একতরফা ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
368

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

“এই বিয়ে হতে পারে না। তোমরা বন্ধ করো এসব।”

আচমকা প্রেয়ার এমন চিৎকার কানে আসতেই সবাই অবাক চোখে তাকালো প্রেয়ার দিকে। শান্তশিষ্ট, নম্র মেয়েটার হঠাৎ এমন ব্যবহারের কারণ কেউ ঠাওর করতে পারল না। পিয়াল আহমেদ নরম গলায় শুধালেন,
“কি হয়েছে প্রেয়া মা? তুমি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এভাবে চেচামেচি করছ কেন।”

“প্লিজ আব্বু তুমি এই বিয়েটা বন্ধ করো৷ এই বিয়েটা হতে পারে না।”

আজহারুল আহমেদ বিরক্ত হয়ে বলেন,
“কেন হতে পারে না? তোমার কি এই বিয়েতে কোন আপত্তি আছে?”

“হ্যাঁ, আপত্তি আছে। আব্বু আমি চাই না আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় আপি বিয়ে করুক। আমি কত আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছিলাম যে, আপির বিয়েতে নাচব, গাইব কত আনন্দ করব। কিন্তু এখন তো আমার সব পরিকল্পনা বিফলে যাবে।”

পিয়াল আহমেদ সামান্য হেসে বলেন,
“ওহ, এই ব্যাপার। এটা নিয়ে ভেবো না। আজ তো শুধু আকদ হবে। কিছুদিন পর তো তোমার আপির অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে। তখন তুমি সব ইচ্ছা পূরণ করিও।”

প্রেয়া নাছোড়বান্দা। সে এটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে যে করেই হোক বিয়েটা সে ভাঙ্গবেই। তাই নাক মুখ উল্টিয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো আবদার করে বলে,
“আমি তো কখনো তোমার কাছে কিছু চাই নি আব্বু। আজ প্রথম কিছু চাইছি। তুমি আমার কথাটা রাখবে না?”

মেয়ের এমন নিঃসংকোচ আবেদনের প্রেক্ষিতে কি বলবেন বুঝতে পারছেম না পিয়াল আহমেদ। সত্যিই প্রেয়া তার কাছে কখনো কিছু চায়নি। প্রেয়া বড্ড কম কথা বলে। নিজের চাওয়া পাওয়া নিয়েও কারো সাথে তেমন কথা বলে না। পিয়াল আহমেদ কিছুতেই চাইলেন না এই অসুস্থ অবস্থায় নিজের মেয়েটার কথা ফেলতে। তাই তিনি করুণ দৃষ্টিতে নিজের ভাইয়ের দিকে তাকালেন। আজহারুল আহমেদ যেন বুঝলেন নিজের ভাইয়ের অনুভূতি। তাই তিনিও সায় জানিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে কোন ব্যাপার না। এক সপ্তাহ পরেই মহাসমারোহে, আড়ম্বর ভাবে বিয়েটা হবে। তুমি খুশি তো প্রেয়া?”

প্রেয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

রাহেলা বেগম, তাহেরা বেগমের অনুভূতি ভালো, খারাপ কোনটাই না। তবে প্রান্তি বেশ স্বস্তি পেল বিয়েটা পিছিয়ে যাওয়ায়। কারণ সে এত সহজে সবটা মানতে পারছিল না। সবার অনুভূতি যখন মিশ্র তখন আহিল মনে মনে বেশ ক্ষেপে গেল প্রেয়ার উপর। যদিওবা আজহারুল আহমেদ যখন তাকে শুধালেন, এই বিয়েটা পিছিয়ে যাওয়ায় তার কোন আপত্তি আছে কিনা তখন সে মাথা দুলিয়ে জানায় তার কোন অসুবিধা নেই কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই ভদ্রতার খাতিরে।

ভেতরে ভেতরে তো তার প্রেয়ার উপর এত রাগ হচ্ছে যে পারলে তাকে চিবিয়েই খাবে।

বিয়েটা আজ না হওয়ায় সবাই মিলে বিয়ের আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনা করে নিলো। প্রেয়া আহিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমায় আমি এত সহজে অন্য কারো হতে দিবো না আহিল ভাই। শেষ দম পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাব তোমাকে নিজের করে পাওয়ার।”

★★★
১ সপ্তাহ পর,
সময়ের স্রোতে দেখতে দেখতে ৭ টা দিন যে কোন দিক দিয়ে চলে গেল সেটা কেউ বুঝতে পারল না। আজ অবশেষে প্রান্তি এবং আহিলের বিয়ের দিন চলেই এলো। প্রান্তিদের বাড়িটা এই উপলক্ষে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বাহারী ফুল, লাইটিং, সাজসজ্জা কোন কিছুর কমতি নেই।

পুরো বাড়ি জুড়ে উৎসবের একটা রেশ সবার চোখে পড়ছে। এত সব কিছুর মধ্যে প্রান্তির মনে কোন সুখ নেই। পার্লার থেকে লোক এসেছে তাকে সাজানোর জন্য। তারা প্রান্তিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে। প্রান্তির কাজিন, বন্ধুবান্ধবরা সবাই তাকে ঘিরে রেখেছে। সাজসজ্জা শেষ হতেই সবাই তার বধূবেশের প্রশংসা করতে লাগল। প্রান্তি নিজেও আয়নায় নিজেকে দেখে মুগ্ধ হলো। কনেবেশে সত্যি তাকে অপূর্ব লাগছে। কিন্তু তবুও সে খুশি হতে পারছে না। কারণ সে যে চেয়েছিল তুষারের জন্য এভাবে সাজতে। অথচ আজ ভাগ্যের পরিহাসে অন্য কারো জন্য এভাবে সাজতে হলো।

প্রান্তি একটা গভীর দীর্ঘ শ্বাস নিলো৷ মনটা হালকা করার জন্য সে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমি একটু ছাদ থেকে আসছি।”

“তুই না বিয়ের কনে?”

প্রান্তির এক কাজিনের প্রশ্নের জবাবে সে বলে,
“তো কি হয়েছে? কোথাও কি এই নিয়ন লেখা আছে যে বিয়ের কনে ছাদে যেতে পারবে না।”

প্রান্তির এমন জবাবে সবাই চুপ হয়ে যায়। প্রান্তি রওনা দেয় ছাদের দিকে।

অন্যদিকে, প্রেয়া নিজের রুমে বসে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করছিল৷ সৌভাগ্য বশত তুলি একদম ঠিক সময় চলে এসে তাকে আটকে দেয়। তার গালে ঠা’স ঠা’স করে চ’ড় দিয়ে বলে,
“এটা তুই কি করতে যাচ্ছিলি?”

প্রেয়া কাঁদতে শুরু করে দেয়। বাড়িতে আত্মীয়ের আনাগোনা। যে কেউ যেকোন মুহুর্তে চলে আসতে পারে জন্য তুলি দ্রুত প্রেয়াকে নিয়ে ছাদে চলে যায়৷ তারপর জোর গলায় বলতে থাকে,
“তুই আমাকে বল তো তোর সমস্যা কি?”

“আহিল ভাইকে আমি খুব ভালোবাসি তুলি। তার পাশে অন্য কাউকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

“তাহলে চুপ করে আছিস কেন? যা সবাইকে গিয়ে সব কথা বল।”

প্রেয়ার তরফ থেকে কোন উত্তর আসে না। সে শুধু ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতেই থাকে। প্রেয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে তুলি বিরক্ত হয়ে বলে,
“তুই কাউকে কিছু বলবি না তো? ফাইন তোকে কিছু বলতে হবে না। আমিই সবাইকে সব কিছু বলব।”

তুলি যেতে চাইলে প্রেয়া তাকে আটকে দিয়ে বলে,
“প্লিজ তুই যাস না। কাউকে কিছু বলতে হবে না।”

“এক দিক দিয়ে তুই এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছিস না। সেই কারণে নিজের ঘরে বসে সু**সাইড করার চেষ্টা করছিস আবার কাউকে কিছু বলছিসও না। আসলে তুই চাইছিস টা কি?”

“আমি আহিল ভাইকে খুব ভালোবাসি৷ কিন্তু আমার যে খুব ভয় লাগছে এই মুহুর্তে সবাই সত্যটা জানতে পারলে যেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা আমি মোকাবিলা করতে পারব না।”

“তাহলে কি চাস তুই বল?”

“আমি এখন নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করব যে সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। আহিল ভাই আমার জন্য তৈরিই হয়নি। বাস্তবতাটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করব।”

“এই বুঝি তোর বাস্তবতা মেনে নেওয়ার নমুনা? যদি বাস্তবতা মেনেই নিস তাহলে সু**সাইড এটেম্প করতে গেছিলি কেন?”

“আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম।তবে প্রমিস করছি আর এমন করব না।”

ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের দুজনের সব কথোপকথন শুনে নেয় প্রান্তি। সব কথা শুনে ভীষণ রকমের অবাক সে। কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার মতো অবস্থাতেও নেই সে। প্রান্তির কানে শুধু এই কথাগুলোর বাজতে লাগল যে, প্রেয়া আহিলকে ভীষণ ভালোবাসে, আহিলকে হারানোর দুঃখে সে সু**সাইড করতে যাচ্ছিল।

প্রান্তি বিড়বিড় করে বলতে লাগল,
“এত বড় ভুল করে ফেললাম আমি! নিজের ভালোবাসার মানুষের মনে অন্য কারো বাস যেন এত জলদি এত বড় একটা প্রলয়ংকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম! না এটা আমার একদম ঠিক হয়নি। আজ যদি আমার বোনটা নিজের কোন ক্ষতি করে ফেলত তাহলে যে আমি ম*রে গেলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।”

এটুকু বলে সে মনে মনে বলে,
“প্রেয়া আহিলকে ভালোবাসে। আমি কিছুতেই আহিলকে বিয়ে করতে পারি না। কিন্তু এখন তো বিয়েটা ভাঙারও উপায় নেই। আমার কথা কেউ শুনবেও না। তাহলে কি করা যায়?!”

প্রান্তি অনেক ভাবনা চিন্তা করে খুব সন্তপর্ণে সবার অগোচরে চিলেকোঠার রুমে গেল। সব গয়নাগাটি খুলে রাখল। চিলেকোঠায় পড়ে থাকা একটি চাদর দিয়ে নিজেকে আবৃত করে নিলো। অতঃপর বলল,
“এখন পালানো ছাড়া আমার সামনে আর কোন উপায় নেই। সরি আব্বু, সরি চাচা, সরি আহিল ভাই। নিজের বোনের ভালোর জন্য আমাকে এমনটা করতেই হবে।”

বলেই প্রান্তি পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে পালাতে প্রায় সক্ষমও হয়েছিল কিন্তু একদম মেইন ডোরের কাছে গিয়ে তুষারের সাথে ধাক্কা খায় সে। অতঃপর জোরে দৌড় দেয়। তুষার প্রান্তিকে দেখে ফেলে এবং তার পিছনে দৌড় দেয়। প্রান্তি দূরে গিয়ে একটা সিএনজি দাড় করিয়ে যেতে থাকে। তুষারও অন্য একটা গাড়ি নিয়ে তাকে ফলো করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে