গোধূলির_আলোয় পর্ব-০৩

0
1340

#গোধূলির_আলোয়
#পার্ট:৩
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahmam)
আদ্রের শার্টে লাগা রক্ত গুলো শুকিয়ে গেছে।একটু পর পর আদ্র শার্ট উচিয়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের উপর হাত বুলিয়ে নিশব্দে কেদে চলেছে। তার কান্নার মৃদু শব্দ হসপিটালের বদ্ধ ঘরের মাঝে অদ্ভুত এক কষ্টের সুর তুলছে।বাইরে থেকে দমকা হাওয়া এসে আদ্রের শরীর ছুতেই কান্নার মাএা কমে অপরাধবোধ বেড়ে যায়। তার এতোটা রুড বিহেভ নিনীতা মেনে নিতে পারে নি বলেই এতো বড় একটা স্টেপ নিতে দুবার ভাবে নি। ‘সবসময় নুনতা তুই স্বার্থপরের মতো করিস।আগেও আমায় দূরে সরানোর জন্য ভুল করেছিস৷ আজ সেম ভুল তুই আবারও করলি৷ ক্ষমা করবো না তোকে কিন্তু তোকে ছাড়া যে বাচতেও পারবো না৷’
এশারের আজান কানে যেতেই আদ্র উঠে দাঁড়ায়৷ আল্লাহর কাছে তার প্রেয়সীর জান ভিক্ষা চাইবে৷এতোটা খালি আল্লাহ তাকে করবে না৷নামাজ শেষ করে আবারও কান্নায় ভেংগে পড়ে আদ্র৷ সেই ভোর সকালে একটা অপারেশন হয়েছে৷ আবারও মাথার অপারেশন করতে হবে৷ ডাক্তার কোনো সিউরিটি দেয় নি৷ এই নিয়ে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে৷ আরো চার ব্যাগ জোগাড় করে রাখতে বলেছে৷ মাথার বা পাশে হিউজ ড্যামেজ হয়েছে৷ বারান্দায় যাওয়ার পর নিচে তাকিয়ে নিনীতার রক্তে ভরা রাস্তা আর নিথর দেহ দেখে তার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে ওঠেছিলো৷এতোটা দিনের অপেক্ষা মূহুর্তেই শেষ হয়ে যাবে ভেবে আদ্র হাউমাউ করে কেদে উঠে৷ ছেলেদের চোখে পানি মানায় না,এই একটি কথা পাশে থেকে কেও বললে আদ্র ভাবে সত্যিই কি মানায় না?আচ্ছা!ছেলেদের কি কান্না করতে নেই?তাহলে তাদের কষ্ট বের হবে কিভাবে মনের অন্তস্থল থেকে?এসএসসি র আগে টেস্টের রেজাল্ট খারাপ হলে সে যখন মুখ গোমড়া করে বসে ছিলো তখন নিনীতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো,
–‘আদ্র এমন ভাবে বসে থাকিস না প্লিজ!তুই কান্না কর দেখবি তোর ভেতরের কষ্টটা অনেকটা কমবে৷ চোখের পানির সাথে তোর না পাওয়া গুলো মিলিয়ে যাবে৷ধুয়েমুছে যাবে কিছুটা কষ্ট!আর এই কান্নার পর তোর নতুন করে বাচতে,হাসতে ইচ্ছা হবে৷’ নিনীতার কথা শুনে৷ আদ্র হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরে অনেকটা সময় কেদেছিলো৷ সেদিন নিনীতা তার পিঠে হাত বুলিয়ে কান্নামাখা কন্ঠে বলেছিলো,
–‘আমি তো আছি আদ্র!আমি আছি!’
সেই একটা কথা আদ্রের মাথায় ঘুরেফিরে বাজছে,
“আদ্র আমি আছি!”
.
.
.
ক্লাস ফোরে থাকতে নিনীতাকে প্রথম দেখে আদ্র৷ সেই থেকে কেমন একটা ফিলিংস হতো তার মাঝে৷ ফোলানো ফ্রক,মাথার দুই বেণী,লাল লাল গাল আর গোলাপি ঠোঁট৷আস্ত এক পুতুল যখন স্যার সাথে করে নিয়ে এসে বলেছিলো,
–‘আদ্র, এইটা হচ্ছে নিনীতা!আজ থেকে ও তোমার সাথে পড়বে৷’
আদ্র মজা করে হাত বাড়িয়ে বলেছিলো,
–‘হায়!নুনতা,আমি আদ্র৷’
নিনীতা ঠোঁট ফুলিয়ে স্যারকে বলেছিলো,
–‘স্যার এই পঁচা ছেলে আমাকে নুনতা বললো৷ এই ছেলে তুই আদ্র ভাদ্র!আমার নাম নুনতা না বুঝেছিস? আমার নাম নিনীতা জামান৷’
–‘কি বললি?নুনতা জাম?হা হা এই নাম হয় নাকি কারো!নুনতা জাম,এই তুই জানিস না জাম নুনতা না৷নুনতা জাম! নুনতা জাম!’
আদ্রকে ব্যাগ ছুড়ে মেরে নিনীতা দুই ঝুটি দুলিয়ে হাত উচিয়ে বলেছিলো,
–‘ওই পোলা!ভাদ্র মাসের আদ্র,তোর নাম কেমন ইহহহ আদ্রিয়ান আদ্র তোর নাম তো ভেজাইলা ভাদ্র৷’
সেই থেকে আদ্রকে সবাই ভেজালাইয়া ভাদ্র বলেই ডাকতো৷ পাড়ায় পাড়ায় বাজারে স্কুলে সবাই একনামে চিনতো ভেজাইলা ভাদ্র৷
কান্নার মাঝেই এই কথা মনে পড়তে আদ্র হেসে উঠে৷ কেও নিনীতা কে নুনতা বললে সে মেরে তার চৌদ্দ গুষ্টি ভুলিয়ে দিয়ে আসতো৷ আর শাসিয়ে বলতো,
–‘ওইটা আমার নুনতা জাম!’
নিনীতা এই কথা না জানলেও সবাই জানতো আদ্রের নুনতা সে৷ আদ্রের বয়েজ স্কুল আর নিনীতার গার্লস স্কুল৷তবে দুটো স্কুল সামনাসামনি ছিলো৷ নিনীতার জীবন স্কুলের গন্ডিতে আর বাড়ির গেইট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিলো আদ্র৷ প্রতিদিন ওকে দিয়ে আসা আর নিয়ে আসার মেইন দায়িত্ব ছিলো তার৷ স্কুল ছুটির পর একবার নিনীতাকে এক ছেলের সাথে দেখে আদ্র ওর সামনেই ওই ছেলেকে পিটিয়ে ছিলো৷ যখন নিনীতা ওকে থাপ্পড় মেরে বলেছিলো,
–‘তুই সারাজীবন ভেজাল ভেজালই থেকে যাবি৷ যেখানে যাস আমার জীবন শেষ করে ভেজাল দিয়ে ভরিয়ে ফেলিস৷ তোর এতো কষ্ট লাগে কেন রে?তোর কি হই আমি?না জেনে সবসময় ভেজাল করিস৷ এইটা আমার ভাই হয়৷ ফাজিল ছেলে তোর সাথে কথা নেই আমার৷’
সেই থেকে পাক্কা পনেরো দিন আদ্রের সাথে কথা বলে নি নিনীতা৷ আদ্রের ভয়ে ভয়ে দিন কাটতো৷ ষাট বার কান ধরে উঠবস করার পর নিনীতা তাকে ক্ষমা করেছিলো৷ বাবা!কি রাগ মেয়ের৷ সত্যিই না জানা অনুভূতি ছিলো তাদের মাঝে অটুট৷ আদ্রের ভাবনার মাঝেই কিছুক্ষণ পর একজন ওয়ার্ড বয় এসে আদ্রেকে ডেকে নিয়ে যায়৷অটি র সামনে থমথমে মুখে ডাক্তারকে দাঁড়িয়ে থাকতে আদ্রের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে৷ ডাক্তার তার কাধে হাত রেখে বলে…..
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে