গোধূলির আলোয় এক্সট্রা পার্ট

0
1213

#গোধূলির_আলোয়
#এক্সট্রা_পার্ট
#রুবাইদা_হৃদি

‘ব্রেনের উপর আঘাত পাওয়ার জন্য জ্ঞ্যান না ফেরার সম্ভবনা বেশি নিনীতার৷এতোটা উপর থেকে পড়ার পর বেচে আছে এতেই কিছুটা ভরসা আছে ডাক্তারদের৷বড় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে৷ আলাপ আলোচনা শেষে আপনাকে ডিটেইলস জানানো হবে মিস্টার.আদ্র!ধৈর্য ধরুণ, মনোবল হারাবেন না৷ সব কিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রাখুন৷ যে কোনো মূহুর্তে যা কিছু হয়ে যেতে পারে৷ প্রেশেন্টের বেচে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই৷ সে কোনো পজিটিভ রেসপন্স করছে না৷’
ডাক্তার রেজাউল আদ্রের কাধে হালকা চাপড় মেরে আবারও বলে,

–‘পজিটিভ চিন্তা করুন মিস্টার. আদ্র৷ পুলিশ কেইস হতে হতে বেচে গেছে৷ আপনার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী সুইসাইড করেছে৷আমি বেশি ঘাটাঘাটি করতে চাই না৷ তবে আপনি মেইবি তাকে মেন্টাল প্রেশার দিয়েছিলেন কিছুর জন্য৷ আপনি কি জানতেন না?আপনার স্ত্রী মেন্টালি প্রচন্ড উইক ছিলো৷ এন্ড সে আমার কাছেই প্রতি মাসে কাউন্সিলিং করাতে আসতো৷’
ডাক্তারের কথা শুনে বড় ধরণের শক খায় আদ্র৷ নিনীতা আগে থেকেই উইক ছিলো?আর সে কিনা না বুঝে নিনীতাকে মেন্টালি টর্চার করে গেছে৷ ডাক্তারের হাত ধরে কাপা কন্ঠে বলে,

–‘যে করেই হোক ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন ডক্টর৷আমার সমস্ত ভুল শুধরে নিবো দরকার পড়লে নিজের জান দিয়ে দিবো শুধু আপনি আমার আমি টাকে ফিরিয়ে দিন৷’

–‘আমাদের সর্বচ্চ চেষ্টা থাকবে৷ আপনি নিজে শক্ত থাকুন৷’

‘আমায় দক্ষিণা বাতাসে মন ছুয়েছে ভোরে!’
‘সূর্য ডুবির আগে, গোধূলির আলোর প্রেমে পড়েছি তোমায় দেখার পরে৷’

–‘এইটা কি গান না কবিতা আদ্র? সিরিয়াসলি ভাই,তুই পারিস ও৷ পড়ালেখা ছেড়ে ছুড়ে কাব্যিক হয়ে যা৷’

–‘এইটা আমার মনের মাধুরি ছিলো আমার তার জন্য৷’

–‘বাবা!আমার তার জন্য৷ তোর এই তারররর টা কে রে৷’ নিনীতার টেনে টেনে বলা কথা শুনে আদ্র ওর হাত ধরে দুষ্টুমি করে বলে,

–‘তুই হচ্ছিস আমার সে৷’
–‘পাগল তুই?’
–‘সত্যিই তো আমি কি পাগল?ছিঃ আদ্র ছিঃ তোর চয়েজ এতোটাও খারাপ না তুই এই নুনতা জামের প্রেমে পড়বি৷’
–‘তোকে প্রেমে পড়তে বলেছে কে ভাদ্র৷ তোর জন্য তো রানী কটকটি অপেক্ষা করছে৷’
–‘আর তোর জন্য তো মোড়ের এই কালা চাঁন অপেক্ষা করছে৷’
নিনীতা আদ্রের মাথায় চাটি মেরে রেগে বলে,
–‘কালা চাঁন তোর ক্রাশ বোনের জামাই৷ আর তুই তার শালা৷শালা ফাজিল৷’
আদ্র হা করে তাকিয়ে চিল্লয়ে বলে,

–‘ওওওও কাকি তোমার মেয়ে আমার শালা বললো৷ দেখেছো! ছিঃ শরমে আমার মাথা কাটা যাচ্ছে৷আমি আর আসবো না কাকি৷এই ছিলো আমার কপালে৷’

রান্নাঘর থেকে রিমা খাতুন তেড়ে এসে নিনীতাকে ধমক দিয়ে আদ্রকে বলে,

–‘আদ্র তুই ওর কথা শুনে চুপ থাকিস কেন ঠাটিয়ে এক চড় মেরে দিবি৷ দিনে দিনে ফাজিল হয়ে যাচ্ছে৷ মুখের যা আসে তাই বলে৷ তুই ওর বড় ভাইয়ের মতো এর ভুল দেখলে আমায় না ডেকে নিজে শাসন করবি৷’

রিমা খাতুনের কথা শুনে আদ্রের মুখ ছোট হয়ে যায়৷ শেষে কিনা বড় ভাই!এই ছিলো তোর কপালে আদ্র৷ সেম অন ইউ আদ্র৷
.
.
.
হসপিটালের করিডোরে বসে আছে আদ্র৷ সবচেয়ে ভালো সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায়৷ আর কষ্টের গুলো দল বেধে ধীর গতিতে কষ্ট দিয়ে আরো জখম করে ফুরায়৷ বাইরের বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল গতিতে৷ আর আদ্রের মনে রক্তের বৃষ্টি হচ্ছে৷ নিনীতার ড্যামেজ এইখানে ঠিক করতে পারবে না ডাক্তাররা৷ তারা ইমিডিয়েটলি প্যারিসে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেছে৷পুরো তিন মাসের চিকিৎসা চলবে তাদের আন্ডারে৷ এর মাঝে ঠিক হওয়ার চান্স মাএ এিশ পার্সেন্ট৷ ওইখানে ভালো সার্জন কেইস টা হ্যান্ডেল করবে এই টুকুই ভরসা৷কাল সকালে ফ্লাইট৷ আজ সারারাত এইখানের আইসিউতে রাখা হবে নিনীতাকে৷ আদ্র বিশেষ পারমিশন নিয়ে তার নুনতার কাছে যায়৷ মাথা পুরোটা ব্যান্ডেজ করা,মুখে অক্সিজেন মাস্ক!নিনীতার মুখ টা শুকিয়ে গেছে৷এ যেন লাশ!আদ্র মুখ ঢেকে কেঁদে উঠে৷ যে মেয়েটাকে সে সেই ছোট বেলা থেকে আগলে রাখছে আর আজ তার জন্যই কিনা মৃত্যুর সাথে প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছে মেয়েটা৷ একটাবার নিনীতার কথা শুনা উচিৎ ছিলো তার৷ এখন আর বুঝে কি হবে তার নুনতা তো বেচে থেকেও মরে গেছে৷ পাশে থাকা চেয়ারে বসে নিনীতার মাথায় হাত রাখতেই নিনীতার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে৷ আদ্র চমকে উঠে পানি আলতো করে মুছে দিয়ে বিরবির করে বলে,

–‘আমি জানি নুনতা,তোর প্রতি অন্যায় করেছি দোশ ক্রটি গুলো মিটিয়ে নেওয়া উচিৎ ছিলো আমার৷ বিশ্বাস কর!তুই ছেড়ে যাবি এইটা কখনো মেনে নিতে পারতাম না আমি৷ সেই ঘটনা আমার মনের মাঝে প্রতিহিংসার জাগ্রত করে তুলেছিলো৷ আর আজ দেখে আমি সেই প্রতিহিংসার আগুনে নিজেই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি৷ তোকে যেই আগুনে পুড়াতে চেয়েছিলাম সেই আগুনে আমি পুড়ে ক্ষণে ক্ষণে ছাই হচ্ছি৷ সব ঠিক করে নেওয়ার একটা সুযোগ প্লিজ আমাকে দে নুনতা৷ আমি তোর গোধূলি মাখা আলোয় তোকে নিয়ে বাচতে চাই৷ নিশ্বাস ফেলতে চাই শান্তির সাগরে৷ যেখানে তুই আর শুধুই তুই থাকবি৷’
আদ্রের কথা মাঝেই নিনীতার নিশ্বাস গাঢ় হয়৷ শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷ আদ্র চিল্লিয়ে ডাক্তার কে ডাকে৷ নিনীতার শ্বাসের শব্দে ভারী হয় রুম৷ সেই শব্দ গুলো যেন আদ্রকে জানান দিচ্ছে,

‘সময় নেই আদ্র!জীবনের কাটা থমকে গেছে আমার৷ তুই ভালো থাকিস তোর আর আমার গোধূলির আলোয়৷’
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে