তপ্ত সরোবরে পর্ব-০৪

0
443

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

৪.

রাত এগারোটা। শীতের রাত হিসেবে অনেক রাত। দিলরুবা বেগম ডাকতে এলেন দ্বিজা ও লাবন্যকে। লাবন্যর ঘরটা বড়ো অগোছালো হয়ে আছে। বিছানায় কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সোফাও ভর্তি কাপড়-চোপড়ে। খুলে রাখা শাড়ি গুলোও ওভাবেই এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। লাবন্য সেগুলোই গোছাতে বসেছে। দ্বিজা একদৃষ্টে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে উদাসী চোখে। দিলরুবা বেগম বললেন, “দ্বিজা! খাইতে আয় তো। মাথাটা ধরছে খুব, দিহানরে খাওয়াইয়ে ঘুমাইতে যাব আমি। লাবন্য, আয় তো, আম্মা!ʼʼ

দ্বিজা কোন জবাব দিলো না। এমনকি তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। সে হারিয়ে গেছে কোথাও। তার চোখে-মুখে সূক্ষ্ম বিরক্তি। দিলরুবা বেগম মেয়েকে কিছু বলার আগেই লাবন্য বলল, “তুমি যাও, ফুফুআম্মা। আমি কাপড় গুলো গুছিয়ে দুই মিনিটে আসছি।ʼʼ

দিলরুবা বেগম আর দাঁড়ালেন না। একবার অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে থাকা দ্বিজার দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন তিনি। লাবন্য কাপড় গুলো ভাজ করে রেখে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দ্বিজার দিকে তাকাল। দ্বিজাকে বলল, “চল খেতে ডাকছে নিচে।ʼʼ

দ্বিজা চোখ তুলে তাকায়, লাবন্যর কেমন অসস্তি লাগছে দ্বিজার চোখে চোখ রাখতে। সে একটু ইতস্তত করে চোখ নামিয়ে নেয়। দ্বিজা আস্তে করে বলল, “হু, যাব।ʼʼ

লাবন্য বেরিয়ে যায় রুম থেকে। দ্বিজা উঠে দাঁড়িয়ে ধীর গতিতে হেঁটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। পৌষের শীত, দ্বিজার শরীরটা কেঁপে উঠল, শরীরের লোমগুলো শিউরে উঠল একবার। দ্বিজা চেষ্টা করল না নিজেকে শীত থেকে আড়াল করতে। খুব বিষণ্ন লাগছে। কেন লাবন্যর অনুভূতিটাকে বিষাক্ত লাগছে তার কাছে? প্রশ্নের উত্তর নেই দ্বিজার কাছে। সে কেন মানতে পারছে না ব্যাপারটা? ফারজাদের জন্য লাবন্যর চোখের ওই অনুরাগ দ্বিজার কাছে অসহ্য ঠেকছে কেন? চোখটা বুজে নিলো আবেশে। ঠান্ডা হাওয়া এসে শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। হুট করে ভেসে উঠল চোখের স্মৃতিতে তিনবছর আগের ফারজাদ। তখন ফারজাদ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে এলএলবি করছে। দ্বিজা নিউ-টেন। তার কিছুদিন পরেই বিসিএস এর প্রস্ততি নিতে ফারজাদ ঢাকা চলে গেল।

দ্বিজা, লাবন্য, লিমন পড়ত ফারজাদের কাছে। ফারজাদের দুর্লভ হাসি, চালচলন, কথাবার্তা, তার পছন্দ, ফ্যাশন সেন্স—সব মিলিয়ে দ্বিজার কিশোরী মনে মাঝেমধ্যেই অদ্ভুত সব অনুভূতি দোলা দিত সে-সময়। যা ফারজাদ আড়ালে গেলে হালকা হয়ে যেত আবার। সামনে এলে আবারও জাগ্রত হয়ে উঠত সেই ধুকপুকানি। তবে সেটাকে প্রাধান্য দেওয়ার মতো আন্তরিক কিছু মনে হয়নি কোনকালে তা। তবে আজ! আজকাল এমন সব অস্থিরতার ব্যাখ্যা কী? এই-যে কাল সকালে ফারজাদকে দেখার পর থেকে যা শুরু হয়েছে ভেতরে—বুকের এই অশান্ত নাড়াচাড়াকে কী রূপে সংজ্ঞায়িত করা যায়? আজ কেন ফারজাদের দিকে লাবন্যর সেই অচঞ্চল দৃষ্টি দ্বিজার ভেতরে কালো মেঘের ন্যায় গুমোট অন্ধকার জমায়েত করেছে?

দ্বিজার নিজের এই চালচুলোহীন অসস্তিতে সে নিজের প্রতি বিরক্ত হচ্ছে। সে চঞ্চল, চনমনে, হাস্যজ্জল মেয়ে। তার সঙ্গে এসব মানায় না। তবে কিছুদিন হলো নাম না জানা এসব অশান্তি ভর করে তার মাঝে। আর আজ দু’দিন যেন তা ভয়ানক রূপ নিয়েছে! তার নীরব ভাবনাকে ভঙ্গ করতে লাবন্যর বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা আওয়াজ করে বেজে উঠল। তার নিজের ফোন নয়, লাবন্যর। দু-তিনবার বেজে শেষ হয়ে গেলেও দ্বিজা রুমে গেল না। কেবল তীব্র বিরক্তিতে মুখ কুঞ্চিত করে দাঁড়িয়ে রইল ওভাবেই। চতুর্থ বার বেজে উঠল ফোনটা। দ্বিজা ফোনটা তুলে কোনরকম সৌজন্য না দেখিয়ে কড়া গলায় বলল, “হ্যালো!ʼʼ

ওপাশ থেকে সালাম দিলো একটা পুরুষালি কণ্ঠস্বর। দ্বিজা একটু শান্ত হয় এবার। উত্তর দিলো দ্বিধাগ্রস্থ স্বরে।

“ভাবী! লাবন্য, রাইট? আপনার নাম লাবন্য?ʼʼ

দ্বিজা ভ্রুটা কুঁচকে ফেলল, যদি ইরফান হয়, তবে ভাবী কেন বলছে? বলল, “কে আপনি? আমি লাবন্য নই।ʼʼ

ওপাশের ছেলেটা বোধহয় একটু সপ্রতিভ হলো এবার। বলল, “তাহলে কে আপনি?ʼʼ

“সেটা বড়ো কথা না। কেন ফোন করেছেন, লাবন্যকে দরকার?ʼʼ

কণ্ঠস্বরটা আরও প্রাণচ্ছল লাগল এবার, “উহু, যা দরকার তা পেয়ে গেছি মনে হচ্ছে, এবং বিনা চেষ্টাতেই। ʼʼ

দ্বিজা ভ্রুটা আরও একটু কুঞ্চিত করে ফেলল। বলল, “বুঝিনি আপনার কথা।ʼʼ

“আপনি দ্বিজা, রাইট?ʼʼ

“জি, আপনি..

দ্বিজার কথা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে বলল, “আমি ইরফানের চাচাতো ভাই— ওয়াহিদ।ʼʼ

দ্বিজা ভ্রুটা টান করল এবার, একবার বোধহয় হঠাৎ-ই নজর পড়ায় দেখেছিল—লাবন্যর পাশেই বসেছিল একটা ছেলে, তার পাশে ইরফানের বোন, এবং চাচি। তবে দ্বিজা খেয়াল করেনি তখন বিশেষ ভাবে। বলল, “হুম, কী দরকারে ফোন করেছেন?ʼʼ

“দরকার না থাকলে আপনাদের বাড়িতে কেউ কল করে না?ʼʼ

“ঠিক তা না। তবে.. আচ্ছা, এটা কার নাম্বার?ʼʼ

“নাম্বার ইরফানেরই, তবে কথা বলছি ওয়াহিদ।ʼʼ

দ্বিজা হুট কলটা কেটে দিলো। তাহলে কী বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে? নয়ত ফোন করে লাবন্যকে নিশ্চয়ই ভাবী বলত না? ছেলেটার কথাবার্তা খুব হাস্যজ্জল ছিল, আর কথাগুলো গুছিয়ে বলে, ঠিক ফারজাদের মতোই। দ্বিজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে—হঠাৎ-ই আবার মনে পড়ল ফারজাদের কথা। সে তো গোমরামুখো, মুখে সারাক্ষণ বিরক্তি লেগে থাকে। দ্বিজা ফোন রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নিচে কী হচ্ছে তা জানা দরকার।


সকাল ছয়টা বাজেনি হয়ত এখনও। ফারজাদের দরজায় দুম-দুম করে ধাক্কা পড়ছে। ফারজাদ একটু নড়েচড়ে চোখ-মুখ কুঁচকে পড়ে রইল আবার ওভাবেই। অথচ ওপাশের ধাক্কার মাত্রা বাড়ছে। ফারজাদ চোখ খুলে তীক্ষ্ণ নজরে তাকায়। কঠিন মুখে দরজা খুলে দিলো। আমেনা বেগম শুরু করলেন, “নামাজ পড়ছোস সক্কালে? এতক্ষণ লাগে ঘুম থিকা উঠতে? শহুরে পড়তে যাইয়া সব কাফের হই গেছোস! অলস কোনেকার, আয় আমার লগে।ʼʼ

ফারজাদ গম্ভীর মুখে বলল, “সমস্যা কী তোমাদের? আল্লাহর ভোরে উঠে বসে থাকতে হবে নাকি, আশ্চর্য! নামাজ যেহেতু পড়িনি, তো আজকের মতো ঘুমাই, তোমাকে আমার দরজার সামনে আসতে কে বলেছে? নিষেধ করিনি, তুমি সকালে উঠে আর যাই করো, আমার দরজায় আসবে না?ʼʼ

আমেনা বেগম গোমরা মুখে বললেন, “মানুষ হ ফারজাদ। দিন দিন বজ্জাত হই যাচ্ছিস।ʼʼ

ফারজাদ উশকো-খুসকো হয়ে থাকা চুলে হাত চালিয়ে বলল, “অজানা কিছু বলো।ʼʼ

আমেনা বেগম মুখ ফুলিয়ে তাকালেন, “চুপ কর তুই, বদমাশ। খেজুরের রস আইনা দে, পিঠা বানাইতাম।ʼʼ

ফারজাদ নাক-মুখ কুঞ্চিত করল, “হোয়াট! হোয়াট ননসেন্স, আপা! এই কাজের জন্য বাড়িতে আর কেউ ছিল না? ছোটোবেলা থেকে জালাচ্ছ, কবে পিছু ছাড়বে তুমি আমার?ʼʼ

আমেনা বেগম হঠাৎ-ই দুষ্টু হেসে ফেললেন। ফারজাদের গাল টেনে দিয়ে বললেন, “তোর পিছ ছাড়ুম না, যদ্দিন না মরতাছি। অহন যা, রস আইনা দে।ʼʼ

ফারজাদ এমন হঠাৎ আক্রমণে মুখ বিকৃত করল। ডেস্ক-টেবিলের ওপর থেকে চশমাটা তুলে চোখে দিলো। আমেনা বেগম মিষ্টি হাসি মুখে দেখছেন ফারজাদকে। এই ছেলে বাইরে যাই হোক, যেমনই হোক, আজও পরিবারের কাছে বড়ো আহ্লাদের। আমেনা বেগমের চোখে ফারজাদ ভবের রাজকুমার। যাকে দেখতে, শুনতে, এবং বাকি সবদিক থেকে ব্যতিক্রম অথচ আকর্ষণীয় লাগে। দাদি হিসেবে—যুবক নাতির এমন তাগড়া চেহারায় মুগ্ধ হয়ে চয়ে রইলেন ক্ষণকাল।

ঘরের ভেতরে শীত টের না পাওয়া গেলেও, বাইরে কুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতি। দশ মিনিট পর বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল— আমেনা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। উঠানের এককোনে বেশ কিছু গাদা ফুলের গাছ লাগিয়েছে লাবন্য, বড়ো বড়ো গাদা ফুটে আছে গাছগুলোতে। লাবন্য গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ফুলগুলোই দেখছে একদৃষ্টে। ফারজাদ বলল, “আমি কোথায়, কার গাছের রস আনতে যাব? আমি পারব না ওসব, লিমনকে পাঠাও।ʼʼ

“না লিমনের যাইয়া কাম নাই, ও পারবো না। তুই যা, লাবনীরে নিয়া যা, ও চেনে-জানে সব।ʼʼ

লাবন্য অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল ফারজাদের দিকে। ফারজাদ জ্যাকেটের চেইন লাগিয়ে, চশমাটা খুলে আমেনা বেগমের কাপড়ের আচল টেনে নিলো। চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে বলল, “যা করবে তাড়াতাড়ি, সকাল সকাল ঘুম থেকে টেনে তুলে এভাবে ঢং করার মানে হয় না। ঘুম পুরো হয়নি, এসে ঘুমাব আমি।ʼʼ

সেই রসকষহীন কথা ফারজাদের! আমেনা বেগম অসন্তুষ্ট চিত্তে বললেন, “যা, ভাই! প্রতিদিন তো কই না। লাবনীরে নেওয়া লাগত না। ওর এহন বাইরে যাওয়া যাইব না। তুই দ্বিজারে নিয়া যা।ʼʼ

ফারজাদ কোন জবাব দিলো না, কেবল মুখে-চোখে বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিজাকে টেনে তুলে ফারজাদের সঙ্গে দেওয়া হলো। লাবন্য তাকিয়ে একবার দেখল দ্বিজা-ফারজাদের বেরিয়ে যাওয়া। এরপর আস্তে করে একটা ভারী শ্বাস ফেলে উঠান থেকে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। ওপরে উঠে গিয়ে সিঁড়িঘরের জানালায় দাঁড়াল। কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা রাস্তা ধরে হেঁটে চলে যাচ্ছে ফারজাদ-দ্বিজা। অনিমেষ ঘোলা চোখে চেয়ে রইল সেদিকে।

বাইরে বেশ ঠান্ডা, যেটা ভেতরে বোঝা যাচ্ছিল না। দ্বিজার শরীরে শাল চাদর, বেশ বড়ো, চওড়া। সেটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না ওর গায়ে। আবার ঠান্ডাও লাগছে। ফারজাদের সঙ্গে পা মেলাতে বেশ জোরে হাঁটতে হচ্ছে। হঠাৎ-ই বলল, “চাদর আর জ্যাকেট আদলা-বদলি করবেন?ʼʼ

ফারজাদ তাকাল দ্বিজার দিকে, “হোয়াট ইজ আদলা-বদলি?ʼʼ

দ্বিজা একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “চাদর টানতে ইচ্ছে করছে না। আপনার জ্যাকেট আমায় দেন, আমার চাদর আপনি নেন।ʼʼ

ফারজাদ বলল, “মাঝ রাস্তায় তার কেঁটে গেছে মাথার? ওভাবেই চল, জ্যাকেট খুলতে পারব না এখন।ʼʼ

দ্বিজা গোমরা মুখে ওভাবেই চাদর মোড়ামুড়ি করে নিয়ে হাঁটতে লাগল। চাদরটা অতিরিক্ত চওড়া, তার ওপর শাল চাদর পিচ্ছিল প্রায়, গায়ে থাকতে চাচ্ছে না। উপরন্তু, ছোট্ট শরীরে ওত বড়ো চাদর টানতে বেশ চাপ পেতে হচ্ছে। ফারজাদ জিজ্ঞেস করল, “কারা রস বিক্রি করে, জানিস? কালাম চাচারা করে নাকি এখনও?ʼʼ

“বললেন, আপনি নাকি চিনেন না? খামোখা আমার ঘুম নষ্ট করে আমায় তুলে আনার মানে কী?ʼʼ

“বহুদিন পর এভাবে গ্রামে… একটা সংকোচ কাজ করে না!ʼʼ

বেশ কিছুক্ষণ পর দ্বিজা হঠাৎ-ই মন্থর গলায় জিজ্ঞেস করল, “লাবন্যর বিয়ে পাকা হয়ে গেছে?ʼʼ

“হু, সব ঠিকঠাক। ছেলে ভালো, ভালো জব করে, লাবন্যকে পড়ালেখাও করাবে, আর কাকা তো কাজবাজ তেমন করে না। আব্বার বদৌলতে বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে, ভালোই থাকবে আই হোপ। এবার নিজের চিন্তা কর।ʼʼ

দ্বিজা একটু চমকে তাকাল। ফারজাদ সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে, মুখটা গম্ভীর, তবে কথাটা শুনতে মোটেই গম্ভীর লাগে নি। দ্বিজা আস্তে করে নজরটা নামিয়ে চঞ্চল একটা শ্বাস নিলো। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে। কুয়াশা ঢাকা সকাল, পাশে হাঁটছে বলিষ্ঠ এক পুরুষ। আঁড়চোখে একবার দেখল ফারজাদকে—লম্বা দেহে সাদা লুঙ্গি, উজ্জল বর্ণের শরীরে লুঙ্গির ওপর কালো জ্যাকেট, হাতাটা গুটিয়ে রেখেছে জ্যাকেটের, বাঁ-হাতের কব্জিতে রূপার বেঙ্গ্যল–যা কব্জি ছড়িয়ে পড়ে আছে, চোখে সাদা চশমা—আজব আকর্ষণীয় লাগছে দেখছে পুরুষটিকে। সব মিলিয়ে অন্যরকম দেখতে। সাহেব সাহবে ভঙ্গিতে হাঁটছে দ্বিজার পাশে। আনমনে মুচকি হাসল মেয়েটা। কিছুদূর এগিয়ে ফারজাদকে জিজ্ঞেস করে, “কাল যে ছেলেটা এসেছিল ওদের সাথে, তার সঙ্গে কথা হয়েছে আপনার?ʼʼ

ফারজাদ সন্দিগ্ধ গলায় বলে, “ওয়াহিদের কথা বলছিস?ʼʼ

দ্বিজা একটু অপ্রস্তুত হলো যেন। বলতে চেয়েছিল, কাল রাতের ফোনকলের ব্যাপারে। এবার সিদ্ধান্ত নিলো বলবে না। ফারজাদ জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে? কী সমস্যা, তা জিজ্ঞেস করছিস কেন?ʼʼ

দ্বিজা কথা কাটাতে মুখ ভেঙ্চায়, “গোয়েন্দাদের এই এক সমস্যা। স্বপ্নেও সারারাত মানুষের পেছনে স্পাইগিরি করে নাকি?ʼʼ

ফারজাদ বলল, “এনি ওয়ে, আমি গোয়েন্দা নাকি? আর এখন ঘুমাচ্ছি না, বাস্তবে আছি।ʼʼ

দ্বিজার মনে মনে নিজেকে ধমকায়। কেন যে এই লোকের সাথে না ভেবেই সাধারণ কথা বলতে যায়? সাধারণ কথাকে অসাধারণভাবে নেওয়া মানুষ কিনা!


লাবন্যর ফোন বাজছে। ফারিন চিৎকার করে ডাকছে লাবন্যকে। লাবন্য নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে। ফারিনকে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে, আপা? গলায় মাইক লাগিয়েছ কেন? পাড়ার লোক সব আমাদের বাড়ি চলে আসবে।ʼʼ

ফারিন ভ্রু কুঁচকায়, “এই, তুই ফারজাদের মতোন কথা বলতেছিস ক্যান? ছ্যাঁমড়া বিটলে, ওর মতোন ইট-পাটকেল মার্কা কথা বলবি না।ʼʼ

লাবন্য নিজেই আওড়ায়, “বিটলে! সেটা কী?ʼʼ

“তোর ফোন বাজে, আগে যা তো, থামা তোর ফোনরে। কান-মাথা ক্ষয় করে ফেলল।ʼʼ

ফারিনকে পাশ কাটিয়ে লাবন্য রুমে ঢুকে ফোনটা হাতে তুলল। ততক্ষণে কল কেটে গেছে। দেখল, মিসড-কলটা অপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে। লাবন্য চিন্তিত মুখে ফোনের দিকে তাকিয়ে রয়। সে মুহুর্তে আবারও কল আসল সেই একই নাম্বার থেকে।

চলবে..

[ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে