাড়ায়। আর বলে,
–” তোকে আমার বলতেই হবে। তোরে বলার সময় এসে গেছে। তখন তুই ছোট ছিলি তাই বলি নি। কিন্তু এখন তোরে বলাই যায়।”

–” কি হয়েছিল বড় আম্মু ”

–” সেইদিন”

Flashback……..৩ বছর আগে,

মায়া চৌধুরী তার রুমে কাপড় গোছাচ্ছেন। তখন আরসাল তানার রুমে এসেই বলে,
–” আম্মু তোমরা নাকি সেহেরের সাথে ছোট আব্বুর কোন বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছো।”

–” হ্যা, আসলে কি বলতো। সেহের তোহ এখনো ছোট৷ বিয়ের বয়স হয় নি। তাই এমনি ঠিক করে রাখা হচ্ছে। সেহেরের বিয়ের বয়স হলে তারপর বিয়ে দেওয়া হবে।”

–” আম্মু এইটা সম্ভব নাহ।”

–” কেনো? কি হয়েছে? ছেলে তোহ অনেক ভালো। কয়েকদিনের জন্য দেশে এসেছে। আবার বিদেশে চলে যাবে। তার আগে এইংগেজমেন্ট করে রাখতে চাচ্ছে। তারপর ৪….৫ বছর পর দেশে আসবে। সেহেরেরও বিয়ের বয়স হয়ে যাবে। তখন বিয়ে হবে।”

–” আম্মু ছেলে ভালো নাহ খারাপ, কোথায় থাকে নাহ থাকে, বা কবে বিয়ে হবে এই বিষয় নিয়ে কিছু বলি নি। আমি শুধু এইটা বলতে চাচ্ছি যে সেহেরের বিয়ে কারোর সাথে ঠিক হতে পারে নাহ।”
আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকায়। আর বলে,
–” কেনো?”

–” কারন, আমি সেহের কে ভালোবাসি।”
আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। আর বিস্ফোরিত কন্ঠে বলেন,
–” আরসাল কি বলছিস এইসব।”

–” আমি ঠিকই বলছি। যখন থেকে আমি এইসব বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই সেহেরের প্রতি আমার আলাদা টান কাজ করতো। শুধু তাই নয়, যখন আমি এইসবের কিছুই বুঝতাম নাহ, তখনও কোনো অদৃশ্য কারনে সেহের কে আমি কারো সাথে মিশতে দিতাম নাহ। কারন আমার খুব রাগ হতো৷ আজও আমি ওরে কারো সাথে মিশতে দেয় নাহ। কারন আমার রাগ এবং হারানোর ভয় ২ টায় হয়।”

–” আরসাল, থাম বাবা। এইটা কখনো সম্ভব নাহ।”

–” সম্ভব করতে হবে। আর আমি বুঝে গেছি তোমরা সেহের কে আমার থেকে দুরে সরিয়ে দিবা। তাই আমি আজ রাতেই সেহের কে বিয়ে করবো এন্ড এইটায় ফাইনাল।”
কথা গুলো বলে আরসাল বেরিয়ে যায়। মায়া চৌধুরী খুব ভয় পেয়ে যায়। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। আরসাল যে যেদি ছেলে কি করে ফেলবে ঠিক নাই। এতে আর কারো কিছু নাহ হোক সেহের এবং আরসাল ২ই জনেরই অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। মায়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরীকে বলে তৎক্ষনাৎ সেহেরকে তার নানুর বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আরসালের অজান্তেই।
আরসাল রাতে বাসায় ফিরে সেহের কে কোথাও নাহ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে এসে আরসাল জোরে জোরে ডাকতে শুরু করে,
–” আম্মু, আম্মু, ”
আরসালের আওয়াজে সবাই ড্রইংরুমে চলে আসে। জান্নাত চৌধুরী বলে উঠেন,
–” আরসাল, এতো চেচামেচি কেনো করছো? এইসব কি?”
আরসাল জান্নাত চৌধুরীর কথা নাহ শুনেই আহিয়া চৌধুরীর সামনে এসে উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে,
–” ছোট আম্মু, সেহের কোথায়? চুপ করে কেনো আছো? বলো সেহের কোথায়? ওরে আমি বাসার কোথাও খুজে পাচ্ছি নাহ৷ সেহের কোথায়?”

–” আরসাল বাবা শান্ত হ।”

–” কি শান্ত হবো আমি। সেহের কোথায় বলো ছোট আম্মু।”

–” সেহেরকে তোর কাছের থেকে দুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ” মায়া চৌধুরী বলে উঠেন। মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল মনে হচ্ছে পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আরসাল ওর মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে,
–” আম্মু, কি বলছো তুমি এইসব। তুমি তোহ জানো আমি সেহেরকে ভালোবাসি।”

–” তোর এই ভালোবাসার জন্য এতো বড় ক্ষতির কাজ আমি করতে পারবো নাহ আরসাল। সেহের সারাজীবনের জন্য তোর কাছের থেকে চলে গেছে।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল চেচিয়ে ওঠে। আর সব জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে। সবাই ভয় পেয়ে যায়। আরসালকে থামানোর জন্য মায়া চৌধুরী আরসালকে নিজের দিকে ফিরিয়ে মুখে চড় লাগিয়ে দেয়। আরসাল মুখে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কারন এই প্রথম কেউ আরসালের গায়ে হাত তুললো। তখন জান্নাত চৌধুরী আরসালের সামনে একটা পাসপোর্ট দিয়ে বলেন,
–” এই নাও। রাত ১২ টায় তোমার ফ্লাইট, লন্ডন চলে যাও তুমি।”

–” বাবা, কি বলছো এইসব।”

–” ঠিকই বলছি, চলে যাও এই বাড়ি ছেড়ে।”
আরসাল সবার দিকে একবার তাকিয়ে রাগেতে সেইভাবেই বেরিয়ে পড়ে। আর তার কিছুদিন পর আমান ও চলে যায় বিদেশে।

Present……….

রুমের ভিতর পিন পিন নিরাবতা কাজ করছে। কেউ কোনো কথা বলছে নাহ আর। সেহেরও আর কাউকে কিছু নাহ বলে নিজের রুমে চলে যায়। আর বাকি সবাই তাকেয়ে থাকে সেহেরের যাওয়ার দিকে।

চলবে…………….🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে