একতরফা ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
360

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

বিয়ে বাড়ি থেকে বউ পালিয়ে গেছে এই কথাটা চাওর হতে বেশি একটা সময় লাগল না৷ প্রান্তিকে খুঁজতে গিয়ে তাকে না পেয়ে সবাই হট্টগোল শুরু করে দেয়। নিমেষেই পুরো মহল্লায় ছড়িয়ে যায় প্রান্তির পালিয়ে যাওয়ার খবর।

সবার সামনে মাথা নিচু হয়ে যায় পিয়াল আহমেদের। তুলি, প্রেয়া দুজনের কানেও এই কথা যায়। তুলি খুশি হয়ে প্রেয়াকে বলে,
“যাক। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে বল। তোকে আর কিছু করতে হলো না৷ যা হওয়ার এমনিই হলো।”

“তুই চুপ কর তুলি। এটা মোটেই ঠিক হয়নি৷ আপি কোথায় গেল? ওঁর কোন বিপদ হয়নি তো? আমার খুব টেনশন হচ্ছে।”

এদিকে আজহারুল আহমেদ, রাহেলা বেগম দুজনেই সবার সামনে পিয়াল আহমেদকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানালেন। আজহারুল আহমেদ ক্ষোভ নিয়ে বলেন,
“তোর থেকে এটা আশা করিনি পিয়াল। মেয়েকে কেমন মানুষ করেছিস তুই? আজ তোর মেয়ের জন্য আমাদের পরিবারের সব মান সম্মান নষ্ট হয়ে গেল।”

রাহেলা বেগমও বলেন,
“হ্যাঁ পিয়াল। তোমার মেয়ের শিক্ষা নিয়ে আমারও সন্দেহ আছে। ও যদি এই বিয়ে করতে না চাইত তাহলে সবার সামনে সেটা বলে দিলেই মিটে যেত। তা না ও কি করল? এভাবে পালিয়ে গিয়ে আমাদের নাক কা’টালো।”

আজহারুল আহমেদ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বললেন,
“আজ যা হয়েছে আমার মনে হয় তার জন্য তুই দায়ী পিয়াল। সেদিন তো প্রান্তি বিয়েতে না করে দিয়েছিল৷ তুই নিশ্চয়ই আমার ছেলেকে হাতছাড়া করতে চাস নি৷ তাই জোর করে তোর মেয়েকে রাজি করিয়েছিলি তাই না? সেই কারণেই প্রান্তি আর কোন উপায় না পেয়ে পালিয়ে গেল?”

কিছু লোক বলাবলি করল,
“নিশ্চয়ই মেয়ের অন্য কারো সাথে চক্কর ছিল।নাহলে কেউ বিয়ের দিন এভাবে পালায় নাকি?”

পিয়াল আহমেদ করুণ কন্ঠে বলেন,
“তুমি বিশ্বাস করো ভাইজান আমি মিথ্যা বলছি না৷ প্রান্তি নিজে এই বিয়েতে মত দিয়েছিল। আমি ওকে জোর করিনি।”

“তাই যদি হয় তাহলে ও পালালো কেন?”

এরমধ্যে তাহেরা বেগম বলে উঠলেন,
“আমাদের একটু দেখা উচিৎ। এমনও তো হতে পারে যে মেয়েটা কোন বিপদে ফেসে গেছে।”

“কি বিপদ হবে তাহেরা? কোন বিপদ হয়নি। এই মিয়ে ইচ্ছে করে পালিয়েছে?”

রাহেলা বেগম শক্ত গলায় বললেন। এতক্ষণ ধরে শান্ত হয়ে বসে থাকা আহিল এবার উঠে দাঁড়ালো। এই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে তার যতটা না কষ্ট হচ্ছিল তার থেকে বেশি ইগো হার্ট হচ্ছিল। আহিল রূপ, সৌন্দর্য, যোগ্যতা কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। স্কুল, কলেজে কত শত মেয়ে তার জন্য পাগল ছিল। এখন তো সেই চাহিদা আরো বেড়েছে। অথচ সে যাকে পছন্দ করে সেই কিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করল। আহিল এবার রেগে উঠে দাঁড়ালো। নিজের মা বাবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তোমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরো নাটক দেখবে নাকি চলবে আমার সাথে।”

রাহেলা বেগম বলে ওঠেন,
“হ্যাঁ, চল। আমারও কোন ইচ্ছা নেই এখানে থাকার।”

তারা যাওয়ার জন্য পথ বাড়াতে যাবে এমন সময় তুলি প্রেয়াকে ঠেলে পাঠালো। বলল,
“আজই তোর সুযোগ প্রেয়া। যা করার এখন গিয়ে কর। নাহলে কিন্তু আহিল৷ ভাইকে নিজের করে পাওয়ার আর কোন সুযোগ পাবি না। আজ বিয়েটা না হলেও আহিল ভাইয়ের মেয়ের অভাব হবে না।”

তুলির কথায় প্রভাবিত হলো প্রেয়া। আহিলকে পাওয়ার জন্য আজ অদ্ভুত সাহস জুগল তার মনে। তাই তো এতদিন নিজের অনুভূতি গুলো ভয়ে কাউকে বলার সাহস না পেলেও আজ আহিলদের পথ আটকে বেশ সাহস নিয়ে বলল,
“তোমরা দাঁড়াও। আজ যখন তোমরা এখানে নিজেদের বাড়ির বউ নিয়ে যেতে এসেছ তখন বউ নিয়েই যাবে।”

রাহেলা বেগম বিরক্ত সুরে বললেন,
“সর তো সামনে থেকে। তোমার বোন তো পালিয়ে গেছে। তো এখন বিয়েটা করবে কে? তুমি?”

“জ্বি, আপনাদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি আহিল ভাইকে বিয়ে করতে চাই।”

প্রেয়ার মুখে এমন কথা শুনে সকলে হতবুদ্ধি হয়ে যায়। একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে। আজহারুল আহমেদ চেচিয়ে বলে ওঠেন,
“কি বাজে কথা বলছিস তুই? আমার ছেলের জীবন নিয়ে কি তোরা দুই বোন ছেলেখেলা খেলবি ভাবছিস? এক বোন বিয়ে করবে বলে পালিয়ে গেল এখন আরেক বোন বলছে বিয়ে করবে।”

রাহেলা বেগমও চাপা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন,
“তোমাদের কি মিনিমাম লজ্জা টুকু নেই? ছি!”

প্রেয়া সবার সামনে এভাবে অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করল। চোখ ভিজে কান্না এলেও দাঁত চেপে নিজেকে আটকালো। এমন কিছুর জন্য সে প্রস্তুতই ছিল। সে জানত এমন প্রতিক্রিয়াই আসবে। শুধু ক্ষীণ আশা নিয়েই সে আহিলকে পাওয়ার এক শেষ চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টাও বুঝি বৃথা গেল।

পিয়াল আহমেদ এগিয়ে এসে প্রেয়াকে বললেন,
“তুমি এসব কি বলছ প্রেয়া? তোমাকে এই আত্মত্যাগ করতে হবে না। আমি জানি তুমি আমার মান সম্মানের কথা ভেবে এমন করছ। কিন্তু তুমি এমন করো না। আমার কথা ভাবতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ করো না। একেই বলে ভাগ্য, এক মেয়ে আমার মান সম্মান ডুবিয়ে দিয়ে গেল। আরেক মেয়ে আমার মান সম্মান বাঁচাতে নিজের কথাও ভুলে গেল।”

আহিল হিংস্র দৃষ্টিতে তাকালো প্রেয়ার দিকে। প্রেয়াকে দেখেই তার প্রান্তির প্রতি ক্ষোভ বাড়ল। আহিল ভাবল,
“প্রান্তি আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি ওকে পেতেই হবে। ওকে সরাসরি শাস্তি দিতে না পারলেও ওর বোনকে তো আমি শাস্তি দিতেই পারি। আর এভাবেই আমি ওর উপর প্রতিশোধ নেব।”

এমন ভাবনা থেকেই আহিল সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমি প্রেয়াকে বিয়ে করতে চাই। তোমরা বিয়ের সব আয়োজন করে ফেল।”

আহিলের কথা শুনে সবাই আরেকদফা অবাক হয়। আজহারুল আহমেদ বলেন,
“এসব কি বলছ তুমি? এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে মানে?”

“আমি ভেবে চিন্তেই সব বলেছি। তোমরা প্লিজ আর কোন বাধা দিওনা।”

রাহেলা বেগম সাথে সাথে বলে উঠলেন,
“এই বিয়ে আমি মানব না। এর বড় বোন আমাদের চরম অপমান করেছেন। একে তো আমি কোন মতেই নিজের ছেলের বউ করবো না।”

“যদি আজ তোমরা আমার সাথে প্রেয়ার বিয়ে না দাও তাহলে আমি আর কখনো বিয়েই করব না।”

এরপর নানান কথা কা’টাকাটি চলে। শেষমেষ সবাই আহিলের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। আজহারুল আহমেদ বলেন,
“বেশ তোমার যা ইচ্ছা করো। আমার কথার তো কোন দাম নেই।”

★★★
“একবার ভালো করে ভেবে নাও প্রেয়া মা? তুমি কি এই বিয়েটা করে সুখী হবে?”

নিজের বাবার এহেন প্রশ্নের জবাবে কি উত্তর দেবে প্রেয়া আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। সেই সাজানো বুলি আওড়েই সে বলে,
“আমি এই বিয়ে করবো আব্বু। তোমার সাথে চাচার সম্পর্ক খারাপ হোক এটা আমি চাই না। সেইজন্য যদি নিজেকে কিছু কষ্ট সহ্য করতে হয় তো করব৷ আর যাইহোক আমি তো আপির মতো তোমার মান সম্মান সবার সামনে শেষ করে দিতে পারি না।”

পিয়াল আহমেদ প্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“ছোট হয়েও তুই কত বুদ্ধিমতী। সম্পর্কের মর্যাদা বুঝিস। আর তোর বড় বোন। হুহ! এখন থেকে ও আমার কাছে মৃত।”

“আব্বু!!”

পিয়াল আহমেদ আর কিছু না বলে চলে গেলেন। তিনি যাওয়ার পর প্রেয়া বললেন,
“তোমার জন্য নয় আব্বু। আমার জন্যই আমি বিয়েটা করলাম।”

★★★
প্রেয়া ও আহিলের বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। বিয়ে মিটতেই আহিল প্রেয়াকে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলো৷ প্রেয়া পিয়াল আহমেদ কে জড়িয়ে অনেক কান্নাকাটি করল। অতঃপর বিদায় নিতে যাবে এমন সময় আগমন ঘটল প্রান্তি ও তুষারের। প্রত্যেকেই একে অপরের দিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।

তুষার নীরবতা ভেঙে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমি প্রান্তিকে বিয়ে করেছি।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে