এই প্রেম তোমাকে দিলাম পর্ব-০৭+০৮

0
2425

#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_০৭
#আফিয়া_আফরিন

আদিত্য মেসেজ দিয়েছে। তিথি অবাক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আদিত্য কেন তাকে মেসেজ দিলে এত দিন পর? সেতো তাকে ব্লক করে দিয়েছিল, ব্লক ই বা খুলল কবে?

তিথি মেসেজ সিন করল। লিখা ছিল, “তিথি আছো? একটু ইম্পরট্যান্ট কথা ছিল তোমার সাথে।”

তিথি ছোট্ট করে লিখলো, “কী?”

সাথে সাথে মেসেজ সিন হল। আদিত্য রিপ্লাই দিল, “একটা কথা বলার ছিল তোমার সাথে।”

“সেটাইতো। কি কথা?”

“আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?”

“কিসের জন্য?”

আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। এখন সেটা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। প্লিজ তিথি, ফর গিভ মি ওয়ান্স, প্লিজ!”

“তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই, তাই ক্ষমা করার কোন প্রশ্ন আসছে না। যেদিন ব্রেকআপ করেছিলে সেদিনই তোমার চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে আমার জীবনে!”

“আমরা কি আবার ব্যাক করতে পারিনা, তিথি?”

তিথি নিজের মনে কিছুক্ষণ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। রিপ্লাই দিলো, “কেনো? শিমি কোথায়? ব্রেকআপ করেছ বুঝি?”

“বিলিভ মি তিথি, ওর সাথে আমার রিলেশন ছিল না।”

“এসব আমাকে বিশ্বাস করাতে হবে না। আমি কোন কিছুই বিশ্বাস করতে চাই না।”

“প্লিজ তিথি! লাস্ট একবার সুযোগ চাচ্ছি।”

এই মেসেজের রিপ্লাই দেওয়ার আগেই, আদিত্যের মেসেজ পাস কাটিয়ে তিথির চোখে আটকে গেল একটা মেসেজ রিকোয়েস্ট।

মেসেজটা এরকম ছিল, “আমার একলা আকাশ থমকে গেছে তোমায় ভালোবেসে!”

প্রোফাইল নাম ‘ইশতিয়াক মুহাম্মদ আয়াশ’। মেসেজ সিন করে রেখে সাথে সাথেই প্রোফাইলে ঢুকলো তিথি। আকাশের সাথে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখে বুঝল, এটা কোন আয়াশ?

সে ফের ইনবক্সে ঢুকে মেসেজের রিপ্লাই দিল, “তাই?”
.
.
.
.
আয়াশের চোখটা ঘুমের লেগে এসেছিল। তিথিকে ম্যাসেজ দিয়েছে প্রায় 40 মিনিট আগে। আকাশের একাউন্ট ঘাটাঘাটি করে তিথি ফেসবুক একাউন্ট টার খোঁজ পেয়ে সাথে সাথে ম্যাসেজ দিয়েছে। মেসেজের রিপ্লাই দেয়নি তাই, আয়াশ ভেবে নিয়েছে হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে মেয়েটা।
হঠাৎ মেসেজ এর আওয়াজে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তিথির মেসেজ। সাথে সাথে শোয়া থেকে এক লাফে উঠে বসে। চোখ থেকে নিদ্রা ভাবটাও কর্পূরের মত উবে যায়!

সে রিপ্লাই দিলো, “আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমায় ভালোবেসে।”

মেসেজ দেখে তিথি মুখ টিপে হেসে ফেলল।
“বাহ, বেশ ভালো গান জানেন তো আপনি!”

“আমার সুরের এসব ঝংকার তুলেছে তোমায় ভালোবেসে!”

“উঁহু, এটা কিন্তু গানের অংশ ছিল না।”

“সব কি গানের মধ্যে থাকতে হবে নাকি? আমার নিজের মধ্যে কিছু নেই বুঝি?”

“তা কখন বললাম?”

“আচ্ছা বাদ দাও। এখন এটা বল যে, আমি প্রতিদিন তোমার বাসার সামনে যাই সেটা কেমনে টের পাইলা?”

“দেখেছিলাম। আমি একদিন বেলকোনি গিয়ে অন্ধকারে আপনার অবয়েব দেখেছিলাম। সেদিন খেয়াল করি নাই। পরে বুঝলাম।”

“তাহলে আমার ছায়া দেখেও আমায় চিনে ফেলতে পারো?”

তিথি স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিল, “হ্যাঁ। পারবো না কেন?”

আয়াশ বিশ্বজয় করার মত মুখে হাসি ফুটিয়ে রিপ্লাই দিলো, “বাবাহ! সামথিং সামথিং!”

“এহ, নাথিং নাথিং। আমি কিন্তু একদম ই আপনাকে পছন্দ করি না।”

“মুখে বলছো পছন্দ করো না, কিন্তু তোমার হাবভাব যে অন্য কিছু বলছে।”

“কি ধরনের হাবভাব?”

“বুঝবে না তুমি। যে সামনে থেকেও বুঝে না কে তাকে পছন্দ করে, আর কে তাকে অপছন্দ করে; তাকে এত দূর থেকে কিভাবে তার নিজেরই হাবভাবের কথা বোঝাবো!”

তিথি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“যেদিন আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল আমাদের ভার্সিটিতে, কেন এসেছিলেন ওখানে সেদিন?”

“ওখান থেকে এইচএসসি এক্সাম দিয়েছি। আমার পছন্দের কিছু টিচার রয়েছে, তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”

“ওহ, কিন্তু আকাশের সাথে অনেকবারই আপনার বাড়ি গিয়েছিলাম। কখনো দেখি নাই। আপনাকে অবশ্য শুনেছিলাম, আপনার কথা।”

“আমি যে হোস্টেলে থাকতাম।”

“হ্যাঁ। থাকবেন ই তো। আপনি যে প্যাঁচামুখো!”

“আচ্ছা। তাই?”

“হ্যাঁ।”

“তাহলে তুমি কি বলোতো?”

“আমি আবার কি হবো?”

“তুমি হচ্ছো, বাচাঁলিনী!”

“মোটেও না। আমি সারাদিন বকবক করি না, বুঝেছেন। কিন্তু আপনি ঠিকই মুখটা প্যাঁচার মতো করে রাখেন।”

ওকে ডান। ভালোবেসে যে প্যাঁচামুখো উপাধি দিয়েছো তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, তুমি সারাজীবন এই প্যাঁচামুখো কে সহ্য করতে পারবে তো?”

“মানে কী?”

“মানে তোমার না বুঝলেও চলবে।”

“আচ্ছা, ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাবো এখন। আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ!”
অনেকদিন পর মনে হয় ফ্রেশ একটা ঘুম হলো তিথির।
শুক্রবার সকালবেলা, তাই ঘুম থেকেও উঠল বেলা করে।
ফ্রেস হতে হতেই মনে পড়লো আজ তার চাচাতো বোন তানিশার বার্থডে। মনে পড়তেই ফোন হাতে নিলো উইশ করার জন্য। ঠিক তখনই তানিশার ফোন এল। তিথি হেসে কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল করলো।

“হেই বার্থডে গার্ল! হ্যাপি বার্থডে!”

“থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু।”

“শুধুই থ্যাঙ্কস? ট্রিট দিবি না?”

“অফকোর্স দেবো। আজকে কখন আসবা?”

“আসবো একটু পর।”

“ওকে আপুমনি তাড়াতাড়ি চলে এসো প্লিজ।”

তিথি তানিশার কল কেটে দিয়ে অরিনকে ফোন করে বাসায় আসতে বললো।
কিছুক্ষণের মধ্যে অরিন এলে তারা দুজন সকালের নাস্তা করে, বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য নীলক্ষেত বইয়ের দোকান থেকে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের দুটো বই কেনা।
হুমায়ূন আহমেদ সর্বদাই তানিশার প্রিয় একজন লেখক। তাই তানিশার জন্য এখানে আসা।
‘চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস’, ‘একজন মায়াবতী’ ও ‘অপেক্ষা’ এই তিনটা বই কিনে নিয়েই দুই বান্ধবী ঢুকলো একটা শোরুমে।
তানিশার ব্ল্যাক কালার খুব পছন্দের। তিথি এখানে এসেছে একটা ব্ল্যাক জামদানি শাড়ি কেনার জন্য।
এই সেই জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে কোন শাড়িই পছন্দ হলো না। লেটেস্ট মডেলের কোন শাড়ি চোখে পড়ছে না। হঠাৎ করে অরিনের চোখে আটকে গেল একটা কালো স্টোনের শাড়ির দিকে।

তিথিকে দেখে বলল, “দোস্ত দেখ, শাড়িটা কি সুন্দর!”

তিথি ভালো করে পরখ করে বলল, “হ্যাঁ, এইটা নেই।”

“নিয়ে নে। সেই সুন্দর।”

তিথি তো তানিশার জন্য ব্ল্যাক শাড়িটা নিলোই, তার উপর নিজের এবং অরিনের জন্য সেইম ডিজাইনের সিলভার কালার এবং গোল্ডেন কালার একটা শাড়ি নিল।

কেনাকাটা শেষে অরিন বলল, “দোস্ত একটা ঘড়ি কিনতাম।”

“কোথায় থেকে?”

“এখানেই আছে।”

“আচ্ছা, যা তুই। আমি দাঁড়িয়ে আছি এখানে।”

“আচ্ছা।”

অরিন যেতেই তিথি এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলো, ঠিক সেই সময় উল্টো দিক থেকে কেউ এই পাশে আসতেই ধাক্কা খেলো।
তিথি ঘুরে তাকিয়ে দেখে আয়াশ! আয়াশ ও তিথি কে দেখে বোল্ড!

মুখ থেকে তার অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে, “বাচাঁলিনী!”

তিথি অবাক হয়ে বললো, “আপনি?”

বাবাহ, মনের কি টান দেখেছো? যেখানে যাই সেখানেই দেখা হয়ে যায়।”

“আপনি এখানে কি করেন, মিস্টার প্যাঁচামুখো?”

“এখানে তো মানুষ কেনাকাটা করতে আসে বলেই আমার ধারণা।”

“তা তো ঠিকই। কিন্তু আমার এখানে আসাটা বোধহয় ঠিক হয় নাই। না আসলে আপনার প্যাঁচা মুখটা দেখতে হতো না!”

“উঁহু, তুমি যেখানে থাকতে সেখানে দেখা হয়ে যেত। আরে, মনের টান বলেও তো কিছু আছে নাকি?
বুঝোনা, মিস বাঁচালিনী!”

“বলছে আপনাকে?”

“ধ্যাত, এসব আবার বলা লাগে নাকি।”

তিথি কিছু বলার আগেই অরিন পেছন থেকে এসে বললো, “আরেহ, আয়াশ ভাই আপনি?”

আয়াশ অরিনের কথা শুনে স্মিত হাসলো।
তারপর টুকটাক কথা বলে তিথি আর অরিন বিদায় নিলো।

আয়াশ একধ্যানে তিথির দিকে তাকিয়ে রইলো।
মনে মনে ভাবতে লাগলো, “এতো ধাক্কা কেনো খায় সে মেয়েটার সাথে?”
.
.
.
দুপুরের আগে আগেই তিথি আর অনেক মিলে তানিশাদের বাসায় চলে এলো। অরিন তিথির বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ায়, তিথির পরিবারের প্রায় সবার সাথেই অরিনের সখ্যতা রয়েছে।
তাই তানিশা অরিন কেও ফোন করে বলে দিয়েছে, আজ সন্ধ্যার পার্টিতে উপস্থিত থাকার জন্য।
.
.
.
সন্ধ্যা সাতটার পর তারা রেস্টুরেন্টে এসে পৌঁছালো। এসে দেখে সবাই চলে এসেছে, অর্থাৎ তানিশার সকল বন্ধুবান্ধব।
তাদের আসতে আসতেই অনেক দেরি হয়েছে। আসলে দেরিটা হয়েছে তিথির কারণে।

সে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর থেকেই অর্থাৎ তিন টার পর থেকে রেডি হচ্ছে। একবার শাড়ি পড়ছে, আরেকবার চেঞ্জ করে কুর্তি পরছে।
শেষমেষ শাড়ি পরেই ৫ টার পর বাসা থেকে বের হয়েছে। কিন্তু ঠিকই শাড়ি সামলাতে পারছে না। শাড়ি পড়ে এক কদম এগোচ্ছে তো দশ কদম থেমে থেমে হোঁচট খাচ্ছে।
তারপর আবার বাড়ি ফিরে শাড়ি চেঞ্জ করে কুর্তি পড়েছে।

সারাটা রাস্তা অরিন আর তানিশা তিথিকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দিয়েছে।

.
.
.
তানিশাকে পাওয়া মাত্রই বন্ধু-বান্ধবরা তাকে ঘিরে ধরেছে। বার্থডে উইশ করছে। তিথি পাশে দাঁড়িয়ে আনমনে হাসছে।
এদিকে অনেকক্ষণ যাবৎ একজোড়া চোখ যে তাকে গিলে খাচ্ছে সেই হুশ আপাতোত তার কাছে নাই।
খানিকক্ষণ পর তিথি এদিক সেদিক চোখ ঘোরাতেই তার চোখ জোড়া আটকে গেল।
.
.
.
.

চলবে…..

#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_০৮
#আফিয়া_আফরিন

আদিত্য তিথির দিকেই তাকিয়ে আছে। তিথি আদিত্যকে দেখে মোটামুটি অবাক হয়ে গেছে, এখানে তো তার থাকার কথা না।
কিভাবে, কোন মাধ্যমে এখানে এসেছে আদিত্য?
তিথি আদিত্যর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে অরিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
ফিসফিস করে বলল, “দোস্ত আদিত্যকে দেখছিস? এখানে এসেছে।”

“হ্যাঁ তোর আগেই দেখেছি।”

“এখানে কখন আসছে? আর কেন এসেছে?”

“এখানে যখন আসছি তখনই। ও তানিশার ফ্রেন্ড অনিতার ভাই!”

“ওহ জানতাম না।”

“আমিও জানতাম না।”

“হুমম।”

“আচ্ছা যাই হোক, ওর কথা বাদ দে। ওর কথা মনে করে মন খারাপ করার প্রশ্নই ওঠে না।”

“আরেহ না, মন খারাপ কেন করব? জাস্ট অবাক হলাম, এইটুকুই আর কি!”

কিছুক্ষণ বাদে আদিত্য তিথির সামনে এসে দাঁড়ালো। তিথি কিছুটা হকচকিয়ে যায়, কিন্তু প্রকাশ করে না।
আদিত্য তিথির হাতে একটা হাতঘড়ি দিয়ে বলে,
“এটা নিশ্চয়ই তোমার? ওখানে ফেলে চলে আসছিলে।”
তিথি এক ঝটকায় নিজের ঘড়ি টা নিয়ে বললো,”থ্যাংকস।”

“শোনো তিথি, আমাকে কি একবার মাফ করে দেয়া যায় না? প্লিজ!”

তিথি হাসতে হাসতে উত্তর দিলো, “ন্যাড়া কিন্তু বেল তলায় একবার ই যায়!”

আদিত্যকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না, অরিন। সে পাশেই দাঁড়িয়ে আদিত্য আর তিথির কথা শুনছিলো।

অরিন এক ঝটকায় তিথির হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বললো, “এতো কথা বলার দরকার নাই, ঐ অসভ্য ছেলেটার সাথে।”

পার্টি শেষে একেএকে সবাই বিদায় নিলো। তিথি তানিশা কে নিজের সাথে করে বাসায় নিয়ে এলো।

আদিত্য তিথি কে পরে অনেক মেসেজ করেছে, কিন্তু তিথি রিপ্লাই দেয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই।
যে মানুষটা নির্মমভাবে ছেড়ে চলে গিয়েছে, তার প্রতি হাজার পিছুটান থাকা সত্ত্বেও কখনো ফিরে যেতে হয় না।

পরদিন তিথি আর আকাশ ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উদ্দেশ্য তানিশা, তানিশা তিথিকে ফোন করে ওখানে থাকতে বলেছে। তিথি একা একা বিধায় আকাশ কেও নিজের সাথে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আকাশ সেকেন্ডে সেকেন্ডে তিথির উপর বিরক্ত ঝারতেছে!

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে তানিশা তিথি কে ডাক দিল একটু দূর থেকে ‘আপু’ বলে।
তিথি আর আকাশ দুজনেই তাকালো। আকাশ তানিশাকে দেখা মাত্রই কিঞ্চিৎ ভুরু কুঁচকে ফেললো।

তানিশার সামনে এগিয়ে আসতেই আকাশ বলল, “আপনি?”

তানিশা কড়া দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বললো, “আপনি এখানে কেন? আবার কি আমার পায়ে গোবর মাখাতে এসেছেন?”

“কি আজব! আমি কি ইচ্ছা করে আপনার পায়ে গোবর লাগাইছি নাকি?”

“তা নয় তো কি? আপনাদের ছেলে মানুষের তো মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, যেকোনো মূল্যে কথা বলা চাই। সেদিন গোবর লাগানোটা একটা উসিলা ছিল মাত্র!”

“কথাবার্তা ঠিক করে বলেন।”

এরপর তিথি দুজনকে থামিয়ে বলল, “ঘটনা কি?”

আকাশ চন্দ্রিমা উদ্যানে যাওয়ার ঘটনাটা বলল, এই মেয়ের সাথে সে গোবর মাখা পায়ে ধাক্কা খেয়েছিল।

তানিশা বলে উঠলো, “ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে আপু।”

“আচ্ছা থাম তোরা।”
এরপর তানিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আকাশ ইচ্ছাকৃতভাবে কারো সাথে বাজে ব্যবহার করবে বা ধাক্কা খাবে এমন ছেলে কিন্তু ও না। ওইটা ভুল ছিল তানিশা। যেতে আসতে মানুষের সাথে ধাক্কা লাগতেই পারে।”

আকাশ বলল, “এই মেয়ে আবার তোর কেমন বোন? এমন ঝগরুটি রাক্ষসী মার্কা কি জন্য?”

“আর আপনি কি,হুমম? ধোয়া তুলসী পাতা নাকি? খবিশ লোক কোথাকার!”
তেড়ে এসে বলল তানিশা।

“আচ্ছা এখন থাম, আকাশ যা তুই বাড়ি চলে যা, আর তানিশা আমার সাথে আয়।”

তিথি একথা বলেই আকাশের থেকে বিদায় নিয়ে তানিশার হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেল।
.
.
.
.
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায়। অবশ্য এরই মধ্যে আর তিথির একবারও দেখা হয় নাই। মাঝে মাঝে কথা হয়েছে অবশ্য!
আয়াশের মন ছটফট করছে তিথিকে এক নজর দেখার জন্য। কিন্তু সরাসরি দেখা করার কথা বলাটা স্বভাববিরুদ্ধ, ইগোতে লাগছে। তাই বলতেও পারছে না।

এইদিকে তিথির অশান্ত মন ও শান্ত হচ্ছে না। কি কারনে শান্তি হচ্ছে না এটা তিথির ও অজানা!

আদিত্য বারবার ব্যাক করতে চাচ্ছে। এই কয়দিনে মেসেজ দিয়ে জ্বালিয়ে মেরেছে। কোন জায়গায় শান্তি নাই, যেখানে সেখানে এসে উদয় হয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিথি ভার্সিটিতে যাচ্ছে না, বলা বাহুল্য সে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আদিত্যর একের পর এক ফোন কল এবং মেসেজ প্রায় উত্তক্ত করে ফেলেছে তিথিকে।

আদিত্যর কথা মনে পড়লেই, সেটাকে পাশ কাটিয়ে বারবার আয়াশের কথা মনে পড়ে যায় তার।
কিন্তু এর কারণ কি?
.
.
.
সেদিন ভার্সিটিতে গিয়ে দেখল আকাশ আসে নাই। তিথি আকাশ কে ফোন করলো। আকাশ জানালো, সে আসবে না কোন কাজে আটকে গেছে।
অগত্যা অরিনার তিথি চলে গেল ক্লাসে। একটা ক্লাস করেই অরিন মাথাব্যথার অজুহাত দিয়ে বেরিয়ে গেল। সামনে পরীক্ষা তাই মন চায় না দেওয়া সত্ত্বেও তিথি ক্লাসে বসে রইল।

ক্লাস শেষ হতে বাইরে গেটে তিথি দেখলো আয়াশ কে। অজান্তেই তিথির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
আয়াশ তিথিকে খেয়াল করে নাই। সে এখানে এসেছে আকাশকে খুঁজতে।

তিথি আয়াশের সামনে গিয়ে বললো, “কি খবর মিস্টার পেঁচামুখো?”
.
.
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে