গোধূলির_আলোয় পর্ব-০৫

0
1104

#গোধূলির_আলোয়
#পার্টঃ৫
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
সাদা সাদা মেঘ গুচ্ছ বেধে উড়ে চলেছে পুরো আকাশ জুড়ে৷ কিছুক্ষণ আগে ঢালা বর্ষনে আকাশে স্বচ্ছ মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে৷ থেকে থেকে সূর্যের কিরণ উঁকি দিচ্ছে৷ নিনীতা দ্রু কুচকে সামনে তাকিয়ে আছে৷ রোদের কিরণ ওর মুখে পড়ায় রাগী ভাবটা যেন আরো বোঝা যাচ্ছে৷ ছেড়ে রাখা চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলার মতো তীব্র ইচ্ছা জাগতেই রাগ টা হু হু করে বেড়ে যায়৷ চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে সামনে থাকা মানুষ দুটোর ভাব দেখে চলেছে৷ আদ্রের মুখের হাসি যেন থামছেই না৷ মেয়েটা বল নেওয়ার বাহানা করে বার বার ওর হাত ছুয়ে দিচ্ছে৷ কলেজে উঠতে না উঠতেই এতো ভাব মেয়েদের সাথে৷ আজ বাড়ি গিয়ে কাকির কাছে বিচার না দেওয়া পর্যন্ত ভাত না খাওয়ার অটুট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে নিনীতা৷সবে মাএ তিন তিনটা দিন হয়েছে তারা কলেজে ভর্তি হয়েছে৷ এর মাঝে মেয়েদের সাথে মাঠে বাস্কেটবল খেলাও শুরু হয়ে গেছে আদ্র ভাদ্রের৷নিনীতা আদ্রের সামনে গিয়ে বলে,

–‘আদ্র বাসায় যাবি না?’

–‘খেলছি দেখতে পারছিস না!আমার টাইম নেই তোর সাথে যাওয়ার৷ আজ তুই চলে যা৷’

নিনীতা অবাক চোখে আদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ অনেকক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই নিনীতার মাথায় বল এসে লাগতেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে আর লাল জামা পড়া মেয়েটা হাত নাড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে,
–‘হেই ইউ,পাস দ্যা বল৷’

আদ্র নিনীতাকে বসে পড়তে দেখেই দৌড়ে ওর কাছে এসে কাধে হাত দিয়ে বলে,

–‘নুনতা ঠিক আছিস তুই?’
———–
–‘অনেক ব্যাথা পেয়েছিস নিনীতা?’

নিনীতা অবাক হয়ে মাথা উচু করে আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

–‘নিনীতা৷ বাবা!একদিনে কতো পরিবর্তন৷ সে যাই হোক,ব্যাথা পেলেই বা আপনার কি ভাইয়া?আপনি নতুন বান্ধবীদের সাথে খেলছিলেন খেলেন৷ খেলা ছেড়ে এখানে এসেছেন কেন৷ আপনার তো টাইম নেই৷’

নিনীতা উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে যায়৷পিছন থেকে আদ্র বারবার ডাকলেও দাঁড়ায় না৷ নিজের অজান্তেই ভেতরে অনেক কষ্টের আভাস পাচ্ছে সে৷ সবাই সত্যি বলে কলেজে উঠলে চেনা অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়৷

আদ্রদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে সেই মেয়েটার দেখা আবার পায় নিনীতা৷ আদ্রের সাইডের চেয়ারে বসে আছে সে৷ কালও এই সিট টা নিনীতার জন্য বরাদ্দ ছিলো৷আদ্র নিনীতাকে দেখে উঠে দাড়াতেই নিনীতা রায়হানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে৷ রায়হান, আদ্র আর সে একসাথেই পড়ে৷ রায়হান আদ্রের কাকাতো ভাই৷ নিনীতার সাথে রায়হানের বন্ডিংটা খুব গভীর না হলেও ভালো ফ্রেন্ড বলাই চলে৷ কলেজে উঠার পর তারা তিনজন

এক স্যারের কাছেই পড়ে৷তবে রায়হান অন্য কলেজে পড়ে৷ নিনীতা মুচকি হেসে রায়হান কে বলে,

–‘কি মিস্টার ভুতের জিনিয়াস,ভুত নিয়ে গবেষণা কতো দূর পর্যন্ত পৌছালো?’

–‘একটা আর্টিকেল সাবমিট করবো ভেবেছি৷ আর্টিকেল টা তোর জন্য আজ নিয়ে এসছি তুই পড়ে কনফার্ম করলেই জমা দিয়ে দিবো৷’

–‘সত্যি?’

–‘একশো পার্সেন্ট সত্যি!গত বছরের আর্টিকেল টা কিন্তু তোর জন্যই ম্যাগাজিনে প্রকাশ পেয়েছিলো সেই থেকে তুই আমার লাকি চার্ম৷’

নিনীতা হা হা করে হেসে রায়হানের চুল টেনে দেয়৷ আদ্র রাগী চোখে তাকিয়ে সমস্ত কিছু দেখে৷ ওর পাশে থাকা মেয়েটা ওদের কথা শুনে আদ্রকে বলে,

–‘আদ্র,হু ইজ শী?ওর মাথায় তো দুপুরে বল লেগেছিলো তাই না?আ’ম সর‍্যি আপু, আসলে আমি বুঝতে পারি নি৷’

–‘এতো সর‍্যি টর‍্যি বলার কিছু হয় নি ফুল৷ ওর আবার ব্যাথা কম লাগে !দেখলে না এতো বড় একটা বল লাগার পরও কিভাবে উঠে চলে এলো৷’ ফুলের কথার মাঝে নিনীতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ফোঁড়ন কেটে কথাটা বলে আদ্র৷নিনীতা আদ্রের কথায় জবাব না দিয়ে ফুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–‘নেক্সট টাইম দেখে খেলবেন আপু!আজ ছেড়ে দিয়েছি বলে ছাড় দিই নি কিন্তু মনে রাখবেন৷আমি কাওকে কিছু বলি না দেখে দূর্বল ভাববেন না৷ আর হ্যাঁ!আপনার ফ্রেন্ড কে বলে দিবেন আমি মানুষ কোনো রোবট নই৷’

ফুলি অবাক চোখে তাকিয়ে মাথা দুদিকে হেলিয়ে ‘আচ্ছা’বলে৷স্যার এসে পড়লে আদ্র বারবার নিনীতার মুখের দিকে চোরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে৷ নিনীতাকে আজ তার বড্ড অচেনা লাগছে৷ আচ্ছা!মেয়েটা সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে?কিন্তু সব এতো স্বাভাবিক কেন৷

হসপিটালে শুয়ে থাকা নিনীতাকে আজ সেই দিনের মতো অচেনা লাগছে আদ্রের৷ সম্পূর্ণ মুখ জুড়ে অন্য রকম,সৌন্দর্য বিচরণ করছে তার৷খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে সাথে মুখে মুচকি হাসি৷ ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিয়েছেন ডাক্তার লিউ৷ আজ নিনীতা রেসপন্স করেছে৷ হাত নাড়িয়েছে৷ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে৷ ডক্টর এক্সপেক্ট করছে অতি জলদি নিনীতা সুস্থ হয়ে উঠবে বাট কিছু প্রব্লেম হবে৷ আর ওর ডান পায়ে প্রচুর ইঞ্জুরি হয়েছে হয়তো হাটতে পারবে না৷ আদ্র নিনীতার মায়া ভরা মুখে তাকিয়ে বলে,

–‘তুই চোখ তুলে একবার তাকা নুনতা,তোর জন্য সারা দুনিয়া নিয়ে আসবো৷ সমস্ত কিছু ভুলিয়ে দিবো তোকে৷ সেই আগের মতো বাচবো আমরা৷ ভালো থাকবো তোকে ভালোবেসে!সমস্ত কিছু আমার জন্য শেষ হয়েছিলো আর সেই শেষ গুলো আমি পূর্ণ করবো৷’

–‘আ…..আদ্র………’

আদ্র চমকে উঠে৷ নিনীতার শীতল কন্ঠের ডাক শুনে৷ বাইরে থেকে আসা মিশ্র হাওয়া এসে আদ্রের শরীর মন প্রাণ জুড়ে শান্তির বাতাস প্রবাহিত হয়৷নিনীতার হাত ধরে কেদে উঠে৷শান্তির একটা হাওয়া বইছে!নিনীতার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে৷ নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ কানে আসছে না৷ হয়তো এমন কোনো গোধূলি বেলায় তার নিনীতা ডেকে উঠবে সত্যিই ডেকে উঠবে৷ আর সেই দিন বেশি একটা দূরে নেই৷ আদ্রের নুনতা জাম আগের মতো তার সাথে খুনশুটি তে মেতে থাকবে শুধুই তার থাকবে…..
চলবে……
(ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সকলে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে