একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৬

0
398

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আহিলকে দেখামাত্রই প্রেয়া অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো৷ এতদিন পর আহিলকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ সেটা ভেবে পেল না। তাই সে আকাশকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি গাড়িটা স্টার্ট করুন। আমার ভালো লাগছে না ”

বলেই গাড়িতে চড়ে বসল। আকাশও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল। আহিল যন্ত্রমানবের মতো সবটা দেখল। প্রেয়াকে এতদিন পর দেখে সে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। বৃষ্টিতে যে সে ভিজে যাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আহিল আকাশের গাড়ির পেছনে ছুট লাগালো কিন্তু আর নাগাল পেল না। তবুও দমলো না সে৷ আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিজ্ঞা করে বলল,
“এতদিন পর যখন তোমার হদিশ পেয়েছি তখন আর তোমায় আমি হারিয়ে যেতে দেবো না প্রেয়া। তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। আর সেটা যেকোন কিছুর মূল্যেই হোক না কেন।”

★★★
প্রেয়া হোস্টেলের সামনে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমেই আকাশের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। তবে আপনার ভালোর জন্য আপনাকে একটা পরামর্শ দেই আর সেটা হলো আপনার এই একতরফা ভালোবাসাকে দাফন করে দিন। আমি আপনাকে এই ভালোবাসার বিনিময়ে কিছু দিতে পারব না। শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার কোন মানে নেই। আমি নিজেও এক জনকে একতরফা ভাবে ভালোবেসে পুরোটা জীবন জুড়ে কষ্ট পেয়ে গেছি৷ তাই চাই না আপনিও একই রকম কষ্ট পান। আশা করি আপনি নিজের ভালোটা বুঝতে পারবেন।”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই প্রেয়া হোস্টেলের ভেতর প্রবেশ করল। প্রেয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল আকাশ। একটু আগেই তার মন ভেঙে গেছে। তবুও সে সামলালো নিজেকে। মলিন হেসে বললো,
“কাউকে জোর করে পাওয়ায়ার অধিকার বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। আপনি যদি আমায় ভালো না বাসেন তাহলে সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমার এই একতরফা ভালোবাসা আজীবন থেকে যাবে। আপনাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি প্রেয়া। আপনাকে ভোলা সম্ভব নয়।”

প্রেয়া হোস্টেলে নিজের রুমে আসে৷ তারপর নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেয়। প্রেরণা প্রেয়াকে এভাবে সবকিছু গোছাতে দেখে প্রশ্ন করে,
“সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছ কেন? তুমি কি কোথাও যাচ্ছ?”

প্রেয়া বলল,
“যাচ্ছি না তবে খুব শীঘ্রই ফিরতে হবে। আমার অতীত যে আমায় ডাকছে।”

প্রেরণা প্রেয়ার কোন কথার মানে বুঝল না। প্রেয়া প্রেরণার হতবিহ্বল মুখের দিকে চেয়ে বললো,
“আমার কথা বুঝতে হবে না তোমায়। তুমি শুধু এটুকু জেনে রাখো খুব শীঘ্রই আমার জীবনে নতুন মোড় আসতে চলেছে। যখন আসবে তখন তুমি সেটা নিজেই দেখতে পাবে।”

প্রেরণা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানান দিলো৷ প্রেয়া অদ্ভুতভাবে হেসে বললো,
“এবার আমি মুক্তি পাবো। এতদিন ধরে ব্যাপারটা আমার কাছে গলার কা/টার মতো আটকে ছিল। এবার সব ঠিক করব। সবটা আমায় ঠিক করতেই হবে।”

★★★
প্রেয়া আজ ভার্সিটি থেকে হোস্টেলে ফিরেই জানতে পারল তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে। মানুষটা কে হতে পারে সেটা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না তাকে। অবশেষে প্রেয়ার ভাবনাকে সত্য প্রমাণ করেই আহিল এসে দাঁড়ালো তার সম্মুখপানে। প্রেয়া হাসিভরা মুখে বলল,
“হ্যালো আহিল ভাইয়া। লংগ টাইম নো সি। কেমন আছ তুমি?”

আহিলের এত দিনের চাপা রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সে ভীষণ রেগে বলল,
“এতদিন আমার থেকে দূরে থেকে আমাকে এত কষ্টের মধ্যে রেখে এখন তুই এসে জিজ্ঞেস করছিস আমি কেমন আছি।”

প্রেয়া তীব্র ভৎসর্না করে বলল,
“আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি বুঝি? তা কিভাবে কষ্ট দিলাম? আমি কি তোমায় বিয়ে করে দিনের পর দিন তোমাকে স্বামীর মর্যাদা দেই নি? আমি কি তোমার সাথে দিনের পর দিন খারাপ ব্যবহার করেছি নাকি দিনের পর দিন তোমায় অপমান করে গেছি। কোনটা বলো?”

প্রেয়া যে আহিলকে পিঞ্চ করেই কথাগুলো বলল সেটা বুঝতে পারল আহিল। তাই তো অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলে ফেলল,
“তুই আমাকে ভুল বুঝতে পারিস প্রেয়া। আসলেই আমি অতীতে তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু গত তিন বছর ধরে আমি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

“তুমি কিভাবে কষ্ট থাকতে পারো আহিল ভাই? তুমি তো আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলে। আর আমি তোমাকে সেটাই তো দিয়েছিলাম। আমি তো এটাও ভেবেছিলাম এতদিনে তুমি বোধহয় আমাকে ভুলে নতুন ভাবে জীবন শুরু করেছ। আজ আমি তোমার মুখে এসব কথা শুনে বেশ অবাকই হচ্ছি।”

“তুই আমার কথাটা শোন প্রেয়া।”

“হ্যাঁ, বলো। আমি শুনছি।”

” তুই আমাকে ছেড়ে চলে আসার পরই আমি তোর প্রতি ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছি আর..”

“বাহ, যখন আমি তোমার কাছে ছিলাম তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল? একবারও বলেছিলে আমায় এই ভালোবাসার কথা? যখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম তখন মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিলে?”

“জানি আমার ভুল ছিল প্রেয়া। কিন্তু তোর ভুলকেও এভাবে ছোট করে দেখার মানে নেই। আমার প্রতি তোর রাগ থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে নিজের সব আপনজনদের ছেড়ে এভাবে অচেনা একটা শহরে এসে পড়ে থাকবি?!”

“আমার কাজের কৈফিয়ত আমি তোমায় দেব না।”

“আমি কৈফিয়ত চাচ্ছিও না প্রেয়া। আমি শুধু চাই তুই এখন আমার সাথে ফিরে চল।”

“অসম্ভব। আমি কিছুতেই তোমার সাথে ফিরব না। আমাকে কি ভেবেছ কি তুমি? আমি কি তোমার হাতের কোন পুতুল নাকি যে, তোমার ইশারায় নাচব? যখন ইচ্ছা দূরে চলে যেতে বলবে আমি দূরে চলে আসব। আবার যখন কাছে টেনে নেবে কাছে আসব। মানে সবটা এতই সহজ? আমার কি কোন আত্মসম্মান নেই? আমি ফিরবো না তোমার সাথে।”

“আমার জন্য না হলেও নিজের আপনজনদের জন্য তুই ফিরে চল প্রেয়া। জানিস সবাই তোকে খুব মিস করে। তোর আপির একটা ছেলে হয়েছে। ওর নাম প্রান্ত, বয়স দুই মাস। তুই তো ওকে দেখিসও নি। প্রান্তি তো ওকে জন্ম দেওয়ার সময় ম/রতে বসেছিল। সেইসময় বারবার তোকে দেখতে চাইছিল। তোর কাছে নাহয় আমার ইমোশনের কোন মূল্য নেই কিন্তু ওদের কথা তো ভাব একটু।”

প্রেয়া নরম হয়। প্রান্তির কথা শুনে তার মন ছটফট করতে থাকে। মনে তীব্র বাসনা জাগে নিজের বোনকে দেখার। তবুও সে এত সহজে গলে না। আহিলের দ্বারা আগে নিজের ইচ্ছাটা পূরণ করবে তারপর বাকি কিছু। এমন ভাবনা থেকেই প্রেয়া বলে ওঠে,
“বেশ, আমি আবার ঢাকায় ফিরে যেতে রাজি আছি তবে আমার একটা শর্ত আছে। সেই শর্ত তোমায় অবশ্যই মানতে হবে।”

“শর্ত? কি শর্ত আছে তোর?”

প্রেয়া নির্লিপ্তভাবে বলে,
“আমার শর্ত একটাই, আমি মুক্তি চাই এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে। আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।”

“প্রেয়া…”

“হুম। ঠিকই শুনেছ। আমি এই unhealthy রিলেশনটা আর কন্টিনিউ করতে পারব না। আমার শান্তির প্রয়োজন। তোমার থেকে মুক্তি চাই আমার। রাজি থাকলে বলো আমি ঢাকায় ফিরতে রাজি আছি।”

“আমায় কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়না প্রেয়া?”

প্রেয়া সাথে সাথেই পাশে থাকা একটি কাঁচের গ্লাস মেঝেতে ছু/ড়ে ফেলে। গ্লাস ভেঙে কাঁচের টুকরো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আহিল বুঝতে পারে না প্রেয়া এমন কেন করলো। প্রেয়া কিছুটা দম নিয়ে বলে,
“এই ভাঙা কাঁচ কি তুমি জোড়া লাগাতে পারবে আহিল ভাই?”

“এটা কেমন প্রশ্ন?”

“আমি উত্তরটা দেই, পারবে না। বরং এটা জোড়া লাগাতে গেলেই তোমার হাত রক্তাক্ত হয়ে যাবে। আমার সম্পর্কটাও ঠিক এই ভাঙা কাঁচের মতো। তাই আমাদের জন্য এটাই ভালো হবে যে আমরা মিউচুয়াল ডিভোর্সের পথে হাটি।”

আহিল বুঝতে পারল প্রেয়া নিজের সিদ্ধান্তে কতোটা অনঢ়। তাই আহিল এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,
“বেশ, তবে তুই যা চাস তাই হবে। আমি তোকে মুক্তি দেব এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে।”

“দেখেছ তো আহিল ভাই অদৃষ্টের কি খেলা। একসময় তুমি আমার থেকে মুক্তি চেয়েছিলে আর আজ তোমায় কষ্টের সাথে আমাকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলতে হচ্ছে। আমার না ভীষণ পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।”

বলেই হাসতে লাগল প্রেয়া।

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে