গোধূলির_আলোয় পর্ব-০৪

0
1124

#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ৪
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
প্যারিসের বিলাসবহুল রিসোর্টের বারান্দায় বসে উদাস চোখে সামনে থাকা বাহারি ফুলের বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে আদ্র৷ টিউলিপ ফুলের নানা রং যেন অপূর্ব সৌন্দর্য৷লাল,গোলাপি,সাদা,হলুদ রং এর টিউলিপ নজরে পড়ছে আদ্রের৷ বসন্তের মাঝামাঝি সময়!এই সময় টা ফুল গুলো বেশি নজরে পড়ে পুরো দেশ জুড়ে৷ কিছুক্ষণ পর পর নাম না জানা এক পাখি কিচকিচ করে ডেকে চলেছে৷ আদ্র একহাতে চুল গুলো টেনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ কোথায় যেন কিছু নেই!মনের ভেতর শূন্যতায় ভরে উঠছে৷ আজ দেড় মাস পূর্ণ হলো তারা প্যারিসে এসেছে৷ এই দেড় মাসে নিনীতার কোনো উন্নতি হয় নি বরং অবণতি হয়েছে বেশ খানিক৷ ডাক্তার লিউ কোনো ভরসা দিতে পারছেন না৷ সেই দিন সন্ধ্যা সময় নিনীতার ব্রেনের আরেকটা পার্ট নিস্তেজ হয়ে পড়ে৷আদ্রের ছোয়া পেয়ে তার ব্রেন সতেজ হয়ে আবার হাল ছেড়ে দেয়৷ ডাক্তার রেজাউল বলেছিলেন,’আদ্রকে মেনে নিতে পারছে না নিনীতা তাই হয়তো উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো তার মস্তিষ্ক৷’
সেই থেকে আদ্র নিনীতার কাছে যায় না!দূর থেকে এক পলক দেখে চলে আসে৷ তার নিজের উপর নিজের ঘৃণা হয়৷ নিনীতা তাকে চায় না৷ অবশ্য চাইবে কি করে দোষ তার ছিলো তার নুনতার ছিলো না৷ তাদের ছোট ছোট সৃতি মনে পড়তেই অস্থির হয়ে উঠে সে৷
শীতের আমেজ টা কড়াকড়ি ভাবে ফেব্রুয়ারিতেও বোঝা যায়৷ হালকা রোদ আর কুয়াশার ছড়াছড়ি সমস্ত রাস্তা জুড়ে৷ অদ্ভুত সুন্দর একটা মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে কোথা থেকে৷ নিনীতা নিশ্বাস টেনে বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে বলে,

–‘আহা!এর চেয়ে সুন্দর সকাল আমার জীবনে আর একটাও নেই৷ মনটা কুয়াশায় মাখো মাখো হয়ে গেছে৷ আজ নির্ঘাত আমার পরীক্ষা মাখো-মাখো হবে৷’

আদ্র বই ছিনিয়ে নিয়ে বলে,
–‘তোর মাথা হবে,শীতের সকালে কই লেপ গায়ে জড়িয়ে শুয়ে শুয়ে সপ্নের সাগরে ভাসবো সেখানে এই হাড় কাপানো ঠান্ডায় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি৷ ফেব্রুয়ারিতে মানুষ বোর্ড এক্সাম দেয়?’

–‘অবশ্যই দেয়!এই যে আমরা দিতে যাচ্ছি আর আমাদেত মতো আরো ছেলে-মেয়ে যাবে৷’

গাড়ির ঝাকুনি তে নিনীতা কথা বলার মাঝে আদ্রের উপর পড়ে৷ আদ্র দুই হাতে ওকে ধরে ফেলে৷ আর একটুর জন্য সিএনজি থেকে বাইরে পড়ে যায় নি৷ আদ্র ওকে বসিয়ে এক হাত শক্ত করে ধরে বলে,

–‘এই তোর কমন সেন্স কি বাড়িতে ফেলে এসেছিস?ধরে বসতে পারিস না৷ পড়ে গেলে কি হতো?’

–‘কেন তুই তো আছিস আমায় ধরার জন্য৷’

নিনীতার ছোট একটা কথায় আদ্রের ভেতরে শিহরণ বয়ে যায়৷ অনেকক্ষণ নিনীতার মুখের দিকে তাকিয়ে কি জবাব দিবে ভেবে পায় না সে৷ সত্যিই তো সে থাকতে তার নুনতার কি হবে৷
–‘এই আদ্র!’
–‘হু’
–‘হু কি?’
–‘হ….হ্যাঁ!আমি আছি৷ সব সময় আছি৷ তোর সমস্ত কিছুতে আছি আমি৷’

নিনীতা হা হা করে হেসে বলে,
–‘ ভাই থাম এইবার৷ তোকে রচনা বলতে বলি নি৷ কি যে হয় তোর মাঝে মাঝে৷’
–‘তুই সত্যিই বুঝিস না কি হয়?’
–‘হ্যাঁ বুঝি তো৷’

আদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,’সত্যি তুই বুঝিস নুনতা৷’
–‘হু বুঝি৷’
–‘সত্যি?’
–‘মিথ্যা!কি বুঝবো বল তো?

আদ্র মন খারাপ করে বই নিয়ে বাংলার সেকেন্ড অধ্যায়ের দুই নং সৃজনশীলে মনযোগ দিতে দিতে বলে,
–‘কিছু না৷’
নিনীতা মুচকি হেসে আদ্রের গা ঘেষে বসে ওর কাঁধে মাথা রেখে পড়ায় মনযোগ দেয়৷

মোবাইলটা তীব্র আওয়াজে বেজে উঠতেই চোখের পানি মুছে নেয় আদ্র৷ তাদের মূহুর্ত গুলো পবিত্রতায় ঘেরা ছিলো৷ না জানা,অচেনা অনুভূতিতে ঘেরা ছিলো৷ ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসা ছিলো৷মোবাইলটা বাজতে বাজতে কেটে যায়৷ আবার ফোন আসতেই চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে৷ জলদি রিসিভ করে কানে নিতেই ওইপাশে থেকে বলা কথা শুনে মূহুর্তেই আদ্রের মুখে হাসি ফুটে উঠে৷ মোবাইল কানে নিয়ে জলদি বের হতে হতে বলে,
–‘আ’ম কাম ইন ফাইভ মিনিট! টেক কেয়ার অফ হার৷’
দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করছে আদ্র৷এতোটা খুশি সে নিনীতাকে প্রথম দেখার পর হয়েছিলো আর আজ হচ্ছে৷ সব ঠিক থাকলে তাদের জীবনটা গোধূলির আলোয় ভরপুর হবে৷ কিন্তু!কিন্তু?তার নুনতা জাম তাকে মেনে নিবে তো?কোনো ঝড় আসবে না তো এই খুশির ঝংকারে?
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে